নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৌলবাদ নিয়ে কিছু কথা কিছু অভিজ্ঞতা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬

মৌলবাদ কি ও কেন?
এককথায় মৌলবাদ হল- ধর্মশাস্ত্রের প্রতি অবৈজ্ঞানিক অন্ধবিশ্বাস। ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম। মৌলবাদ শব্দের উৎপত্তি ‘মূল’ শব্দটি থেকে। মূল এর অনেক অর্থ রয়েছে। সাধারণার্থে বৃক্ষের মাটির নিচের গোড়া-শিকড় বুঝায়। এর আরো অর্থ রয়েছে যেমন উৎপত্তির স্থান, উৎস, ভিত্তি, আদি কারণ, আদ্য, প্রথম। আরেকটু বড় ভাবে বললে, কোন কিছুর জন্ম বা উৎপত্তির প্রথম বা আদি অবস্থা বলা যায়। মৌলবাদীরা সে আদি অবস্থাতেই থেকে যায়।
মৌলবাদ বলতে, অনেকেই উগ্র-ধর্মান্ধ-জঙ্গী মুসলমানদেরই বুঝেন। মৌলবাদ সব ধর্মেই রয়েছে। বিষয়টা হল ধর্ম থেকেই মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ। ধার্মিক না হয়ে মৌলবাদী হওয়া অসম্ভব। ধর্মশীলরা অবশ্যই ধর্মাত্মা। ধর্মের নিগূঢ় মর্ম কি? সেটা ধর্মজ্ঞ জানে না, জানে বিজ্ঞান। ধর্মান্ধ বলতে বুঝায়- নিজের ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী এবং পরধর্ম বিদ্বেষী। বাংলাদেশে আনুপাতিক হারে হিন্দু মৌলবাদী, খ্রীস্টান মৌলবাদী, বৌদ্ধ মৌলবাদীও কম নয়। আমাদের জাতীয় জীবনে মৌলবাদ একটা বড় সমস্যা। একের পর এক খুন হয় পরধর্ম বিদ্বেষের কারণে। ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদীরা নিজের ধর্মের উৎপত্তি-বিকাশ সম্পর্কেও বেশি জানে বলে মনে হয় না। তারা অন্ধবিশ্বাসে নিশ্চিত থাকে। শিক্ষাহীনতা, যুক্তিহীনতা, বিজ্ঞানহীনতা তাদের অন্ধবিশ্বাসী বানিয়ে দিয়েছে। অন্ধবিশ্বাস তাদের মৌলবাদী করে দিয়েছে।
ভারতে মৌলবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই আমাদের দেশে ধর্মবিদ্বেষটা বেড়ে গেছে। ভারতে হিন্দু মৌলবাদী তার ধর্মের জন্য মুসলমান মারছে আবার বাংলাদেশে মুসলমান মৌলবাদী তার ধর্মের নামে হিন্দুদের মারছে। এই দুই মৌলবাদীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে দেখা যাবে এই দুই মুর্খ কিছুই জানে না। তাদের মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ জানে ও বুঝতে পারে, তাহলে মৌলবাদ ছেড়ে পালাবে। মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণের কারণে আজ ইউরোপে-আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এমন দিন অবশ্যই আসবে যখন এদেশেও মুসলিম মৌলবাদীরা-হিন্দু মৌলবাদীরা এবং অন্য ধর্মের মৌলবাদীরা হারিয়ে যাবে। যেখানে ঘৃণা বিদ্বেষ থাকে সেখানে মানবতাতো থাকে না। বাংলাদেশ -ভারতে একারণেই মানবতা মানুষের মধ্যে এতো কম।
মৌলবাদীদের কিছু বৈশিষ্ট থাকে। যেমন তারা প্রতিক্রিয়াশীল, পরমত সহ্য করে না, তারা অল্পতেই রেগে যায়, ভিন্নমতের মানুষদের ধ্বংস করে দিতে চায়, তারা বিজ্ঞানকে ঘৃণা করে এবং মানুষকে অসম্মান করে। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ ছাড়া আর কোন বই পড়ে না এবং সেই কূপমন্ডকতা নিয়েই বিভোর হয়ে থাকে। অন্যর কাছ থেকে ভিন্ন কিছু শুনতে বা শিখতে চায় না। নিজের সামান্য ভুল জানাকেই মনে করে বিশাল জ্ঞান। সেই ভুল জানা আবার চাপিয়ে দিতে চায় অন্যের উপর।

বৈষম্য হতাশা মৌলবাদ মাদকাসক্তি
সুশিক্ষা প্রদান ও দারিদ্র বিমোচন ছাড়া সন্ত্রাসবাদ মৌলবাদ দমন সম্ভব নয়। বৈষম্য মৌলবাদ বিস্তারেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তীব্র বৈষম্য উগ্রপন্থা তৈরি করে। দেশ থেকে মৌলবাদ বিদায় করা গেলেও সন্ত্রাসবাদ দমন হবে না। আমরা জানি দরিদ্র পরিবারের লোকেরা তাদের সন্তানদের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করার সামর্থ্য হারিয়ে মাদ্রাসায় পাঠায়। ওখানে শিক্ষা রয়েছে কিন' অর্থ ব্যয় করতে হয় না। তাদের জীবনমান বিত্তহীন অবস্থাতেই থেকে যায়। শুনি কারো কারো রমজানের দৈনিক ইফতারি ব্যয়ই হয় ১০ হাজার টাকার বেশি। অথচ বহু পরিবারেরই মাসিক আয় ৫ হাজারের কম। এই বৈষম্য কতদিন মানুষ সহ্য করবে। যখন এক ছাত্র পিতার অবৈধ টাকায় মার্সিডিস চালাবে, আরেক ছাত্র সাইকেল চালানোর সুযোগ পাবে না তখন বৈষম্যের বিদ্বেষ থেকে সন্ত্রাসবাদ তৈরি হবেই। হতাশাগ্রস' দরিদ্র তরুণদের দুটি পথ খোলা থাকে- একটি হল: উগ্রপন্থী মৌলবাদী হয়ে পরকালে মোহে বিভোর থাকা; অন্যটি হল: নেশাগ্রস্থ হয়ে থাকা। দরিদ্র ও হতাশাগ্রস্থা পরিবারগুলোর দুই ভাইর একজন উগ্রমৌলবাদী হলে এবং অন্যজন মাদকাসক্ত হতে পারে। একজন মগ্ন শহীদ হয়ে বেহেস্তের বাসনায় এবং অন্যজন মাদকাসক্ত হয়ে ইহকালেই মগ্ন থাকে নেশায়। আমেরিকার অনেক কালোই তীব্র বৈষম্যর শিকার হয়ে সন্ত্রাসবাদ বেছে নেয়। মানুষ কালোদের আরো ঘৃণার চোখে দেখে। ড. হুমায়ুন আজাদের শিক্ষক, আমারও শিক্ষক নূর উল হোসেন (হুসেন স্যার) বলতেন, তীব্র বৈষম্যর কারণে দরিদ্র মানুষ জেগে উঠবে তখন গুটিকয় ধনী পালানোরও পথ পাবে না। উন্নত দেশগুলোতে ধনীরা ব্যাপকভাবে সামাজিক কাজে অংশ নেয় নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য। আমাদের ধনীরা নিরাপদ থাকার জন্য বিদেশে টাকা পাচার করে। কিছু ধনী নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য মাদ্রাসা দেয় কিন' মাদ্রাসার ছাত্রদের জীবন মান উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখে না। যে যুবকটি অধ্যাপক জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা করে, সে সফল কোন যুবক নয়। মাদ্রাসায় পড়া হতাশাগ্রস্থ অবশ্যই। মূর্খ উগ্রপন্থীরা তাদের বেহেস্তের লোভে ফেলে শহীদ বানায়। ওই মূর্খ তার জীবনবোধ, বিজ্ঞান, পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছুই শিখেনি। জাফর ইকবাল সম্পর্কেও তেমন জানার সুযোগ তার নেই। হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ঝুঁকে পড়েছিল মৌলবাদের দিকে, আর পেয়ে বসেছিল বেহেস্তে যাওয়ার লোভ। ওখানে মদের নহর, চীরযৌবনা হুরী। ওরা জানে আমাদের ধনীরা এ পৃথিবীতেই এসব করে। এগুলো প্রাপ্তিই কি পৃথিবীতে সুখ নিশ্চিত করে? ওই যুবক কি নিশ্চিত ছিল? অবশ্যই না, শুধুই অনুমান, হতাশা কাটানোর চেষ্টা। অশিক্ষা-কুশিক্ষায় জর্জরিত এসব তরুণ/যুবক কিভাবে ফিরবে মূল স্রোতে? কিভাবে ওরা সভ্যতা, মানবতা বুঝবে? ওরা বুঝে নাস্তিক কারো কল্লা কাটলেই শহীদ; সোজা বেহেস্ত। এসব মূর্খদের জন্য কি বেহেস্ত বানানো হয়েছে?

উগ্রমৌলবাদী নিকটজন হলেও পরিত্যাজ্য
উগ্রমৌলবাদীদের সাথে সম্পর্ক রাখাও ঝুঁকিপূর্ণ। কখনো মনে হবে আপনার জন্য জীবন দিবে, দেখবেন পান থেকে চুন খসলেই আপনার জীবনই নিয়ে নিবে। কয়েকটি সত্যি ঘটনা উল্লেখ করছি-
ঘটনা-১ বন্ধত্বু: আমাদের স্কুলের এক সদ্যবিবাহিত হিন্দু শিক্ষকের সাথে ঘণিষ্ঠ হয় এক মুসলিম উগ্রমৌলবাদী। এতে হিন্দুবাবুর নতুন বউকে বৌদী বৌদী বলে অসি'র করে সকালের নাস্তাটা, দুপুরের খাওয়াটা খেয়ে নেয়। অনেক সময় নিজেই হাড়ি থেকে খাবার বেড়েও খায়। বিষয়টা তাদের প্রাইভেসীতে মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। তাদের মনোভাব প্রকাশ হতেই উগ্রমৌলবাদীর আচরণ পাল্টে যায়। এরমধ্যে হিন্দু শিক্ষক ক্লাসে সমাজবিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে, আদি সমাজ ব্যবস্থা, পরিবার ইত্যাদি পড়িয়েছেন যা সকল ধর্মের সাথেই সাংঘর্ষিক। আর যায় কোথায়, এটাকে ইসলাম ধর্ম অবমাননা আখ্যা দিয়ে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তুললেন। পরিসি'তি খুব খারাপের দিকে যেতে থাকলে কয়েকজন সচেতন মানুষের হস্তক্ষেপে হিন্দুভদ্রলোক রক্ষা পায়।
ঘটনা-২ আত্মীয়তা: গতকালই প্রকৃত ঘটনা জানলাম। আমার এক উগ্রমৌলবাদী আত্মীয় ফেসবুক রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল। আমি বিভিন্ন বিবেচনায় সেটা গ্রহণ করিনি। এতে সে ক্ষীপ্ত হয়ে আমার একটি পেজ নকল করে ফেসবুক ফেক আইডি খুলে, আমার বিরুদ্ধেই জঘণ্যতম মিথ্যা প্রচারণা চালায়। তার কয়েকজন বন্ধুকেও অনুরোধ করে প্রচারণা চালানোর। আমি বিষয়টি জেনে তার ভাই-বোনদের কাছে অভিযোগ করি। এক ভাই মৌলবাদীকে কুলাঙ্গার বলে অভিহিত করে, তার বহু অপকর্মের কথা জানায় ও দুঃখ প্রকাশ করে। তার বোনের কাছ থেকে জানা যায়, মৌলবাদীর ধর্মপ্রাণ পিতাও বলে গিয়েছিলেন, দুঃখ একটি কুপুত্র রেখে গেলাম।
ঘটনা-৩ পরিবার: বিক্রমপুরেরই ঘটনা। ভদ্রলোক নিজেও নিয়মিত নামাজ পড়েন। কিন' বিয়ে করেছেন এক উগ্রপন্থী নারীকে। সে তুচ্ছ কারণে স্বামীকে, স্বামীর আত্মীয় স্বজনকে অসম্মান করে। বাড়িতে ঢুকলেই স্ত্রী তুচ্ছ বিষয়কে বড় করে অভিযোগ করতেই থাকে। ঝগড়া ছাড়া এক মুহূর্তও কাটে না। অসম্মান, গালাগালি ছাড়া আর কিছু শুনেন না। ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে শেষে আত্মহত্যার পথই বেছে নেন।
এমন ঘটনা অহরহই ঘটেছে। উগ্রপন্থীদের সাথে সম্পর্ক রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আজ সুন্দর সম্পর্ক, কদিন পরেই তার হাতেই আপনার জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই বিপদমুক্ত থাকার চেষ্টা করাই উত্তম।

উগ্রমৌলবাদীরা কেন সামাজিক ও মানবিক নয়?
আমরা দেখছি মাদ্রাসার সাথে কিছু ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রদের মধ্যে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে। সর্বশেষ অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীও মাদ্রাসার প্রোডাক্ট। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নিকট শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষকে হামলা করতে হলে চূড়ান্ত অমানবিক ও উগ্রমৌলবাদী-অসামাজিক হতে হয়। শিক্ষার প্রধান দুটি লক্ষ্য হল- শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানবিক হিসাবে গড়ে তোলা। সামাজিক হতে গেলে সমাজ সম্পর্কে শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়, সমাজের মানুষ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ সম্যক জ্ঞান প্রয়োজন। সামাজিকীকরণের জন্য সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে মিশতে হয়, কথা বলতে হয়। ধনীক শ্রেণির অনেক সন্তানকেই থাকতে হয় গৃহবন্দী। নিজ ফ্লাটগুলো হয়ে উঠে বন্দিশালা। মায়ের সাথে সন্তানরা গৃহ থেকে বের হয়ে পাঠশালায় যায় যেন পুলিশের সাথে বন্দীরা যাচ্ছে এক বন্দিশালা থেকে আরেক বন্দিশালায়। পড়ার চাপে পাঠশালায় বন্ধুত্বকরণও হয় না। শিক্ষার চাপে শিক্ষার্থীদের শৈশব ও কৈশোরের স্বাভাবিক বিকাশটা হয় না। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শিশুরা গৃহচ্যুত হয় শৈশবেই। যে বয়সে মা-বাবার স্নেহ পাবার কথা সে বয়সে শিক্ষকের বেত্রাঘাত তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে না। তারাও গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর বাইরে আর কারো সাথে মেশার সুযোগ পায় না, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ পায় না। এরা যখন কোন উগ্রপন্থী নেতার সান্নিধ্যে আসে তখন নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে উগ্রপন্থা ধারণ করে। তবে উগ্রমৌলবাদীদের সিংহভাগই হতাশাগ্রস' দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মাদ্রাসার মানহীন শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রই।
মানুষের মানবিক গুণাবলী অর্জনের জন্য সামাজিকীকরণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু মুখস্তের মাধ্যমে কারো পক্ষে মানবিক গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব নয়। এই আচরণটা রপ্ত হয় অনুশীলনের মাধ্যমে। সামাজিক সংগঠন শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানবিক হতে সহায়তা করে। আন্তস্কুল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, স্কুলের আভ্যন্তরীণ, ইউনিয়ন বা উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা তাদের আরো সুযোগ করে দেয়। নটরডেম কলেজে দেখেছি ছাত্ররা ডিবেট ক্লাব, চেজ ক্লাব, নেচার ক্লাব ইত্যাদি করছে এবং অনুশীলন করছে। ফলে তারা পরবর্তী জীবনে সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসাবে এগিয়ে থাকছে। যারা সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ পান না, তাদের উগ্রপন'ী হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সমাজ বিচ্ছিন্ন বন্দীদের আলোর পথে যাত্রা করা অসম্ভব। মাদ্রাসায় দুমাস শিক্ষকতা করার সুযোগ আমার আছে। ওখানে পড়াশোনাটা হয় না, আর যাই হোক। শিক্ষকদেরও অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। বিস্ময়কর যে, একই ক্লাসে পড়ুয়াদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য বেশি থাকে। তাদের ঘৃণা বিদ্বেষ শিখিয়ে মানবিক ও সামাজিক মানুষ বানাতে পারবেন না। সামাজিক ও মানবিক মানুষ হওয়া বা মেধার বিকাশপ্রাপ্ত হওয়া কোন আকস্মিক বিষয় নয়, এগুলো অর্জন করতে হয়।

মৌলবাদী মাত্রই কুপুত্র ও কুলাঙ্গার
আমার ঘণিষ্ঠতম বন্ধু অসীম কুমার বর্মন। আমরা ছিলাম মানিকজোড়, হরিহর আত্মা। ও তখন ঢাকা কলেজে আর আমি নটরডেমে পড়ি। দুই বন্ধু একসাথেই বেশিরভাগ গ্রামে আসি, ঢাকা যাই, একসাথেই চলাফেরা করি। ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে আমরা দুজনই ছিলাম উদার। তো একদিন আমি ও অসীম আমাদের বাজারের জামে মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। নিয়মিত নামাজ পড়তাম বলে অস্থায়ী মোয়াজ্জিন আমাকে খুবই স্নেহের চোখে দেখতেন। আমিও মামা বলতাম। তিনি ডাকলেন। কাছে গেলে বললেন, তুই যে একটা মালাউনের সাথে ঘুরিস, আখেরাতে কি জবাব দিবি?
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। অসীমের সামনে নিজেকে অসহায় মনে হল। ভীষণ লজ্জা পেলাম। অসীম আমাকে টেনে নিয়ে গেল। ও বলল, তোর লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। এদেশে আমরা হিন্দুরা এভাবে নাজেহাল হয়ে অভ্যস্ত। তুই কষ্ট পাইস না।
আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। ওনি এমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন, অন্যকে অপদস্ত করতে পারেন এটা ভাবনার বাইরে ছিল। এখন এই জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মৌলবাদী মাত্রই প্রতিক্রিয়াশীল। তারা অন্যকে অপদস্ত করে মজা পায়। হিন্দু মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে না হলেও তারা নিজেরাও নিজেদের মধ্যে থেকেও প্রায়শই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় মুসলিম মৌলবাদীরা প্রায়শই নির্মম ও অমানবিক হয়ে উঠে তাদের আচরণে। আমার নিকটআত্মীয় এক মৌলবাদীকেও দেখেছি বহুবিধ নির্মম আচরণ করতে। সে তার স্ত্রী, মা, প্রতিবেশি ইত্যাদির উপরও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আমার বিরুদ্ধে তার ফেসবুক রিকুয়েস্ট গ্রহণ না করায়, একটি ফেক আইডি খুলে অনবরত মিথ্যা প্রচারণা চালালো কিছুদিন। পরে জানলাম, ওনার বাবাও মৃত্যুর আগে তাকে ‘কুপুত্র’ বলে অভিধা দিয়ে গেছেন; ভাইয়েরা বলল, ‘কুলাঙ্গার’। চাকুরি জীবনে দেখছি, মৌলবাদীরা কি পরিমানে মানুষকে অসম্মান করে, দুর্নীতি করে, সহকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করে? আমার এক সহকর্মী মৌলবাদী দুর্নীতির টাকাকে এরা সন্তানের ‘হক’ বলে মনে করতো। মৌলবাদীদের কখনোই মানুষ বলে মনে হয়নি। এখন বুঝি, যে ধর্মেরই হউক মৌলবাদী মাত্রই কুপুত্র ও কুলাঙ্গার। উগ্রমৌলবাদী মানে মানবতার শত্রু। আর জঙ্গী মানে খুনি।
একটি সাপকে বিশ্বাস করতে পারেন, আঘাতের ভয় না পেলে সে আপনাকে দংশন করবে না। কিন' আপনি নিশ্চিত থাকেন একজন মৌলবাদী বা জঙ্গী সম্পূর্ণ বিনা কারণে আপনার প্রাণ সংহার করে দিবে। আপনার জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলবে। আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে সমাজে অসম্মানিত করে ফেলবে। উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী তৈরি হয় চরম-মহা-বাজে রকমের মূর্খতা থেকে।

মৌলবাদীদের আচরণ
মৌলবাদীদের কাছ থেকে অহরহই দেখতে হয়। এদের কিছু বৈশিষ্ট স্পষ্ট চোখে পড়ে। এরা মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল। অনেক সময়ই সম্পূর্ণ না শুনেই, না বুঝেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এরা অন্যের উপর দোষ চাপাতে পারঙ্গম। যে দোষে নিজে দোষী সে দোষও অন্যের উপর চাপায়। নিজের ৯৫ ভাগ সমস্যা তাদের চোখে পড়ে না। অন্যের ৫ ভাগ ত্রুটিও মানতে চায় না। জানার বিষয়ে তারা বিমূখ। এর অবশ্য আরেকটা কারণ অলসতা। মৌলবাদীরা এতো কম জানে এবং জানার চেষ্টা করে যে, এ নিয়ে তাদের কোন লজ্জাবোধও হয় না। কুতর্ক করতে তারা পছন্দ করে। ধর্ম দিয়ে অন্যকে আক্রমণ করে। মানুষকে নাজেহাল করে তারা মজা পায়। মৌলবাদীরা মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস'। তারা ঘুষ-দুর্নীতিকে সন্তানের হক বলে মনে করে। কেউ কেউ টুপি খুলে ঘুষটা খায়, কেউ আবার টুপির মধ্যেও খায়। মৌলবাদীরা শুধু হিংস্ত্র নয় তারা আসলে বেকুব এবং কর্মবিমূখ। নিজ পরিবারের স্বার্থটাও বুঝে না। নিজেরটাও অনেক সময় উল্টো বুঝে ক্ষতিগ্রস' হয়। এ কারণে অধিকাংশ মৌলবাদীই দরিদ্র বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের যৌন তাড়নাটা একটু বেশি। লালসালুর মজিদই আদর্শ মৌলবাদী। মৌলবাদীদের মধ্যে একটি জেলার মৌলবাদীরা ভয়ংকর। তাদের বিরুদ্ধে মাহাত্মা গান্ধীর ছাগল খেয়ে ফেলার অভিযোগও রয়েছে। আমার মনে হয়, দেশে ধর্মান্ধতা-মৌলবাদ ছড়াতে তাদের ভূমিকাই সিংহভাগ। স্ত্রীকে ওই জেলায় রেখে তারা বাংলাদেশজুড়ে মৌলবাদ বিস্তার করে বেড়ায়। দুই-পাঁচ বছর স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থেকেও সন্তানের পিতা হয়েছে আবার ধর্মালয়ে তাদের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিপিড়নের অভিযোগও রয়েছে। ধরা পড়লেই বলে দেয়, শয়তানের কাজ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

ইনাম আহমদ বলেছেন: এই পোস্টে কমেন্ট নেই কেন কোনও??? :-&

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৮

ইনাম আহমদ বলেছেন: মৌলবাদ একটি মৌলিক ধারণা। এটার সাথে শিক্ষাদীক্ষা, ধর্ম, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদির সরাসরি কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা একটা পর্যায় যেখানে মানুষ নিজের মূলের ওপরে দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে বসে ও বহিরাগত সবরকম মতবাদ, সংস্কৃতির তীব্রভাবে বিরোধী হয়ে ওঠে।
সোজাকথায়, অসাম্প্রদায়িকতার বিপরীত মেরু হচ্ছে মৌলবাদ। যেখানে অসাম্প্রদায়িকতা অপরের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়, মৌলবাদ সবরকম ভিন্ন মতবাদকে নিজেদের এলাকা থেকে দূরে রাখার শিক্ষা দেয়।
বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষকে প্রতিনিয়ত একে অপরের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতার মানুষ যখন একে অপরের সাথে মেলামেশা করছে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিজেদের পার্থক্যগুলো নিজেদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সাথে সাথে নিজেদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও আমরা আরও সচেতন হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। এখান থেকেই অনিবার্যভাবে সমাজগুলোতে দুটো দল হয়ে যাচ্ছে। অসাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। এবং যে যার বিশ্বাস অনুযায়ী দল বেছে নিচ্ছে।
মৌলবাদের কোন শাখায় আপনি পড়বেন এটা মূলতঃ নির্ভর করে আপনি নিজেকে কীভাবে পরিচয় দেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই ধর্ম এখানে যে প্রাধান্য পাচ্ছে তা স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয়।
মৌলবাদ বা Fundamentalism বা Ethnocentrism কিংবা জাতিবাদ যাই বলা হোক না কেন, বিষয়গুলো প্রায় একই। এটার সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক অনেকটা Economics এর সাথে Business Studies এর। একটা অপরটার জন্ম দেয়। এখানে আমি চেষ্টা করছি বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের একটা চিত্র আঁকার।
”নিজেকে একজন তীব্র বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে ধরে নিন। আপনি নিয়মিত কোরআন পড়েন। আপনার মসজিদে ইমামের কাছে মুসলমানদের স্বর্ণযুগের গল্প শোনেন। আপনাকে বলা হয়েছে, কীভাবে ষড়যন্ত্র করে ইহুদী-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সর্বস্বান্ত করে আজ বিশ্বে রাজত্ব করছে। আপনি জানেন যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানেরা বিশাল উন্নতি করেছিলো এককালে, কিন্তু অমুসলিমরা তার ন্যায্য সম্মানটুকুও দেয় না। আপনার কাছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়াও আরও বহু বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদের লেখা বই আছে সেগুলোতেও এই দাবীর প্রমাণ আছে।
আপনি জানেন আপনি যে বিশ্বাস করেন তা একশত ভাগ সঠিক, তা বিশ্বে কল্যাণ ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু অমুসলিমরা আপনার কথা শোনে না, শুনতেও চায়না। তারা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে পড়ে আছে। আপনার নিজের সমাজেও মানুষগুলো ধর্মকর্ম অতটা কঠোরভাবে পালন করেনা যতটা করা উচিৎ। খামখেয়ালীতে ডুবে আছে। আবার একই সময়ে আপনার সংস্কৃতিতে অপরপক্ষ আগ্রসন চালাচ্ছে। তাদের সংস্কৃতির জিনিসগুলো আপনার সমাজে ঢুকে পড়ছে। আপনার সমাজের অনেক মানুষ সেগুলো গ্রহণও করছে। আপনি কি করবেন?”

এই জিনিসটা এখন অন্যসমাজে নিয়ে কল্পনা করুন। উপরের অংশটুকুতে কিছু পরিবর্তন করে দিলেই চলবে। ইসলামের জায়গায় হিন্দুধর্ম বা খ্রীস্টানধর্ম বা বৌদ্ধধর্ম, আলেমের জায়গায় গুরু বা পাদ্রী ইত্যাদি কিছু শব্দ পরিবর্তন করে দিন। তবেই বাদবাকি বিশ্বের অপরাপর মৌলবাদী দলগুলোর আদর্শ পেয়ে যাবেন।
এখানে বেশকিছু জিনিস ঘটতে পারে। যেমন,
১) আপনি এর তীব্রভাবে বিরোধীতা করবেন, বহিরাগত সবকিছুকে আপনার সমাজের দুরবস্থার জন্য দায়ী করে এগুলোকে তীব্রভাবে বর্জন করতে বলবেন।
২) আপনি এগুলোকে প্রচন্ড ঘৃণা করলেও সমাজের চাপে আপনি মুখ খুলবেন না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এগুলোকে তীব্রভাবে পরিহার করে চলবেন।
৩) আপনি আবেগী হলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন যে, এসবের কোনও অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই আপনার সমাজে। এগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে এগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
প্রথমটি হচ্ছে মৌলবাদ, দ্বিতীয়টি এর সুপ্ত অবস্থা ও তৃতীয়টি হচ্ছে এর বিস্ফোরণ তথা জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ হচ্ছে ধ্বংসাত্বক নীতি, তবে এটা খাপছাড়া নয়, এর একটা সুস্পষ্ট ভিত্তি আছে, আছে নিজস্ব আদর্শ। একজন খ্রীস্টান, মুসলমান বা হিন্দু বা বৌদ্ধ যদি ভাবে, পৃথিবীর সবজায়গায় অন্যধর্মের মানুষেরা তার ধর্মের জন্য ক্ষতিকর ও তাদের বাঁচার অধিকার নেই, সেটাই জঙ্গিবাদ।
অসাম্প্রদায়িকতা নীতি থেকে সরে এসে মানুষ যখন নিজের মূল তথা শেকড়কে জোরপূর্বক অপরের ওপরে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সেই প্রচেষ্টার ফলাফল কখনো শুভ হতে পারেনা। মৌলবাদ মানবসভ্যতার জন্য কখনও মঙ্গলজনক হতে পারেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.