নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোল পৃথিবী তোমার জন্য ভাল কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।তবে ঠিক ততটুকুই তোমাকে সে দিবে যতটুকু তুমি নিজেকে গড়েছ।

পথিক৬৫

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।

পথিক৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রোফেসরের বিয়ে এবং কিছু কথা!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫৬

গতকাল একটি বিয়েতে গিয়েছিলাম। আসা যাওয়া মিলে মোট প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম বিয়েতে। বিবাহ ছিল আমার মাস্টার্সের মেন্টর Assoc. Prof. Dr. Alaaddin F. Paksoy এর। কনে নিজেও একজন University শিক্ষক।

বিয়েতে যাওয়া আসলে কৃতজ্ঞতা থেকেই। কারন অনেক বিপত্তির পথে তার বাড়িয়ে দেয়া হাতের কারনেই আসলে কোন অতিরিক্ত সময় ছাড়াই যথা সময়ে আমার থিসিস শেষ হয়েছিল। জীবনে শিখেছি অনেক কিছু।

আসলে একজন মেন্টর তার ছাত্রকে জ্ঞানের থেকেও যা বেশী দিতে পারে তা হচ্ছে মোটিভেশন। তবে আমার প্রোফেসর আমাকে কখনও ৩০ সেকেন্ডের বেশী মোটিভেশন দেয় নাই। শুনতে খুব অবাক হলেও এটাই সত্য। আসলে উনি আমাকে কিছু বলার চেয়ে তার আচরন দিয়ে এটা বুঝাতে পরেছিলেন যে সে আমার সাথে আছে।

একটা ছোট উদাহরন দেই; যেহেতু আমার কাজটা ছিল বাংলাদেশ এবং তার্কিকে নিয়ে, তাই গভেষনার কাজে প্রায় ৭ মাস বাংলাদেশে ছিলাম। সেখানে অনেক মানুষের সাথে শহর শহর ঘুরে সাক্ষাতকার নিতে হয়েছিল। আর আমি আসলে যাদের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম তারা আসলে সামাজিক ভাবে এলিট শ্রেনী আর কর্ম বিবেচনায় অনেক ব্যস্ত মানুষ। সেই সাথে আমার পরিচিতির অভাবে প্রথম ৩ মাস আমি আসলে লিংক তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ৩ মাসেও যখন কোন কিনারা করতে পারছিলাম না- একদিন সন্ধায় তাকে নক দিয়ে বললাম আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে। তাকে সব বর্ননা করলাম। এটাও বললাম যে, আমি অনেক হতাশ। আমি বোধায় এখানের সাক্ষাতকারগুলো নিতে পারব না।

উনি আমাকে শুধু এটাই বললেন; "মশিউর, এটাই দুনিয়ার শেষ না। তুমি চেষ্টা করছ আরো একটু কর। যদি একান্তই না পার আমরা আমাদের প্রোপজাল কে নতুন ভাবে সাজাব। যা আমাদের চেষ্টার পরেও হবে না সেগুলো আমাদের হাতে না"। আমি আবার নেমে পরলাম। এবং সত্যি আমি সফল হয়েছিলাম।

এরপর তার্কিতে ফিরে এসে বাকি সাক্ষাৎকারগুলো নিতে এবং সেগুলো ডিকোড করতে করতে পারায় জুন মাস চলে এলো। আমাকে জুলাই মাসে ডিফেন্স করতে হবে সময় মত শেষ করতে হলে। উনি তখন আমাকে শুধু বলেছিলেন; "এই একমাসে এনালাইসিস সহ থিসিস লেখা অন্য কোন ছাত্রের জন্য সম্ভব না। তবে তুমি যদি এখনও অনার্সের মশিউর হয়ে থাক তুমি পারবে"। বলে রাখি যেহেতু আমি অনার্সও এখানেই করেছি তাই আগে থেকে চিনতেন। তবে অনার্সের ৪ বছরে আমি তার থেকে ১ টা কোর্স নিয়েছিলাম। তবে ফাস্ট হওয়ার কারনে চেনার বিষয়টা আরো পরিপক্ক হয়েছিল। আমি পেরেছিলাম। ২৩২ পৃষ্ঠার থিসিস আমি ১ মাসেই লিখে শেষ করেছিলাম।
যাইহোক টিচারের, আমার উপর ভরসা দেখে আমি আসল অনেক দায়ভার ফিল করছিলাম। তাকে সেদিন বলেছিলাম, "প্রোফেসর, আমি শেষ করবই"।

আমি শুরু করলাম আমার কাজ। দৈনিক প্রায় ১৬-১৭ ঘন্টা একটানা কাজ করেছি। আর উনি প্রতি ৪ দিনে আমার সাথে ১ বার অনলাইনে জয়েন হতেন। কাজ দেখতেন এবং নির্দেশনা দিতেন।
সব ঠিক মতই চলছিল। তবে এর মধ্যেই আবার আমাদের সন্তান নির্ধারিত সময়ের ঠিক ১ মাস আগে সিজারে জন্মদান করাতে হল। যার অর্থ হচ্ছে পরের কাজ আগে চলে এলো। এই সময়ে আমি হাসপাতালের বারান্দায় বসেও থিসিস লিখেছি। কারন আমার স্ত্রী হয়তো এতে আমি তাদের থেকে থিসিসকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি এটা মনে করতে পারে কিন্তু আমি সাময়িকের পেছনে আমার স্থায়ীত্ব নষ্ট করতে চাই নাই। কারন আমি জানতাম এখন আমি এটা না করলে আমাকে ১ বছর প্রায় লস হবে। তাই আনন্দ পরেই করি। যা আমি এখন করি।
যাইহোক, শিক্ষকের মোটিভেশানে আমি সময়মতই শেষ করলাম। আমি লিখে লিখে তাকে নিত্য পাঠাতাম আর সে পড়ার সাথে সাথে ভাষাগত ত্রুটিও ঠিক করে দিতেন। একদিন বলছিলেন, " রাত ২ টায় আমি তোমার থিসিস পড়ছি দেখে আমার মা সব বাসার সবাই বেশ অবাকই হচ্ছিল। সেই সাথে বিবাহের আয়োজন কেন্দ্রিক আমার ব্যস্ততা তো আছেই"।

আমি তার প্রমানও পেলাম। কাল বিয়েতে তার মায়ের কাছে যেতেই আমাকে বলল, "তুমি বাংলাদেশী সেই ছেলেটা না? কিছুদিন আগে পাশ করেছ?" আমি হা বলার আগেই বলল, " আমি তোমাকে চিনি, আলাদ্দিন আমাদের তোমার ছবি দেখিয়েছে। তোমাকে জুব্বা পরিয়ে দিচ্ছিল"। তার ভাই যে নিজেও কিনা একজন প্রফেসর। সেও এসে বললেন, তোমার ছবি আমি আগে দেখেছি। আলাদ্দিন দেখিয়েছিল। বেশী অবাক হলাম যখন তার নতুন শশুর আমাকে এসে মশিউর বলে ডাক দিলেন- আর বললেন সেও আমাকে চিনে। আমার প্রোফেসার আমার গল্প করেছে।

বিষয়টা আসলে এমন না যে আমি তার প্রথম ছাত্র যার সে মেন্টর ছিল। এর আগে অসংখ্য PhD, মাস্টার্স ছাত্রদের থিসিসে সে মেন্টর ছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। হয়তো তাদের নিয়েও তার এই আবেগ ছিল।
এতবড় গল্প বলার পেছনে আসলে কারন এটাই যে, একজন প্রোফেসার কিভাবে তার ছাত্রদের মূল্যায়ন করেন, কিভাবে সহযোগিতা করেন এবং কিভাবে পাশে দাড়ান- এটা বুঝানোর জন্য। আমি কৃতজ্ঞ।।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আজকাল এমন প্রফেসর বা শিক্ষক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
শিক্ষা বাণিজ্যিকরণ হবার পরে নিবেদিপ্রাণ শিক্ষক খুঁজে পাওয়া
দুস্কর। আপনি ভাগ্যবণ।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৭

গেঁয়ো ভূত বলেছেন:


চমৎকার অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। এমন শিক্ষক আমাদের দেশে তৈরী হয় না কেন?

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৭

ইসিয়াক বলেছেন:






আপনার মনোবল, চেষ্টা ও শিক্ষকের আন্তরিকতা সব মিলিয়ে সাফল্য লাভ। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
আপনার ও আপনার শিক্ষকের জন্য শুভকামনা রইলো।

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার ! পারস্পারিক শ্রদ্ধা আন্তরিকতা আর কর্তব্য পরায়নতার অপূর্ব সংযোগ।
শুভ কামনা আপনার মেন্টরের সাফল্যমণ্ডিত বিবাহিত জীবনের জন্যে।

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৬

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আপনার পুরো লেখাটি পড়লাম। আপনার মেন্টরের জন্য শ্রদ্ধা।

আমিও এমন একজন পেয়েছিলাম। আমার এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্ট খারাপ, তার উপরে মধ্যেখানে ন্যালনাল ইউনিভার্সিটিতে ৩বছর হুদাই সময় নষ্ট করেছি। সব ছেড়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলাম, আমাকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছিলো না। ঐ স্যারের কাছে পাঠানো হলো। তিনি আমার সাথে কথা বলে কাগজে সাইন করে দিলেন। বললেন তোমার উপর বিশ্বাস করলাম, আমাকে হতাশ করো না।

পরবর্তিতে বহুবার স্যার আমাকে বিভিন্ন সেমিনারে নিয়ে গিয়েছেন, আমাকে উদাহরণ হিসাবে টেনেছেন। আমার নিজের আগ্রহ না থাকলেও শুধুমাত্র স্যারকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণে তার সাথে মোট তিনটি পেপারে নাম লিখিয়েছি।

৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৫০

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


বিয়ের প্রোগ্রামে আপনি স্যুট পরিধান করেননি কেন?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৩৬

পথিক৬৫ বলেছেন: এখন সামার চলছে আর আমি বেশ অনেক লম্বা পথ জার্নি করে গিয়েছিলাম। তাই।

৭| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২২

শ্রাবণধারা বলেছেন: খুব ভাল লাগলো পোস্টটা পড়ে। আপনার প্রফেসরের প্রতি শ্রদ্ধা, আর তাদের বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনা।

৮| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: শিক্ষক তো আসলে এমনই হওয়া উচিৎ ।
আপনার লেখা পড়ে আপনার জীবন আর আপনার প্রোফেসর সম্পর্কে একটু ধারণা পাওয়া গেল ! আপনার ও আপনার প্রফেসরের জন্য শুভ কামনা রইলো ।

৯| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:৪২

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:



আপনার সাবজেক্ট ও থিসিস কি বিষয়ে?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৩৬

পথিক৬৫ বলেছেন: বাংলাদেশ এবং তুরস্কের নিউজ এজেন্সি নিয়ে কাজ করেছিলাম আমি।

১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: একজন 'মেন্টর' এর এমনই হওয়া উচিত। আপনার সদ্যবিবাহিত মেন্টর এবং তার স্ত্রীর প্রতি রইলো একটি সুখী জীবনের শুভকামনা এবং সেই সাথে আন্তরিক শ্রদ্ধা। আর অনুমিত সময়ের এক মাস পূর্বে জন্মলাভ করা আপনার সন্তানের প্রতিও রইলো সুস্থ, সফল জীবনলাভের শুভকামনা।

শূন্য সারমর্ম ঠিকই বলেছেন। যতদূর থেকেই ড্রাইভ করে আসেন না কেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার মত আপনার পোষাকটা (বিশেষ করে জুতো জোড়া) উপযুক্ত ছিল না।

১১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৮

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: শিক্ষক আসলে এমনই হওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.