নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার পূর্বপুরুষ কৈবর্ত বা দলিত ছিল

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৫৫

আমার অনুমান ও চেহারা বিশ্লেষণ করে বুঝি আমার পূর্ব পুরুষ আর্য ছিল না, আরব থেকে আসা মুসলিমও ছিল না। তারা আদি ভারতীয়ই ছিল। দ্রাবিড়। আরো পরে সম্ভবত শূদ্র হিন্দু চাষাবাস করা কৈবর্ত ছিল। তারা নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়েই সময় অতিক্রান্ত করতো। তাদের ফলানো শস্যর অধিকাংশই; কখনো দুই তৃতীয়াংশই দিতে হতো ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়দের হাতে তুলে। তাদের হাত যেন সৃষ্টি করা হয়েছিল প্রণাম জানানোর জন্য, চোখ তৈরি করা হয়েছিল নির্মিলিত রাখার জন্য, পা তৈরি করা হয়েছিল তাদের আহবানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য, কান তৈরি করা হয়েছিল তাদের কথা শোনার জন্য এবং ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য আর মুখ তৈরি করা হয়েছিল তাদের গুণকীর্তন করার জন্য। তাদের সব চাহিদা পুরণ করাই ছিল আমার পূর্বপুরুষদের একমাত্র কাজ। তার পরে যেটুকু অবশিষ্ট থাকতো তা দিয়েই কোনমতে পরিবার নিয়ে খুপড়িতে থেকে খেয়ে না-খেয়ে বাঁচতো। তারা অতিশয় হীন আর অধীকারহীন ছিল। ধর্মীয় বিধান মতে তারা জানতো ব্রহ্মার পা থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়দের সেবা করার জন্যই। আমার যে পূর্বপুরুষ প্রথম সাহসী হয়ে উঠেছিল এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চাতুবর্ণপ্রথা ভেঙ্গে দিবে, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। মুসলিম হয়েছিল বলে নয়, শূদ্র থাকার চেয়ে ভারত বর্ষের অন্য যে কোন ধর্ম গ্রহণ করলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতাম। আজ বাংলাদেশের বহু মানুষই উচ্চপদে চাকরি করে, বড় ব্যবসা করে, যারা সেই শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে। এমনকি ভারতে বা পাকিস্তানেও প্রায় বাংলাদেশের মুসলিমদের চেয়ে বেশি মুসলিম রয়েছেন যাদের অধিকাংশই সেই কৈবর্ত থেকেই মুসলিম হয়েছে। যদি তাদের পূর্বপুরুষ ধর্মান্তরিত না হতো, তাহলে আজ তাদের কেউই ওই পদগুলোতে যেতে পারতো না। তারা সেই শূদ্রই থেকে যেতো আর ভাবতো তাদের সৃষ্টি হয়েছে ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়দের সেবা করার জন্য, ব্রহ্মার পা থেকে। সেই ব্রাহ্মণরাই সব বড় পদগুলো, ব্যবসাগুলো দখল করে রাখতো। এদেশে তেমন ক্ষত্রিয় নেই, বাকী চাকরিগুলো, ব্যবসাগুলো করতো বৈশ্যরা। ধর্মত্যাগ শূদ্রদের সামনে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, একটি ধর্মের অন্তত ধর্মীয় দৃষ্টিতে সমান মর্যাদার মানুষ হওয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের কিছু উচ্চবর্ণের বুদ্ধিজীবীকেও দেখছি, তারা টাকা খেয়ে বিজেপির পক্ষে ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঢালাও লিখছে। উদ্দেশ্য বিজেপিকে ক্ষমতায় আনা। তারা আরেকটি দাঙ্গা লাগিয়ে সুবিধা নিতে চাচ্ছে আগামী নির্বাচনে। ভারতে মুসলিমরা না আসলে, ভারতের ভিন্নভিন্ন দেবতায় বিশ্বাসী হিন্দুদের মধ্যে আজকের একধর্মে আসাটা হয়তো হতোই না। কারো দেবতা হতো দুর্গা, কারো কালী, কারো কৃষ্ণ, কারো রাম,--- তারা, সূর্য-- আর তা নিয়ে সংঘাত হয়তো চলতেই থাকতো। তাই বলি হিন্দুরা যেমন বহিরাগত আর্যদের ধর্ম গ্রহণ করেছে, আবার বৌদ্ধ হয়েছে, আবার ফিরে গেছে নিজ ধর্মে। তাদেরই একটি অংশ বহিরাগত মুসলমানদের ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং চাতুবর্ণপ্রথা ভেঙ্গে দিয়ে সম মর্যাদার মানুষ হয়েছে। উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়াটা কম অর্জন নয়। দলিতও থাকতে পারে, আমার পূর্বপুরুষ তাহলে আজও উচ্চ বর্ণের বর্বর হিন্দুদের হাতে ঘোড়ায় চড়া যুবকের মতো বিনা কারণেই প্রাণ দিতে হতো।
হিন্দু মুসলিম ভারতবর্ষে এই দুই ধর্মের মধ্যে এতো বিদ্বেষ থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৩৫

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক । জাতিগত দাঙ্গা বন্ধ হোক ।

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই - এ কথাটাই সবার উপলব্ধিতে আসুক!

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৫

ক্স বলেছেন: প্রদীপ যদি মুসলিম হত, তবে কি হিন্দুরা তাকে হত্যা করতে পারত?

সবারই নিজ নিজ ধর্মের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলা উচিত। কেউ যদি ইসলামের রীতি নীতি পছন্দ না করে, সে হিন্দু হয়ে যাক, যেমন অভিনেত্রী জয়া আহসান হয়েছে। কেউ তো তাকে জবাই করেনি - সে তার ধর্ম পালন করে চলেছে।

কিন্তু নিজ ধর্মের রীতি নীতিকে চ্যালেঞ্জ না করাই ভাল, এতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা কমে যায়।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:৪২

মুজিব রহমান বলেছেন: চ্যালেঞ্জ করার কারণেই সমাজ এতদূর এগিয়েছে। তানাহলে সমাজ আদিমাবস্থাতেই রয়ে যেতো।

৪| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪১

শাহ আজিজ বলেছেন: আমার মা দলিত ছিলেন । আমার বাবা উত্তর পারস্যের হত দরিদ্র ক্ষুধার্ত, মোঙ্গলদের ফাদে বাধা পড়ে বঙ্গে এলো । বঙ্গে তখন ধান পান মাছ পাখিতে পরিপূর্ণ এক দারুন জায়গা । তারা বনেদি হিন্দুদের হত্যা করে তাদের সম্পদ লুট করল । আমার বাবার এক নতুন যাত্রা শুরু হল আমার মায়ের সাথে । তাদের সন্তানেরা বঙ্গের মায়ের আচার ,সংস্কৃতি গ্রহন করল । বাবার কাছে শিখল ইসলাম ধর্মের কায়দা কানুন। এত আরামের জীবন ছেড়ে বাবা আর হাজার সাথী কেউই ফিরে যাননি । আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বঙ্গজ আর আরবের মিশ্র সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠল । তারা যে দলিত মায়ের প্রজন্ম তা ভুলে যায়নি যে মা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অত্যাচারের শিকার । এই একাবিংশ শতাব্দীতে আমরা বেড়ে উঠেছি সব ধর্ম বর্ণ মিশ্র সংস্কৃতির সমাহারে । যে দলিত মায়ের পেটে নাড়ি বেধে তার দুগ্ধ পানে সবল আমি সেই আমি দলিতই রয়ে গেছি । আমায় এই বঙ্গে জনম দেওয়ার জন্য তোমায় ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

তাওহিদ হিমু বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল। আমি গত বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস পড়ছিলাম; রাজা-রাজড়াদের ইতিহাস না,বাঙালি মানুষদের ইতিহাস, নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস। অনেক ভাল লাগে।
১৯৪৭ এর দেশভাগের বিরোধিতা করি মাঝে, কিন্তু পরক্ষণের ভারতের মুসলমানদের করুণদশা (নিরক্ষরতা, দারিদ্র, নিম্নমানের জীবন, সরকারি চাকুরী থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি) দেখে দ্বিজাতিতত্ত্বওয়ালাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে যাই আবার। গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় মুসলমানরা শুধুই পিছিয়েই গেছে, আর এজন্য ভারত রাষ্ট্রটি দায়ি, দায়ি তাদের রাজনৈতিক নেতারাও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.