নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে নিয়ে লেখার মত আপাতত কিছুই নেই। যেদিন লেখার মত কিছু অর্জন করতে পারবো সেদিন না হয় সময় করে লিখে ফেলবো।

অতঃপর হৃদয়

অতঃপর একটি কাল্পনিক চরিত্র

অতঃপর হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শীতকালে গরিবের একদিন

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০০


ক'দিন থেকে শীতল হাওয়া বইছে। শীতও পড়েছে ভীষণ। শীতকাল কারো জন্য ভালো আবার কারো জন্য অভিশাপ। আমার জন্য কেবল অভিশাপই বলা চলে। যখন দেখি প্রচণ্ড শীতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে তখন অজানা এক ভয় মনের ভিতরে এসে জায়গা দখল করে ফেলে। আজ আমার কিছু হয়ে গেলে নীলার কি হবে সেটা ভাবতেই চোখে জল চলে আসে। আবার নীলার কিছু হয়ে গেলে আমিই বা একা একা থাকবো কি করে। যেখানে যাই দুজন যেন একসাথে যাই।

আজ খুব শীত পড়েছে। বাসা থেকে বের.হতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বের তো হতেই হবে না হলে না খেয়ে কাটাতে হবে। আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমার কর্মস্থলে। সবাই শীতের কাপড় পড়েছে কেবল আমিই পড়িনি। আর শীতের কাপড় থাকলে তো পড়বো। আমার পড়নে হালকা কাপড়। আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি সবাই আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কেউ একজন বলেই ফেলল তোমার ঠাণ্ডা লাগছে.না? আমি হাসি মুখে বললাম না। না শব্দটা উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়েছিল তবুও বললাম। আমি দোকানে গেলাম যেখানে আমি কাজ করি, গিয়ে দেখি দোকান.আজ বন্ধ। পাশের দোকানদার কে বললাম কিসের জন্য দোকান বন্ধ সে বললো, প্রচণ্ড শীত পড়েছে তাই আজ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।

সকালে বাসা থেকে কিছু খেয়ে বের হইনি তাই খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু পকেটে টাকা নেই, আর বাসায়ও খাবার নেই। পাশের এক ভাপা পিঠার দোকানে গিয়ে বললাম, এই যে ভাই আমাকে একটি ভাপা পিঠা খেতে দেবেন। আজ আমার কাছে টাকা নেই কাল কে কাজ করে দিয়ে দেব। পিঠার দোকানি বললো, আজ বেচাকেনা খুব বেশি হচ্ছে তাই আজকে বাকি দেবে না। আর কিছু না বলে চলে এলাম সেখান থেকে।

হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলাম। এক মসজিদে গেলাম, সেখানে ৩ দিনের সফরে এসেছে অনেক ইবাদতকারী ভাইয়েরা। আমি মসজিদের ভেতরে গিয়ে বসলাম, মসজিদের বাহিরে রান্না হচ্ছে। ভাবলার আর কিছুক্ষণ পর সবাই খেতে বসবে তখন আমিও বসলে খেতে পারবো। সকাল থেকে কিছু খাইনি তাই ক্ষুধা ভালই পেয়েছে। আজকে দোকানও বন্ধ কাজও করতে পারলাম না। মসজিদের ভেতরে বসে বসে ভাবছি আমি এখানে খেলে রাত কাটিয়ে দিতে পারব, কিন্তু আমার স্ত্রী নীলা কি খাবে। গরিব ঘরের মেয়ে বলে কখনো অবহেলা করিনি। আমি নিজেও গরিব, তাই গরিবের কষ্ট বুঝি। ২ বছর হয় বিয়ে হয়েছে নীলার সাথে। অনেক কথা ভাবছিলাম এমন সময় খাবারের জন্য ডাকা হলো। আমিও উঠে গিয়ে খাবার দেওয়ার জায়গায় বসে পড়লাম। আমাকেও একটা প্লেট দেওয়া হলো, প্লেট পানি দিয়ে ধুয়ে নিলাম। সবাইকে এক এক করে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত দিতে লাগল। এবার আমি আমার প্লেট টা এগিয়ে দিলাম। যে ভাত দিচ্ছে সে আমাকে বললো, তুমি তো আমাদের সাথে আসোনি। তুমি খেতে বসেছ কেন? আমি তখন সব কথা খুলে বললাম। কাজে যেতে পারি নি, সকাল থেকে খাইনি। আমার কথা মনে হয় সে শুনতে পায়নি, এমন ভাব করতে লাগল। আমাকে পরে তিনি বললো, আজ আমাদের লোক সংখ্যা অনুযায়ী রান্না করা হয়েছে তাই আজ তোমাকে খেতে দিলে কম পড়বে, তুমি এখন আসতে পারো। আমি প্লেট টা রেখে মসজিদের টিউবওয়েল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে চলে এলাম।

মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম বাসায় যাই নীলা একা একা কি করছে কে জানে। উপজেলার সামন দিয়ে আসতেছি দেখলাম এম পি মহাশয় গরিবদের কম্বল বিতরণ করছে। আমি এগিয়ে গেলাম গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবলাম, একদিন না খেয়ে থাকি সমস্যা কি, যদি একটা কম্বল পাওয়া যায় তবে রাতে আর শীতে কষ্ট করতে হবে না। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আর দেখছি যার কম্বল আছে পরিবারের অবস্থাও বেশ ভাল তাকেও কম্বল দিচ্ছে। একাণ্ড দেখে মনে পড়ে গেল সেই গানের লাইন, যার আছে যত বেশি তারে দাও তত খুশি...ও বিধি তোমার কি দয়া মায়া নাই। কম্বল আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাচ্ছে, কম্বল যাচ্ছে যাদের কম্বল আছে তাদের ভাগে আর যারা গরিব যাদের কম্বল নেই তাদের নামই ডাকা হচ্ছে না। বিকেল হয়ে গেল, এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু নাম আর ডাকা হচ্ছে না। এদিয়ে কম্বল শেষ হয়ে গেল, অনেক মানুষ কম্বল ছাড়াই বাড়িতে চলে গেল। মন খারাপ করে চলে এলাম সেখান থেকে। গরিবের মন খারাপ করা সাঁজে না তবুও মন খারাপ হয়। বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় হাঁটছি কিন্তু মনে হচ্ছে রাস্তায় পড়ে যাব, সারাদিন কিছু খাইনি।

অবশেষে বাসায় চলে এলাম। নীলা বসে আছে আমার জন্য, আমি নীলাকে গিয়ে বললাম কিছু খেতেছ তুমি। নীলা বলল তোমার জন্য অপেক্ষা করছি কখন আসবে। আমি বাসায় গিয়ে বসে পড়লাম চেয়ারে এমন সময় নীলা এক প্লেট ভাত আর পোড়া আলুর ভর্তা নিয়ে এলো। আমি অবাক হলাম আর নীলা কে বললাম কোথায় পেলে এগুলো। নীলা বললো, অল্প কিছু চাল ছিল, আর পাশের বাসা থেকে আলু চেয়ে এনেছি। তাই ভাত রান্না করেছি আর ভর্তা বানিয়েছি। নীলাকে বললাম তুমি খেয়েছ কিছু, সে মুখ নাড়িয়ে বলল না। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। নীলাকে পাশে বসালাম আর আমি ভাত ভর্তা দিয়ে মেখে ওকে খাইয়ে দিলাম আর আমি নিজেও খেলাম। সারাদিনের সব কথা নীলাকে বললাম। নীলা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, আমিও কাঁদছিলাম। কিন্তু আমাদের এই গরিবের কান্না আর কে শুনবে ঘরের চার দেয়াল ছাড়া। রাত প্রায় ৯ টা বেজেছে। সারাদিনের সব ক্লান্তি ভুলে নীলা আর আমি ঘুমাতে গেলাম। বাড়িতে একটি মাত্র কম্বল। এক কম্বলের নিচে নীলা আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছি বলতে পারবো না। গরিবরা খুব ভালো স্বপ্ন দেখতে জানে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৩

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: খুব মর্মান্তিক।এমন বঞ্চিত মানুষ আমাদের সমাজে অহরহ।এদের দেখার জন্য কেউ নেই!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: হ্যা, আমাদের সমাজে এ রকম হাজারো মানুষ আছে তারা এই শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে কিন্তু কেউ কোন সাহায্য করতেছে না।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.