নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোল পৃথিবী তোমার জন্য ভাল কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।তবে ঠিক ততটুকুই তোমাকে সে দিবে যতটুকু তুমি নিজেকে গড়েছ।

পথিক৬৫

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।

পথিক৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

-নকলে দেয়া পরীক্ষার ফলাফলও নকল জাত: দরকার প্রতিকার

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৯

আমার বঊ অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত, ইংলিশ বিভাগের ছাত্রী। দেশে করোনা না আসলে হয়তো আমার আগেই গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলত। তবে আমার আজকের লেখার বিষয় এটা না।কিন্তু বিষয়টি তার পুস্তকের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়াতে ক্লাশটা বলে নিলাম।



আমি সুযোগ পেলেই আমার বউয়ের ক্লাশের বই পড়ি। ইংলিশ কবিতা বা গল্প পড়তে বেশ ভালই লাগে। তবে অবশ্যই হুমাযুন আহমেদের বইয়ের মত মজা না।

গতকাল রাতে ভাষা শিক্ষার ম্যাথডোলজী নিয়ে কানাডা ফেরত এক বাঙ্গালী লেখক সঞ্জয় বাবুর একটি বই পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে ২০ তম পাতায় গেলাম। পাতা শেষ করে ডান দিকে ২১ তম পাতায় চোখ দিলাম। কিন্তু আগের লেখার সাথে মিল পেলাম না। শুরুতে বুঝতে না পারলেই পরক্ষনে আমি পাতা নম্বরের দিকে তাকাতেই দেখি আমি আছি ২৫ নম্বর পাতায়। একটু নাড়িয়ে চাড়িয়েই বুঝতে পারলাম মাঝখানের এই অংশটুকু হাত দিয়ে খুব জোর খাটিয়ে ছেড়া হয়েছে। এমন ভাবে ছেড়া হয়েছে- “যাতে বাদ যাবে না কোন শিশু” এই শ্লোগানের মত “বাদ যাবে না কোন অক্ষর”- এই সংকল্প নিয়েই ছিড়েছে।

পাশে থাকা বউয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- এইসব কি? বউ বলল-“ এগুলো শুধু এই বইতে না; আমি বই কিনতে চাইলেই মামা আমাকে নীলক্ষেত থেকে পুরাতন বই এনে দিত। আর তাতে যত গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন-উত্তর তত বেশী পাতা ছেড়া পেয়েছি। এগুলো আগে যারা পড়েছে তারা পরিক্ষার আগে ছিড়ে নিয়ে, নকল করা জন্য এই কাজ করেছে”। বউয়ের ব্যাখ্যা সহজে বিশ্বাস করলাম। কারন সে এখনও ৪র্থ বর্ষের পরিক্ষাই দেয় নাই। তাহলে তার নিজের ছেড়ার আর কোন প্রশ্ন আসে না।
তার সাথে কথা বলতে বলতেই আমি বইয়ের আরো ভেতরে গেলাম। এভাবে বেশ অনেক গুলো পাতা ছিড়া পেলাম।

ঘটনাটি বাংলাদেশের ছাত্র/ছাত্রীদের এই ২০২০ সালেও নকলের প্রতি প্রবনতা প্রকাশ করে। অবশ্যই সবাই নকল করে না। অনেক বড় একটা অংশই এই কাজ থেকে দূরে থাকে। তবে সাধারনভাবে ছাত্রদের মধ্যে পরীক্ষার হলে সুযোগ নেয়ার যে একটা প্রবনতা থাকে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। রোল ১ থেকে শুরু করে শেষ অব্দি যে কোন ছাত্রই পরীক্ষার হলে কোন কিছু কমন না আসলেই সুযোগ নিতে চায়। আমি নিজেও এর বাহিরে ছিলাম না-যখন দেশে ছিলাম। সব থেকে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে পরিক্ষার হলে এভাবে দেখা দেখি করে লেখাকে আমাদের ছাত্ররা আবার নকল বলে মানতেও রাজী না। শুধু এভাবে যারা বই ছিড়ে নিয়ে যায় তাদেরই নকলবাজ হিসেবে পরিচিতি পায়।



নকল যে কোন প্রকারেরই হোক না কেন- তার পেছনে কয়েকটি বিষয় কাজ করে। প্রথমত, নৈতিকতা। শিক্ষার্থী নকল করাটা যে নৈতিকতা বিরোধী সেটা কখনও ভেবে দেখে না। আমাদের এক বড় ভাই বলতেন- কেউ পরীক্ষায় যদি এক অক্ষরও নকল করে আর সেই নকলের রেজাল্টে চাকরী হয়, সেই চাকরীর ইনকামও হারাম। আমি এত কঠিন করে ভাবতে চাই না। কিন্তু নিজের অযোগ্যতাকে যোগ্যতা হিসেবে প্রমান করাটা আসলেই মানুষের নৈতিকতা বিরোধী। অন্যের হক নষ্ট করার মধ্যেও পরে। ধর্মীয় দিক বিবেচনায় গুনাহ হয় কিনা সেই বিষয়ে ধর্মীয় শিক্ষকেরা মাসয়ালা দিবেন, কিন্তু নিজের রুহের কাছে নকলকারী সারাজীবনের জন্য বন্ধি হয়ে যায়।

নৈতিকতা শিক্ষা নেয়ার শিক্ষা জীবনে এভাবে অনৈতিক আচরনের ফলেই ঘটে ফিউচার বিরম্বনা। দুর্নীতি কিংবা শিক্ষিত চোর হবার শিক্ষাটা শুরু হয় এভাবেই। অন্যায়কে অন্যায় না মনে করার প্রবনতাও সৃষ্টি হয় এভাবে।

২য় কারন বলা যেতে পারে আমাদের গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি। সেই যুগের পর যুগ ধরে মুখস্ত বিদ্যা, বড় প্রশ্ন, ছোট প্রশ্ন আকারের শিক্ষা পদ্ধতিও এই নকলের জন্য দায়ী। একজন শিক্ষার্থী পরিক্ষার আগেই প্রশ্ন কমনকে মাথায় রেখে পড়াশুনা করে। কিছু ভুলে গেলে তার থেকে পরিত্রানের জন্য এভাবে পৃষ্ঠা ছেড়ার আশ্রয় নেয়। কারন আমরা প্রশ্নের মাধ্যমে নকল প্রতিরোধ করতে পারি নাই।

একটি উদাহরন দেই- তুরস্কের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অনার্স করেছি সেই আনাদলুর একটি বড় প্রজেক্ট হচ্ছে ওপেন এডুকেশন। এই ওপেন এডুকেশনের মাধ্যমে পাশ করা ছাত্ররাও সাধারন ছাত্রদের মত সরকারী- বেসরকারী সব স্থানে প্রবেশ করতে পারে। এদের পাঠদান অনলাইনে হলেও পরিক্ষা হত কেন্দ্র ভিত্তিক। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে গত সেমিষ্টারে তারা পরীক্ষাও অনলাইনে নিয়েছে। ভার্সিটির ভি সি কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- “ছাত্রদের বাসায় বসে দেয়া এই পরীক্ষায় আপনারা নকল কিভাবে ঠেকাবেন?” উনি উত্তর দিয়েছিলেন; “আমাদের প্রশ্ন মান নকল ঠেকাবে। অর্থাৎ তারা এমন ভাবে প্রশ্ন করেছেন যে, ছাত্রদের সামনে বই থাকলেও তারা সেটা অধ্যয়ন না করে উত্তর দিতে পারবে না।




গতকাল এক হাইস্কুল প্রধানের কাছে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের বিদেশী ছাত্রদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের প্রধান। তার টেবিলে ৮ম শ্রেনীর একটি প্রশ্নব্যাংক দেখতে পেলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে সেটি ঘেটে বুঝতে পারতাম তাদের শিক্ষামান আমাদের থেকে কেন এত উপরে। যেখানে গনিত থেকে শুরু করে ইতিহাস সবই নৈব্যক্তিক। কিন্তু কোন ছাত্র বিষয়গুলো না বুঝে উত্তর দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই এখানের ছাত্ররা গনিত থেকে শুরু করে কোন প্রশ্নই মুখস্তও করে না, কমনের চিন্তাও করে না। বুঝে পড়ে, আর সেভাবেই সমাধান করে। ইচ্ছে থাকলেও পদ্ধতির কারনে নকলের কোন সুযোগ নেই এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়েও সেটাই দেখেছি। পরীক্ষায় ১ টি বা ২ টি প্রশ্ন করেছে। ১০০ পূর্নমানের। ১ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। আবার কোন টিচার ২০ টি নৈব্যক্তিক দিয়েছেন, ১ টি প্রশ্নের বিপরিতে। এবার সময় আরো কম। তবে এই উত্তরগুলো দিতে পড়তে হয়েছে শতাধিক পৃষ্ঠা। আর টাড় থেকে লিখেছি ২-৩ পৃষ্ঠা। নৈব্যক্তিকের উত্তর দিতে পুরো বইকে চোখের সামনে কল্পনা করে হয়েছে। আবার বেশি লিখলেই প্রফেসর আড় চোখে তাকিয়েছেন। মাঝে মাঝে হেঁসে হেঁসে বকেও দিয়েছেন। আর এই পদ্ধতিতেই ইউরোপের রুগ্ন দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি দেশ।


বাহির থেকে তাকালে এগুলো অনেক কঠিন মনে হয়। কিন্তু আসলে এই পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন না। শুধু দরকার শিক্ষার্থী থেকে উপর মহলের একটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সিদ্ধান্ত। ছাত্রকে বুঝতে হবে নকল করে সে নিজেকে না, জাতীকে ঠকাচ্ছে। আর শিক্ষককে আয়োজন করতে হবে নকল প্রতিরোধক পরিক্ষা।।





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৫

শোভন শামস বলেছেন: বুদ্ধি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে, নৈতিকতা শিক্ষার বড় একটা অংশ

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশে শিক্ষার মান গত এক যুগ থেকে খারাপ হতে শুরু করেছে।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

পথিক৬৫ বলেছেন: ছাত্ররা পাশ কেন্দ্রিক পড়াশুনা করে। শিক্ষকরা কোচিং কেন্দ্রিক। এভাবে চলতে থাকলে দেশের আগামি খুব অন্ধকার।

৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৫

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সব নকলের মাঝে আসল পাওয়া দায়।

৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৬

অনল চৌধুরী বলেছেন: নকল করার মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বাকী জীবন অব্যাহত থাকে।
বেশীরভাগ শিক্ষার্থীকেই পরীক্ষায় নকল করতে দেখেছি, বিশেষ করে বেসরকারী দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২/১জন ছাড়া সবাইকেই খাতা খুলে নকল করতে দেখেছি।
এর জন্য অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতাহীনতার সাথে সাথে মুখস্থ নির্ভর জঘণ্য পরীক্ষা পদ্ধতিও দায়ী।
টোফেল, বা আইইএলটিএস পরীক্ষায় কেউ বই খুলে রাখলেও নকল করতে পারবে না।
কিন্ত এসব করবে কে?
নকলবাজরাই বসে আছে এসব তৈরীর দায়িত্বে।
আইনজীবি তালিকাভূক্তি পরীক্ষা নিয়ে যে জোচ্চুরী হয়, সেটা নকলের চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতিকর।

৫| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৫৭

স্থিতধী বলেছেন: এ দেশে যেদিন সত্যিকারের দেশপ্রেম ও নৈতিকগুন সম্পন্ন সৃজনশীল ও মেধাবী তরুণরা রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে ক্ষমতায় আসবে সেদিন তাদের প্রথম কাজটি হবে এদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের নিয়ে দূরদর্শী পরিককল্পনা ও তার অটল বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া। শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশ কে আমরা কখনোই উন্নত দেশ অথবা নিদেনপক্ষে একটি মানবিক গুণসম্পন্ন, সব নাগরিকের জন্য নিরাপদে বসবাসযোগ্য দেশ হিসেবে তৈরি হতে দেখবোনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.