নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যোমকেশ বক্সী

ব্যোমকেশের ডায়েরী

আমি সত্যান্বেষী

ব্যোমকেশের ডায়েরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘অজানা সুখ’

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

রাত ২টা বাজে। ছাদে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছি। আমার পাশে বসে আছে আমার রুমমেট, জহির সাহেব। তিনি সবাইকে জনাব বলে ডাকেন। তার আবার রাতে ঘুম হয় না। তিনি বললেন, “জানেন, নিলু ভাই... গত ১৫ বচ্ছর ধইরা রাতে ঘুমাইতে পারি না।”
আমি একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললাম, “ডাক্তার দেখিয়েছেন?”
-জি জনাব। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। লাভের লাভ কিছুই হয় নি... আমার আর একটা সমস্যা আছে??
-কি সেটা??
-রাত দুটো-আড়াইটার দিকে এমন খিদা লাগে ভাই। কি আর বলব। বিছানার কোল বালিশটাকে একটা সাগর কলা মনে হয়। মনে হয়, কভার খুলে খেয়ে ফেলি।
-বালিশের ভিতরে কি শিমুল তুলা??
-জি জনাব
-তাহলে খেয়ে ফেলতে পারেন। শিমুল তুলার ভিত্রে বীচি থাকে। বীচি কলার ফ্লেভার পাবেন।
-হেহে... জনাবের কথা শুনে বড়ই মজা পেলাম।
-আচ্ছা, আপনার এই ঘুমের ট্রিটমেন্ট কি আমাকে দিয়ে করাবেন??
জহির সাহেবের মুখ আনন্দে ঝলমল করে উঠল। বললাম, ‘কোনদিন পুলিশের মার খেয়েছেন?’
-জি না, জনাব।
-তাহলে চলুন আপনাকে তাঁদের মার খাওয়ায় নিয়ে আসি।
-মার খেলে কি ঘুম আসবে???
-আলবৎ আসবে
-তাইলে চলেন।
জহির সাহেব খুবই সিরিয়াস প্রকৃতির মানুষ। ঘুমের জন্য উনি সব কিছু করতে রাজি।
-আচ্ছা জনাব। আপনার পরিচিত কেউ কি আছে?? না মানে বলছিলাম কি, পরিচিত থাকলে মার খেতে সুবিধা হত আর কি।
-চলুন... যেয়েই দেখা যাক।
জহির সাহেবকে নিয়ে রাস্তায় বের হলাম। রাত তিনটা। মধ্যরাত রাত। রাতের বেলা পুলিশ খোঁজে চোর, বদমাইশকে। আমরা খুঁজতে বেরিয়েছি পুলিশ।

মামাবাড়ি যাওয়ার সময় আমাদের যেমন আনন্দ হয়, জহির সাহেবেরও তেমন আনন্দ হচ্ছে। তবে তিনি বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারেন না।
-জনাব, আপনাকে তিনটা হাসির কৌতুক বলি। হাসতে হাসতে কিন্তু আপনার পেটে খিল লেগে যাবে। হেহে...
আমি কোন রকম উৎসাহ না দেখিয়ে বললাম, বলেন। আমি জানি, উনি যখন কৌতুক বলতে চেয়েছেন তখন আমাকে শুনিয়েই ছাড়বে। তবে ভদ্রলোক তিনটা নয়, পাঁচটা শোনালেন। চার নম্বরটা ফ্রি, পাঁচ নম্বরটা ফাও। আমি আমার জীবনে এত অখাদ্য কৌতুক বলিয়ে জীবনেও শুনি নাই। পাঞ্চ লাইন বলার আগে নিজেই হেসে কুটি বাটি হয়ে যাচ্ছেন।
আমরা প্রায় বড় রাস্তার কাছে চলে এসেছি। একটু দূরে একটা কুকুর ঘুরঘুর করছে। জহির সাহেব আবার কথা বলা শুরু করেছেন, “আচ্ছা জনাব, কুকুরটা পুরুষ না মহিলা?”
-যান চেক করে আসেন।
উনি বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে চেক করতে গেলেন। ফিরে এসে কান পর্যন্ত হেসে বললেন, ‘ভাইজান, কুকুরটা পুরুষ। রাত বিরাতে মেয়েছেলেরা বাইরে থাকে না।’
এতদূর আসার পরেও এখনও কোন পুলিশের দেখা পেলাম না। শহরের পরিস্থিতিও ভালো না। সব সময় শুধু পেট্রল বোমার আতঙ্ক।
-নিলু ভাই, পুলিশ কই?
-সামনেই পেয়ে যাব। দোয়া ইউনুস পড়তে থাকেন।
জহির সাহেব জোরে জোরে দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করে দিয়েছে।
-আচ্ছা, জহির ভাই...
-জি জনাব
-পুলিশ তো কোন ক্রাইম ছাড়া কাউকে মারে না।
-তাও তো ঠিক। কি করা যায় জনাব?
-আপনার পায়ের কাছের বড় ইটটা হাতে নিন। ওটা দিয়ে ক্রাইম করতে হবে।
-জনাব, বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলি?
-বলেন...
-আর একটা ইট নেই। দুইটা ইটে দুইটা ক্রাইম। ডাবল ইফেক্ট হবে।
-নেন
জহির সাহেব দুই হাতে দুইটা ইট নিয়ে আমার পিছন পিছন হাঁটছেন। তিনি এক মুহূর্তও চুপ থাকতে পারেন না, “জনাব আজকে কি হরতাল?”
-আপনি দেখি কিছুই জানেন না। কবি বলেছেন ‘ককটেল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ হরতাল’। মানুষজন হরতালে বেতাল হয়ে গেলেও রাজনীতিবিদদের কোন চিন্তা নেই।
-জনাব আমি কি এই কারণে একটা গান গেতে পারি। রবীন্দ্র সঙ্গীত। ক্লাস সিক্সে থাকতে একবার গান গেয়ে মেলামাইনের প্লেট পেয়েছিলাম।
জহির সাহেব গান গাওয়া শুরু করলেন। ‘বল দাও, প্রভু মোরে বল দাও’। আসলেই এখন ওনার খুব বল প্রয়োজন। মানসিক, শারীরিক দুটোই।
-আচ্ছা, ভাই আপনি নির্ভয় দিলে আর কথা বলি?
-লুঙ্গিটা মালকোঁচা মেরে নেই। তা না হলে বারবার খুলে যাচ্ছে।
-আচ্ছা মারেন।
ভদ্রলোক বেশ টাইট করে টারজান স্টাইলের মালকোঁচা মারলেন। ‘ভাই আর একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
-করেন
-পুলিশের সাথে দেখা হলে কি কদমবুচি করব?
-অবশ্যই করবেন। পুলিশরা হচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মত। সব সময় মাখনের মত মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলবেন। বুঝেছেন? বুঝলে হ্যাঁ বলেন।
উনি, হ্যাঁ বললেন। কিন্তু তার খুব আফসোস হচ্ছে। রাতের বেলা কোন মিষ্টির দোকান খোলা নেই। তাহলে দু’কেজি মিষ্টি কিনে নেওয়া যেত।

মোহাম্মদপুরের দিকে খিলজি রোড দিয়ে হাঁটছি। আরও এমন কয়েকটা রাস্তা আছে। যেমন, তাজমহল রোড, মমতাজ রোড, বাবর রোড। এইদিকে আসলে নিজেকে মোঘল আমলের লোক বলে মনে হয়। ও হ্যাঁ, মোঘল আমলের কথা মনে আসায়, মমতাজ রোডের শাহজাহান টি-স্টল এর কথা মনে পড়ল। দোকানটা সারারাত খোলা থাকে। চায়ের টেস্ট এক কথায় অমায়িক।
আচ্ছা, এমন যদি হত সম্রাট শাহজাহান – কোন এক চিপায় বসে টঙের দোকানে বসে চা বিক্রি করছে। টাকে যেয়ে কুর্নিশ করে বলতাম, ‘সালাম জাহাপানা...’
শাহজাহান সাহেব মুখ বিকৃত করে বলত, ‘ধুর মিয়া। এখন আর জাহাপানা নাই। নিজেরে কচুরিপানা মনে হয়।’
-কেন ভাই সাহেব?
-আর কইয়েন না মামা, পোলা গুহায় লাথথি দিয়া বাইর কইরা দিছে।
-দেয়ারই কথা। আপনি অকারণে এত টাকা খরচ করে একটা মহল বানাইলেন। তাতে ফায়দা কি হল। দেশে তো দুর্ভিক্ষ বাধায় দিছেন। এই অপচয় না করে যদি কিছু হাসপাতাল বানাতেন তাও লাভ হত।
শাহজাহান মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আরও শাসন করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু জহির সাহেব বা হাতটা ঢুকিয়ে দিলেন, ‘জনাব, আমরা কোনদিকে যাচ্ছি?’
-আমরা একটা ছোট্ট চা পানের বিরতি নিব। শাহজাহান টি-স্টলে।
-আচ্ছা জনাব।
জহির সাহেব কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি সেদিকে কর্ণপাত করছি না। আসলে এই লোক রেডিও জকিদের মত অনর্গল কথা বলতেই থাকে। আমি আবার শাহজাহান এর দিকে মন দিলাম। শাহজাহানের কথা মনে আসায় একটা কথা মনে আসল, ‘কানা ছেলের নাম, পদ্মলোচন’। নাম বাদশার, বিক্রি করে চা। নাম আর কামে আকাশ পাতাল তফাত। অবশ্য যাত্রাবাড়ীতে একজন কানা ভিক্ষুক আছে, “সম্রাট মোল্ল্যা”। গনপজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের খাম্বার নিচে দাড়ায় দাড়ায় ভিক্ষা করে। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘তোর নাম রেখেছিল কে?’
সম্রাট চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলল, আমার দাদিজান। বড়ই পরহেজগার মহিলা ছিলেন। পার্ট টাইম ভিক্ষা করতেন। নিজের হাত খরচ চালানোর লাইগা। এইটা অবশ্য আমাগো ফ্যামিলি বিজনেস। আমার বড় ভাই ভিক্ষা করতে মালয়শিয়া গেছেন। একটু খাস দিলে দোয়া কইরেন ভাইজান। আল্লাহ পাক যেন তাকে সহিহ সালামতে রাখে।
কদিন আগেই সম্রাট বিয়ে করেছে। বিয়ের দাওয়াতেও গিয়েছিলাম। তার বেগম সাহেবা বংশীয় মেয়ে। ফার্মগেট এলাকার সবচেয়ে নাম করা ভিক্ষুক – আলাউদ্দিন খা’র মেয়ে। মেয়ের ডিফেক্ট তেমন নাই বললেই চলে। বা হাতটা লুলা আর ডান চোখটা কানা। তাঁদের নাকি ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই ফেসবুক চালাস ক্যামনে?’
-ফেসবুক চালানোর জন্য একটা পোলা রাখছি। পার ডে ৫৬টাকা। আইডির নাম “King Samrat (The Wonder Boy)” ... ভাই আপনি একটা রিকু পাঠায় দিয়েন। ফ্রেন্ডলিস্ট প্রায় ফুল হইয়া যাইতেছে।
-আচ্ছা... দিবনে
সম্রাট যৌতুক হিসাবে ভিক্ষা করার একটা জায়গা পেয়েছে। হাই-কোর্ট মাজারের পাশে। তার সুমন্ধির পাশে বসে ভিক্ষা করে।
আরও অনেক কথা মনে পড়তে যাচ্ছিল। জহির সাহেবের কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। তার নাকি ভয়াবহ পিসাব চাপছে। আমি অনুমতি দিলে সে পিসাব করতে যাবে। তাকে অনুমতি দেয়া হল।

(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

রহস্যময় ডিটেকটিভ ঈশান বলেছেন: অসাম হয়ছে ব্রো।পরের আংশের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩

ব্যোমকেশের ডায়েরী বলেছেন: ওকে ভাই

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

িত্রস্তান বলেছেন: আরে ভাই, আপনি তো মারাত্মক লিখেন! হুমায়নু আহমেদ স্যার আমার একজন পছন্দের লেখক ছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন উনার কোন লেখা পড়তেছি। খুব ভালো লাগল। বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম। ভাবতেছি, কমেন্ট শেষে আপনার অন্যান্য লেখাগুলি পড়ে আসব।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

ব্যোমকেশের ডায়েরী বলেছেন: খুব তাড়াতাড়িই পাবেন পরের অংশ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.