নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোল পৃথিবী তোমার জন্য ভাল কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।তবে ঠিক ততটুকুই তোমাকে সে দিবে যতটুকু তুমি নিজেকে গড়েছ।

পথিক৬৫

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।

পথিক৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

-বিশ্বকাপের মঞ্চে ৪র্থ দিন, মেসিকে যখন প্রথম দেখি

২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কিংবা উপহাসের কথা শুনেছেন কিন্তু ভাগ্য যে মাঝে মাঝে এভাবে মানুষের সহায় হয় সেটা আমি সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করেছি তা নয়। তবে আজকের উত্তেজনার মাত্রা টা ছিল ভিন্ন। যেদিন আমি মেসিকে প্রথম দেখলাম।

খেলা ছিল আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়া। ২ দলের জন্যই খেলাটি ছিল ফাইনালের মত। হেরে গেলেই বিদায়। বড় বড় তারকা সহ বড় দল আর্জেন্টিনার এর উপর চাপটা একটু বেশীই ছিল। ফলাফলও এলো তাদের অনুকূলে। বিশ্বকাপের যে মঞ্চে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানী বিদায় নিল কিছু বুঝে ওঠার আগেই, সেখানে রানার্স আপ টিকে থাকল নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করে।


এবার আমার ভাগ্যের কথা বলি। বিশ্বকাপের প্রথম তিনদিনের ডিউটির কথা আগেই বলেছিলাম। প্রথম দিন টিকেট চেকিং করে মাঠে প্রবেশ করানো, ২য় দিন ৩নং গেইট থেকে টিকেট চেকিং আর ৩ দিন ছিল মাইক হাতে তথ্য প্রদানের কাজ। আমার খুব ইচ্ছে ছিল আর্জেন্টিনার খেলাটি যদি আমি মাঠের ভেতরে দায়িত্ব পেতাম বেশ ভাল হত।

আমার রুমমেট ডাঃ আবদুল মতিন ভাই, যাকে আপনারা ইতোমধ্যে দেশের অনেক পত্রিকা কিংবা নিউজে দেখেছেন, তিনি এখানে ডোপিং শাখায় দায়িত্বরত, বললেন, “ভাই আপনি গিয়ে ভলান্টিয়ার সেন্টারে কথা বলেন। ওদের জানালে আপনাকে ওরা ভেতরে দায়িত্ব দিবে”।
প্রথম পর্বে যে মারিয়ার কথা বলেছিলাম সেই মারিয়াও সেটাই বললেন। কিন্তু আমি বলেছি ”না। দেখি আমার ভাগ্যে কি আছে। ভেতরে হলে যাব না হলে গেলাম না। এটাই তো সব কিছুর শেষ না। কাউকে অনুরোধ করাটা আমার সাথে যায় না”।

২৬ তারিখ শিফট শুরু হয়েছিল বিকেল ৩ টায় আর শেষ রাত ১ টায়। খেলা ছিল বিকেল ৯ টায়। বিকেল কেন বলছি সেটা আমার আগের লেখা যারা পড়েছেন তারা ভাল জানেন। তবে সেই সাথে এটাও জানিয়ে রাখি সেন্টপিটার্সবার্গে এখন সাদা রাত হয়। অর্থাৎ এখন ১-২ ঘন্টা অন্ধকার থেকে আবার সূর্য উদয় হয়। আমি সেদিন রাত ৪ টায় রোদ দেখেছি। এটা নিয়ে আর একদিন লিখব।

১ টার দিকে ভলান্টিয়ার সেন্টারে গেলাম। চেক ইন করে একাউন্টে ডুকে ডিউটির স্থান দেখলাম 2B। আমি তখনও জানি না আসলে এটা কোথায়। গ্রুপ লিডারকে খুজে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের এই 2B কোথায়। উনি বললেন মাঠের ২ তলায় ভেতরে। কাজ হচ্ছে আগত দর্শকদের সিটে বসিয়ে দেয়া আর তাদের কোন কিছু দরকার হলে তার জন্য সাহায্য করা। মনে মনে বললাম, “বাহ, ভাগ্য এভাবেও মানুষের দরজায় আসে!”

খেলা শুরুর ৫ ঘন্টা আগে আমাদের মাঠে ডুকতে হয়। যদিও কোন কাজ নেই। মাঠে তখন সিরিমনি বিভাগের ভলান্টিয়াররা, যাদের হাতে আপনারা পতাকা দেখেন খেলার আগে, তারা অনুশীলন করছেন।
কোন কাজ ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছিলাম। কারন দর্শক আসতে শুরু করবে আরো ২ ঘন্টা পরে।

এবার অনেকের ইচ্ছে পূরনের সময়। অনেকেই চাওয়া ছিল তাদের নামে কিছু একটা লিখে এখানে থেকে প্রদর্শন করা। আর তার ছবি তোলা। এটা মাথায় এলো। তবে আমার হাতে কাগজ আর কলম কিছুই নেই। পাশের সহকর্মী থেকে কলম নিলাম সাথে ২ টুকরো ছোট কাগজ। কিন্তু আমার চাহিদার লিস্ট তো আর এতে শেষ হবে না। সেই সাথে আমার প্রিয় মানুষদের জন্যও কিছু লিখব বলে ভেবে নিলাম। “ফান সপ” থেকে বড় একটি কাগজ নিলাম। আর ভালবাসার মানুষদের জন্য মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু নোট লিখলাম। ছোট কয়েকটি ভিডিও করলাম। ফেইসবুকে শেয়ারও দিলাম।
নোট গুলো পেয়ে সবাই তো বেশ খুশী। আমিও খুশী।


ভিডিওঃ Click This Link

দর্শক আসতে শুরু করল ৬ টা থেকে । নাইজেরিয়া আর আর্জেন্টিনার দর্শক। তবে আর্জেন্টিনার দর্শক ছিল অনেক বেশি নাইজেরিয়ার তুলনায়। তারা আনন্দ করছিল। আর আমি তাদের আনন্দেকে পূর্ন করতে সাহায্য করছিলাম।
খেলা শুরুর আগেই দুই দল মাঠে অনুশীলন করলেন। তখন আমি ব্যস্ত ছিলাম। খেলা শুরু হল। ২ দল মাঠে আমি দাঁড়িয়ে আছি গ্যালারীতে।

চশমাটা পরিবর্তন করব ভেবে রেখেছি অনেকদিন। কিন্তু হয়ে উঠে নাই। তাই দূরে দেখতে একটু সমস্যা হয়। ঠিক দেখতে পারছিলাম না সবাইকে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, আর্জেন্টিনা প্রথম ৪৫ মিনিটে যেদিকে গোল দিয়েছে সেই বার পোস্টের ডান দিকে। আর্জেন্টিনার এদিকে খেলছে তাই খেলোয়াররাও ছিলেন এদিকে। আমি মেসিকে খুজছিলাম। ডি, মারিয়া তখন আমার থেকে খুব সামান্য দূরত্বে দাঁড়ানো। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। মেসি গোল দিয়ে উৎসব করছিল অন্য পাশে। মেসিকে ঠিক ভাবে তখনও দেখতে পারি নাই। তবে গোলের পরে মেসি তার সাইড পরিবর্তন করলেন। এবার মেসি বামে থেকে ডানে আসলেন। হঠাৎ আমি মেসিকে খুব কাছে দেখতে পেলাম। বল কাটানোর চেষ্টা করছিলেন। আমি সব ভুলে একটা চিৎকার দিলাম মেসি বলে। যদিও আমাদের জন্য এই আবেগগুলো দেখানো নিষিদ্ধ। তবে অনেক দর্শকের উল্লাসের সাথে আমার চিৎকার এর শব্দ মলিন হয়ে গেল। বেচে গেলাম। মেসি তখনও খেলছেন। আমার সামনে খুব সামান্য দূরে। এর সাথে হিগুইন, মাশ্চেরানো সহ অনেক প্রিয় খেলোয়ারকেই খুব কাছ থেকে দেখলাম। আমার বিশ্বকাপের আসার এবার পূর্ন ভাবে সফল হল।

খেলা দেখছিলাম। খেলার ২য় অর্ধে আর্জেন্টিনা গোল খেয়ে বসল। আনন্দগুলো তখন ধূসর হয়ে যাচ্ছিল। প্রিয় দলেই বিদায় চোখের সামনে মেনে নেয়া যে আসলেই কষ্টের। দর্শক গ্যালারীও তখন অনেকটা থেমে গেছে। তবে নাইজেরিয়ার দর্শকরা ঠিকই আনন্দ করছিলেন।

খেলার ৮৬ মিনিটে সেই যাদুকারী গোল এলো। যেদিন মাঠে উপস্থিত ৬৪৬৯৬ জন দর্শক পায়ে দাঁড়িয়ে গেল। কেউ হতাশায় আর কেউ আনন্দে। সেই উল্লাসে কেউ আবার নানান ভঙ্গিয়ে উৎসব করছিলেন। হাতের জিনিষ গুলো ছুড়ে মারছিলেন কেউ রাগে। তবে আনন্দেও কেউ এটা করছিলেন।
একজন আর্জেন্টিনার দর্শক গোলের সাথে সাথে আনন্দে নিজের হাতের বিয়ারের গ্লাসটি ছুড়ে দিলেন নিচে, আর হাতে তুলে ধরলেন পতাকা। তবে এদিকে বিয়ারের গ্লাসে আমার গায়ে। সম্পূর্ন বিয়ার সহ একটি প্লাস্টিকের বিয়ারের গ্লাস। হাফ লিটারের। বেচারা মাত্রই বোধায় কিনেছিলেন। গ্লাসটি প্লাস্টিকের হওয়ার ব্যাথা পেলাম না। তবে বিয়ারের পুরোটা আমাতেই বিসর্জিত হল। তবুও প্রিয় দল জিতে যাচ্ছে। আমিও আনন্দিত।

খেলা শেষে এবার দর্শকের বের হওয়ার পালা। পথে দেখিয়ে দিচ্ছিলাম। উনারা চলে যেতে যেতে সময় তখন সন্ধা/সকাল ১২ টা। কারন একটু আগেই ডুকে যাওয়া সূর্য আবার উদয় হয়েছে । নির্ধারিত টিম মিটিং এবং রাতের খাবার শেষ করে হোটেলে ফিরছিলাম। মেট্রোতে দেখা হল “ঢাকা ট্রিবিউন” এর সাংবাদিক ফজলে রাব্বি মুন ভাই সহ বাংলাদেশী আরো ২ জন সাংবাদিকের সাথে। তারা এসেছেন বিশ্বকাপের কভারেজ দিতে। অনেকটা গল্প করতে করতেই ফিরে এলাম সেদিনের মত।

আমি আগেই বলেছি এখন অব্দি যত দেখের দর্শক দেখেই তারা খেলাকে উপভোগের জন্য এসেছে বলে মনে হয়েছে। ভালবাসা আর সম্পর্ক সৃষ্টি তাদের লক্ষ্য। ব্রাজিলের খেলার দিনে কোস্টারিকার সাথে ছবি তুলতে যেমন দেখেছি তেমনি আর্জেন্টিনার খেলার দিলেন দুই দলের জার্সি পরিবর্তন করতে দেখেচ্ছি। নাইজেরিয়ার একজনকে পেলাম মাথার চুল আর্জেন্টিনার পতাকার রঙ্গে আর গাইয়ে নাইজেরিয়ার পোষাক। আর্জেন্টিনারও অনেকে এটা করেছে। খেলা শেষে জড়িয়ে ধরে উৎসব করেছে আবার সান্তনাও দিয়েছে। ব্রাজিলের দর্শক যেমন ভদ্র আর উত্তেজিত ছিল না আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে ভদ্র হলে উত্তেজিত না এটা বলা যাবে না। যদিও খুব বেশী দরকারী খেলা হওয়ায় এটার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ভদ্রতার কমে গেলেও উত্তেজনা বেড়ে দুই দিক থেকেই কথা, তিব্র কথার বল্লম কমে নাই আমাদের আর্জেন্টিনার আর ব্রাজিলের সাপোর্টারদের।

ও আর হা, প্রিয়জনদের জন্য লেখা যে নোট গুলো লিখেছিলাম, আমিও উত্তেজনার সেগুলো তারিখ ভুল করে ২৬,০৭,২০১৮ লিখেছি। যা ৭ মাস না হইয়ে ৬ মাস হওয়া উচিত ছিল।।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৭

কাইকর বলেছেন: বিশ্বকাপ নিয়ে লেখা আপনার সবগুলো পোস্ট আমি পড়েছি। খুব ভালো লাগে। আমি এখান থেকে আপনাকে কল্পনায় দেখি ও ভাবি।

২| ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

পদ্মপুকুর বলেছেন: সহজ কথাগুলো ভালো লাগলো।

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটি অনেক ভাল লাগল।

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

আমি মেসিকে দেখি ঢাকা স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচটিও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ছিল । মেসি দারুন খেলেছিল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.