নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।
অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে যাত্রার ২য় দিন শেষ হল। সন্ধা আকাশে রক্তিম কুসুমগুলো দেখা যাচ্ছিল। শহরের থেকে বেড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলেই একটা খুব সুন্দর স্থান রয়েছে। যেটাকে Hundertwasserhaus বলে। খুব সাধারন একটা বিল্ডিং কিন্তু এর মাঝে করা চমৎকার আর্ট গুলোই এখানের দেখার বিষয়। সারাদিন অনেক হেটেছি। কাধে প্রায় ১০ কেজি ওজনের ব্যাগ। ক্যামেরা, ল্যপটপ আর কিছু টুকিটাকিও আছে।
ভ্রমনটা এই বেলার আর আনন্দের ছিল না। আর রাতেই স্লোভাকিয়ার উদ্দ্যেশে যাত্রা করব। তাই বাস স্টেশনে যাওয়ার জন্য রাস্তা খুজছিলাম।
ঠিক তখনই দেখা হল দুইজন বাংলাদেশী আমার পাশদিয়ে হেটে গেল। বাংলায় কথা বলছিল বিধায়ই আমার বুঝতে পারা। আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম। উনারা দাড়ালেন।
সালাম দিয়ে পরিচয় দিলাম। উনাদের একজনের বাড়ি নড়াইল আর অন্যজন বি.বাড়িয়ার।
আমি যে দেশেই গিয়েছি আমার সব সময় একটা আকর্ষন ছিল এখানের বাংলাদেশী মানুষদের সাথে দেখা করা। তাদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটানো। এটা আমাকে সব সময়ই আনন্দ দেয়।
নাড়াইল যার বাড়ি তার জীবন থেকে নড়াইল এক্সপ্রেস এর মতই দ্রুত চলে গেছে ৫ বছর এই ক্যাংগারুহীন অষ্টিয়ায়। শুরুতে তার্কি আর তার পর জীবনবাজি রেখে ইউরোপে।
অন্যজন বলেছেন, "আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের সমান কষ্ট করে এসেছি এখানে। শুরুতে দুবাই। এরপর ওমান। পরে তার্কি এবং সব শেষে ইউরোপে। যখন সাগর পাড়ি দিচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আজই জীবনের শেষ দিন। এখানে এসেছি ১০ বছর"।
এটি স্লোভাকিয়ার ছবি।
এই ছেলেটির বয়স আমার মত। আমার থেকে ছোটও হতে পারে। তার্কিতে অনেক দিন কাজ করেছে। পরে সাগর পাড়ি দিয়ে এখানে আসার সময় পাসপোর্ট হাড়িয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময় তার পাসপোর্ট নেই। তাই ১০ বছরে দেখা হয় নাই প্রিয় মা আর বাবাকে। খুব অল্প সময়ের কথায় অনেকটা কষ্ট মাখা কান্না দেখা গিয়েছিল নয়ন কোনে।
"ভাই এখানে পত্রিকা বিক্রি করি। ভাল টাকা ইনকাম। কিন্তু লাভ কি বলেন নিজে আজও আমি কোন পরিচয়হীন। অষ্টিয়াতে সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করেন ২ বার। বাতিল হয়ে গিয়েছে"। উনি বলছিলেন।
নড়াইলে যার বাড়ী উনি দেশে যান মাঝে মাঝে। তবে সেটাও ১০ বছ্রে ২ বার।
দুজনে খুব ভাল তার্কিশও পারেন। দেশে যাওয়ার অনেক ইচ্ছে। টাকাও আছে অনেক। তবে বিদেশে দেশ পরিচয় নেই। বিদায় বেলা বুকের সাথে বুক মিলিয়ে বললাম, "আপনার কোরবানী আপনার পরিবারের সুখ। ছোট ভাইয়ের বই আর বোনের বিয়ের আয়োজন। এটা ভেবে ভাল থাকুন"।
"জি ভাই" ছোট জবাব। "চাইলে আপনিও ইউরোপে থেকে যেতে পারেন। আমি আপনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ইউরোপে এসে কেউ ফিরে যায় নাকি মিয়া" বি.বাড়িয়ার ভাইটি বললেন।
একটি মুচকি হাসি দিয়েই জবাব দিলাম। বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আর বারবার শুধু সামনে ভেসে আসছিল সেই ছেলেটির মূখ। কানে ভেসে আসছিল, "ভাই, অনেক কষ্ট বিদেশে। খুব কষ্ট"।।
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি লিখেছেন, "শহরের থেকে বেড়িয়ে একটু গিয়ে গেলেই একটা খুব সুন্দর স্হান রেয়েছে"।
-এটা কি রোহিংগা বাংলা?
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
পথিক৬৫ বলেছেন: ধন্যবাদ খেয়াল করার জন্য। টাইপের সময় "এ" টা মিস হইয়ে গিয়েছিল বোধায়।
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জীবনের কষ্টকর এক রুপ তুলে ধরেছেন। অমন কত শত সহস্র না জানা গল্পকথা প্রবাসের পথে পথে কে খবর রাখে?
আর যারা মাঝপথে হারিয়ে যায় সাগরে বা অন্য কোনখানে তারাতো গল্প হবার আগেই গল্পের শেষ হয়ে যায় অফুরান স্বপ্ন, আশা আর দীর্ঘশ্বাসে!!!
++++
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০০
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: প্রবাসে বেশির ভাগ মানুষই হয়তো কষ্টে থাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১
নূর-ই-হাফসা বলেছেন: খারাপ লাগলো ছেলে টির গল্প শুনে । জীবনের কত রূপ !
সুন্দর লিখেছেন । ভালো লাগলো