নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Do not Dismiss Your Dreams, to be without dreams is to be without hope To be without hope is to be, without Purpose...
কয়েক দিন আগে স্বপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাড়ি। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার। সুবিশাল দু’তলা বাড়ি। সামনে বিস্তৃত আঙিনা। বন্ধুর স্বামীটি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বহুজাতিক একটি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও। খুবই আন্তরিক ও মিশুক মানুষ। বন্ধুটি কোমল মনের গোছানো গৃহিণী। ছোট্ট শিশুসন্তান নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সুখী এক ছিমছাম পরিবার। বাড়িটিতে স্বামীর দিকের এক বৃদ্ধ পিসিমা ছাড়া আছে ‘আগস্ট’ নামে একটি আদুরে কুকুর। তাদের ভাষ্য, আগস্টও তাদের পরিবারের সদস্য। সম্প্রতি ঘটা করে তার জন্মদিনও পালন করা হয়েছে। যাই হোক, তুমুল আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ায় বেশ সুন্দর সময় কাটলো আমাদের। স্বামীটির একটি বিচিত্র শখ আছে। অফিস শেষে কিংবা ছুটির দিনে বাড়ির একটি ঘরে কাঠের কাজ করা, নানা রকম আসবাব তৈরি করা। নিজেকে কাঠমিস্ত্রি পরিচয় দিতে বেশ অহংবোধ করেন। বলাটায় একধরণের স্বাচ্ছন্দ্য আছে- যা আমার ভালো লেগেছে। একরকম জোর করেই আমাকে নিয়ে গেলেন তার সেই আসবাব তৈরির কারখানাটি দেখাতে। ঘরটি জিনিসে ঠাসা; নানা আকৃতির কাঠ, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ। দেশ-বিদেশ থেকে করাত-হাতুড়ি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি কেনা তার শখের অংশ। এমন ঘর সাধারণত নোংরা হয়; বসার অযোগ্য থাকে। তাই যেতে নিমরাজি ছিলাম শুরুতে। তবে আমার ধারণার চুলোয় জল।
দেখলাম, ঘরটি বেশ পরিপাটি করে গোছানো। শুনলাম, বন্ধুটি তার স্বামীর এ ঘরটি প্রায় দিনই গুছিয়ে রাখে। কথাগুলো লিখছি অন্য একটি কারণে। আমরা তো জানি, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ প্রবাদটি সম্পূর্ণতা পায় পরের লাইনটি যুক্ত হলে ‘যদি গুণবান পতি থাকে তার সনে’। যদিও অনেকে সেটি উল্লেখ করি না। পুরোটা চাপিয়ে দিই নারীদের ওপরই। তবে কথা হলো, গুণবতী বা গুণবান হলেই কি সংসারে সুখ নিশ্চিত হয়? সুখ তো কোনো পাটিগণিত অঙ্ক নয়, যা কষলেই ফল আসবে? এক্ষেত্রে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। সবার সঙ্গে সেটা না-ও মিলতে পারে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া, শেয়ারিং-এসব ভালোবাসার উপাদানগুলো সুখের নিয়ামক সত্যি, তার সঙ্গে থাকতে হয় কোমল প্রশ্রয় নামের একটা বোধ। ভালোবাসা তো আর নিউটনের আপেল নয়, যে গাছের তলায় বসামাত্রই টুপ করে এসে কোলে পড়বে। ওটা অর্জনের বিষয়। বন্ধুটিকে আপাত সুখের মনে হওয়ার পেছনে আমার চোখে যে বিষয়টি ধরা পড়েছে, তা হলো সেই কোমল প্রশ্রয়। স্বামীর পাগলামোকে গুরুত্ব দেওয়া, সেটার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। এখানে স্বামীটির জায়গায় বন্ধুটিও হতে পারতো। সেক্ষেত্রেও একই কথা।
ক’জন মানুষই-বা পারে তার সঙ্গীর এমন বিষয়কে নিজের করে নিতে? বিষয়টা একপাক্ষিক হলে যন্ত্রণাদায়ক এবং ক্ষণস্থায়ী-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা কথা প্রচলিত আছে, কবি’র বউকে কবিমনা না হলে বড়ো কষ্টের কারণ হয়। যেমনটা ঘটেছিলো জীবনানন্দের জীবনে। মৃত্যুর পর জীবনানন্দকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। সুধীন দত্তকে দেখে শোক-আবহে লাবণ্য দেবী বিস্মিত হয়েছিলেন। পাশের একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-“আচ্ছা, তোমার দাদা কি অনেক বড়ো লেখক ছিলেন? সুধীন দত্তের মতো মানুষ এলেন!” লাবণ্য দেবীর জন্য বড়ো করুণা হয়। একবারের জন্যও কি তার কৌতূহল হলো না তার সঙ্গীটি কী করেন, কী লিখেন? ট্রাংকের ভেতর ঠাসাঠাসি করে কী এমন গোপন জিনিস রাখেন? জীবনানন্দ অন্তর্মুখী স্বামী ছিলেন সত্যি। লাবণ্য তো বহির্মুখী স্ত্রী ছিলেন। তিনি দেখিতে গিয়াছেন পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছেন সিন্ধু। অথচ দেখা হয় নাই তাঁর চক্ষু মেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। সঙ্গীকে দেখতে হয় তার ভালো-মন্দ মিলায়ে সকল-ই। ভালোবাসতে হয় তার নিপাট সুস্থতা ও পাগলামোকেও। নইলে যে ব্যর্থতা গ্রাস করে সংসারে, তার আগুনে বালিশ-তোশকসহ পুড়তে হয় দু’জনকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত…
©somewhere in net ltd.