নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছোট গল্প: মুক্তি

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৪

রোকসানা জেএসসিতে এমন ভাল রেজাল্ট করবে সেটা সে নিজেও ভাবতে পারেনি আর তার দরিদ্র পরিবারের লোকেরা বিষয়টি বুঝেই না। তাদের ইচ্ছাই ছিল না, রোকসানাকে অস্টম শ্রেণির পরে পড়ানো। কিন্তু ওর ভাল রেজাল্ট আর স্কুলের মাস্টারদের চাপাচাপি তাদের বাধ্য করে পড়া চালিয়ে নিতে। স্কুলে ওর তেমন কোন বন্ধু নাই। সবাই টিফিনে অনেক টাকা ব্যয় করে কিন' ওর সেই সামর্থ্য নেই বলেই ও এড়িয়ে যেতো অন্যদের। স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ও নিজেকে নিয়োজিত রাখতো। তাতে বিভিন্ন উপহারও নিজের কাজে লাগে আবার বৃত্তি পেলে সেটা পরিবারেরও কাজে লাগে।
নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও ক্লাসে মনোযোগী থাকায় এবং বাড়িতে চেষ্টা করায় কোন সমস্যা হচ্ছিল না। স্কুল থেকে বারবার চাপ দিচ্ছে সবাইকে কয়েকটি গাইড কেনার জন্য। ওর গাইড কেনার প্রয়োজন ছিল না। এরপরেও পুরাতন গাইড মারিয়া আপু সংগ্রহ করে দিয়েছে। কিন্তু স্কুল এবার কোম্পানী বদল করেছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন ক্লাসে এসেই দাঁড় করালেন, কে কে গাইড কিনেনি তাদের। তিনিই বিজ্ঞান পড়ান। রোকসানাকে কয়েকবার বলেছেন তার কাছে প্রাইভেট পড়তে। প্রয়োজন না থাকা এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সে যায়নি। তাই রোকসানার উপর সে ক্ষুব্ধ ছিল। জোড়াবেত দিয়ে অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই প্রহার করে মনের ঝাল মেটান। রোকসানা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ধরাধরি করে লাইব্রেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পরে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে আবারো বকা দেয়া হয়, সামান্য মারের কারণে জ্ঞান হারানোর জন্য।
রোকসানা অসুস্থতার জন্য কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি। স্কুলে একদিন না এলে দুইশ টাকা জরিমানা। সে আবেদন নিয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে যেতে বলে। ভয়ে সে আর যায় না, ক্লাসেই আবেদনপত্রটি দেয়। আব্দুল মতিন সাহেব আবেদনপত্রটি দেখে বলে, তুমিতো আমাকে ফাঁসানোর কম চেষ্টা করলা না। সাংবাদিকদের দিয়েও ফোন করিয়েছো। তোমার সাহস কম নয়। সুস্থ থেকেও স্কুলে আসো না, সে খবরও রাখি।
তিনি অন্য ছাত্রীদের কাছে জানতে চান, রোকসানা কাজটি ঠিক করেছে কি না?
স্কুলের বিজ্ঞান শাখার অধিকাংশ ছাত্রীই আব্দুল মতিনের প্রাইভেট ছাত্রী। তারা সমস্বরে বলে, না না না।
রোকসানার চোখ দিয়ে পানি আগেই ঝরছিল। এবার সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। আব্দুল মতিন তাকে ধমক লাগায়, প্রতারক মেয়ে আবার কাঁদে।
ক্লাসের ছাত্রীরা আব্দুল মতিনের প্ররোচনা ছাড়াও বিচিত্র কারণে রোকসানাকে অপছন্দ করে। রোকসানা আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয়ে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন আবার খেলাধুলাতেও সে ভাল করে। স্কুলের দেয়াল পত্রিকা প্রকাশে মতিন স্যারের ছাত্রীরা ষড়যন্ত্র করে এবার তাকে বাদ দিলে, সে ছেলেদের দেয়াল পত্রিকা দলে যোগ দেয় এবং সেটাই সবচেয়ে সুন্দর হয়। ছাত্রীরা রোকসানার জন্য নিজ নিজ পরিবারেও কথা শুনে। ফলে একটা সমীহ থাকলেও তারা ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরে। ওকে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলে কেউ ছাড় দিতেও চায় না।
পরদিন পদার্থের গঠন পড়াতে গিয়ে, আব্দুল মতিন তার প্রাইভেট ছাত্রীদের পরিকল্পিতভাবে সহজ প্রশ্ন করেন। আকলিমার কাছে জানতে চান, হাইড্রোজেনের প্রতীক কি?, মার্জিয়ার কাছে জানতে চান, পদার্থ কি দিয়ে তৈরি?, সোহানার কাছে জানতে চান, একটি মৌলের নাম বল? তারা টপটপ উত্তর দেয়। এবার রোকসানাকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করেন, মোল পানি বলতে কি বুঝানো হয়?
রোকসানা বলে, স্যার এটাতো এই চাপ্টারে নাই।
আব্দুল মান্নান রেগে যায়। ওদেরওতো মৌল নিয়ে প্রশ্ন করলাম। সুন্দর জবাব দিলো। তুমিতো নকল করে ভাল রেজাল্ট করছো। মনে হয়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নও পেয়েছিলে। তুমি বুঝো, এই স্কুলের জন্য তুমি একটি বোঝা। একটা প্রশ্ন পারো না আবার জেলার মধ্যে ভাল রেজাল্ট করেছো। আবর্জনা কোথাকার?
ক্লাস শেষ হলে, আকলিমা, মার্জিয়া ও সোহানা ‘আবর্জনা কোথাকার’ উচ্চারণ করে রোকসানাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। রোকসানা ভেবেই পায় না, সে কি করবে? এদেরকে কিভাবে বুঝাবে? সে কার কাছে যাবে?
রাতে রসায়ন বই খুলে প্রশ্নটির উত্তর পায় ষষ্ঠ অধ্যায়ে। অথচ তাদের পড়ানো হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়। কদিন যাবৎ ওর ঘুম হয় না। খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। বুকের ভিতরটা সবসময় কেমন যেন করে।
গভীর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে সে চিৎকার দিয়ে উঠে। একটি বিশাল ভাল্লুক তার উপর চেপে বসে, তার গলা আচড়াচ্ছে। তার মা কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, মা তোরে মনে হয় বোবায় ধরছে।
পরদিন মতিন স্যার তাকে আবারো দাঁড় করায়। সে মতিন স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখে, তার মুখটি কেমন যেন থেতলানো, মুখে অনেকগুলো চোখ। রোকসানা ঢলে পড়ে যায়।
ওকে ধরাধরি করে, লাইব্রেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক ক্লাসে এসে নিশ্চিত হন, মতিন স্যার পড়া ধরার জন্য দাঁড় করানোর সময়ই রোকসানা ঢলে পড়ে যায়।
বাড়িতে দপ্তরি পাঠিয়ে রোকসানার মাকে ডেকে আনা হয়। প্রধান শিক্ষক বলে, আপনার মেয়ে অসুস্থ। এবার বুঝতে পেরেছি, আগেরবারও সে এ কারণেই জ্ঞান হারিয়েছিল। আজ কেউ তাকে মারেনি, শুধু পড়া ধরার জন্য দাঁড় করিয়েছিল। ওকে নিয়ে যান, ডাক্তার দেখান।
রোকসানাকে স্কুল থেকেই সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার জানতে চায়, তোমার সমস্যা কি?
রোকসানা বলে, স্কুলের এক স্যার আমার সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে। স্কুলে আমার কোন বান্ধবী নেই। ওরাও আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। ঘুমের মধ্যে দেখি, একটি ভাল্লুক আমার উপর চেপে বসেছে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। গতকাল স্যার আমাকে খুব অপমান করেছে। আজ পড়া ধরার সময় মনে হল, স্যারের মুখ থেতলানো, মুখে অনেকগুলো চোখ।
ডাক্তার রেগে যায়, তোমার কোন বান্ধবী নেই এটা কেমন কথা? তোমার তো সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ দেখছি। স্কুলে সবাইতো খারাপ হতে পারে না। তোমার কোন বান্ধবী নেই মানেই সমস্যাটা তোমারই। স্কুলের শিক্ষকদের সাথেও ভাল আচরণ করবে। ডাক্তার প্রতিরাতে একটি করে পারমিভাল ট্যাবলেট খেতে লিখে দেয়।
পারমিভাল খেলে রোকসানার ঘুম ভাল হয়। সে যেদিন না খায় সেদিন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক চেষ্টা করেও সে স্কুলের স্যারদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। উল্টো আরো কয়েকজন শিক্ষক খারাপ আচরণ করা শুরু করছে। বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওরা সরে যায়। ওকে এড়িয়ে চলে সবাই।
সিজোফ্রেনিয়া রোগ নিয়ে ওর আগ্রহ। এটি কি ধরনের রোগ? সে কি সত্যিই এই রোগে আক্রান্ত। স্কুলে ক্লাস টেনে পড়া মারিয়া আপু ওকে কিছুটা স্নেহ করেন। একদিন ডেকে জানতে চায়, তোর সমস্যা কি? মইত্যা তোর পেছনে লাগছে সেটা বুঝি। এই খাটাসটার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া মুশকিল। ডাক্তার কি বলল?
রোকসানা বলে, আপু ডাক্তার বলছে আমার সিজোফ্রেনিয়া রোগ হয়েছে। এটা কি রোগ কে জানে? আপনি জানেন?
মারিয়া বলে, ধুর এসব কিছু না। তোমার সিজোফ্রেনিয়া হয়নি। ওই খাটাসটার হাত থেকে রেহাই পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোকসানা অনুরোধ করে, আপু আপনার মোবাইলে যদি নেট থাকে তবে দেখেনতো রোগটি কি?
নেট থেকে দুজনেই পড়ে, সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। আমরা বলি সাইকোটিক ইলনেস। এই রোগে রোগীর কোনো অন্তর্দৃষ্টি থাকে না, বাস্তবতাবোধ থাকে না। সিজোফ্রেনিয়া শব্দটিকে যদি ভাগ করি, অর্থ দাঁড়াবে স্লিপট মাইন্ড। মানে মনটা ভেঙ্গে গেছে। আসলে সিজোফ্রেনিয়াতে চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি, আবেগ এগুলোর ব্যত্যয় হয়। এটি বড় রকমের সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না। এর লক্ষণগুলো হল: ভুলভাল শোনা, উদ্ভট, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখা এবং অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা এবং চিন্তা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে সচরাচর অক্ষমতাজনিত অসুবিধার সন্মুখীন হন। এ রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত বয়ঃপ্রাপ্তির সময় দেখা দেয়। সারা বিশ্বের ০.৩-০.৭% মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।
মারিয়া বলে, দেখলি তোর মধ্যে এ রোগের কোন বৈশিষ্ট্যই নেই।
রোকসানা বলে, কিন্তু আপু আমিতো বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখছি। তাছাড়া আমার মনও ভেঙ্গে গেছে।
মারিয়া বলে, তুই দুঃশ্চিন্তা করা বাদ দে। কদিন পড়ে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
দুজনে বিদায় নিলেও রোকসানার মাথায়, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখার বিষয়টি থেকে যায়। সে নিশ্চিত হয় সে অবশ্যই সিজোফ্রেনিয়া রোগী।
স্কুলের শিক্ষক ও বান্ধবীদের অনবরত খারাপ আচরণ সেই সাথে সিজোফ্রেনিয়া রোগের ভাবনা রোকসানাকে একেবারেই নিস্তেজ করে দেয়। উদ্যামহীনতা তাকে পেয়ে বসেছে। পড়াশোনা সেভাবে আর হচ্ছে না। বাবা-মা বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিভাবে যেন ছড়িয়ে পড়েছে, মেয়েটি পাগল। এখন পাগলের ওষুধ খাচ্ছে। পারমিভাল কি পাগলের ওষুধ? রোকসানা আরো হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হয়। সে ধরে নিয়েছে, পারমিভাল ঘুমের ওষুধ। এটা খেলে তার ঘুম ভাল হয়। মাঝে মাঝে না খেয়ে সে ওষুধ জমায়। হতাশার হাত থেকে তার মুক্তির প্রয়োজন। সে গুণে দেখে চল্লিশটির মতো ওষুধ সে জমাতে পেরেছে। মুক্তির জন্য আরো কিছু ওষুধ জমানো প্রয়োজন।

বি.দ্র.: এটি নিছকই গল্প। তবুও শিক্ষক বা ডাক্তারও একটি সম্ভাবনাময় মেধাবী মেয়ের জীবন কিভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে, সেটিই দেখানোর চেষ্টা করেছি। ২৬/০৩/২০১৮

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার গল্পটি আগে মিস করে গেছি।

পড়া শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আশাকরি এটা পুরোটাই গল্প। এমন যেন কারো জীবনে সত্যি সত্যি না ঘটে।

লিখতে থাকুন- আপনি ভালো গল্পকার।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:১৬

আমি মাধবীলতা বলেছেন: দীর্ঘশ্বাস ! রোকসানা নয়, এমন শিক্ষকই জাতির জন্য বোঝা ।
গল্প ভালো লেগেছে ।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৩৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ
শিক্ষক ও ডাক্তারদের মধ্যে যারা অমানবিক, তাদের বোধ জাগ্রত হোক।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৩৭

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ
তাদের বুঝানোর জন্যই গল্পটি লেখা।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটি আসলেই ভালো হয়েছে।
লেখা অব্যহত রাখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.