নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার জীবনের যে সত্য কথাগুলো কেউ জানে না কিংবা কেউ মানে না সেগুলোই আপনার সম্পদ

মানবানল

Do not Dismiss Your Dreams, to be without dreams is to be without hope To be without hope is to be, without Purpose...

মানবানল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটি সাংঘর্ষিক!

১৪ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:২২

আইসিটি অ্যাক্ট আইনটি মূলত বাকস্বাধীনতা, দেশের ভাবর্মূর্তিবিরোধী, সরকারবিরোধী, সমালোচিত আইন হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। এই ধারাটি সংবাদপত্র ও নাগরিকের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে, যা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি৷ ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কতিপয় শর্তসাপেক্ষে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷
সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ আইনজীবীদের মতে, সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের ২ (ক)-এর সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক। এখানে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইসিটি আইনে তাতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৬ জুলাই এ আইন সংশোধনের আগে ৪৬ ও ৫৭ ধারা কেনো অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। তাতে বলা হয়েছিলো, ‘আইনের ৫৭ ধারায় ইলেকট্রনিক ফর্মে লেখা অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে।’ এ ধারামতে, ‘ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা, অশ্লীল বা যে প্রকাশনা দেখলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ উদ্দেশ্য মনে জাগতে পারে, তার জন্য জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু ব্যক্তি যে নীতিভ্রষ্ট বা তার মনে যে অসৎ উদ্দেশ্য জেগেছে, তা মাপার কোনো মানদণ্ড নেই।‘ যদিও পরে আর ওই রিটের রুলের শুনানি হয়নি। ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিধিমালায় ৫৭ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে। আইনের এ ধারাগুলো রাজনৈতিক ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান।
৫৭ ধারায় উল্লেখ করা মিথ্যা, অশ্লীল, মানহানিকর, উসকানিমূলক, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন কিংবা ধর্মীয় অনুভূতি—এ শব্দগুলো কোন কোন ধরনের কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। নির্দেশনাবিহীন এ শব্দগুলোর উপস্থিতি অবশ্যই আইনের অপপ্রয়োগকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া এ আইনের অধীন অপরাধগুলোকে জামিন অযোগ্য ঘোষণা করায় তা নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। এ ধারাগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যও হুমকিস্বরূপ, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিরও লঙ্ঘন। তাই এই কালো আইনটি বাতিল করার জোর দাবি জানাই..
গত মঙ্গলবার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব’র বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন মানিকগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এর আগে গত ৩ জুন শনিবার ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অবমাননার দায়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় রাঙামাটি শহরের চম্পকনগর এলাকার ছাত্রলীগকর্মী এহসান উদ্দিন ঋতু ছাত্র ইউনিয়নের শাওন বিশ্বাস ও চায়না পাটোয়ারীর নামে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় চায়না পাটোয়ারী এখন জেলে। রাঙামাটিতে এই দুজনের ফাঁসির দাবিতে হুজুরেরা মিছিলও করেছেন।
কি লিখেছিলেন ফেসবুকে শাওন বিশ্বাস ও চায়না পাটোয়ারী?
চায়না পাটোয়ারী লিখেছিলেন- 'ভাস্কর্য বসানোর ফলে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা গজব দিয়েছেন। সেই গজবের ফল "মোরা"। সবাই বলো আল্লাহ আকবার।'
শাওন বিশ্বাস লিখেছিলেন- 'আল্লাহর ইশারা ছাড়া নাকি গাছের একটি পাতাও নড়ে না। তাহলে সেই প্রেক্ষিতে বলি- হুজুররা কি ধর্ষণ করেন আল্লাহর অনুমতিতে?'
এই দুটো স্ট্যাটাসের কারণে ধর্ম অবমাননা হয়ে গেছে? অথচ এই রাঙামাটিতেই গত কয়েক দিন আগে পাহাড়িদের কয়েক শ' বাড়িঘর পোড়ানো হলো, তাতে ধর্মের কিছুই হলো না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে গত বছরের ২৮ অক্টোবর রসরাজ দাসের নামে আইডি খুলে এবং তা ব্যবহার করে কাবা শরীফ নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করা হয়। আর ওই পোষ্টকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরের হিন্দু জেলে সম্প্রদায়ের উপর চালানো হয় হামলা, নির্যাতন, বসতভিটায় অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন,‌ ভাঙা হয় কয়েক শ' মন্দির। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার করা হয় রসরাজ দাসকে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, রসরাজ দাসের ফেসবুকে 'কাবা শরীফ এর উপর ব্যঙ্গচিত্র' পোস্টে জেলে সম্প্রদায়ের উপর চালানো হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন সবকিছুতেই জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আইসিটি আইনে এই মিথ্যা মামলায় রসরাজের জেল এবং নাসিরনগরের শত শত জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এর সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের কিছুই হয়নি।
২০০১ সালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার জন্য সন্ত্রাসীদের হামলায় একটি পা হারানো একাত্তরের শহীদ পরিবারের সন্তান সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে ২০১৫ সালে (ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস প্রকাশ করার কারণে) ৫৭ ধারায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকার একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর শিকদার।
'আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন- 'আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন: ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা।'
ওই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রবীর শিকদারকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রবীর শিকদারের বাবাসহ তাঁর পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করে। আর সেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান প্রবীণ সাংবাদিক প্রবীর শিকদার কেন তাঁর জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে তাদের নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দিলেন, সেই কারণ না খুঁজে তাকেই গ্রেপ্তার করা হল।
তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বহুল সমালোচিত ৫৭ ধারা বাকস্বাধীনতার পরিপন্থীর কথা সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা আমলা মন্ত্রী স্বীকার করলেও তথ্যমন্ত্রী তা মানতে নারাজ। চলতি বছরের ২ মে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সরকার বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, "অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না। জামিন অযোগ্য ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের আর গ্রেপ্তার করা হবে না। নতুন ডিজিটাল আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ আইনে ৫৭ ধারার বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে। সরকারের অবস্থানকে স্পষ্ট করতেই ৫৭ ধারা সংশোধন করা হবে। নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এর অস্পষ্টতা দূর করার লক্ষ্যে শিগগিরই প্রতিমন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হবে।"
গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন মহল আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের জোরালো দাবি জানালেও বিতর্কিত ওই ধারার পক্ষেই বারংবার সাফাই গেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও নয়, মুক্তচি‌ন্তা ও মানবাধিকার পরিপন্থিও নয় বলে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
অনলাইনে সরকার এবং ধর্মবিরোধী লেখা ও পোস্ট আইআইজি এর মাধ্যমে বন্ধ করা হচ্ছে, গত ৮ জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে টেবিলে উত্থাপিত এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য জানান।
তারানা হালিম বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিটিআরসিতে BD-CSIRT, Bangladesh Computer Security Incident Response Team গঠন করা হয়, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধ দমনে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অসংখ্য সরকার বিরোধী ও ধর্মবিরোধী কনটেন্ট আইআইজি এর মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন আপত্তিকর পোস্ট বন্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তা অপসারণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, বিষয়টি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় আইনগত, কারিগরি ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৫৭ ধারায় সবচেয় বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননা ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে। রামুর মন্দির ভাঙা হলেও বৌদ্ধদের ধর্ম অবমাননা হয় না, নাসিরনগরে শত শত হিন্দুদের মন্দির ভাঙা হলেও হিন্দুদের ধর্ম অবমাননা হয় না, ওয়াজ মাহফিলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের গালি দিলে, সব ধর্ম ভুয়া আর ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম বলে মাইকে গলা ফাটালেও অন্যান্য ধর্ম অবমাননা হয় না। ধর্ম অবমাননা হয় শুধু ইসলাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু'একটা স্ট্যাটাস দিলে। এক বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে প্রতি বছর লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি, লক্ষ লক্ষ বেকার এসব নিয়ে লিখলে কেউ সরকার বিরোধী হয়ে যায়, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
প্রকৃত গণতন্ত্রে সরকারকে জণগনের আস্থা অর্জন করতে হয়, জনগনের আলোচনা-সমালোচনা শুনতে হয়। আর আমাদের দেশে সরকারের আস্থায় জনগনকে থাকতে হবে, সরকার জণগনের সমালোচনা করবে আর আমাদের তা শুনতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ৫৭ ধারায় লাল ঘর নিশ্চিত!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.