নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মাঝে মিশে থাকতে চাই, তবে কিভাবে শুরু করব তা ভাবতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। তাই, গান কবিতা এগুলোর আশ্রয় নিয়ে চলি নিজেকে আড়াল করে।

মায়াস্পর্শ

মনের বিপরীতে পার করে এসেছি সহস্রকাল, হঠাৎ এক উদ্ভ্রান্ত অবয়বে বেঁচে থাকি এপার ওপার।

মায়াস্পর্শ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তপু

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০

"আমার সাথে আর কথা বলবে না। তুমি একটা নিচু , শয়তান , আমাকে অবহেলা করো সবসময়। দূর হও এখান থেকে। তোমার মতো কয়েকজন কে আমার পকেটে রাখি। "
কথা গুলো গদগদ করে লিখে যাচ্ছিলো তপু ফোনের চ্যাটিং এপ্স থেকে ।
প্রতি সপ্তাহে এমন কিছু না শুনলে রায়হানেরও কোথায় জানি কিসের কমতি থাকে।

বলছিলাম এক লম্বা দূরত্বের প্রেম কাহিনী। ভার্চুয়াল এক এপপ্স থেকে পরিচয়, যেখানে দুজনই ছদ্দনামে পরিচিত হয়। কেউ কাওকে দেখেও নি। প্রথমে শুরু হলো চ্যাটিং দিয়ে ,এরপর বিভিন্ন কথা , আড্ডা , তারপর প্রণয়। রায়হান অবশ্য অতটা গোছানো ছিল না, ছন্নছাড়া টাইপের আরকি।

প্রণয়ের প্রথম প্রহরে যেমন হয় তেমনি চলছিল সব। রায়হানের কিছু বদঅভ্ভাস ছিল , যেমন নারীর মনের চেয়ে শরীরের প্রতি আকর্ষণ বেশি , ভালো কথা বলতে বলতে হটাৎ অশ্লীল বিষয়ে কনভার্ট করা ইত্যাদি ইত্যাদি । তবে সে যে খারাপ তাও কিন্তু নয়। হয়তো তার এ বিষয়ের কন্ট্রোল ক্ষমতা খুব কম ছিল তাই এমন করতো। প্রথম দিকে তপুও কিছু না বলে রায়হান যেমন করে কথা বলতো সেও একই স্রোতে গা ভাসাতো। তবে তার ভেতর সেক্সচুয়াল বিষয়গুলোর প্রতি তেমন অনুভূতি পাওয়া যেত না।

দিনের পর দিন একইভাবে চলতে লাগলো তাদের কথোপকথন।এক সময় দুজন দুজনের আসল নাম ঠিকানা , পরিচয় সব ই জানতে পারলো বিশ্বস্ততায়। প্রায় তিন মাস পর দুজন দুজনকে প্রপোজ করলো। প্রণয় থেকে ভালোবাসতে রূপ নিলো তাদের সম্পর্ক। এতে রায়হানের ভেতর কোনো পরিবর্তন আসে নি। সে আগের মতোই সেক্সচুয়াল বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিতে থাকলো। তপুর সে বিষয়ে অনুমতি থাকলেও অনুভূতি ছিল একদম শুন্য ছুঁই ছুঁই। সব ঠিকঠাক চলছিল।
ভালোবাসতে যেমন সুখ আছে তেমনি দুঃখও আছে, ঝগড়াও আছে। এই তিন মাস খুব ভালো ছিল তাদের সম্পর্ক। হটাৎ ই বাসা বাঁধলো সন্দেহের। আগেই যেহেতু বলেছি রায়হান একটু ছন্নছাড়া , তাই তপুকে যথা সময়ে রিপ্লায় না দিলে তপু পাগল হয়ে যায় , হওয়ারই কথা। রায়হান কেন জানি এটা বুঝেও পরিবর্তন হতে পারে না। সন্দেহের অগাধ স্তুপ এভাবে জমতে থাকলো তপুর মনে। দিনের মাঝে তেত্রিশ বার ঝগড়া হয় তাদের। ভালোবাসার চেনা রূপ শুরু হলো তাদের মধ্যে।
ভালোবাসা , ঝগড়া , প্রেম , আদরযত্ন কিছুই যেন পূর্ণতা পায়না তাদের। অতিদূরত্বে থেকে সত্যি ই ভালোবাসার পূর্ণতা পায় না। কাছে আসতে হয়। রায়হান ফোন বা চ্যাটিং এ অনেক কিছু বলে তপুকে। যেমন তোমায় কাছে পেলে এটা করবো, সেটা করবো আরো অনেক কিছু। তপু শুধু হেসে বলে, আচ্ছা করো। রায়হান তখন ও বুঝে উঠেতে পারেনি তপু তাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে। তার সব টুকু দিয়ে রায়হানকে ভালোবাসে। যেখানে দৃরত্ব কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারেনি। এর মাঝে তপু নিজের জমানো টাকা দিয়ে রায়হানের জন্য কিছু গিফট কিনে পাঠায়, যেখানে তপুর নিজে হাতে বানানো কিছু নাড়ু ও ছিল । যেখানে মেসেজ ছিল, ভালোবাসা হিসেবে গ্রহণ করতে। রায়হান কেন জানি অন্যরকম অনুভব করতে লাগলো। সামান্য কিছু পরিবর্তন এলো তার ভেতর। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। ভালোবাসা হিসেবে গ্রহণ করতে বলে , তপু আসলে তাকে কি বুঝিয়েছে তা নিয়ে রায়হান চিন্তা করতে লাগলো।

দিন চলে যায় ,আস্তে আস্তে পরিবর্তন আসে রায়হানের মাঝে। ভালোবাসার নামে সে কি অজাচার করেছে তপুর সাথে, আর সেই তপু কিনা তাকে ভালোবাসার চাদরে আগলে রেখেছে।
তপুর সন্দেহ করার কারণ সে বুঝতে পেরেছে , কারণ তার শুরুর আচরণ শুধু যৌনতায় ভরপুর ছিল। তপু কতটা ধৈর্য্য আর বিশ্বাস নিয়ে রায়হান কে ভালোবেসে গেছে তা বলা বাহুল্য। রায়হানের মাঝে পরিবর্তন আসে অনেক। সে এবার সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে ফেলে তপুকে। দুর্গ পুজোয় নিজেও কিছু গিফট কিনে পাঠায় তপুকে। তপুও সাদরে গ্রহণ করে ভালোবাসার গিফট গুলো।
প্রায় বছরখানেক পর রায়হানের কোনো এক কাজের উদ্দেশ্যে তপুর কাছাকাছি যেতে হয়। রায়হান জানায় তপুকে সে কথা। জানিনা তপুর মনে তখন কি চলছিল। বলে রাখা ভালো তপু একটা বাধা ধরা জীবনের মধ্যে ছিল। তাই চাইলেই যেকোনো সময় সে রায়হানের সাথে দেখা করতে পারবে না। সে দেখা করতে রাজি হয় না , কিন্তু রায়হান নাছোড়বান্দা। কিভাবে কি করবে তপু বুঝে উঠতে পারে না। অবশেষে তপু রাজি হয়। কাজ শেষে রায়হান সন্ধ্যার পর তপুকে আসতে বলে। যেহেতু জায়গাটা রায়হানের অপরিচিত তাই তপুই রায়হানকে বলে দেয় কোথায় দেখা করবে তারা।
দুজন আসে সেই জায়গায়। প্রথম দেখায় দুজনের মধ্যে এমন একটা অবস্থা সৃস্টি হয়েছিল যা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। সময়টা ছিল শীতের শুরুর দিকে। সন্ধ্যা আর রাতের মিলন যখন ঘটে তখন তারা দুজন দুজনের পাশাপাশি। একসময় রায়হান তপুর হাত টি ধরে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কেঁপে ওঠে তপু। রায়হানের বুক কাঁপছিলো সেসময়। কিছুক্ষন পর দুজন স্বাভাবিক হয়। এক নির্মল পরিবেশে বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর দুজনের হয়তো মনে মনে চাইছিলো দুজনকে প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরতে। হটাৎ রায়হান বলে ফেললো , রিক্সা করে ঘুরবো দুজন। তপু সায় দিল। রিক্সা নিয়ে হুড উঠিয়ে চলতে লাগলো একটা সুন্দর পথ ধরে। তপু কখন যে রায়হানের ঘাড়ের ওপর মাথা রেখেছে সে নিজেও জানে না। রায়হান একবার তার দিকে চেয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে তপুর ঠোঁটে একটা চুমু খেলো। তপু নিজেকে আরো শক্ত করে রায়হানের বুকে লেপ্টে ধরলো। কিছুক্ষন এভাবে যাওয়ার পর আবার সম্বিত ফিরে পেয়ে দুজন স্বাভাবিক হয়ে এল। যেন একটা ঘোরের ভেতরে এসেছে দুজন। এভাবে কিছু সময় পার হয়ে যায়। সুখের সময় গুলো বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না। রিক্সা থেকে নেমে আবার দুজন হাত ধরে হেটে হেটে কিছু সময় পার করল।
রাত বাড়তে থাকলো। বিদায় বেলাতে তপুর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। রায়হানের চোখ শুকনো। একটা রিক্সা নিয়ে দুজনে উঠে তপুকে তার বাড়ির সামনে নেমে দিয়ে এলো রায়হান।
তপু সেদিন রায়হানের জন্য রান্না করে এনেছিল পোলাও,খাসির রেজালা আর ইলিশ মাছ ভাজা।
যাওয়ার সময় খাবারের ব্যাগটা রায়হানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো খেয়ে নিও। অনেক ভালোবাসা দিয়ে রাঁন্না করেছি তোমার জন্য। রায়হান ব্যাগটা নিলো।
কিছুদূর এসে রায়হানের মনে হলো কিছু একটা ছেড়ে এলো সে। তার সেই ছেড়ে আসা জিনসটা আর কিছুই নয়, স্বয়ং তপু। তখন রায়হানের চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করলো সে আজকে তার ভালোবাসার বাস্তব রূপ দেখে। নিজের প্রতি বার বার লজ্জিত হলো তার পূর্বের অশালীন ব্যবহারের জন্য। যে কান্না দেখার সুযোগ হয়তো তপুর হয়নি।
দুজন দুজনার মতো আবারো দূরত্বে আবারো। চলছে তাদের প্রেম , ভালোবাসা , খুনসুটি , হাজার বার ব্রেকাপ , আবার জোড়া লাগিয়ে একত্র হওয়া। রায়হান বুঝেছে তপুর মহত্ব এবং উদারতা , যার কারণে সে নিজের ভেতরের অতিকামনাকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করে সুন্দর ভালোবাসার মুখ দেখতে পেরেছে।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫০

মিরোরডডল বলেছেন:




হ্যাপি এন্ডিং।


১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

মায়াস্পর্শ বলেছেন: :|

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০১

মিরোরডডল বলেছেন:




মন ভরেনি, তাই নাহ?


১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২২

মায়াস্পর্শ বলেছেন: না না , তা নয় । লেখা গোছানো নয় এটা। তাই আমি নিজেই কনফিউসড লেখা নিয়ে।

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৩

মিরোরডডল বলেছেন:



আই মিন মন্তব্যে।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৪

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আপনি আপনার মতো মন্তব্য করবেন। জোর করে আমি কিছু চাই না।

৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৮

মিরোরডডল বলেছেন:




ব্রিফ লিখতে হবে অনেক কিছু, কিন্তু ততটুকু সময় সামুতে দিতে পারছি না, তার ওপর বার বার রিফ্রেশ করা।
পেইজ দেখা না গেলে এভাবে লেখাগুলো পড়া এবং কমেন্ট করা নট ইজি।



১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৫

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আপনার সাথে কেন এমন হচ্ছে আমি বুঝছিনা। ব্লগের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন একবার।

৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:২২

মিরোরডডল বলেছেন:




লেখা কিন্তু অগোছালো লাগেনি।
রিক্সায় হুড তুলে প্রেম এই বিষয়টা কেন যেন আমার ভালো লাগে না, অনেকসময় লেখায় পড়ি বা শুনেছি।

এখন জানলাম অনেকের সাথেই পেইজ ভিউ হচ্ছে।

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৩

মায়াস্পর্শ বলেছেন: গল্প লেখা বড় দায়িত্বের বিষয়। আর হয়তো পারবো না লিখতে। নিজে সাটিস্ফাইড না হলে আসলে সেটা হয় না।

৬| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:২৩

মিরোরডডল বলেছেন:

***পেইজ ভিউ হচ্ছে সমস্যা হচ্ছে ***

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৪

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আমি একবারও পাইনি প্রব্লেম টা।

৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:১০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: বাস্তবতার নিরিখে লেখা। ভালোবাসার চেয়ে শারীরিক আকর্ষণ বেশি গুরুত্ব পেলে, একটা সময় সে সম্পর্ক পানসে হয়ে যায়। শুধু শারীরিক বিষয়গুলোই মাথায় ঘুরপাক খায়। তার চেয়ে অমন দূরে থাকা ভালোবাসাই বেশ।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৩৫

মায়াস্পর্শ বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সঠিক বলেছেন। আশা করি আমার অন্য লেখাগুলোও পড়বেন।

৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনি যদি উত্তর বঙ্গের মানুষ হয়ে থাকেন তবে সেখানের মাটি,প্রকৃতি,পেশা নিয়ে গল্প তুলে ধরুন। দারুন মিস করি আমার ছেলে বালার উত্তর বঙ্গে কাটানো দিনগুলো।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৫

মায়াস্পর্শ বলেছেন: চেষ্টা করব। ধন্যবাদ অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.