নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো ছায়ায় আমার ভূবন

আমি কনফিউসড চরিত্রের মানুষ।অগোছালো সবকিছুতে দোদূল্যমনতা আমার বৈশিষ্ট্য।টু বী অর নট টু বী এই দ্বন্ধে চলছে জীবন।

আরজু মুন জারিন

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু করা হয়ে উঠেনি এখন। ব্লগ এ লেখা টা প্রথমে ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা। মেসেজ শেয়ার করা। তবে লিখতে লিখতে এখন লেখার ভালবাসায় পড়ে গিয়েছি। নিজে যেমন লিখতে পছন্দ করি অন্যের লেখা ও একই পছন্দ নিয়ে পড়ি। লেখালিখির আরেকটা বড় উদ্দেশ্য হল (অন্যের দৃষ্টিতে তা ফানি মনে হবে ) সামাজিক বিপ্লব করা , মানুষের জীবনে স্বাছন্দ্য আনয়ন করা মূলত আমার দেশের মেয়েদের লেখিকাদের আমি বড় প্ল্যাটফর্ম এ দেখতে চাই। আমাদের দেশে ভাল লেখিকা অনেক কম। অথচ আমার মন বলে অনেক ট্যালেন্ট মেয়েরা আছে। অনগ্রসর সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মেয়েরা এক বৃত্তে বন্ধী হয়ে আছে। আমি খুব চাই ওই বাধা সরিয়ে আলোয় ,সাহিত্যে জ্ঞানে আমাদের মেয়েরা পথ চলুক। প্রচলিত দৃষ্টিতে সমাজে চলতে মেয়েদের বাধা গুলি চিহ্নিত করা আমার লেখালিখির আরেকটি উদ্দেশ্য। প্রগতির কথা বলতে চাই ভদ্রতায় , শালীনতায় এবং মর্যাদায়। সামাজিক আভ্রু ভেঙ্গে নয় যা তসলিমা নাসরিন করেছিলেন। বেগম রোকেয়া আমার পথ প্রদর্শক। তিনি মেয়েদের পাদ প্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছিলেন ঠিক ই রক্ষনশীলতার ঢাল ভেঙ্গে নয় , মর্যাদায় থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন মেয়েদের।

আরজু মুন জারিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভিন্ন কথোপকথনে বিভিন্নতায় জীবন (পর্ব--দুই)

১২ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

১ রুবিনা রাজীব প্রায় একঘন্টা ধরে বসে আছে রহিম এর বাড়িতে। রহিম সেই ছয় টায় তাদের ভিতরে বসিয়ে কোথায় গিয়েছে এখনো ফিরে নি। এখন বাজে সাত টা।



বেটা মনে হয় পালিয়েছে বলল রাজীব বিরক্তির স্বরে বলে উঠে সে অস্থির ভাবে পায়চারী করতে লাগলো।



রাজীব তুমি ফিরে যাও বাবা একা বাসায় বলল রুবিনা অনুরোধের সুরে।



আর তুমি কি করবে? হুন্কারের ভঙ্গিতে বলল সে এখানে বসে মশা মারবে ? এই দেখো সে হাত বাড়িয়ে দেখালো। সত্যি মশা র কামড়ে তার দুই হাত ফুলে উঠেছে। সে লাফিয়ে লাফিয়ে মশা মারতে শুরু করলো। রুবিনা অনেক দিন পরে খিল খিল করে হেসে ফেলল রাজীব কে লাফিয়ে মশা মারতে দেখে। দুজনের সম্পর্কে আবার আগের সেই সহজ ভাব ফিরে এলো। তার মনে পড়ল ছোটবেলার কথা। সে সব প্রাণী কে ভয় পেত। ভিমরুল মৌমাছি তেলাপোকা ইদুর বিড়াল সব কিছু র তার এই বন্ধু দুরে থাকার চেষ্টা করত। কিন্তু দেখা যেত কিছু না কিছু সব সময় তাকে সব সময় তাড়া করছে। আসলে তাকে যে তাড়া করত করত তা না সে এই পোকামাকড় দেখলে ছুটা শুরু করত। তার দৌড় দেখে হোক বা ভাইব্রেশন এর কারণে পোকারা তাকে অনুসরণ করা শুরু করত। একবার এক ভিমরুল এসে তার নাকে বসেছে সে ভিম ভিম করতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত হয়ে গিয়েছিল ।



এটা মনে আসতে রুবিনা আবার খিল খিল করে হেসে ফেলল।



হওয়াই ইউ লাফিং? হোয়াট সো ফানি ? রাজীব ও হাসতে থাকলো।



গুড গড ভুলে গিয়েছি আমার দেশের এইসব অস্বাস্থ্যকর পরজীবী গুলির কথা। এই মরা হতচ্ছাড়া দেশে থাকতে তো চাই। কিভাবে যে থাকব।



রাজীব রহিম আসতে আসতে একটু ঘুমিয়ে নেই বলল রুবিনা ক্লান্ত হয়ে।



তুমি ক্লান্ত রুবি আর আমি টানা ৩৬ ঘন্টা জার্নি করে আসছি এখন ও কিছু খাইনি শাওয়ার নেইনি। তোমার আমার জন্য কি সামান্য ফিলিংস ও নাই। এত চেঞ্জ হয়ে গেছ তুমি বস্তির খ্যাত এর জন্য।



একটু আগের সহজ ভাব টা চলে গেল আবার দুজনের মধ্যে থেকে।



রাজীব তুমি এখন চলে যাও বাসায়। আমি কথা দিছি কালকে সকাল এ বাসায় আসব।



আমি এই নর্দমার মধ্যে তোমাকে ফেলে যেতে পারিনা যদিও সে চিত্কার করে বলছে কিন্তু শেষের দিকে তার গলার স্বর হতাশায় ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ল। সে সদ্য ইউ এস র খুব পরিস্কার সিটি থেকে এখানে এসেছে ছয় বছর পরে। দেশটাকে ই মনে হছে গার্বেজ বিন সেখান এ বস্তি তো ভয়াবহ। তার মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এভাবে সে থাকলে সেন্সলেস হয়ে যাবে।



রুবি তুমি মনে করনা আমি ছোট মনের। আমার সে উদারতা আছে তুমি কোনো ভালো ছেলে পছন্দ করলে ঠিক ই তার হাতে হাসতে হাসতে তোমাকে দিয়ে দিতাম যদি আমি বুঝি তুমি সুখী হবে কিন্তু এই ছেলে এই পরিবেশ। .প্লিস তোমার নিজেকে এত বাজে অবস্থায় নিও না বলল সে হাহাকার এর গলায়।.



রহিম আর জামাল অনেকক্ষণ ধরে মতিঝিল এর সামনে শাড়ী কাপড় এর দোকানে ঘুরছে। আপার জন্য কাপড় কিনবে। তার কাছে আছে আপার দেওয়া একহাজার টাকার পাচটা নোট যেই টাকা প্রথম আসার পর আপা দিয়েছিল হাত খরচ হিসাবে। সে টাকা এখনো তার কাছে আছে। আপার টাকা দিয়ে প্রথমে আপার জন্য জিনিস কিনবে। ঘুরতে ঘুরতে তাদের সময় এর দিকে খেয়াল ছিলনা। পাশের মসজিদ থেকে আজান এর শব্দ শুনতে মনে হলো আপা রা তার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাড়াতাড়ি করে আপার জন্য সাদার মধ্যে ফুল দেওয়া কাপড় আর ভাইজান এর সাদা পাঞ্জাবি কিনলো। এত দাম ৩৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেল। আর আছে ১২০০ টাকা। জামাল এর জন্য খেলনা কিনলো ১৫০ টাকার। সামনের নান রুটি ঘর থেকে কাবাব রুটি আর পানি চা কিনে তার ঘরে পৌছল তখন বাজে রাত আট টা।



ঘরে ঢুকে দেখল চাটাই এর একদিকে ফিরে আপা ঘুমিয়ে আরেকদিকে ঢেলান দিয়ে ভাইজান ঘুমাচ্ছে। দুজনে গভীর ঘুমে। তাকিয়ে দেখে ভাইজান এর মুখের চারিদিকে মশা ছেকে ধরেছে। কয়েল খুজলো অনেকক্ষণ ধরে। ছোট একটুকরা ভাঙ্গা কয়েল পেল সেটা জালিয়ে দিল।



আপা র কাছে আসতে দেখল ঘুমের মধ্যে উনি হাসতেছেন। এত সুন্দর এই আপা টা।আকাশের সুন্দর পরীরা ওনার কাছে কিছুনা। ঘুমের মধ্যে নড়ে উঠ তে ওনার ওড়না সরে গিয়ে বুকের একপাশ অনাবৃত হয়ে গেল। পায়জামা টা গোড়ালি থেকে একটু উপরে উঠে গেছে। তাকাবেনা তাকাবেনা ভাবলে তার চোখ পড়ে গেছে এই রমনীয় সৌন্দয্যে। পুরুষের জন্য কঠিন এই আকর্ষণ থেকে চোখ সরিয়ে রাখা। সেই কষ্টের কাজ টি করলো সে। খুব সাবধানে আপার স্পর্শ বাঁচিয়ে ওনার গায়ে মায়ের যে শাড়ী টা ছিল তা দিয়ে ঢেকে দিল। খুব কষ্টে আবেগ সংবরণ করে উঠে দাড়ালো। খুব ইচ্ছে করছিল অন্তত এই মমতাময়ী মেয়ের মুখটা ভালোবেসে মুছে দেয়। তা করতে না পেরে দরজা খুলে বাহির এ এসে বসলো। তীব্র এক মানসিক আবেগ ও শারীরিক আবেগ বোধ করতে লাগলো তার প্রিয় আপার জন্য। ইচ্ছে করছে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তা করতে না পারার জন্য ভিতরে পুরুষালি আবেগ সহ কেদে উঠলো জোরে।



দয়াময় আল্লাহ আমার মন থেকে এসব দূর করি দাও আমার আপাকে সুখী করে দাও এই ভাইজান এর সাথে। তার চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝরতে লাগলো।



২খুব সকালে পাখির কলকাকলি কিচির মিচির শব্দে রুবিনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । কিছক্ষণ সে মনে করতে পারলনা কোথায় সে। পরক্ষণে মনে পড়ে গেল গত রাতের স্মৃতি। বাবা রাজীব রহিম কোথায় সবাই। ধড় মড় করে উঠে বসলো বিছানায় সে। তার পাশে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে ছোট জামাল। ওদিকে হাত পা ছাড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে রাজীব। রহিম কোথায় গেল ? তার বাবা অসুস্থ অসহায় বাবা নাজানি কেমন আছে। সবাইকে সে অনেক কষ্টের মধ্যে ফেলে দিলো। যদিও তার স্বভাব হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত।তার পাশে সবার জীবনে সুখ শান্তি নিশ্চিত করা ছিল তার প্রধান কাজ। অনুশোচনায় তার ভিতর টা পুড়ে যেতে থাকলো। তার জন্য ভোগান্তিতে আছে সব গুলি মানুষ। রাজীব সুদুর আমেরিকা থেকে পড়াশোনা শেষ না করে তার কারণে রাজীব পড়া শোনা বাদ দিয়ে চলে আসল বাবা অসুস্থ যেই রহিম কে ভালো জীবন দেওয়ার জন্য এরকম করলো তার ফল ও হলো উল্টা। তারা বাড়ি ছেলে চলে আসল। কি জানি জামাল ঠিক মত খেয়েছে কিনা স্কুল এ গেল কিনা। সে বড় ভুল করে ফেলেছে। এখন এই ভুল কে শুদ্ধ করবে কিভাবে তা বুঝতে পারছেনা। এখন এই বিয়ে হাসবেন্ড এসব অগ্রাহ্য করা তার পক্ষে করা সম্ভবনা। তার হাসবেন্ড এখন তার কাছে ধর্ম তার ইহকাল পরকাল রাজীব কে যতই ভালোবাসুক না কেন। আহ শারীরিক আর মানসিক উত্তেজনায় সে খুব অবসন্ন বোধ করলো।



দরজা খুলে বাহির হতে হোচট খেয়ে আরেকটু হলে রহিম এর গায়ের উপর পড়তে নিয়েছিল। রহিম দরজার মধ্যে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মুখের ভাব খুব ই বিমর্ষ আর ক্লান্ত। মনে হচ্ছে তার খাওয়া ঘুম কিছু হয়নি এই কয়দিনে।



রুবিনা কে প্রচন্ড ভাবে টানতে লাগলো তার ধর্ম এর জন্য মায়া রহিম এর দিকে চুম্বক এর মত



সে রহিম এর পাশে উবু হয়ে বসলো তার হাত টা সরিয়ে হাটুতে মুখ ডুবিয়ে খুব কোমল গলায় ডাকলো রবি একটু আমার দিকে তাকাবে ? ভালোবেসে রহিম এর নাম বদলে সে রবি।



রহিম আধো ঘুমে আধো জাগরণে ফিল করলো অপূর্ব এক জন বুকে তার মুখ লুকিয়ে আছে। সে ও এই মহিমাময়ী র চুলের অরন্যে মুখ ডুবিয়ে দিল। আহ কি সুন্দর গন্ধ।



রুবিনা নিজেকে সংবরণ করতে পারলনা। কয়েক দিনের অদর্শন দুশ্চিন্তা সব রকম বেদনার ভার থেকে মুক্তি পেতে চাইল রহিম এর শারীরিক সান্নিধ্যের মাধমে। সে উত্তেজনায় পাগলের মত রহিম এর শার্ট টা খুলে বুকে মুখ ঘষতে লাগলো



প্লিস রবি আমাকে ছুয়ে দাও একটু। এত টা প্রগল্ব্তা এত আবেগ দেখানো তার জন্য এটা নিলজ্জতা র পর্যায়ে পড়ে যায়। কিন্তু সে এখন পুরাপুরি দিশেহারা অবস্থায় আছে।



রহিম এর ঘুম ভেঙ্গে ঠিক তখন ই। প্রথম এ সে কিছুক্ষণ বুজলোনা কি হচ্ছে তার পাশে। সে দেখছিল মধুময় সপ্ন। পরক্ষণে সে দেখল আপাকে তার সাথে উন্মত্তভাবে প্রেমে রত। কিভাবে বন্ধ করি আপার এই প্রেমের তুফান। নারীর যে সব স্পর্শে পুরুষ এর বিস্মরণ হয় তার সব ই আপা করছে তার সাথে। তার ইচ্ছে করলো আপার শারীরিক সান্নিধ্যে ডুবে থাকতে। সে আজকে আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলনা। প্রচন্ড আবেগ এ সেও আপার মাথা চেপে ধরে রাখল জোরে। তার দুই হাত মুছতে লাগলো অনেক আবেগে অনেক আদরে। মনে হচ্ছে এই আপাকে দিয়ে দিতে পারবে তার শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু ও। এই চিন্তা মাথায় আসা মাত্র ই সে আপাকে ছেড়ে দিল নিবিড় স্পর্শ থেকে। সেইজন্য সে আপার জীবন নষ্ট ও সে করতে পারবেনা।



আল্লাহ আপা আপনার চুলের এই অবস্থা কেন? আপনি কি চুল আচড়ান না নাকি ?চুলে হাত দিয়ে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। আপনারে আমাদের বস্তির মেয়েদের মত লাগতাছে। তেল নাই চুল আচড়ানো নাই কৌতুক করে বলল সে।



কয়দিন চুল আচড়ানো হয়নি। গোসল করা ও হয়নি রুবিনা লজ্জা পেয়ে বলল।



আপা আমি আপনাকে কিরকম জীবন দিছি দেখেন ? এর চেয়ে সুন্দর জীবন আমি আপনারে দিতে পারবনা আপা যত ই তুমি আর আমি চাইনা কেন এই প্রথম সে তার প্রিয় আপাকে তুমি করে সম্বোধন করলো।



আসেন আপনার চুল আচড়ে দেই আবার সেই আপনি সম্বোধন এ ফিরে এলো।



সে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরে আসলো ছোট একটা শিশি তে একটু তেল আর দুইটা রংজ্বলা ফিতে নিয়ে।



সরিষার তেল আপা আর এই ফিতা হালিমার ছিল। এই আমার সামর্থ্য আপা।



আপাকে খুব যত্নের সাথে একটা পিড়িতে বসিয়ে তার পিছনে হাটু গেড়ে বসলো রহিম। খুব যত্নের সাথে আপার চুল আচড়ে দিতে লাগলো। রুবিনার চোখ বুজে এলো আরামে।



আস্তে আস্তে যত্ন করে চুলে বিনুনি পাকাতে পাকাতে বলল সে আপা ভাইজান দেখতে অনেক সুন্দর আমির খানের মত। আপনার সাথে অনেক মানাইবো আপা। সে ক্রমাগত বলতে লাগলো অনেকটা মা যেমন তার অবুঝ শিশুকে বোঝায় কোনটা করা তার জন্য ঠিক কোনটা ঠিক না। আমারে দেখেন আমি তো আপনারে ঠিক মত খাওয়াইতে পারবনা। আমি থাকতে পারি আপনার পায়ের নিচে আপনার পাশে থাকার মত আমার কি আছে? বলে সে রুবিনাকে একই স্টাইল এ বিয়ের রাতে যেভাবে তার গালে ভালবাসার স্পর্শ একে দিয়েছিল তা ফেরত দিল।



আপনি যে ভালবাসা দিছিলেন আমারে আগে তা আজকে আমি ফেরত দিলাম এটা আমার শেষ ভালবাসা আপনার জন্য। আপনারে অনুরোধ করি আপা অনেক দয়া করছেন আমার মত গরীব রে। ভাইজান রে বিয়া করি বাইরে চলি যান। সব দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।



দুজনের শরীর কাপতে লাগলো শারীরিক উত্তেজনায় নয় দুজনের প্রতি প্রচন্ড মানসিক আবেগ আর শ্রদ্ধায়।



দুজনে ছিটকে সরে দাড়ালো। জামাল এসে দুজনের হাত টেনে ঘরের ভিতরে নেওয়ার চেষ্টা করলো।



বাবা ভিতরে চাচা জান মইরা গেছে। দুজনে দৌড়ে এসে ভিতরে ঢুকলো।



সত্যি রাজীব কে দেখাচ্ছে একেবারে মৃত মানুষের মত। হাত পা ছাড়িয়ে পড়ে আছে সে তাকে ঘিরে আছে এক ঝাক মশার পাল।



৩টানা দুইসপ্তাহ জমে আর ডাক্তার এর টানাটানি চলল রাজীব কে নিয়ে । রুবিনার অবস্থা টা এইসময় ছিল অচেতনের মত। অনুশো চ নয় তার ভিতর টা পুড়ে যেতে লাগলো। নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো বারং বার। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে আচ্ছন্নের মত পড়ে রইলো সে। সে রাজীব কে দেখতে হাসপাতাল ও গেলনা।

দেওয়ালে মাথা ঠুকতে লাগলো বেদনায় গ্লানিতে। তার বাবা তাকে দেখলে মুখ ফিরিয়ে রাখেন আরেক দিকে। রহিম জামাল তারা কি ঠিকমত খাচ্ছে কিনা আসার সময় তাদের কে কোনো টাকা পয়সা দিয়ে আসেনি। এই ত্রিমুখী টেনশন এর ভারে সে ও অসুস্থ হয়ে পড়ল।



আহ হৃদয়ের ভারে সে অবসন্নবোধ হয়ে পড়ল। আল্লাহ তুমি জানো কেন আমি এরকম করেছি। সে বুজলো আমরা মানুষ। কেউ আমরা নিয়তির বাহিরে যেতে পারিনা। সে অনেক চেষ্টা করেও অসহায় জামাল এর ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারলনা।



প্রভু আর আমি কোনো চেষ্টা করবনা এমন কিছু যা আমার সমাজ কে আঘাত করে। যা আমার বাবাকে কষ্ট দিবে। সর্বপরি রাজীব যদি ফিরে আসে আবার তার জীবনে আর কোনো অবহেলা রাজীব কে করবেনা।



অনেকদিন পরে সে আজকে ফজর এর নামাজ পড়ল। মোনাজাত করার সময় আজকে সে বারবার পড়ল আমান্তুবিল্লাহে কামা হুয়া বিযাসমিহি অসিফাতিহি ওকাবিল্তু জামিয়া...যা কিছু ভালো মন্দ যখন আসে তোমার তরফ থেকে আজ থেকে নাও তুমি আমার ভার মোনাজতে কাদতে কাদতে জায়নামাজে সে এলোমেলোভাবে শুয়ে পড়ল। সে কিছু টা হালকা বোধ করলো মনে হলো আল্লাহ তার কথা শুনেছে। কিছুটা নির্ভরতায় তার পালনকারী আল্লাহ এর উপরে। .ঘুমিয়ে পড়ল জায়নামাজ এ শুয়ে।



৪বেজে উঠলো ফোন হাসপাতাল থেকে। রহিম এর গলা শোনা গেল।



আপা ভাইজান এর জ্ঞান ফিরা আসছে আপনাগোরে খোজে বলল রহিম। আপনি খালুজান শিগগির আসেন।



রুবিনার এখন চোখ জেপে ঘুম আসছে। ভিতরে সে খুব হালকা বোধ করছে। সে জানে তার আল্লাহ এখন করছে রাজীব এর তত্ত্বাবধান আর তার খেয়াল। সে ফোন রেখে নিছিন্তে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ল আবার।



সেই সময়ে রাজীব এর সেন্স ফিরে আসছিল ।



রাজীব এর সারাপাশে প্রচুর খাওয়ার ফলমূল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নার্স এসে সব ফেলে দিল। উদাস হয়ে সে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে সে রুবিনা র কথা ভাবতে লাগলো । ঠিক সেই সময়ে রুবিনা এসে পৌসলো রাজীব এর দরজায়।সে হালকা একটু সেজেছে আজকে । রাজীব এর নীল্ কার্ডিগান পরে আসলো রহিম এর কিনা সাদা ড্রেস এর সঙ্গে। রাজীব খুশি হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।



রহিম একপাশে দাড়িয়ে আপেল কাটছিল রাজীব এর জন্য।



দুজনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো এই অপুরূপ মেয়েটির দিকে।



৫দীনহীন দরিদ্র রহিম পুনরায় রুবিনাদের বাসায় আশ্রয় পেল।রহিমের সাথে তার মা ও ছেলে জামাল ও এই বড় ঘরে আশ্রয় পেল।রহিম আগের মত রুবিনাদের বাগান দেখাশোনা করতে লাগল।পিছনে ছোট একটা পুকুরের মত করে তাতে মাছের পোনা ছাড়া শুরু করল।

ছোট জামাল আনন্দে তালি দেওয়া শুরু করল।



বাবা আমি মাছ ধরূম বলে সে বায়না শুরু করল।



ভিতরের ঘর থেকে রহিম রুবিনার বাবার বড়শি নিয়ে এল আর জামালের জন্য ছোট একটা লাঠি দিয়ে বড়শি বানিয়ে দিল।বাবা ছেলে দুইজনে দুইটা ছাতা মাটিতে গেড়ে তার নিচে বসল। দুইজনের সানগ্লাস বের করে চোখে দিল।



রুবিনা রাজীব পিছনের বাগান দেখতে এসে বাপ ছেলেকে দেখে হেসে ফেলল।



গাধাগুলার কান্ড দেখ রাজীব হাসতে থাকে।



কি রহিম মিঞা কোন বড় মাছ পাইছনি? সে ইচ্ছে করে রহিমের সাথে তার গ্রামের অ্যাকসেন্টে কথা বলে।যদিও রহিম চেষ্টা করছে এখন শু্দ্ধ কথা বলার।



এই বাসায় উঠার আগে রুবিনা আর রহিমার পাকাপকিভাবে কোর্ট থেকে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।আপাত দৃষ্টিতে সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।রুবিনাকে দেখে মনে হচ্ছে রাজীবের প্রতি হারানো প্রেম তার ফিরে এসেছে।দুইজনে প্রতিদিন একসঙ্গে বাহিরে যাচ্ছে শপিং করছে।তাদের বিয়ের ডেট পাকা হয়েছে পরের মাসের সাত তারিখ।



আজকে তারা অনেক শপিং করেছে।তবে আজকে শপিং কিছু জিনিস যেটা বাড়তি কিনেছে সেটা নিয়ে রাজীবের সাথে এক পশলা তর্কাতর্কি হয়ে গিয়েছে।



রহিম আর জামালের জন্য একই ডিজাইনের সূট আর শেরওয়ানী কিনেছে।যেই শেরওয়ানী রুবিনার কাসিন ব্রাদার আর রাজীবের ভাইরা পরবে।



রাজীবের মুখ রাগে লাল হয়ে গেল।



আমার ভাইয়ের জন্য যে শেরওয়ানী কিনছ তা তুমি তোমার কাজের ছেলের জন্য কিনছ।



সঙ্গে সঙ্গে রুবিনা গম্ভীর হয়ে গেল।রাজীবের সঙ্গে আস্তে আস্তে যে প্রীতির বন্ধন পূনর্গঠিত হতে যাচ্ছিল তা রাজীবের কথায় ছুটে যাওয়ার উপক্রম হল।



ও আমার কাজের ছেলে না রাজীব ।ওদেরকে আমি কাজের ছেলের মত দেখিনা।এটা তোমার ভাল করে বোঝা উচিত।



তাহলে কি এখনও ওকে প্রেমিকের মত দেখ।রাগে হিংসায় তার মুখ দিয়ে বাজে কথা বেরিয়ে আসল।



এবার রুবিনা সত্যিকারের রেগে গেল।



আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা এই প্রসঙ্গে রাজীব প্লিজ বলে রাজীবকে দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল।



রাজীব ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল তার নিজের অসংযমের জন্য।



বিকাল পাচটা।সবার জন্য চা বনিয়ে রহিম ট্রেতে চা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।কোথাও আপাকে খুজে না পেয়ে ছাদে এসে দেখে খুব বিষন্ন ভঙ্গিতে ছাদে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।



আপা আপনার চা বলে চা রুবিনার হাতে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল



কি হইছে আপা।সে জিজ্ঞাসা করে।



না কিছু না বলে একটু হাসির ভঙ্গি করে।



রাজীব কতক্ষন একা একা বসে ভাবতে লাগল এভাবে রুবিনাকে তার বলা উচিত হয়নি।সেজন্য সরি বলার জন্য রুবিনার খোজে ছাদে এসে দেখে রুবিনা রহিম দুজনের হাসিমুখ এক চায়ের প্লেটে দুজনে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।



অসহ্য মনে মনে সে বলল।এই কাজের ছেলেটাকে তার সহ্য ই হচ্ছেনা।সে আবার সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল যেই কাজে এসেছিল সেই কাজ না করে। মাপ না চেয়ে নীচে বাগানে এসে গাল ফুলিয়ে বসে রইল।



(পরবর্তীতে)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভাল লিখেছেন জুলিয়েট । :)

২| ১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: রোমিও কেমন আছেন ? খুব মিস করেছি গত কিছুদিন। কমেন্টসের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: ভালো লাগলো, চালিয়ে যান।

১৩ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২৭

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ভালো লাগলে চালিয়ে যাই। ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন। ।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ

১৩ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২৯

আরজু মুন জারিন বলেছেন: নাহ!! ...কি বলছেন? সত্যি। ...মনে হচ্ছে ঠিক হয়নি। খুশি হয়ে গেলাম ভাল শুনে। অনেক অনেক ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন কেমন ।

৫| ১২ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লিখেছেন +++

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৩১

আরজু মুন জারিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ।ভাল থাকবেন । দোয়া করবেন আমার জন্য কেমন।

৭| ১৩ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৬

সুমন ঘোষ বলেছেন: ভালো লাগলো লাইলী, চালিয়ে যাও।
আর খুব খুব ভালো থেকো ................................।
{"filesize_ok":true,"image_id":194205,"success":true}

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: চালিয়ে যাচ্ছি তো। ....একটা প্লেন থাকলে ভাল হত। নিজে চালিয়ে এসে সব মজনুদের দেখে যেতাম।টিকেট ফেয়ার লাগতনা।

৮| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চালিয়ে যান, শুভেচ্ছা রইলো।

১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: চালিয়ে। ...যাব ..
ধন্যবাদ আপনাকে ও। শুভেচ্ছা জানবেন।

৯| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৭

রাখাল রাাজু বলেছেন: চমৎকার

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ওহ তুমি সামুতে আছ। কেমন আছ রাজু ?তোমার সাতকাহন কিন্তু। চমত্কার পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবে।

১০| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৫

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: চমৎকার...
চালিয়ে যান...
শুভ কামনা...

১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০২

আরজু মুন জারিন বলেছেন: অনেকক্ষণ তো চালিয়ে নিলাম। এখন একটু রেস্ট নিতে হবে। আবার কিছুক্ষণ পরে চলব কেমন। অনেক ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.