নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: মফিজ উদ্দিনের হতাশা

১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১০

মফিজ উদ্দিন হতাশায় নিমজ্জিত। ঢাকা শহরে ব্যাংকের ম্যানেজারি করাটা এতোটা ঝুঁকিপূর্ণ তিনি বুঝতে পারেননি। এক শাখায় ম্যানেজার হিসাবে ঘুষের বিনিময়ে ৫টি ভুল ঋণ দেয়ায় তাকে বদলী করে এখানে দিয়েছে। এখানেও তিনি প্রথম যে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছেন সেখানেও ঘাপলা খুঁজে পেয়ে জিএম স্যার বকাঝকা করেছেন। এর মধ্যেই এক কর্মকর্তা দৌড়ে এসে জনাল, স্যার আপনাকে মানিকগঞ্জের এরিয়া ম্যানেজার হিসাবে বদলী করা হয়েছে। তিনি সাথে সাথেই দ্বিতীয় কর্মকর্তার হাতে দায়িত্ব দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
গিয়ে বুঝলেন রাজধানীর বাইরে যাওয়ার কারণে তার বেতন অন্তত ১৩ হাজার টাকা কমে গেছে। ব্যাংকের গাড়ি নিয়ে প্রতিদিন ঢাকায় গেলে তেলের বাজেট ফেল করবে। সেখানে লাগবে আরো হাজার বিশেক। তাকে অন্তত ৩৩ হাজার টাকা বাড়তি কামাতে হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ১১টি শাখা থেকে মাসে ৩ হাজার করে আয় করলেই হয়ে যাবে। এর বাইরে যা পারেন।
প্রথম শাখায় গিয়ে ড্রাইভারকে দিয়ে ম্যানেজারকে বলিয়ে ৩ হাজার হাতিয়ে, গেলেন দ্বিতীয় শাখায়। ম্যানেজার ড্রাইভারকে বললেন, আমিতো বাড়তি আয় করি না, তিন হাজার কোথা থেকে দেবো?
ড্রাইভার ফিরে গিয়ে জানালে এবার তিনি নিজেই ৩৩ হাজার ক্ষতির প্রসংগ বললেন। ম্যানেজার যথারীতি অপারগতা জানালো। প্রথম দিন ৫ শাখা ভিজিট করে ১২ হাজার পেয়েছেন। তাই দ্বিতীয় শাখা ব্যবস'াপকের উপর মহা রাগ হল। পরদিন সকালেই ফোন দিয়ে বললেন, আপনিতো মহা খারাপ লোক। আপনি রাজনীতি করে বেড়ান, অফিসে থাকেন না আর ঋণ দিয়ে ঘুষ খান।
ম্যানেজার সবিনয়ে জানালেন, স্যার সত্যি নয়, আমি রাজনীতি করি না, অফিসের কাজ ছাড়া বাইরেও যাই না। আমি কখনোই ঘুষ দুর্নীতির সাথে নিজেকে জড়াই নি।
পরদিন সকালে আবারো ফোন, আপনিতো বাজে লোক। পারেন শুধু তর্ক করতে। আপনাকে আধঘন্টা যাবৎ ফোন দিচ্ছি ফোন ধরেন না?
ম্যানেজার সবিনয়ে বলেন, স্যার আমার সামনেই ল্যাণ্ড ফোন, আধা ঘণ্টায় কোন ফোন বাজে নি। আমার মোবাইলেও আপনার ফোন আসেনি।
ম্যানেজার জবাব দেয়ার সাথে সাথেই কোন কথা না বলে ফোন রেখে দেন।
পরদিনও ফোন করলেন, আপনিতো কিছুই বুঝেন না, অপদার্থ। ভাল কোথাও পড়েছেন বলেতো মনে হয় না। কাজও কিছু বুঝেন না। কাজ না বুঝলে, ব্যাংকের পয়সা খাচ্ছেন কি জন্য, লজ্জা করে না?
ম্যানেজার বলেন, স্যার আমি ঢাকা কলেজ থেকে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করেছি। কাজ বুঝি না এ কথা আগে কেউ কখনো বলেনি।
এবার তিনি কাউন্টার জবাব দিলেন, আমার ছেলে মেয়েরাও ঢাকা কলেজে পড়ে। এতো ফুটানি দেখাবেন না। ঘচাং করে ফোন যথারীতি রেখে দিলেন।
প্রতিদিনই ম্যানেজার একই রকম বাজে কথা শুনছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, টাকা না দেয়ার জন্যই এ ধরণের অপবাদ দেয়া হচ্ছে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। এ কদিনে তার কাজের উদ্যামতা উধাও হয়ে গেছে। সারাদিনই মন খারাপ করে থাকেন। সহকর্মীরা সবাই ধরলো। স্যার মাত্রতো ৩ হাজার টাকা। আমরা সবাই মিলে দেবো। আপনি দিয়ে আসেন। ওনি আপনাকে মেরে ফেলবে। আপনার দিকে তাকানো যায় না। কিন' তিনি রাজি হলেন না। সবাইকে বললেন, ধৈয্য ধরতে হবে। পাঁচশো বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিলে ওনি আমাকে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজার বলবেন। তাতে আমি শ্রেষ্ঠ হবো না। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়?
আট নং শাখা হতে গত সপ্তাহেই ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। আজও ড্রাইভারকে ওখানে যেতে বললেন। ড্রাইভার বলল, স্যার ওই শাখার ম্যানেজার তো টাকার বিনিময়ে ভুয়া ঋণ দিয়ে তলিয়ে ফেলছে। আর ২ নং শাখার ম্যানেজারতো খুবই ভাল মানুষ। ব্যাংকের জন্য তার অনেক অবদান।
মফিজ উদ্দিন ধমক দিলেন। তুমি ব্যাংকের কি বুঝ? ও ভুয়া ঋণ দিলে ভবিষ্যতে ওরই অসুবিধা হবে। সেতো বসকে সম্মান দিতে পারে। ২ নং তো অপদার্থ। নিজেও খেতে জানে না, অন্যকে সম্মান করতেও পারে না।
শাখায় গিয়ে তিনি ম্যানেজারের কাছে ২০ হাজার টাকা হাওলাদ নিলেন। তিনি জানেন এটা এমন ধরনের হাওলাদ যা দেয়া লাগে না। ম্যানেজারকে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজার ঘোষণা দিলেন। এরপর তিনি গেলেন ২নং শাখায়।
গিয়েই ম্যানেজারের চেয়ারে বসে বললেন, এখানে আছেন আড়াই বছর। শাখার সর্বনাশ করেছেন। জরাজীর্ণ ভবন পাল্টাননি কেন? চাকুরি ছেড়ে চলে যান। ব্যাংক আপনাকে খামোখা টাকা দেয়। লজ্জা করে না?
ভাউচার দেখে চেচিয়ে উঠেন, কি চেকিং করেছেন? কিছুই হয়নি। কাজ তো কিছুই বুঝেন না। ছাগল কোথাকার? বসে বসে কি ছিড়েন?
ম্যানেজার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি কোনভাবেই তর্কে জড়াবেন না। সবই হজম করবেন। তার নিরবতা দেখে বস আরো ক্ষেপে গেলেন। দুই শ কনজুমার ঋণ দিয়েতো কমপক্ষে ১০ লাখ খেয়েছেন? এতোগুলো কৃষিঋণ দিয়েছেন কেন? এগুলো উঠবে? ব্যাংকের লস। এখানেও মাল খেয়েছেন! চোর কোথাকার! আপনাকে আমি বান্দরবন পাঠাবো।
এতোক্ষণে ম্যানেজার বললেন, ধন্যবাদ স্যার। স্বাস'্যকর বান্দরবানে চাকুরি করার খুব শখ। যদি পারেন এ উপকারটুকু করেন।
বস ম্যানেজারের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালেন। যেন চোখ ছিটকে বেরিয়ে আসবে। বললেন, আপনার চাকুরির মায়া নেই, কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষাও নেই? আমার হাত দিয়েইতো এসিআর যাবে। আপনার এখানে বসাও লজ্জাজনক। বলেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে চমকে উঠলেন। অন্তত ত্রিশজন লোক তাকে ঘিরে ধরেছে। ম্যানেজার এতোক্ষণ উল্টোদিকে মুখ করে বসে থাকায় বিষয়টি খেয়াল করেন নি। তিনি দেখলেন তার কিছু স্নেহভাজন তরুণ এখানে রয়েছেন। স'ানীয় ক্লাবের সভাপতি মোর্শেদ বসকে উদ্দেশ্য করে বলল, তর সব কথা এই মোবাইলে রেকর্ডিং করা হয়েছে। এখন তোকে মারবো সেটাও রেকর্ডিং হবে। সেটা দিবো তোর এমডির কাছে। তুইতো জানস না সে আমার মামা হয়। তোর দুর্নীতির কাহিনী আমি আগেই শুনেছি।
বস সাথে সাথেই মোর্শেদের পা জড়িয়ে ধরলো। বললো, ভুল হয়েছে। মাফ করে দেন।
ম্যানেজার মোর্শেদকে ধমক দিয়ে বসকে তাড়াতাড়ি নিরাপদে বের করে দিলেন।
গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার বলল, স্যার সমাজে দুইএকজন সৎ লোক থাকে। তাদের সাথে ঝামেলা করা ঠিক না।
মফিজ উদ্দিন আবারো হতাশায় নিমজ্জিত হলেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৫

অশ্রুকারিগর বলেছেন: স্থানীয় ক্লাবের এরা আসলো কোথেকে ? চরিত্র তো ছিলই আপনার কাছে, এই ব্রাঞ্চের স্টাফ যারা সৎ ম্যানেজারের শুভাকাংখী!

এইটুকু ছাড়া ভালোই লেগেছে।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পাঁচশো বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিলে ওনি আমাকে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজার বলবেন!!
এই লাইনটা ভাললাগছে।
শেষটা গোলমেলে। বাংলা সিনেমার লাস্ট সিনের মত

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২

সুমন কর বলেছেন: ভালো লাগেনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.