নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে জানবো আমাদের অতীত?

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৭

ইতিহাস পাঠই সহজ পথ। কিন্তু ইতিহাস পাঠ সহজ সরল নয়। ওখানে যেমন বহু নাম বহু তারিখ আর প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ঘটনার বিস্তার থাকে তাতে পাঠক ক্লান্ত হয়ে পড়াই ছেড়ে দিতে পারে। বিকল্প রয়েছে। যদি ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস পাওয়া যায়। বাংলাভাষায় ইতিহাস নির্ভর সুলিখিত উপন্যাস অহরহ না হলেও একেবারে শূন্যও নয়।
১। ভোলগা থেকে গঙ্গা: রাহুল সংকৃত্যায়ন
প্রায় আট হাজার বছর ব্যপ্তি নিয়ে এর সময় কাল। খৃস্টপূর্ব ছয় হাজার বছর আগে যখন মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চলছে শুরু হয়েছে সে সময়ে। বইটি লেখাও হয়েছে ষাট সত্তর বছর আগে। এরপরেও গবেষণায়, নতুন তথ্য-উপাত্তে ইতিহাস অনেক বদলেছে। তখনকার জানা ইতিহাস মতে সেই আর্য মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রাণের তাগিদে, খাদ্যের জন্য, পরস্পরের হানাহানির মধ্যে চলতে থাকে দক্ষিণে। একসময় হানা দেয় বা ঢুকে পড়ে ভারতে। অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী আর্যরা হারিয়ে দেয় আমাদের আদি অসুর নৃপতিদের। এরপর বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন হয়, মুসলিমরা আসে, ইংরেজরা আসে। এক কথায় সুদীর্ঘকালকে সংক্ষেপে জানার জন্য এক অনবদ্য উপন্যাস (?) এটি।
২। সিদ্ধার্থ: হেরমান হেস
লেখক জার্মান হলেও গৌতম বুদ্ধের সময়টা পাওয়া যাবে এই উপন্যাসে। এটি শুধু ভারতবর্ষেই নয় বিশ্বব্যাপীই একটি আলোচিত উপন্যাস। গৌতমবুদ্ধের আরেক নাম সিদ্ধার্থ। কিন্তু উপন্যাসে গৌতম বুদ্ধ থাকলেও তারা দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। এখানে অভাবিতভাবে বুদ্ধর দর্শনকে অতিক্রম করে একই ভূবনে ভিন্ন দর্শন সৃষ্টি করা হয়েছে। বুদ্ধর মতোই অল্প বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য গৃহ ত্যাগ করেছিল ব্রাহ্মণ কুমার সিদ্ধার্থ। বুদ্ধের সাথে তার কথোপকথন দীর্ঘ কিন' আকর্ষণীয়। দুজনের মধ্যেকার চিন্তা ভাবনার পার্থক্য স্পষ্ট হয়। এই উপন্যাসের আরেকটি আকর্ষণ আছে। সেটা হলো ঐ সময়কে তুলে আনা। ওই সময়ে জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বারবনিতা, প্রেম এবং একটি গল্প এগুলোও নিপুণতায় তুলে এনেছিলেন হেরমান হেস। সিদ্ধার্থ জানে অপেক্ষা করতে, চিন্তা করতে এবং উপবাস করতে। এক সময় তাকে জয় করে নেয়, তার পরামর্শে বাণিজ্য করে বহু অর্থ আয় করে। বহু বছর কমলার জন্য আয় করে, তাকে উপহার দিয়ে তার সান্নিধ্যে থাকে কিন্তু কেউ কাউকে ভালবাসেনি। বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকে। সিদ্ধার্থ জানে, অধিকাংশ লোকই ঝরাপাতার মতো হাওয়ায় উড়ে যায়, ভেসে বেড়ায় কিছুক্ষণ, তারপর মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন' অল্প কয়েকজন আছেন যাঁরা আকাশের নক্ষত্রের মতো নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলেন। তার পিতার কথা, গোবিন্দের কথা এবং বুদ্ধের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় সম্পত্তি কুড়ানোর প্রবৃত্তির মৃত্যু ঘটে। সে বিদায় নিল বাড়ি, শয্যা ও খাবারের কাছ থেকে। ঘুরতে ঘুরতে চলে এল এক নদীর ধারে। এই নদীর মাঝি বাসুদেব একদিন তাকে বিনা ভাড়ায় নদী পার করে দিয়েছিল। এখানেই সিদ্ধার্থ খেয়াঘাটের মাঝি হয়, শিখতে থাকে নদীর কাছ থেকে। মৃত্যুর আগে এ ঘাটেই দেখা হয় বারাঙ্গনা কমলার গর্ভে জন্ম নেয়া তার পুত্রের। এ এক অভাবনীয় উপন্যাস- শুধু সময় জানায় না, জীবনও বদলে দেয়।
৩। পিতৃগণ: জাকির তালুকদার
বছর ত্রিশের ব্যপ্তি নিয়ে উপন্যাস। সময়টা পাল শাসনমলের মধ্যে কৈবর্তদের শাসনের তিন দশক। একটা সুযোগে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গৌর চলে আসে কৈবত্য আমত্য দিব্যোকের দখলে। মহিপাল বিদ্রোহী কৈবর্তদের হাতে খুন হয়ে যান এবং পালিয়ে বাঁচে অন্যরা। এতো বিশাল সাম্রাজ্য এতো সহজে দখলে আসার কথাও নয়, দিব্যোক দখল করতে যাত্রাও করেনি। সময়টা মিলে গেছে মাত্র। তখন মহিপাল ব্যস' হয়ে পড়েছিল দক্ষিণের সাথে যুদ্ধে। সব সৈন্য ওখানে। দিব্যোক গিয়েছেন প্রজাপীড়নের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। অথচ রাজার উল্টো আচরণই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। দিব্যোকই সুযোগ করে দিয়েছিল আর্য-বৌদ্ধদের সবকিছু নিয়ে সরে যেতে। তারা রাজভাণ্ডার খালি করে সব নিয়ে যায়। এখানে শুধু দিব্যোকের বিজয়, তার ভাইর পুত্র ভীমের বা মল্লর সাহসই দেখানো হয়নি। উঠে এসেছে এখানেও সমাজ চিত্র ও অর্থনৈতিক চিত্র। কি ভয়াবহ নিপীড়ন ঘটতো বিহার বা মন্দিরগুলোকে কেন্দ্র করে। মন্দিরের সেবাদাসীদের উপর অনাচার, বৌদ্ধবিহারপ্রধান প্রজাপীড়ন বহু বিষয়ই উঠে এসেছে। নিশ্চিত করতে না পেরেও মনে করি পপীপই আমাদের প্রথম অনার্য কবি। সেই পপীপের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রয়েছে এই উপন্যাসে।
৪। প্রদোষে প্রাকৃতজনঃ শওকত আলী
সময়টা তুর্কী সাম্রাজ্য সূচনা আর সেনদের পতনের। এখানে রাজরাজাদের কাহিনীর প্রাধান্য নয় গ্রামের মানুষ, তাদের জীবন যাপন, কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্যই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সিদ্ধার্থ উপন্যাসের সাথে তুলনা করার মতো বাংলা সাহিত্যেই কোন উপন্যাস নেই বাকীগুলো অর্থাৎ বাংলাদেশের উপন্যাস চিন্তা করলে প্রদোষে প্রাকৃতজন অনন্য। একমাত্র এ উপন্যাসটি পড়লেই মনে হবে, আপনি ইতিহাস পড়ছেন না, ঢুকে গেছেন ওই সময়ে। তুর্কী আক্রমণ চলে আসলে বিস্ময়কর তবু সামন্তা দরিদ্র জনতার উপর নিপীড়ন থামাচ্ছে না। জনতা বাঁচার চেষ্টা করে, শাসকরা সেটাই অপরাধ ধরে কখনো সাধারণ মানুষ কখনো বৌদ্ধদের হত্যার চেষ্টা চালায়। গ্রাম জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দেয়। শ্যামাঙ্গ একজন জাত মৃৎশিল্পী হলেও তার পূর্ণতা দেখি না তার প্রেমিকা লীলাবতী যে অন্যের পরিত্যাক্তা স্ত্রী তাকে নিয়ে ছুটে শহরের দিকে আবার বণিক বসন্ত দাস তার স্ত্রী মায়াবতীকে ছেড়ে কত কি করে বেড়ায়। কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে রোগ, কতটা ভয় পায় মানুষ। সাধারণ মানুষের ভিতর দিয়েই উঠে এসেছে ওই সময়ে রাজনীতি। এটিও এক অনন্য অসাধারণ উপন্যাস। হয়তো শ্যামাঙ্গের মৃত্যু কষ্ট দিবে, যে শাসনের আগমণে ডঙ্কা শুনা যাচ্ছিল উপন্যাসের পরতে পরতে তার আগমনটাও ঠিকমতো লেখা হলো হয়। একটা অতৃপ্তি। তবে এরপরও এটি কেন শ্রেষ্ঠ? এমন গভীরতা যে কোথাও নেই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট।
আমি প্রচন্ড পবাক কোনো মন্তব্য নাই দেখে??
ব্লগাররা কি বই টই পড়ে না???!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.