নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগ্রাসনঃ ধর্মই যেখানে শোষণের মূল হাতিয়ার

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬



কারো উপর কারো কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়া বা কোন কিছু জোর করে ছিনিয়ে নেয়া বা চাতুরীর মাধ্যমে কোন কিছু হরণ করাকেই আমরা আগ্রাসন বলতে বুঝি। আপনার দেশের সীমানা এত বড় নয় ভাবছেন আরেকটু বড় হলে নেহায়েত খারাপ না, আপনি পাশের রাষ্ট্রটিকে জোর করে দখল করে নিলেন বা তার কিছুটা অংশ নিজের দেশের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন তাকেই আমরা বলি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন।
আগ্রাসনের এই শ্রেণী প্রক্রিয়ায় আছে অনেক বিভাজন, যেমন ব্যাপারটা আর্থিক হলে অর্থনৈতিক আগ্রাসন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক হলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। কিন্তু আগ্রাসনের এই শ্রেণী বিভাজনে আমরা বেমালুম ভুলে যাই আরেকটি ভয়াবহ আগ্রাসনের কথা। আর তা হল ধর্মীয় আগ্রাসন। ধর্ম প্রচারকরা বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে এটা যে একটা ছল চাতুরীর মাধ্যমে আগ্রাসন সেই ব্যাপারটাই ভুলিয়ে দিয়েছেন।

অন্যান্য আগ্রাসনগুলোর প্রভাব স্মরণ কালের হলেও ধর্মীয় আগ্রাসনের প্রভাব স্মরণাতীত কালের। ধর্ম প্রচারকেরা এই ব্যাপারটা বেশ ভাল্ভাবেই উপলদ্ধি করে ছিলেন। কারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগতের প্রভাব তাঁর প্রাত্যহিক জীবনে অনিদির্ষ্ট সময়ের জন্য সূদুর প্রসারী ছাপ রাখে।

আসুন জেনে নেয়া যাক ধর্মীয় আগাসনে একটি দেশ বা গোষ্ঠী কিভাবে এবং কোন কোন প্রক্রিয়ায় লাভবান হতে পারে।

আমরা প্রধান প্রধান কয়েকটি ধর্মের প্রসঙ্গে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

হিন্দুঃ
সনাতন ধর্ম হিসেবে হিন্দু ধর্ম অতি প্রাচীন। স্মরণাতীত কাল থেকেই এই ধর্মের বিশ্বাসীরা অনুসরণ করে আসছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে। তারপর বিভিন্ন এই প্রাকৃতিক শক্তিকে বিভিন্ন মানুষের বা জীব-জন্তুর চেহেরার কাল্পনিক রূপ দিয়ে পূজা অর্চনা শুরু করে দেয়।

আমরা জানি হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় ৪ টি শ্রেণী বিদ্যমান। ব্রাক্ষ্ণ, ক্ষৈত্রীয়, বৈশ্য ও শুদ্র। আমরা এখন শ্রেণী বিভাজনের এই কারণগুলো সংক্ষেপে অনুসন্ধানের চেষ্টা করবো। লক্ষ্য করুন হিন্দুদের এই শ্রেণী বিভাজনে কিন্তু শাসক গোষ্টী তথা ক্ষৈত্রীদের কৌলীন্যের বা সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে প্রথম কাতারে ফেলা হয়নি। আগের দিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমনটা উন্নত ছিল না তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিতরা ভগবানের প্রতি বিশ্বাস ও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষদের পরামর্শ দিত। এবং এ সমস্ত গরীব ও শ্রমজীবি মানুষদের কাছ বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়ে সংসার চালাতো। আর বিভিন্ন শ্রণীর মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসার বীজ এমন গভীর ভাবে রোপন করে দিত তারা আর নিজেদের সমগোত্রীয় ভাবতে পারত না। ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠি ও উপগোষ্ঠি তৈরী হত। এই বিভাজনের ফলে একতাবদ্ধ হয়ে তারা রাজা বা জমিদারদের অরাজগতা ও কুশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতনা বা সংঘবদ্ধ হতে পারত না। ফলে খাজনা আদায় করতেও তেমন একটা সমস্যা হতনা। শহর থেকে প্র্যত্যন্ত অঞ্চলে রাজাধিরাজদের প্রভাব প্রতিপত্তি পুরোহিতদের মাধ্যমে পৌছে দায়ার কারণে শাসক শ্রেণী কৃত্তিম আবহ তৈরী করে ব্রাক্ষণদের তথাকথিতভাবে সামাজিক মর্যাদায় শীর্ষ স্থানীয় দেখাত। প্রকৃত বাস্তবতা হল শাসক বর্গের কাছে পুরোহিত শ্রেণী তাদের তল্পী বাহক ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।

বৌদ্ধঃ
সম্রাট অশোক থেকে বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি বলে শোনা যায়। পূর্ব এশিয়ার এক সুবিশাল ভূখন্ড জুড়ে এ ধর্মানুসারীদের আবাস। রাজ্য বিস্তারে এ ধর্মের মানুষেরা ধর্মীয় অনুভূতিকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছে এমনটা কখনো শোনা যায়নি। যদিও আমরা ইদানিং বার্মায় সংখ্যালঘুদের প্রতি সীমাহীন যে বর্বরতা দেখছি তাতে ধর্মের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

খ্রীস্টানঃ
অতি শঠ, ধুরন্ধর, বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান, নীতিবান, আদর্শবান এমন কোন বিশেষণ নেই যা এই ধর্মালম্বীদের উপর ক্ষেত্র বিশেষে প্রযোজ্য নয়। আধূনিক সভ্যতার মহান ও অভূতপূর্ব উন্নয়নে এ জাতীর রয়েছে অসামান্য অবদান। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলো রাজ্য বিস্তার ও অন্য রাষ্ট্রের ধনসম্পদ অত্মসাতে এ ধর্মালম্বীদের জুড়ি মেলা ভার। যদিও নামেই এরা খ্রীস্টান কিন্তু প্রকৃত অর্থে এদের শতকরা ৬০% থেকে ৮০% জনগোষ্ঠির ধর্মের প্রতি কোন অনুরাগ নেই কিংবা এরা নিজেদের ধর্মহীন ভাবতেই ভালবাসে। কিন্তু মজার তথ্য হল ধর্মের প্রতি এদের অনুরাগ না থাকলেও স্বধর্মাল্ম্বীদের প্রতি আছে সীমাহীন ভালবাসা।

খ্রিষ্ট জন্মের বেশ কিছুটা সময় পরেই বিভিন্ন খ্রিষ্টান রাজারা চার্চের পাদ্রী ও নানদের বিভিন্ন সেবামূলক কাজ ও ধর্ম প্রচারের জন্য পাঠাতো। তাদের ধর্ম প্রচারের বিভিন্ন বয়ানের মধ্যে রাজ্যের সুখ শান্তি কামনার পাশাপাশি রাজার গুনগান ও রাজ্যের আইন কানুন মেনে চলার প্রতিও প্রছন্ন ইংগিত থাকত। মূলত ধর্মের সুদূর প্রসারী মনস্তাত্ত্বিক ও বাহ্যিক প্রভাবের কথা এরা ভাল্ভাবেই জানত। তাই সেখানে নীতি কথায় কাজ হতনা সেখানে তারা ক্ষেত্র বিশেষে শক্তিও প্রয়োগ করত। আর এটাতো কমবেশি সবারই জানার কথা ধর্মীয় দাসে কাউকে পরিণত করতে পারলে তার দ্বারা আর যাই হোক সুস্থ ও অপ্রভাবিত চিন্তাভাবনা করা সম্ভব হবেনা।

মোসলমানঃ
৫৭০ খ্রীষ্টাব্দ। মক্কার মানুষেরা কমবেশী সবাই ছিল যাযাবর ও ডাকাত শ্রেণীর। ঐ সময়েই এক যাযাবর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন হজরত মুহম্মদ (সঃ)। দারিদ্রের সাথে নিত্য সংগ্রাম করে কাটছিল তাঁর জীবন। আস্তে আস্তে তিনি বেড়ে উঠলেন। বড় হতে লাগলেন। মানুষের উট চড়িয়ে তেমন কোন আয় রোজগার হচ্ছিল না। বুকের মধ্যে বিশাল স্বপন। ২৬ বছর বয়সে বিয়ে করলেন ৪৬ বছরের ঢনাড্য খাদিজাকে। বিয়ের সময় তাকে খাদিজার সাথে উপহার হিসেবে দেয়া হয় ক্রীতদাস জায়েদকে। এই জায়েদকেই তিনি ৬১০ খ্রীষ্টাব্দে পবিত্র মক্কার পাদদেশে আইনি প্রক্রিয়ায় নিজ পুত্র হিসেবে গ্রহন করে নেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) প্রথম দিকে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন জায়েদ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরবর্তী সময়ে তিনি অবশ্য জায়েদ যে তাঁর নিজের পুত্র নয় সে বিষয়েও ফতোয়া দেন এবং জায়েদের স্ত্রীকে জায়েদের মাধ্যমে তালাক দিয়ে তিনি নিজেই বিবাহ করেন।

রাসুলুল্লাহ (সঃ) প্রথম দিকে যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার কাজ শুরু করেন তখন খাদিজার অর্থনৈতিক শক্তি তাঁর অনেক কাজে লাগে। তিনি তাঁর প্রসার পতিপত্তি বাড়ার সাথে সাথে রাজ্য বিস্তারেও মনোযগী হন। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মতে তিনি রাজ্য বিস্তারে শক্তির পাশাপাশি আধাত্ম্যবাদকেও সমানভাবে প্রাধান্য দিতেন যাতে আলৌকিক শক্তির অদেখা ভয় দেখিয়ে মানুষকে সহজেই বশ মানানো যায়। যেখানে ধর্মীয় ভয়ভীতি কাজে আসতনা সেখানে শক্তি প্রয়োগেও তিনি কুন্ঠা বোধ করতেন না।

আমাদের ভারত বর্ষে অবশ্য মোসলমানরা আসা শুরু করে ১০০০ সাল থেকে ১২০০ সালের দিকে। হতদরিদ্র আরবরা প্রথম দিকে এসেছিল ব্যবসা বানিজ্যের উদ্দেশ্যে। পরে দস্যুতা ও অন্য রাষ্ট্র দখল অধিকতর লাভবান হওয়ায় তারা ক্ষেত্র বিশেষে রাজ্য বিস্তারেও মনোযোগী হয়। ১২১৩ খ্রীষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি যখন বঙ্গ বিজয় করেন তখন তিনি অতি সহজেই নিষ্ঠুর রাজা ও জমিদারদের দ্বারা নির্যাতিত বৈশ্য ও শুদ্র অর্থাৎ নিন্ম বর্নের হিন্দুদের ইসলামের সমতার বানী দ্বারা আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। ফলে বিশাল বাংলায় অতি সহজেই বিনা পরিশ্রমে একটি নতুন জাতিগোষ্ঠি তৈরী হয়। সেই সাথে আমাদের সংস্কৃতিতে আরবীয় ভাবধারারও কিছুটা অনুপ্রবেশ ঘটে।

মূল কথা হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিতে আরবীয় বা ইরানী, পাকিস্তানী ভাবধারার বা আগ্রাসনের অনুপ্রবেশ তখনকার সময়ে যথষ্ট নিয়ন্ত্রিত হলেও এখন কোন এক অজ্ঞাত কারণে তা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ছে। উদাহরণ হিসেবে বোরখা বা হিজাবের কথা বলা যেতে পারে। মানুষের চারিত্রিক বিশুদ্ধতা না থাকলেও পোশাকী বিশুদ্ধতা (ইসলামের আলোকে) জরুরী হয়ে পড়ছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়া একটা ঘটনা এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। আমার এক সহপাঠী যার পরিবার জামাতি আদর্শে বেড়ে ওঠা তাঁর সাথে আমার এক সহপাঠিনী যার সাথে আমার ঐ সহপাঠীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল তাকে দেখতাম মাঝে মাঝে (মডেলিং করার পরেও) বোরখা সাথে করে নিয়ে আসতে। আমরা যখন কৌতূহলী হয়ে সহপাঠিকে জিজ্ঞেস করতাম রোরখা কেন? সে বলত পথে রিকশায় যেতে বোরখা খুব উপকারী বিশেষ করে বান্ধবী যদি হয় অন্যের বৌ, আর মাশাল্লাহ সুন্নতওতো পালন হচ্ছে, তাইনা? আমি উদাস হয়ে বলতাম ' হু মনে হয় ব্যাপারটা ফরজের কাছাকাছি কিছু একটা হবে।'

২৫শে অক্টোবর ২০১৬
যুক্তরাজ্য।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭

শফিক আলম বলেছেন: বহুলাংশেই সত্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.