নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার জীবনের যে সত্য কথাগুলো কেউ জানে না কিংবা কেউ মানে না সেগুলোই আপনার সম্পদ

মানবানল

Do not Dismiss Your Dreams, to be without dreams is to be without hope To be without hope is to be, without Purpose...

মানবানল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা তোমার সন্তান যেনো জীবনের ক্রান্তিকালে পাশে থাকে...

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৫৬

লেখার শুরুতে 'মা'কে নিয়ে ছোট একটি গল্প।এক ছেলে একটি মেয়েকে খুব ভালোবাসতো। মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য সে পাগল হয়ে ওঠে।এটা দেখে মেয়েটি ছেলেটিকে বলে তোমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় কে? ছেলেটি জানায় ‘মা’। এরপর মেয়েটি বলে, তুমি যদি আমাকে তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা এনে দিতে পারো তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসবো। ছেলেটি নিরুপায় হয়ে মায়ের কাছে গিয়ে সব বলে। মা সন্তানের এ অবস্থা দেখে হেসে তার হৃৎপিণ্ড কেটে সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, "যা বাবা তাড়াতাড়ি যা।" সন্তান সেই হৃৎপিণ্ড নিয়ে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে দ্রুত রওনা হয়। দৌড়াতে গিয়ে পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। তখন দু'হাতে ধরে থাকা হৃৎপিণ্ডটি চিৎকার করে বলে ওঠে ‘খোকা ব্যথা পেয়েছিস?’ এর নামই হলো ‘মা’। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ শব্দ। সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, সবচেয়ে মধুর, সবচেয়ে আপন।
যারা উপরের ঘটনাটিকে নিছক রূপকথাই মনে করছেন তাদের জন্য সত্য আরেকটি ঘটনা, সময়টা ১৯৭১ সাল। যুদ্ধ শুরু হয়েছে। মায়ের একমাত্র সন্তান আযাদও যুদ্ধে যায়। যোগ দেয় ঢাকার আরবান গেরিলা দলে। ৩০ আগষ্ট রাতে বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন আযাদ। মায়ের চোখের সামনে দিয়ে ধরে নিয়ে যায় একমাত্র সন্তানকে। ক্যাম্পে নিয়ে প্রচন্ড অত্যাচার করা হয় আযাদের ওপর। দুদিন পর সন্তানের সাথে দেখা করার সুযোগ পেলে আযাদ তার মাকে বলে, “কতোদিন ভাত খাই না। আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো।” মা ভাত নিয়ে যান থানায়। গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। আর কোন দিন দেখা পাননি একমাত্র সন্তানটির। এই ঘটনার পর ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন ওই মা। কিন্তু একদিনও মুখে ভাত তোলেননি! শুধুমাত্র এক বেলা রুটি খেতেন। কারণ তার একমাত্র ছেলে ভাত চেয়েও খেতে পারেনি সেদিন। ১৪বছর তিনি কোনো বিছানায় শোননি। শানের মেঝেতে শুয়েছেন। কারণ তার ছেলে রমনা থানার মিলিটারি টর্চার সেলে বিছানা পায়নি! মৃত্যুর আগে স্বজনদের বলে গেছেন, কবরে এপিটাফে নিজের নাম নয়, সেখানে যেনো উল্লেখ করা থাকে ‘শহীদ আযাদের মা’!
এই হলো আমাদের 'মা'এর কথা। যা গল্পকেও হার মানায় কিংবা সন্তানের জন্য যাদের ত্যাগের প্রতিটি মুহুর্তই এক একটি গল্পের জন্ম দেয়ার দাবি রাখে। কোনো উপমা বা সংজ্ঞা দিয়ে মায়ের এ ভালোবাসার পরিধি ও গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। একমাত্র নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হলো সন্তানের প্রতি মায়ের অনূভুতি।
মে মাসের ২য় রোববার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশেই ‘বিশ্ব মা দিবস' পালিত হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ‘মা দিবস’র শুরু হয় প্রাচীন গ্রীসে। সেখানে বসন্তকালে দেবতাদের মা 'রিয়া'এর উদ্দেশ্যে একটি দিন পালন করা হতো। পরে বিভিন্ন সময় সারা বিশ্বে ‘মা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে। তারা দিনটিকে উত্সর্গ করেছিলেন 'জুনো'র প্রতি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হতো ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে।
'মা দিবস'কে সার্বজনীন ও আন্তর্জাতিক করে তোলেন আমেরিকার নাগরিক জুলিয়া ওয়ার্ড। দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮৭২ সাল থেকে তিনি ব্যাপক লেখালেখি শুরু করেন। তবে দিবসটিকে জাতীয় দিবসে পরিণত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন ফিলাডেলফিয়ার অপর নারী অ্যানা জার্ভিস।
১৯১১ সালে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সমগ্র আমেরিকাজুড়ে একই সঙ্গে পালিত হয় ‘মা দিবস’।পরে ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। মূলত এরপর থেকেই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে 'মা দিবস' পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে তা চলে আসে আমাদের বাংলাদেশেও।
আসলে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ থাকতে পারে? পারে না। মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। মাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো দিন নাই।
প্রতিটি সন্তানের উচিত তার মমতাময়ী মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ নিঃস্বার্থ চিত্তে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা। সন্তানদের অনাকাঙ্খিত আর অকৃতজ্ঞতাই একজন মাকে কাঁদায়। একজন মায়ের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। একজন মা গোপনে কাঁদে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জীবনের অন্তিম সায়াহ্নে এসে শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকেন, একা হয়ে যান। সন্তানের ব্যক্তিগত জীবনের আকাঙ্ক্ষার কাছে পরাজয় ঘটে মানবিক আবেগের। এরপরও ‘মা’ তার সন্তানের মঙ্গল কামনা করে যান অবিরাম। মা মানেই যেখানে অশ্রু টলমল একটি মুখ প্রার্থনারত-‘আমার সন্তানের মঙ্গল হোক'। মা সে কেবল মা। তার তুলনা হয়না কখনও। মা তোমার সন্তান যেনো জীবনের ক্রান্তিকালে পাশে থাকে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.