নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোল পৃথিবী তোমার জন্য ভাল কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।তবে ঠিক ততটুকুই তোমাকে সে দিবে যতটুকু তুমি নিজেকে গড়েছ।

পথিক৬৫

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।

পথিক৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

-বাবার মৃত্যুর দিনে অট্টহাসি হাসতে বাধ্য থাকা মেয়েটির গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:১৭

আপনি কি খুব কষ্টের সময়ে অনেক হেঁসেছেন কখনও?
সেটা অনেক বেশী এবং ঘন্টার পর ঘন্টা আপনাকে হেঁসে মানুষকে আনন্দের খোরাক বানাতে হয়েছিল?

মনে করুন আপনার অনেক প্রিয় বাবা কিংবা মা যেদিন মৃত্যু বরন করেছেন, আপনি আপনার পেশার কারনে তাদের লাশ দাফন করে এসেই হাসতে বাধ্য হচ্ছেন। কিংবা কেউ বাবার লাগের পাশে আপনাকে হাসতে বাধ্য করেছে।
আমি যখন পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয় ছিলাম তখন এমন একজন মানুষের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল। একটি কোর্সে আমার ক্লাশমেট ছিল মেয়েটি। নাম ইজাবেলা। পড়াশুনা করতেন মিডিয়া স্টাডিস বিভাগে। তবে পেশায় ছিলনে একজন মুখাভিনেতা।

মুখাভিনেতা হচ্ছে তারা যারা বিভিন্ন বিদেশী সিনেমা, কার্টুন কিংবা এই জাতীয় জিনিষকে নিজ ভাষায় রুপান্তর করতে কন্ঠ দিয়ে থাকেন। তাদের শব্দাভিনেতাও বলাও যেতে পারে। ইংলিশে আমরা যেটাকে dubbing বলে থাকি।
তবে অন্য আরেক মুখাভিনেতা আছেন যারা কন্ঠ ছাড়া মুখের ভঙ্গিতে অভিনয় করেন। আমি এখানে প্রথম মুখাভিনেতা বা শব্দাভিনেতার কথা বুঝাচ্ছি।

ইজাবেলা, এমনই একটি পলিশ মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে কাজ করতেছেন। এই অভিনেতাদের অনেক সময় একই সাথে বেশ কয়েকটি চরিত্রেও কন্ঠ দিতে হয়।

সেদিন খুব শীত ছিল, সন্ধা ৪ টা প্রায়। আমরা ক্লাশ থেকে বের হয়েছিলাম। ইজাবেলা এসে বলল, "চল কফি পান করি"।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। ওর সাথে আমার আগে থেকেই ভাল পরিচয় ছিল। সেদিন আমাদের সাথে তার্কিশ একটি মেয়ে যার নাম শেনা আর চেক রিপাবলিকের ছেলে মার্শালও ছিল। আমরা ৪ জন গিয়েছিলাম কফি পান করতে।

আমরা আমাদের জীবনের সব থেকে ভাল এবং সব থেকে খাবার সময় গুলো নিয়ে কথা বলছিলাম। সবাই তাদের ভাল আর খারাপ সময়ের কথা বলে যাচ্ছ। আমিও বলেছিলাম।

এবার পর্যায়ক্রামে ইজাবেলার পালা। ভাল গল্পটি খুব অল্প সময়েই শেষ করেছিল সে। তবে পুরো গল্পটা আমার মনে নেই। এবার খারাপ সময়ের গল্প।

ইজাবেলা শুরু করেছিল এভাবে, " মাত্র ২ বছর আগে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ বছর শেষ করেছি। আমি একজন মুখাভিনেতা হিসেবে কাজ করি আমার স্কুল জীবন থেকেই। আমি আমার পরিবারের সাথে থাকি এখানে (ওয়ারশ)। আমার বাবাও এখানেই একটা ব্যাংকে চাকরি করতেন আর মা একজন সিকিউরিটি অফিসার। সেদিন ছিল ২৩ মে। আমি তখন একটি কমেডি সিনেমাতে কাজ করছিলাম। সিনেমাটি আসলেই খুব হাসির ছিল। মুলত এটি একটি শিশুতোষ এনিমেশন সিনেমা ছিল। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় ছিল। আমাদের সিনেমা মার্কেটে ছেড়ে দেয়ার জন্য তখন আমাদের হাতে খুব অল্প সময় ছিল। আগের দিন রাতে আমাদের পরিচালক ম্যাছেজ দিলেন, আগামীকাল খুব সকাল থেকে আমাদের কাজ করতে হবে। উনি বলছিলেন, 'আমরা অনেক দেরি করে ফেলছি। তুমি আগামীকাল সকাল ১০ টায় চলে এসো'।

সেদিন রাতে আমার বাবা হার্টস্টোক করে মারা গেলেন। রাত তখন প্রায় ৪ টা, উনি যখন মারা গেলেন। সব কিছু খুব দ্রুত হয়ে গেল। বাবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও আমাকে 'শুভ রাত্রী' বলে গিয়েছিলেন। এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা।"
ইজাবেলার চোখ ভিজে উঠেছিল।
ইজাবেলা বলছিল,"বাবার সৎকার এর জন্য আমরা সকল প্রক্রিয়া শেষ করলাম। সকাল ১০ টায় আমার পরিচালক আমাকে ফোন দিলেন। আমি তাকে সব খুলে বললাম। উনি বিনয়ের সাথে বললেন,' আচ্ছা তুমি তাহলে সৎকারের কাজ শেষ করে বিকেলে ৪ টার মধ্যে এসো। তোমাকে এই সময়টা আমি ছুটি দিলাম। তুমি তো বুঝতেই পারছ আমাকে কাজটা তুলে নিতেই হবে আজ।'
আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। বাবার সৎকার শেষ হতে বেলা ১ টা বেজে গেল। আমাদের পরিবারে তখনও মাতম চলছিল। আমার ছোট ভাই এর মাঝে বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পরেছে। আমার বাবা মাত্র ৫০ বছরের ছিলেন। এভাবে সময় যাচ্ছিল। আমার পরিচালক আমাকে এর মাঝে আবার ম্যাছেজ করেছেন যে আমি যেন ৪ টার পরে দেরি না করি।

সব ভুলে আমি বিকেল ৪ টায় স্টুডিওতে হাজির হলাম। সেদিন অনেক হাসতে হয়েছিল আমাকে। অনেক হেসেছিলামও। কেন যেন ভেতর থেকে বন্ধি থাকা একটা হাসির আগ্নেয়গিরি ফেঁপে ফুটে উঠেছিল। "
এটা বলতে বলতে ইজাবেলা তখন আমাদের সামনে কাঁদছিল।
"সেদিন রাতে আমি বাসায় গিয়ে সারারাত কেঁদেছিলাম। বাবার মৃত্যুর দিনে আমার পেশা আমাকে খুব হাসিয়েছিল । হয়তো আমার সেই দিনের হাসির সিনেমা দেখে আরো অনেকে হেসেছিল আমার মত। কিন্তু সেই হাসির মাঝে লুখিয়ে থাকা বুকফাটা কান্নার রহস্য কি কেউ জানে?"
ইজাবেলা শেষ করল। তার্কিশ মেয়েটি শেনাও কান্না করে দিল। আমরা দুটি ছেলে কিছু বলছিলাম না। শুনেই গিয়েছিলাম।
পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য মার্শাল বললঃ এই যে, আমাদের আরও ৪টা কফি দেন। সাথে মিষ্টান্নও কিছু দিয়েন।।

বাসায় আসার পথে ভাবছিলাম, মানুষ তার পেশার জন্য জীবন দেয়। অনেকেই অনেক ত্যাগ মেনে নেয়। কিন্তু এই হাসি আর এমন হাসি যার উল্টো দিকে এক পাহাড় কান্না থাকে তার কি ব্যাখ্যা আছে কোন(?)।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: মুখাভিনেতা আর ডাবিং আর্টিস্ট এক নয়। মুখাভিনেতারা শব্দ ছাড়া অভিনয় করে দেখান আর ডাবিং আর্টিস্ট রা ক্যামেরার পেছন থেকে কারো ঠোঁটে কন্ঠ দেন।
যাই হোক, অনেক সময়ই আমাদের প্রিয়জনের মৃত্যুতেও আমাদের পেশা আমাদের অনেক কিছু করতে বাধ্য করে। আজকাল প্রায়ই দেখা যায়, অনেক খেলোয়াড়কে কোন প্রিয়জনের মৃত্যুর পরও খেলে যেতে। হায়দার হোসেনে মায়ের মৃত্যুর পরদিনও টিভিতে গান গাইতে হয়েছিল। তবে মৃত্যু শোক নিয়েও লোক হাসানো আসলে অনেক কঠিন ব্যপার...

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৩৯

পথিক৬৫ বলেছেন: আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে তাদের শব্দাভিনেতাও বলে। আর তারা শুধু ক্যামেরার পেছনে তারা রেকর্ড ও করেন। যেটাকে ডাবিং বলে।

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪১

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: শাস্ত্রের ভাষায় 'বাচিক অভিনেতা'। বিচিত্র পৃথিবীতে বিচিত্র ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। বাস্তবতা মাথায় রেখে অনুভূতির কত আকাশ পাতাল প্রকাশ করতে হয় ! ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক।

৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০১

রাজীব নুর বলেছেন: বিষপানে মৃত্যু হলো সক্রেটিসের। হয়তোবা অনুশোচনায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.