নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো ছায়ায় আমার ভূবন

আমি কনফিউসড চরিত্রের মানুষ।অগোছালো সবকিছুতে দোদূল্যমনতা আমার বৈশিষ্ট্য।টু বী অর নট টু বী এই দ্বন্ধে চলছে জীবন।

আরজু মুন জারিন

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু করা হয়ে উঠেনি এখন। ব্লগ এ লেখা টা প্রথমে ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা। মেসেজ শেয়ার করা। তবে লিখতে লিখতে এখন লেখার ভালবাসায় পড়ে গিয়েছি। নিজে যেমন লিখতে পছন্দ করি অন্যের লেখা ও একই পছন্দ নিয়ে পড়ি। লেখালিখির আরেকটা বড় উদ্দেশ্য হল (অন্যের দৃষ্টিতে তা ফানি মনে হবে ) সামাজিক বিপ্লব করা , মানুষের জীবনে স্বাছন্দ্য আনয়ন করা মূলত আমার দেশের মেয়েদের লেখিকাদের আমি বড় প্ল্যাটফর্ম এ দেখতে চাই। আমাদের দেশে ভাল লেখিকা অনেক কম। অথচ আমার মন বলে অনেক ট্যালেন্ট মেয়েরা আছে। অনগ্রসর সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মেয়েরা এক বৃত্তে বন্ধী হয়ে আছে। আমি খুব চাই ওই বাধা সরিয়ে আলোয় ,সাহিত্যে জ্ঞানে আমাদের মেয়েরা পথ চলুক। প্রচলিত দৃষ্টিতে সমাজে চলতে মেয়েদের বাধা গুলি চিহ্নিত করা আমার লেখালিখির আরেকটি উদ্দেশ্য। প্রগতির কথা বলতে চাই ভদ্রতায় , শালীনতায় এবং মর্যাদায়। সামাজিক আভ্রু ভেঙ্গে নয় যা তসলিমা নাসরিন করেছিলেন। বেগম রোকেয়া আমার পথ প্রদর্শক। তিনি মেয়েদের পাদ প্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছিলেন ঠিক ই রক্ষনশীলতার ঢাল ভেঙ্গে নয় , মর্যাদায় থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন মেয়েদের।

আরজু মুন জারিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুমিত্রার দিন রাত (গল্প )

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:২৬

কাজ শেষ করে বের হতে সুমিত্রার প্রায় ছয়টা বেজে গেল। তাড়াতাড়ি বাসার যাওয়ার জন্য সামনে যে লোকাল বাস পেল তাতে উঠে গেল। বাস থেকে নামতে একটু হোচট খেল তাতে স্যান্ডেল এর ফিতে ছিড়ে গেল। এই যাহ এখন তো হাটতে পারবেনা। মাসের শেষের দিকে রিক্সা নেওয়া তার জন্য বিলাসিতা। প্রতি টি টাকা তাকে খুব হিসাব করে খরচ করতে হয়। না হলে মাসের শেষের দিকে খুব টানা টানিতে পড়তে হয়। এই দশ দিন কিভাবে চলবে, বাবুর দুধ কিনতে হবে, ঘরে চাল প্রায় শেষ এর দিকে। টেনে আর দুই দিন চলবে। মুদির দোকানদার বলছে আর বাকি দিবেনা।



হাটতে গিয়ে উহ করে উঠলো। ইশ পা টা কেটে গেল দেখি, কাছের টুকরা ঢুকে গেছে পায়ে।চারিদিকে তাকিয়ে বসার মত কিছু পেলনা,কাচের টুকরা বের করে ব্যান্ডেজ করতে হবে। একটু সামনে ফার্মেসী দেখা যাচ্ছে, কোনো রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে ফার্মেসী এর সামনে বেঞ্চ টাতে বসলো, কাচটা টেনে বের করলো।সমানে রক্ত পড়তে লাগলো। ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে গিট্টু দেওয়ার চেষ্টা করলো। ফার্মেসী র ভিতর থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলো কি হইছে তোমার?



পায়ে কাচ ফুটছে ,বলল বেদনার্ত গলায় সে।



আহারে দেখি আমারে দেখতে দাও , ওসুধ এর সামনে যে লোক টা সবসময়ে বসে থাকে সে কাছে এসে দেখল বলল দাড়াও এদিকে আস। লোকটি ব্যান্ডেজ দিয়ে যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিল। সুমিত্রা কৃতজ্ঞ চোখে তার দিকে তাকিয়ে দিল । খুব লজ্জা সহকারে জিজ্ঞাসা করলো, আপনারে কত দিব।



আরে না না এটার আর কি দিবা। ব্যথা যদি বেশি করে সিটামল খাইয়া নিও।



অনেক কষ্ট করে সে হাটার চেষ্টা করছে।পিছন থেকে ছেলেদের শীষের আওয়াজ শুনতে পেল। না তাকিয়ে বুঝল এই ছেলেগুলি রেষ্টোরেন্ট এর সামনে বসে থাকে। কোনো মেয়ে দেখলে বদ নজরে দেখা শীষ দেওয়া এদের অভ্যাস। এই এলাকা টার পরিবেশ ভালো না। সন্ধার পর কোনো মেয়ে একা চলতে পারেনা বখাদের উৎপাতে।

তার সামনে এসে একটা রিক্সা থামল।



যাইবেন আপা রিক্সা ওয়ালা জিজ্ঞাসা করলো।



সুমিত্রা আর দ্বিতীয় কিছু না ভেবে সোজা রিক্সায় উঠে বসলো। রিক্সা ওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে ঘরে ঢুকে মনে হলো তেল শেষ, বাবুর দুধ শেষ আনা হলনা। এখন আর যাওয়া ও সম্ভব না।



কিরে মা আসছস ? সুমিত্রার বাবা ক্রাচ এ ভর দিয়ে এসে দাড়ালো।



হা বাবা একটু দেরী হয়া গেল, খিদা লাগছে না বাবা?

নারে মা তুই আগে হাত মুখ ধূয়া নে, তারপর দেখ কি রান্না করা যায়।



সুমিত্রা আগে ভাতের চাল ধুয়ে বসিয়ে দিল এক্চুলায় আরেক চুলায় দুইটা ডিম আর দুইটা আলু সিদ্ব দিয়ে দিল।



তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে কলঘরে আসল। শুধু দুই বালতি জমানো পানি দিয়ে কালকে সকাল পর্যন্ত চলতে হবে। এক মগ পানি হাত মুখ ধুলো , তার পর সাবান ছাড়া সারা গায়ে দুই তিন মগ পানি ঢেলে কোনরকমে গা মুছে বের হয়ে আসল।



ঘরের ভিতরে ঢুকে মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা।ঘরে অসুধ ও নাই দুধ ও নাই।



পাশের বাড়ির ভাবির ঘরে এসে দরজা ধাক্কা দিল।



শুনতে পেল লোকের গলা তোমার ফকিরনি বান্ধবী আসছে খবরদার কইলাম দরজা খুলবানা।



সুমিত্রা র কোনো উপায় নাই দুধ ছাড়া সে যেতে পারবেনা। মানুষের জীবনে কত কষ্ট। ভগবান সবার জীবন ই কি এত কষ্টের না কি আমার কোন অন্যায়ের জন্য এত কষ্ট।



পরক্ষণে অনুতাপে বিড়বিড় করে বলে মাপ কর ভগবান এই অনাথিনীরে।



দরজা খুলে গেল ,আসমা ভাবি কে দেখা গেল দরজার গোড়ায়।



কিরে সুমিত্রা শরীরl ভালো নি তোর্? আন্তরিক ভাবে জিজ্ঞাসা করে ভাবি।



এই ভাবি সত্যিকার বোন্ এর মত মায়া করে।



ভাবি যদি একটু দুধ থাকে দিবা,



দাড়া তুই বলে তাড়াতাড়ি একটা বাটিতে দুধ ,আরেকটা বাটি এনে হাতে দিল , এখানে একটু মুরগির সালুন আছে তোর্ জন্য।



ভাবি বাচ্চাদের ঠান্ডার অসুধ কি আছে ? লজ্জায় জিজ্ঞাসা করে।

দাড়া দেখি উমা তো কেনে ওর বাচচার জন্য।



আবার শুনতে পেল পুরুষ লোকটির গলা যত সব ফাকিরনিরা ওনার দোস্ত।



এই আস্তে শুনবে তো ? ভাবির ফিসফিস গলা শোনা গেল।



আমি তো শোনানোর জন্য বলতেছি।



ভাবি তাড়াতাড়ি এসে অসুধ দিয়ে বললেন জ্বর কমলে আমারে এটা ফেরত দিস ,বুজছিস এটা উমার মেয়ের।

আর শোন সোনা বোন্ তোর্ ভাই এর কথায় কষ্ট নিসনা। মানুষ খারাপ না শোকে দুখে মাথা খারাপ এর মত হয়ে গেছে।



না ভাবি আমার আর কি মন খারাপ ,আমার বাচা মরার লড়াই।



ঘরে এসে দুধ গরম করে বাচ্চা খাইয়ে অসুধ খাইয়ে দিল।



তাড়াতাড়ি বাবাকে খাওয়ার দিল।



আহা বাবা আজকে তৃপ্তি করে খাচ্ছে ওই ঘরের মুরগি র মাংশ দিয়ে।



কিরে মা মাংশ কখন রান্না করলি ?



ওই বাসার ভাবি দিছে বাবা তোমার জন্য।



বেটির রান্না খুব স্বাদ। একেবারে তোর্ মায়ের হাতের রান্না র মত বলতে বলতে বৃদ্ধের চোখ সপ্নাতুর হয়ে গেল।



রাত এগারো টা বেজে গেল। সব কাজ শেষ করে বিছানার কাছে আসতে আসতে। মেয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর নেমে গেছে।



ভগবান এর মূর্তির সামনে এসে প্রার্থনা করতে গিয়ে অনেক দিন আজকে সংযম হারিয়ে লুটিয়ে পরে কাদতে লাগলো।



প্রভু ধৈর্য্যদাও প্রভু আমার মেয়েটাকে বড় না করা পর্যন্ত আমাকে সুস্থ রাখো।



২হাসপাতাল এ পৌছতে সুমিত্রার সাড়ে আটটা বেজে গেল। ইশ আজকে ও দেরী হয়ে গেল। আজকে নিশ্চয়ই রেজিস্টার স্যার অনেক রাগ করবে। ভগবান আজকে যেন স্যার একটু দেরী করে আসে তাড়াতাড়ি কমন রুম এ ব্যাগ টা রেখে গনেশ এর মূর্তি টা বের করে ছুয়ে আবার কাবার্ড এ রেখে তাড়াতাড়ি ফিট ফাট হয়ে ওয়ার্ড এ আসল।

সুমিত্রা বের হয়ে আসল ওয়ার্ডে রাতের জাগরণ আর ক্লান্তি মুসে। ওয়ার্ডে এসে সে ভুলে গেল আপনার কথা তার অসুস্থ মেয়ের কথা তার অসহায় পিতার কথা।

সুমিত্রার ছোট মেয়ে অপর্ণা অনেক ক্ষুধার্ত আজ।বড়লোকদের ঘরে যত খাওয়ার তারা ডাষ্টবিনে ফেলে তার তার যত্সামান্য যদি এই শিশু অপর্নাকে দেওয়া যেত সম্ভবত বেচে যেত। শিশু টি মা মা করে কানলো কিসুক্ষন তারপর অসুস্থ শরীরে টলমল পায়ে পাকঘরে আসলো। খুজলো সবজায়গায় যদি কোনো খাওয়ার পাওয়া যায়। মোড়া এনে তার উপর দাড়িয়ে উপরে কাবার্ড খুজলো যদি মা এখানে মা তার প্রিয় বিস্কুট ক্যান্ডি মিমি লুকিয়ে রাখে। কিসু না পেয়ে কানতে লাগলো। তার নানার কানে কান্নার আওয়াজ গেলনা। কেননা মাঝে মাঝে তিনি কানে একেবারে শোনেন না। মোড়া থেকে নামতে মেয়েটি পড়ে গেল মাটিতে। পড়ে ই থাকলো অসহায় শিশু টি। একসময় সে জ্ঞান হারালো।



৩সুমিত্রা র যে কি হয়েছে আজকে বারবার কাজ ভুল করছে। মনের মধ্যে একটা অস্থির ভাব। এক রোগীর জন্য আপেল কাটতে গিয়ে কেটে ফেলল আঙ্গুল।



আহ ভগবান শক্তি দাও ভিতর থেকে হাহাকার এর মত বলে।



মনোয়ারা বেগম যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। কপালে আদর করে দিয়ে বললেন



কি হইছে গো মা আজকে তোমার ? তোমার মাইয়া ভালো আছে ?

তার বুকটা ধক করে উঠলো। আজকে একবার ও ফোন করা হয়নি ভাবিরে খবর নিতে পারেনি মেয়েটার। তার ঘরে এখন ফোন নাই। তিন মাসের বিল বাকি। লাইন কেটে দিছে।

মনোয়ারা বেগম খুব চেষ্টা করছিলেন .সুমিত্রার মন টা হালকা করতে। পারছিলেন না। সুমিত্রার মন যে কোথায় হারিয়ে গেছে।



মাগো তুমি আরেক টা বিয়া কর না কেন গো ? তোমার চেহারা .ছবি কত ভালো গো মা তোমার বয়স ও কত কম মা।তোমার বয়স কত মা ?



আটাশ বলল সুমিত্রা লজ্জা পেয়ে।



মা আমার ছেলেরে কেমন লাগে ? তুমি কি পছন্দ করবা আমার ছেলে রে ? আমার ছেলেটা একটু বাদাইম্মা এখনো কিছু করেনা কিন্তু আমি বললে সে কাম কাজ খুজবো। সে আমারে আবার খুব মানেগো মা। ওই দেখো ঐযে ও হইতাছে আমার ছেলে ওদিকের কোনার বেড এ একটা ছেলে শুয়ে খুব আনমনা হয়ে বাহিরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। স্পষ্ট বৈরাগ্যের ছাপ



সুমিত্রা মনে মনে হাসলো। তার ছেলের বয়স খুব বেশি হলে আঠার থেকে বিশ বছর হবে তার।



আস মা তোমার সাথে কথা বলায়ে দেই। সুমিত্রাকে টেনে ছেলের বিছানার পাশে নিয়ে এলো।



এইযে আমার বাবা দিদার।



আপনি ভালো আছেন সুমিত্রা হেসে জিজ্ঞাসা করে।



দিদার তার উত্তর না করলে জড়সড় হয়ে পড়ল। মাথাটা উপরের দিকে তুলতে এই নার্স এর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।



দিদার দেখল এই মেয়েটির চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ কি একটা বেদনা যেন সে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। দিদার এর কাছে মেয়ে মানে হলো একটা শরীর যার কোনো মানবিক অস্তিত্ব সে কখনো খেয়াল করেনা। সে যে পরিবেশে বড় হয়েছে বাবাকে দেখেছে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরত তারপর একটু উনিশ বিশ হলে মাকে পিটাতে পিটাতে রক্ত বের করে ফেলত। আবার মাঝরাতে তাদের সামনে দিয়ে টেনে হিছড়ে মাকে তার রুম এ নিয়ে যেত শারীরিক প্রয়োজনে। মা কোনো প্রতিবাদ করতনা কানতনা যেন এটা স্বাভাবিক। এসব এর মধ্যে সে বড় হতে হতে মেয়েদেরকে খুব অশ্রদ্ধার চোখে দেখত সে। শারীরিক আকর্ষণ থেকে যেত পড়া পতিতালয়ে। এই মেয়ে গুলিকে ও সে খুব ঘৃণায় দেখত।

এই প্রথম দিদার কোনো মেয়ে র চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলো। নারীর একধরনের রূপ আছে যার সামনে পুরুষ থমকে দাড়ায়। যা রূপ সরসীর সুমিত্রার ভিতরে তাদের তেজস্বীয় রূপ সততায় পুরুষ ভক্তি শ্র্রদ্ভায় মাথা নত করে।



আজকে সুমিত্রার ঘরে পৌসতে প্রায় সাত টা বেজে গেল। ভিতরে ঢুকতে তার বুকের ভিতর টা ধক ধক করতে লাগলো আশঙ্কায় ভয়ে।



কোন ঘটনা সে প্রত্যক্ষ করতে যা ছে তা সে টের পেল। অনেক মানুষ আসেপাসের বাসার শোরগোল কর ছে। সামনে মনে হচ্ছে তাকে ঠান্ডা শীতল কিন্তু তার অন্তরাত্তা কাপতে কাপতে হাহাকার এর মত বলতে লাগলো



ভগবান এই কষ্ট আমার মাথায় তুলে দিওনা। আমি সইতে পারবনা। অল্প বয়সে মাকে নিয়েছ .কোনো অভিযোগ করিনি বাবা তার মেডিকেল পড়ার সময়ে দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে জব হারান। তার প্রেমময় স্বামী আজ অন্য মেয়ের সংসার করছে। তবু আমি অভিযোগ করিনি। আমাকে দয়া কর প্রভু।



কার ও দয়া হলনা এই অসহায় মার জন্য। না ভগবান না মানুষ।



একজন বৃধ্ব স্থানীয় মহিলা এসে বলল মাগো তোমাকে শক্ত হতে হবে। সবাই এখন দাফন করতে বলছে। সকালে মারা গে ছে মা এখন দাফন না করলে লাশ দুর্গন্ধ হতে পারে। .



সুমিত্রা অনেকটা অজ্ঞান এর মত হয়ে অছে।



তার অন্তরাত্তা হাহাকার এর মত বলছে ভগবান আমার পৃথিবীতে কি সত্যি অছে ?



একজন তার মেয়ে কে কোলে করে এনে বলল শেষবার এর মত দেখে নাও মা।



আজকে আর সুমিত্রা সহ্য করতে পারলনা। তার মেয়ে র শক্ত হয়ে যাওয়া মৃত মেয়ের দেহের পাশে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল।

মেয়ে মারা যাওয়ার পর প্রায় দুইমাস হতে চলল সুমিত্রা আবার কাজে জয়েন করেছে।এই দীর্ঘ দুই মাস সে মনোয়ারা বেগম বা তার ছেলের কোন খবর নিতে পারেনি।নিবে কিভাবে সে নিজে ই ছিল জীবন্মৃতের মত। যার জন্য কষ্ট করে বাচা কষ্ট করে কাজ করা সেই মেয়েকে ভগবান তুমি তুলে নিয়েছ কি উদ্দেশ্যে সে তুমি জান ভগবান।বুক মোচড়ানো দীর্ঘনিশ্বাসের সাথে কথাগুলি বেরিয়ে এল বুকের গভীর থেকে।



ফিটফাট হয়ে জেনারেল ওয়ার্ড এ সাত নম্বর বেড এ আসল।আজকে এ সুমিত্রার মেইন পেশেন্ট।তার পাশের আট নম্বর বেড ছিল মনোয়ারা বেগমের ছেলে দিদারের।আজকে এসে দেখে নুতুন রোগী।কাওকে জিজ্ঞাসা করেও কোন সদুত্তর পেলনা।ব্যাকুল হয়ে সে বৃদ্ধা মহিলাটির খোজ জানতে চাইল সবার কাছে। তার নিজের মা খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছে।মায়ের আদরের স্মৃতি তার তেমন নাই। এই বৃদ্ধা মহিলা টি কিছু টা তার মায়ের জায়গা নিয়ে নিয়েছিল।



সারাদিন কাজের মধ্যে তার একটা মন মনোয়ারা বেগম আর তার ছেলেকে খুজে ফিরছিল।অন্য ওয়ার্ডে খোজ করল কেও কিছু বলতে পারছেনা।বিকাল পাচটায় কাজ শেষ করে বের হতে আবুল ভাই সিনিয়ার ওয়ার্ড বয়ের সাথে দেখা।



আপা আজকে জয়েন করলেন নাকি?শুনছি আপা আপনার সব কথা।আল্লাহর কি ইচ্ছা কে জানে।এই মাসুম শিশুটারে কেন মায়র কোল খালি করে এভাবে নেয়।মায়ের কথা একবার ও ভাবলনা।কত খারাপ মানুষ পৃথিবীতে বাইচা আছে।আল্লাহর খেলা আমি বুঝিনা।সমবেদনায় বলে আবুল নামের ওয়ার্ড বয়টি



থাক এসব কথা আবুল ভাই।আপনি ভাল আছেন তো? সুমিত্রা আন্তরিকতায় জানতে চায়।



কথাপ্রসঙ্গে মনোয়ারা বেগম আর তার ছেলের কথা জানতে চাইল সুমিত্রা।



আপা ওই পোলার ফাসি হইছে।আহারে আপা মাটার চিৎকার যদি দেখতেন শয়তানের ও চোখে পানি আসব।সবাই চেষ্টা করছিল ফাসীর অর্ডার বন্ধ করত।কিন্তু বেটা শয়তান জজ রাজী হয়নাই।



খবর টা আক্ষরিক অর্থে সুমিত্রাকে শকের মত আঘাত করল।তার হাত থেকে ব্যাগ ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল।সে অচেতনের মত মাটিতে বসে পড়ল এই বৃদ্ধার কষ্টের কথা মনে করে।



হায় ভগবান আমি আমার কষ্ট নিয়ে বেশী অস্থির ছিলাম।কিছু মানুষ মনে হয় আমার চেয়ে অনেক কষ্টে আছে।



আবুল ভাইয়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে মনোয়ারা বেগমের বস্তিতে এসে যখন পৌছল সুমিত্রা প্রায় সন্ধা হয়ে গিয়েছে।



ছোট একটা ছনের ঘর ঠেলা দিতে দরজা সরে গেল।ভিতরে কেও একজন কষ্টে কাতরাচ্ছে।সামনে গিয়ে দেখে একজন বৃদ্ধা মহিলা শিয়রে বসে বাতাস করছে কাওকে।তাকিয়ে মনোয়ারা বেগমকে দেখতে পেল।প্রথমে সে চিনতে পারছিলনা সুমিত্রাকে। চেনার পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হল ।



হাউ মাউ করে কাদতে কাদতে সুমিত্রাকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।



মাগো আমার সামনে আমার ভাল বাবারে ফাসী দিছে ওই খারাপ মানুষ গুলা।আল্লাহ ওগোর বিচার করব বলে চিৎকার করে কাদতে থাকে।



আহ এই পৃথিবীতে এত দূঃখ কষ্ট।ভগবান তোমার পৃথিবী থেকে কবে এই দূঃখ কষ্ট সরিয়ে নিবে।আমরা যে আর সইতে পারছিনা।হাহকারের মত মনে মনে সে বলতে থাকে।



মনোয়ারা বেগমের কান্নার বেগ একটু প্রশমিত হলে জোর করে নিজের হাতে সুমিত্রা খাইয়ে দিল দোকান থেকে কিনে আনা খাওয়ার গুলো।



মনোয়ারা বেগমের সব জিনিস গুছিয়ে তার সঙ্গে তার বাসায় নিয়ে আসল।সুমিত্রা যেমন নিজের মায়ের মত করে বুকে আগলে জড়িয়ে নিয়ে এসেছে তেমনি মনোয়ারা বেগম ও যেন সুমিত্রাকে জড়িয়ে তার হারানো ছেলের অভাব পূর্ণ করতে চাইল।দুই আপনজন হারা দূঃখী হৃদয় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা খুজতে চাইল।

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৪৭

এম এ কাশেম বলেছেন: পড়লাম,

ভাল লেগেছে।

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:০৬

আরজু মুন জারিন বলেছেন: কাশেম ভাই কেমন আছেন ? এ পুরান গল্প। অনেক ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

মুদ্‌দাকির বলেছেন: এর দুঃখ !!

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

আরজু মুন জারিন বলেছেন: এত দুঃখ !!

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাবী, কিছুক্ষণ এই দুইটা শব্দ ঠিক করে নিয়েন। গল্পে ভাল লাগা রইল +++

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০৫

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আচ্ছা ঠিক করে নিব। ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৯

আরজু মুন জারিন বলেছেন: যাহ ভাবী এর জায়গায় চিন্তা ভাবনা ভাবি চলে আসল কেন? দুঃখিত অন্যমনস্কতায় ও আমার অনেক বানান ভুল হয়ে যায়।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

একলা চলো রে বলেছেন: বানানের দিকে আরেকটু খেয়াল রাখবেন। গল্প ভালো লেগেছে। :)

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

একলা চলো রে বলেছেন: বানানের দিকে আরেকটু খেয়াল রাখবেন। গল্প ভালো লেগেছে। :)

৬| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৬

আরজু মুন জারিন বলেছেন: সালাম শুভেচ্ছা সবাইকে। আমি অনেকক্ষণ যাবত চেষ্টা করছি আমার কমেন্টস ওপেন করতে। ওপেন হচ্ছেনা। এ কি আমার কম্পিউটার এর টেকনিকাল প্রবলেম নাকি সামু তে কোন অসুবিধা হচ্ছে। আপনারা যারা আমার লিখার পাঠক বা কমেন্টস করেছেন সবার কি অবস্থা ? আপনারা কি ফাইল ওপেন করে কমেন্টস দেখতে পাচ্ছেন। আমি এইজন্য কমেন্টসের প্রতিউত্তর করতে পারছিনা দীর্ঘ সময় ধরে। সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমার লিখায় কমেন্টস করেছেন। শুভেচ্ছা জানবেন সকলে পুনরায় ।

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩১

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন জারিন । বিষাদের গল্পে ভালোলাগা+

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৮

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা রইল

৮| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আমি এখন ও কোন কমেন্টস ওপেন করতে পারছিনা।

৯| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৬

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ কমেন্টসের জন্য। বানান ভূলে যাচ্ছি সব অদ্ভূত ভাবে। ..অভ্র বানান চেক টা ইউস করা উচিত। ট্রান্সলেটর লিখলে প্রপার শব্দ লিখতে পারিনা। মাঝে মাঝে চন্দ্রবিন্দু খুঁজে পাইনা। আর ও কিছু শব্দ স এর তিন রূপ আসেনা।

১০| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৬

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ কমেন্টসের জন্য। আজকে কমেন্টস করতে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কি আমার কম্পিউটার এর সমস্যা নাকি এখানে সার্ভার এর সমস্যা ?

১১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৭

আরজু মুন জারিন বলেছেন: প্রতিউত্তর করার জন্য যে বক্স আসার কথা তা ওপেন হচ্ছেনা। .

১২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ নুতুন যারা মন্তব্য করেছেন। আমার কমেন্টস এ শো হচ্ছে কারা করছে ? কিন্তু কি কমেন্টস তা জানিনা। ওপেন করতে পারছিনা এখন ও। মাঝখানে কিছুক্ষণের জন্য ওপেন হয়েছিল। এখন আবার হচ্ছেনা।

১৩| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ নুতুন যারা মন্তব্য করেছেন। আমার কমেন্টস এ শো হচ্ছে কারা করছে ? কিন্তু কি কমেন্টস তা জানিনা। ওপেন করতে পারছিনা এখন ও। মাঝখানে কিছুক্ষণের জন্য ওপেন হয়েছিল। এখন আবার হচ্ছেনা।

১৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কয়েকবার পড়েছি ভাল লেগেছে।

অন্যদের পোস্টে কমেন্ট করলে অন্যরাও আপনার পোস্টে কমেন্ট করবে।

দিনে ১০০ কমেন্ট করার প্রস্ততি নেন ভাল ফল পাবেন। :)

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০১

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ১০০ কমেন্ট করার প্রস্ততি নেব তাহলে ভাল ফল পাব ।

ধন্যবাদ আনোয়ার ভাই মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:১২

আরজু মুন জারিন বলেছেন: কয়েকবার পড়ার জন্য অসংখ্য বারের সাথে বাড়তি কয়েকবার বেশি ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল আনোয়ার ভাই।

১৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

আরজু পনি বলেছেন:

লেখাটা খুব ভালো লাগলো...

বানানে আরেকটু সতর্কতা প্রয়োজন।

নারীর একধরনের রূপ আছে যার সামনে পুরুষ থমকে দাড়ায়। যা রূপ সরসীর সুমিত্রার ভিতরে তাদের তেজস্বীয় রূপ সততায় পুরুষ ভক্তি শ্র্রদ্ভায় মাথা নত করে। ..

এই লাইনগুলো খুব মনে ধরেছে।

শুভেচ্ছা রইল, জারিন।।

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০২

আরজু মুন জারিন বলেছেন: গুগল অভ্রতে কিছু শব্দ যত ই চেষ্টা থাকে সঠিক অক্ষর আসেনা কখন কখন ও। ধন্যবাদ পনি মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৫

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আমার ও আপনার কমেন্টস মনে ধরেছে।

১৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪৩

লিরিকস বলেছেন: +

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৩

আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ লিরিক স

১৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০১

রাজিব বলেছেন: গল্পটা ভাল লেগেছে তবে একটা জায়গায় খটকা লেগেছেঃ
২ মাসের মধ্যে ঐ ছেলের ফাসি হয়ে গেল কিভাবে? মামলার বিচার আপিল ফাসির আদেশ এগুলো মিলিয়ে ১-২ বছর লাগার কথা। আর ফাসির আসামী হলেতে হাসপাতালে মা পাশে থাকতে পারার কথা নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.