নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবর্তনের নামে কি পড়ানো হচ্ছে?

০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:১৩


বিবর্তন বিষয়ে আমি প্রথম পাঠ পাই উচ্চ মাধ্যমিকে। তাও সিলেবাসভূক্ত ছিল না। এখন নবম শ্রেণির জীববিজ্ঞানেও পড়ানো হচ্ছে। সেখানে সামান্যই ধারণা দেয়া হয়েছে। বিবর্তনবাদ বুঝার জন্য যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা ওসব বইতে এভাবে লেখা রয়েছে-

জৈব বিবর্তন: পৃথিবীতে বর্তমানে যত জীব রয়েছে তারা বিভিন্ন সময়ে এই ভূমণ্ডলে আবির্ভূত হয়েছে। আবার অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী সময়ের আবর্তে লুপ্ত হয়েছে। কয়েক হাজার বছর সময়ের ব্যাপকতায় জীব প্রজাতির পৃথিবীতে আবির্ভাব ও টিকে থাকার জন্য যে পরিবর্তন ও অভিযোজন প্রক্রিয়া তাকে জৈব বিবর্তন বলে।

প্রাকৃতিক নির্বাচন: ডারউইনের মতে জীবন-সংগ্রামে সেই সব প্রাণী সাফল্য লাভ করে যাদের শারীরিক গঠন প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়। তারা পরিবর্তনশীলতায় দক্ষতার পরিচয় দিয়ে অভিযোজিত গুণগুলো বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে বেঁচে থাকার বা বিবর্তনের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। অন্যদিকে যারা এ ধরনের পরিবর্তনশীতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না তারা প্রকৃতি কর্তৃক মনোনীত হয় না। ফলে তাদের বিলুপ্তি ঘটে। প্রাচীনকালের প্রাণী ডাইনোসর বলিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে অভিযোজিত না হতে পারায় বিলুপ্তি হয়েছে।

যোগ্যতমের টিকে থাকা (সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট): যে বৈশিষ্ট্য, স্বভাব ও প্রবৃত্তি জীব বা তার বংশধরকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম করে তোলে, সেসব জীব অনুকূল বৈচিত্র্যের অধিকারী হয়। এই গুণাবলী বংশ পরম্পরায় সঞ্চরিত হয়ে থাকে। অপরপক্ষে, প্রতিকূল বৈচিত্র্যসম্পন্ন জীব, জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে কালক্রমে ধ্বংস হয়। ডারউইন জীবজগতে এ ধরনের অভিযোজনকে প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন বলে মনে করেছেন। প্রকৃতিতে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী এমন কিছু অভিযোজনের অধিকারী হয়, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ সহায়ক। মরুভূমিতে অনেক গাছের পানি সংরক্ষণ করার কৌশল, প্রাণীর আত্মরক্ষায় ছদ্মবেশ কিংবা অনুকৃতির আশ্রয় নেয়। এই অভিযোজনগুলো অভিব্যক্তির উল্লেখযোগ্য উপাদান।

প্রজাতির টিকে থাকায় বিবর্তনের গুরুত্ব: বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির উদ্ভবকালে দেখা যায় অনেক প্রজাতি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে ডাইনোসরের কথা বলা যায়। দেখা গেছে যে সময়ের সাথে যে প্রজাতিটির টিকে থাকার ক্ষমতা যত বেশি সে বিবর্তনের ধারার তত বেশিদিন টিকে থাকতে পারে। অর্থাৎ যে পরিবেশ, জীবনপ্রবাহ ও জনমিতির মানদণ্ডে বিবর্তনে যে যত বেশি খাপ খাওয়াতে পারবে সেই প্রজাতিটি টিকে থাকবে। এটিকে অনেক ক্ষেত্রে অভিযোজন বলা হয়।

অনেকটা কঠিন করেই লেখা হয়েছে। বিবর্তন নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়া দরকার আরো সহজভাবে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন জেগে উঠে- আসলেই কি প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতি এসেছে? নাকি ঈশ্বরই মানুষকে মাটি দিয়ে তৈরি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে? তারা প্রশ্ন করতে করতে এগিয়ে যাবে এবং বুঝতে সক্ষম হবে প্রকৃত সত্যটা। নিজের ভিতরে জেগে উঠা প্রশ্নগুলোরও ব্যাখ্যা খুঁজে বের করবে। উচ্চ মাধ্যমিকে বর্তমানে যেভাবে বিবর্তন পড়ানো হয় তা খুবই বাজে ভাবে। বিবর্তনবাদকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা স্পষ্ট। এখানে খুবই গুরুত্ব দিয়ে ল্যামার্কিজম সম্পর্কে লেখা হয়েছে। অথচ ল্যামার্কের মতবাদ বাতিল হয়েই এসেছে ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ। ল্যামার্কবাদের সাথে ডারউইনের মতবাদের তুলনাও করা হয়েছে। নব্য-ডারউইনবাদ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। এতে মনে হবে বিবর্তনবাদ একটি খুবই বিতর্কিত বিষয় এবং যে যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা দিয়েছে। এখানে বলা হয়েছে বিবর্তন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। অথচ এখন অন্তত ৯ ধরনের প্রমাণ রয়েছে যা দিয়ে বিবর্তনকে প্রমাণ করা যায়। বইটিতেও বিবর্তনের স্বপক্ষে আট ধরনের প্রমাণ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে- অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ, ভ্রুণতত্ত্বীয় প্রমাণ, জীবাশ্বমগত প্রমাণ, শ্রেণিবিন্যাসগত প্রমাণ, শারীরবৃত্তীয় প্রমাণ, কোষতাত্ত্বিক প্রমাণ, জিনতত্ত্বীয় প্রমাণ ও ভৌগলিক প্রমাণ।

বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর বাহ্যিক ও অন্তর্গঠন পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট মনে হবে নিম্নশ্রেণির প্রাণী থেকে উচ্চ শ্রেণির প্রাণিদেহে অঙ্গসংস্থানজনিত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে উদাহরণ দেয়া যায়। মেরুদণ্ডী প্রাণীর অগ্রপদ/হাত/পাখা এর উৎপত্তি ও অভ্যন্তরীণ গঠন একই রকম। ঘোড়ার পা, বাদুরের ডানা, সীল মাছে ফ্লিপার, মানুষের হাত, পাখির পাখা ইত্যাদির আঙুল ৫টি করে। ঘোড়ার খুর একটি দেখলেও এর ভিতরে ঠিকই ৫টি আঙুলের হাড় রয়েছে। এমনকি তিমি মাছের মধ্যে অগ্রপদের যে চিহ্ন রয়েছে তাতেও ৫টি আঙুল রয়েছে। বিভিন্ন রকমের পার্থ থাকলেও গাঠনিক মৌলিক ভিত্তি একই। নিস্ক্রিয় অঙ্গও একটি প্রমাণ। মানুবদেহে শতাধিক নিষ্ক্রিয় অঙ্গ রয়েছে। আক্কেল দাঁত, এপেন্ডিক্স, গায়ের লোম কোন কাজেই লাগে না। আমার মানুশের লেজের কশেরুকাগুলো একত্রিত হয়েয়ে ছোট অসি'পিণ্ড তৈরি করেছে যাকে কক্কিক্স বলা হয়। ভ্রণের মিলগুলো আরো বিস্ময়কর। মাছ, কচ্ছপ, মোরগ, খরগোশ, গরু, মানুষ ইত্যাদি মেরুদণ্ডী প্রাণির প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রণ দেখলে একই রকম মনে হয়। আগে থেকে না জানলে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয় কোন ভ্রুণ থেকে কে এসেছে তা বলা। আমিও পরীক্ষা করেছি অনেকবার। ছবি দেখে কেউই বলতে পারেনি কোনটি থেকে কে এসেছে। বিবর্তনকে জীবাশ্ম বা ফসিল থেকে খুবই নির্ভযোগ্যভাবে প্রমাণ করা যায়। ভূ-পৃষ্ঠের একেক স্তরে একেক সময়ের প্রাণির ফসিল রয়েছে। কেউ কাউকে অতিক্রম করেনি। বিভিন্ন স্তরে পাওয়া একই প্রাণির জীবাশ্মগুলো ওই প্রাণির ধীরে ধীরে বিবর্তিত হওয়ার প্রমাণ দেয়। একই প্রজাতির প্রাণির মধ্যে এতো মিল কেন? অনেক প্রাণিই একটির সাথে আরেকটি খুবই কাছাকাছি। নেকড়ের সাথে কুকুরের মিল বিস্ময়কর। একটি বটবৃক্ষের সাথে মানুষের কি কোন মিল পাওয়া যায়? কিন' বটবৃক্ষের কোষ আর মানুষের কোষ মিলিয়ে দেখলে বিস্মিত হতে হয়। বিভিন্ন প্রাণির মধ্যেকার মিল ও অমিলের কারণ হল জিনগত গড়ন। কিভাবে জিনগত বৈশিষ্ট্য বদলে নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয় এটি এখন বিজ্ঞানীদের সম্পূর্ণই জানা। একটি ইঁদুরের জিনের সাথে মানুষের জিনের মিল ৯০ ভাগ! শিম্পাঞ্জির জিনের সাথে মানুষের জিনের মিল ৯৫ ভাগ! একটি ইঁদুর বা শিম্পাঞ্জিকে পর্যবেক্ষণ করলে এর জীবন চক্রের সাথে মানুষের জীবন চক্রের বিস্ময়কর মিলই মিলবে। এই প্রমাণগুলোই ভালমতো পড়ানো দরকার। বিবর্তনবাদ পাঠ করার সাথে সাথেই যেন তাদের মধ্যে এক বিস্ময়কর জগৎ উন্মোচিত হয়। যাতে প্রশ্নের ঝড় বইয়ে যায় তাদের মধ্যে যা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে এবং জীবনের রহস্য জানতে সহায়তা করবে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার প্রো-পিক দেখে আমি বিবর্তনে বিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছি।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মুজিব রহমান বলেছেন: বিবর্তন বিশ্বাসের বিষয় নয়, এটা প্রমাণিত সত্য। বিশ্বাস করুন তাতে যা নেই।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৫৩

কলাবাগান১ বলেছেন: অনেকদিন আগে আমি পাঠ্যবইয়ে বিবর্তন নামে পোস্ট দিয়েছিলাম যেখানে আলোচনা করেছিলাম কিভাবে মানুষের ৪৬ ক্রমোজম 'ইভলভড' হয়েছে গরিলার দুইটা ক্রমোজম এর জোড়া লেগে
Evolution study in Bangladesh

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
এ বিষয়ে এবং বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে অবিরাম পোস্ট দেয়া দরকার।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:০৮

নীল আকাশ বলেছেন: অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী! ম্যাওপ্যাও পোস্ট!

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মুজিব রহমান বলেছেন: অল্পবিদ্যাধারীরা কি বিবর্তনবাদ জানে? বরং উল্টোটাই হয়।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ঠিকই তো আছে। ভুল কই?

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
কিছু মানুষ দুধের মধ্যেও বিচি খুঁজে!

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভেতর কোন বিতর্ক নেই।
ধার্মিকরা বলে বিবর্তন মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।
ধার্মিকরা বলবেই, কারন বিজ্ঞানের এই অংশটি বিশ্বাস করলে ওদের দর্মিয় মুল ভিত্তি মিথ্যা হয়ে যায়।
বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে, আপডেট হচ্ছে।
নতুন আবিষ্কার দিয়ে আপডেট। এটাই বিজ্ঞানের নিয়ম।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মুজিব রহমান বলেছেন: ওদের অনবরত মিথ্যাচর বন্ধের জন্য আমাদেরও অনবরত বলতে হবে। তাহলেই সমাজ বদলাবে।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বিবর্তন নিয়ে আপনি যে হারে পোস্ট দিচ্ছেন সেটা যদি ডারউইনের যুগে দিতেন তাহলে ডারউইন ভাতে মারা পরতেন।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০০

মুজিব রহমান বলেছেন: ডারউইনতো খুশি হতেন যে তাঁর মতবাদই ছড়িয়ে দিচ্ছি। তবে এখন বিবর্তনবাদ তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী তত্ত্ব, ব্যাখ্যা ও প্রমাণের জায়গা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুমানগুলো একের পর এক প্রমাণিত হয়েছে।

৭| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৫

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: বিবর্তন নিয়ে ক্লাস ৯-১০ এ পড়েছিলাম তখন মাথায় প্রশ্নের ঝড় বইয়ে যায়নি এখন প্রশ্নের ঝড় বইবে মনে হচ্ছে।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০১

মুজিব রহমান বলেছেন: নাইন-টেনে এমনভাবে লেখা তাতে কারো মধ্যেই ঝড় বইছে না। এটা যাতে মাথায় না ঢুকে সেভাবেই লেখা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.