নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে নিয়ে লেখার মত আপাতত কিছুই নেই। যেদিন লেখার মত কিছু অর্জন করতে পারবো সেদিন না হয় সময় করে লিখে ফেলবো।

অতঃপর হৃদয়

অতঃপর একটি কাল্পনিক চরিত্র

অতঃপর হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মশা ও মাছি

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৮


সকাল থেকে মশা ছুটোছুটি করছে। চার পাশে এত কাজ পড়ে আছে তবুও তার যেন চেয়ে দেখার সুযোগ নেই। মশার ছেলে মেয়ে অসুখে আধমরা হয়ে গেছে তাই চিন্তার কোন শেষ নেই তার। সকালে নাস্তা শেষ করেই আবার তার ছুটোছুটি শুরু হয়েছে। মশা কোথায় যেন যাবে তাই দ্রুত গতিতে চলছে। রাস্তায় মাছির সাথে দেখা। মাছি মশা কে দেখেই এগিয়ে এলো-
-কিরে মশা কি খবর?
-আমার কথা কি আর বলবো। ছেলে মেয়ের জ্বর হয়েছে তাই ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি।

-জ্বর হলো কি করে?

-আর বলিস না ভাই। সেদিন কোথা থেকে বাড়ীওয়ালা দামি কয়েল এনেছিল কে জানে। মনে হয়, সেই কয়েলের ধোঁয়ার জীবাণুর জন্য আজ আমার ছেলে মেয়ের এই অবস্থা। আমি ভেবেছি থানায় এফ আই আর লেখাব। তারপর বাড়ীওয়ালা কে দেখে ছাড়ব। পরিবেশের এত ক্ষতি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তোর কি অবস্থা?

-আমার আর অবস্থা। আশে পাশের মানুষ সতর্ক হয়ে গেছে তাই সব খাবার ঢেকে রাখে। তাই আমার কপালে ঠিক মত খাবারও জোটে না। তুই ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে আয় তারপর দুজনে বুদ্ধি পরামর্শ করে ভেবে দেখব কি করা যায়।

মশা মাছির সাথে কথা বলা শেষ করেই আবার দ্রুত গতিতে হেঁটে চলল। মশা বিড়বিড় করতেছে আর বলতেছে তার ছেলে মেয়ের তো দূরের কথা তাদের বাপ দাদারও এর আগে এমন জ্বর হয়নি। বাড়ীওয়ালা কি পেয়েছে আজ দেখেই ছাড়ব। আমাদের উপর এত অত্যাচার কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

মশা ডাক্তারের বাসার সামনে এসেছে। ডাক্তারের বাসার সামনে বড় করে সাইনবোর্ড দেয়া আছে। তাই মশার চিনতে কোন অসুবিধে হয়নি। বাসার গেটে দাঁড়িয়ে মশা ডাক্তার কে ডাকল। ডাক্তার মশাই ও ডাক্তার মশাই বাসায় আছ নাকি? ডাক্তার বেড়িয়ে এলো। ডাক্তার মশাইয়ের চোখে কাল রঙয়ের মোটা ফ্রেমের চশমা তাই মশা কে চিনতে কোন অসুবিধে হলো না।
-কিরে মশা এত জোরে চিৎকার করছিস কেন? কি হয়েছে?
-ডাক্তার মশাই আমার ছেলে-মেয়ের খুব জ্বর। ওরা বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। দয়া করে আপনি যদি একবার দেখে আসেন ওদের।
-তা হলো কি করে এমন জ্বর?
-ছেলে-মেয়ে গুলো রাতে একটু রক্ত খেতে গেছিল কিন্তু মনেহয়, বাড়ীওয়ালার দামি কয়েলের জন্য এমন অবস্থা হয়েছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুই বাড়িতে যা, আমি কিছুক্ষণ পরে আসতেছি।

মশা ডাক্তারের বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মশা আর মাছির বাড়ি পাশা পাশি। তাদের মাঝে মিলেরও কোন কমতি নেই। দুজনে রোজ একসাথে খাদ্যের জন্য বের হয়। মশার যদিও খাটুনি বেশি তবুও সে আনন্দের সাথে খাদ্য অনুসন্ধান করে। মারা পরার ভয় মশার বেশি মাছির থেকে। মাছি খোলা খাবারে মুখ দিয়ে খাবার খায় কিন্তু ইদানিং আশে পাশের মানুষ সচেতন হয়েছে তাই সব খাবার ঢেকে রাখে। মাছি বেশ কিছুদিন থেকে ঠিক মত খাবার খেতে পারছে না। তাই দুঃখের কোন শেষ নেই তার। এর আগে এমন খাদ্যের অভাবে সে পড়েনি। প্রতিটা নিউজ চ্যানেলে, পত্রিকায় খোলা খাবার ঢেকে রাখার জন্য বলা হয়েছে। ওরা খাবার ঢেকে রাখতে বলল কেন। এই নিয়ে মাছির রাগের কোন শেষ নেই।

ডাক্তার মশার বাড়িতে এসেছে। মশার ছেলে-মেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ডাক্তার মশার ছেলে-মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পেরেছে যে, গুড নাইট কয়েলের ধোঁয়ার জীবাণুর জন্য এমন হয়েছে। ডাক্তার সবটা মশা কে বুঝিয়ে বলল। মশা আগেই ভেবেছে, হয়ত কয়েলের জন্যই এমন হয়েছে তার ছেলে-মেয়ের। ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে চলে গেল।

মাছি এসেছে মশার বাসায়। মশার ছেলে-মেয়ে অসুস্থ তাই তাদের দেখতে এসেছে সাথে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে এসেছে পথ্য হিসেবে। মশা আর মাছি বুদ্ধি পরামর্শ করার জন্য বারান্দায় বসেছে। মশা মাছি কে বলল, এরপর খুব সাবধানে চলতে হবে। ছেলে মেয়ের অসুখে অনেক টাকা খরচা হয়ে গেল। মাছি বলল, দেখ তোকে কে বলেছে বাড়ীওয়ালার ঘরে ছেলে-মেয়েকে পাঠাতে? এরপর আর ও বাড়িতে পাঠাবি না ওদের। ঘরে ঢোকার আগে দেখবি কোথাও কয়েল লাগান আছে কিনা যদি থাকে তাহলে ও বাড়িতে যাবি না। যেখানে পরিবেশ ভাল মনে হবে সেখানে যাবি। মশা বলল, ঠিক আছে আমি সব কথা ছেলে-মেয়েকে বুঝিয়ে বলব যাতে ওরা খুব সাবধানে চলে। মাছি মশা কে আরো কিছু উপদেশ দিয়ে বেরিয়ে এলো।

মাছি চলল তার খাবারের খোঁজে। খাবার খুঁজতে খুঁজতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। সবাই এখন অনেক সতর্ক তাই খাবার ঢেকে রাখে। এখন খাবার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মাছি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই স্থান ত্যাগ করবে। মশাকে বলেছে সে তার সাথে যদি যেতে চায় তাহলে যেন সব গুছিয়ে রাখে। মশাও মাছির সাথে অন্য স্থানে যাবে জন্যে সব ঠিক ঠাক করে রেখেছে।

আজ তারা এই স্থান ত্যাগ করবে। অন্য কোন ভাল জায়গায় যাবে। যেখানে খাবারে কোন সমস্যা হবে না। ঠিক মত খেতে পাবে এমন জায়গা খুঁজে পেয়েছে মাছি। তাই সে মশাকেও সঙ্গী হিসেবে নিয়েছে। মাছি মশার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সেখান থেকেই সব কিছু নিয়ে রওনা হলো নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। চার পাশ অন্ধকার কিছুই ভাল করে যাচ্ছে না। মাছি বাড়ির ঠিকানা খুব ভাল করে লিখে নিয়েছে। ব্যাগ থেকে বাড়ির ঠিকানার কাগজ টা বের করে দেখে নিল যে ঠিক ঠাক আছে কিনা। মাছির হাতের কাগজে বড় বড় করে লেখা ‘নাহার মঞ্জিল’। কিন্তু এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজেতে খুঁজতে পাচ্ছিল না বাড়িটা। এক ঘন্টা খোঁজার পর অবশেষে তাদের নতুন গন্তব্য ‘নাহার মঞ্জিল’ খুঁজে পেল। গেটে দারোয়ান আছে। সব মিলিয়ে বাড়িটা দারুণ। মাছি বলল, এখানে যে মানুষ গুলো থাকে তারা খাবার ঢেকে রাখেনা। তাই শান্তি মত খাবার খেতে পারব। আর হ্যা মশা শোন, এখানে কেউ কয়েল জ্বালায় না তাই যত খুশি রক্ত খা কোন সমস্যা নেই। যদি এখানে কোন সমস্যা হয় তাহলে আরেকটা জায়গা আছে ওখানে চলে যাব। মশা মাছি এবং মশার ছেলে-মেয়ে গেট দিয়ে ঢুকে ‘নাহার মঞ্জিলের’ ভেতরে চলে গেল। অনেক কষ্টের পর সেখানেই তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.