নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যোমকেশ বক্সী

ব্যোমকেশের ডায়েরী

আমি সত্যান্বেষী

ব্যোমকেশের ডায়েরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকে অন্তত একটু হাসুন...

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০০

ছোটবেলার খুব মজার একটা স্মৃতি...



২০০১ সাল, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি... ১১সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিখ্যাত “টুইন-টাওয়ার” ধ্বংস হয়ে গেছে সন্ত্রাসী হামলায়... এর যের ধরে আফগানিস্থানে আমেরিকার হামলা শুরু হয়েছে... এটা তাদের দুজনের ব্যাপার... কিন্তু আমাদের দেশের কিছু পেছন পাকা ইমাম-মুয়াজ্জিনরা শুরু করল ক্যাম্পেইন... মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছে অমুসলিমরা আফগানিস্থানে... চলুন আমরা সবাই জিহাদ করি... দলে দলে সেই দেশে যেয়ে যুদ্ধ করে আসি... আমি ছোট মানুষ এত কিছু বুঝি না... মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম, তখন কিছু কিছু হুজুর এমন জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে আমার মাথা বিগড়ে দিয়েছে... মরলে শহীদ,বাঁচলে গাজী... মারা গেলে বিনা হিসাবে বেহেশত... বেহেশতে কি কি অফার আছে তাও বলে, আমি বেশি ইন্টারেস্টেড ছিলাম হুরপরীদের নিয়ে (কারণ বেচে থাকলে বিয়ে করতে করতে প্রায় ৩০বছর লেগে যাবে... আগেভাগে মরে গেলে আমার তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে :P ) ... সোজা কথায় যাকে বলে মগজ ধোলাই... আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম... কিছুদিন এর মধ্যে আফগানিস্থানে চলে যাবো, বাসায় কাউকে না বলে... এজন্য শুরু হল কঠোর অনুশীলন... আম গাছ থেকে একটা শক্ত ডাল কেটে সেটা দিয়ে বন্দুক বানিয়ে ফেললাম... এই বন্দুকের নল দিয়ে গুলি বের হত না, বের হত আমার মুখ দিয়ে – ডি ডি ডি ডি ঢুস ধুম বুম ফটাস... যুদ্ধে যাবার চিন্তায় পড়াশুনা ততদিনে চাঙ্গে উঠে গেছে... আম্মা বিশাল চিন্তায় পড়ে গেছে... আমাকে আমার সিদ্ধান্ত থেকে কেউ একচুল নড়াতে পারছে না... যুদ্ধে আমি যাবই... না পেরে আম্মু আমার গৃহ শিক্ষক “বিকাশ” স্যারকে কি যেন বললেন... কিন্তু যত যাই হোক, আমার সামরিক মহড়া কিছুতেই থামছে না...



পরদিন সকালে শিক্ষাঙ্গনে গেলাম(শীতের সকাল)... একটু পরে #দীনবন্ধু_স্যার বাঘের মত হুঙ্কার দিয়ে ডেকে উঠলেন, “ক...............র্নে............ল” (স্যার আমাকে এই নামেই ডাকেন)... (একটু বলে রাখি, খুলনা শহরে ‘শিক্ষাঙ্গন’ কোচিং সেন্টার আর এর পরিচালক “দীনবন্ধু বিশ্বাস” স্যারকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর... আমার জীবনে এমন ভয়ঙ্কর রাগী, মারকুটে শিক্ষক আমি দেখি নাই... স্যারের সেই রাশভারি চেহারা, ক্রুর হাসি দেখলে যে কারোর পিলে চমকে যাবে...)



স্যারের ডাক শুনেই আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে গেছে... স্যারের এই হুঙ্কারের মানে আমি জানি, “নিশ্চিত আজকে কপালে দুঃখ আছে”... স্যারের কাছে যাচ্ছি আর চিন্তা করছি “গত কয়েকদিনে কি কি পাপ করছি”...

-কর্নেল

-জী স্যার...

-তুই নাকি লাদেনের সাথে যুদ্ধ করতে আফগানিস্থানে যাচ্ছিস???

কোচিং এর ভিতর তখন বিশাল হাসির রোল উঠে গেছে... সবাই দীনবন্ধু স্যার আর আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সার্কাস দেখছে...

কোন রকমে ঢোক গিলে বললাম, “জী স্যার... আগামী মাসে ফেলাইট”

স্যার তো তখন তেলে-বেগুনে জলে উঠেছেন... “তবে রে শয়তান” বলেই আমাকে তার বিখ্যাত মোটা লাঠি দিয়ে মারা শুরু করে দিয়েছেন... চড়,থাপ্পড়, কিল,ঘুসি চলছে..."ধুম-ধুড়াস-ঠাস-ঢিসুম-গেলাম-বাপরে মারে গেছিরে- চুপ- ইয়া বুম- ফটাস- ধসাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- হারামজাদা চুপ- আর আফগানিস্থানে যাবি- না স্যার, কানে ধরছি স্যার, আমি আমার মার কাছে যাবো... স্যার গো, আমারে ছাইড়া দেন স্যার..."



এভাবে প্রায় আধ-ঘণ্টা আমার উপর নির্যাতন চলল... মার খেয়ে তো আমি পুরো আধ মরা হয়ে গেছি... মাথার মধ্যে ততক্ষণে আফগানিস্থান, লাদেন-বুশ, সামরিক মহড়া, হুযুরদের বয়ান সবকিছু তালগোল পাকিয়ে কাঙ্গালি ভোজের খিচুড়ি হয়ে গেছে... :v :v



ঐদিন বাসায় এসে আমার সেই বন্দুক দিলাম চুলোর মধ্যে... বিকালে আসরের নামাজ পড়েই ফিরে আসতেছি, তখন একজন হুজুর বলে উঠল, “ফয়সাল, আজকে একজন বিশেষ ব্যক্তি আসবেন জিহাদ সম্পর্কে বয়ান দেয়ার জন্য... তুমি থাকবে না???”

এমনিতেই সকালের সেই হাই পাওয়ারের অসুধ তখনও হজম হয় নি... মেজাজও ছিল সেইরকম খারাপ... বললাম, “হ্লার পো... তুই যা জিহাদে... পারলে তোর চোদ্দগুষ্ঠি নিয়ে জেহাদ করতে যা... ফের যদি আমারে এইসব *লের কথা কইসিছ, তহন দেহিস আমি তোর কি করি...”

হুজুরের বয়স আমার থেকে তখনি দ্বিগুণ ছিল... আমার কথা শুনে তার উপ্রে মনে হয় ঠাটা পরছিল... হা করে আমার দিকে চেয়ে আছে... আর আমি গটগট করে হেটে যাচ্ছি... কারণ সকালবেলা স্যারের যে মার খেয়েছি, তাতে আমি যে আমার নাম ভুলে যাইনি, এই কত???

তারপর আবার জেহাদ, লাদেন, বুশ... আফগানিস্থান... ধুর ছাই >:o >:o >:o :v

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

ফা হিম বলেছেন: মার খেয়েই জিহাদের সখ মিটে গেল! =p~ =p~

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৯

শ. ম. দীদার বলেছেন: কিছু মনে করবেন না ভাই, আপনার গল্পটা প্রথমে যতটা না হাসির খোরাক জমিয়েছে, তারও অধিক ছিল কষ্টের তীব্রতা। প্রথমতঃ আমাদের বেড়ে উঠা, শৈশব, আমাদের চারপাশের পরিবেশ, একটা পুর্বারোপিত মূল্যবোধের চর্চার মধ্যেই আমাদের ক্রমবিকাশ। ফলে আমার চিন্তার জায়গাটা একটা সুনির্দিষ্ট ছকে বা ছাঁচে গড়ে উঠে। ফলাফল আপনি, আমি বা আমরা। আমিও এরকম একটি পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম, ঠিক আপনার বয়সেই।

দ্বিতীয়ত আমাদের স্যার। ঠিক এভাবেই যে বর্ণনাটা দিলেন, আমাদের ভেতর গড়ে উঠা একটা ধারণকে মাইরের মতন মহৌষধ দিয়ে সরিয়ে দেয়। ফলতঃ এইসব কাঠমোল্লা আর আকাঠ স্যাররা আমাদের কাছে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেন।

আমার সেই স্যারকে এখন আমি ঘৃণা করি। প্রকাশ্যে সমালোচনা করি। তার ছেলে যে এখন বেপথু তারে লেদাই।

এটাও আমি ভালো করে অনুভব করি এসবের দোষ আমার না, তাদের।

বেশি কিছু লিখে ফেললাম। নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম।

ভালো থাকবেন।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৩

ব্যোমকেশের ডায়েরী বলেছেন: শোনেন ভাই, উনি আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষক... আর এই ঘটনার পর সে আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে সবকিছু ভালভাবে বুঝিয়েছিলেন। কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো।

আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৪

মিজভী বাপ্পা বলেছেন: ভাই আপনার উপ্রে সেই রম ড্রন ফালাইছে :) যাক মজা পাইলাম +++++++++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.