নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন বড় সরকারি হাসপাতালের কাছে এতো বেসরকারি হাসপাতাল?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৩

বড় বড় সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল থাকারই কথা নয়। কারণ বিনা পয়সায় ভাল চিকিৎসা রেখে কেন মানুষ কাছের অতিমূল্যের সেবা কিনতে বেসকারি হাসপাতালে যাবে। বরং কাছাকাছি সরকারি হাসপাতাল না থাকলেই মানুষ দ্রুত সেবার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যাবে। কিন্তু উল্টো চিত্র কেন সর্বত্র? কেন বাংলাদেশে বড় বড় হাসপাতালের কাছেই এতো বেসরকারি হাসপাতাল?

একটু ভাবলেই কারণগুলো খুবই স্বাভাবিক মনে হবে।

১। ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই চলে যেতে পারেন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য। ওখানে দুই ঘণ্টা দেখে আবার আসলেন হাসপাতালে।
২। হাসপাতালে এসে যাদের দেখে বুঝলেন টাকা-পয়সা আছে তাদের বললেন, এখানে ভালমতো দেখা সম্ভব নয় পাশের হাসপাতালে যান আমি একঘণ্টা পরে গিয়ে ভালমতো দেখবো।
৩। যাদের পরীক্ষা করানো দরকার তাদের পাঠালেন ওই বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার চার্জের ৪০-৫০% পান প্রেরণকারী ডাক্তার।
৪। হাসপাতালের কাজ কোনরকম শেষ করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবার ফিরে যেতে পারেন বেসরকারি হাসপাতালে। এবার রোগী দেখবেন দীর্ঘ সময় নিয়ে, ভাল ব্যবহার করে, অহেতুক অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে। হাসপাতালে ২০ জন রোগী দেখতে তার লাগে ৪০ মিনিট আর এখানে লাগে ৪ ঘণ্টা।
৫। একটা ইনজেকশন পুশ করতে সরকারি হাসপাতালে কোন টাকা লাগে না। ভালভাবে ইনজেকশন পুশ করতে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে পারলেই হল- পুশের মূল্য ২ থেকে ১২ হাজার টাকা মাত্র। কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল না হলে সম্ভব নয়।
৬। আইসিইউ একটি মজার জায়গা। সরকারি হাসপাতালে গেলেই শুনবেন নাই, নষ্ট, সংকট। ডাক্তারতো পাঠিয়ে দিবে কাছের বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে আইসিইউ আছে। যিনি পাঠালেন তার কমিশন আছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই শুনি রোগী মারা গেছেন দুদিন আগে অথচ বিল করেছে আরো দুই দিনের। আবার ঐ ডাক্তারই কাছাকাছি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের কাজের ফাঁকে দেখে যেতে পারছেন রোগীকে।
৭।চশমার বা ওষুধের দোকানদারের সাথেও ডাক্তারের সম্পর্ক তৈরি হয়। আপনি যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে কিন্তু ওরা শুনেই আপনাকে পাঠিয়ে দিবে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে। দশ টাকার টিকিট কিনে আপনি হয়তো চোখের ইনজেকশনটা দিতেন। চশমার দোকানদার বলে দিল ভাইরে ওখানে ভালমতো দিতে পারবে না সর্বনাশ হতে পারে। আপনি ওই পাশের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েই দিন। দিয়েই দেখলেন বিল সাড়ে বারো হাজার টাকা মাত্র!
৮। সরকারি হাসপাতালের যেসকল ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎকের কাজ করেন তাদের টার্গেট থাকে। যেমন সেলসম্যানদের টার্গেট দেয়া হয় তাদেরও রোগী ভর্তির টার্গেট থাকে। কতটি পরীক্ষা করাতে হবে ও ওষুধ দিতে হবে তারও টার্গেট থাকে। এসব টার্গেট পূরণ করতে হয় পুরো বেতন পেতে। আবার যারা এই শর্তে থাকেন না তারা রোগী দেখার হিসেবে আনুপাতিক হারে টাকা পান। যাই হোক তাকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠাতেই হয়। তাই কাছে থাকলেই সুবিধা।
৯। একটু দূরে হলেও কিন্তু আপনি সুবিধাগুলো পাবেন। যেমন বাংলাদেশে বসে যদি কোন রোগীকে কলকাতায় পাঠান তবুও নাকি কমিশন পাওয়া যায়। এজন্যই কলকাতার প্রকৃত চিকিৎসার মান বাংলাদেশের চেয়ে ভাল না হওয়া সত্যেও একটা ভাবাদর্শ তৈরি হয়েছে যে ওখানে কম টাকায় ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়।
১০। সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর চেয়ে একজন ওষুধকোম্পানীর এমআরের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ ওই এমআরের কাছ থেকে মিলে উপঢৌকন ও নগদ প্রণোদনা। ফলে তারা রোগীর চেয়ে তাদের সাথেই বেশি কথা বলেন। এমআরদের কাছাকাছি থাকার পরেও বেসরকারি হাসপাতালে ভীর করতে দেখা যায় না।
১১। আমাদের উপজেলার একজন এম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে পত্রিকায় অভিযোগ দেখেছিলাম। সুদীর্ঘকাল ধরে হাসপাতালের এম্বুল্যান্সটি বন্ধই থাকে। বেতন নেন সরকারি আর তিনি চালান নিজের বেসরকারি এম্বুল্যান্স। আর সেটি দিয়ে রোগীকে বিভ্রান্ত করে ঢুকিয়ে দেন ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে।

আসলেই সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল থাকা খুবই দরকার। আর এজন্যই গড়ে উঠেছে এতো হাসপাতাল। এতে কিছু উপকারিতাও আছে। বেসরকারি হাসপাতালে বিনিয়োগ বাড়ছে। একটা কর্পোরেট ধারণা তৈরি হয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৩

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আপনার পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ সঠিক। সরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকর্মী পালনের প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে - রোগীর চিকিৎসার জন্য নয়।

রাষ্ট্র তার এই অপব্যয় দূর করার জন্য বিকল্প স্ট্রাটেজি নিতে পারে। সরকারি হাসপাতাল তুলে দিয়ে সাধারণ জনগণের জন্য চিকিৎসা বীমার ব্যয়ভার বহন করতে পারে রাষ্ট্র। আর বিভিন্ন চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক সহায়তার ফি বেঁধে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা যে কোনো বেসরকারি বা এনজিওতে প্রদান করার ব্যবস্থা থাকবে আর স্ব্যাস্থ্য বীমা থেকে রাষ্ট্র সেই রোগির চিকিৎসাবাবদ যাবতীয় খরচ ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্তত চিকিৎসা খাতের বাজেটের অর্থের কিছুটা হলেও সাধারণ জনগণের পিছনে খরচ হবে।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০৩

মুজিব রহমান বলেছেন: আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মৌলিক চাহিদাকে মৌলিক অধিকার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: সত্য বলেছেন। সুন্দর পোষ্ট দিয়েছেন।

গত ২০/৩০ বছর আগে সরকারি হাসপাতাল গুলোর যে অবস্থা ছিলো। আজও সেই অবস্থা। তাহলে এত এত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রীরা কি করলেন?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৬

মুজিব রহমান বলেছেন: এ খাতটিই সবচেয়ে অবহেলিত বলে মনে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.