নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের ছেলের অভিজ্ঞতা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২২

নির্বাচনের খবরগুলো দেখে আর পড়ে আমার খারাপ লাগছে অসহায় প্রিসাইডিং অফিসার আর অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য। অবশ্য যারা দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকতে চেয়েছেন, তাদের জন্য। আমি অনুভব করতে পারি কি ভয়ঙ্কর কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক/ সহকারী শিক্ষক থাকায় আব্বাকে প্রায় প্রতিটা নির্বাচনেই প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হতো। তার কাছ থেকেই শুনতাম। একবার বেশ কান্নাকাটি করে তাকে রাজি করালাম একটা ইউনিয়ন নির্বাচনে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তখন পড়ি ক্লাস টু তে। এরশাদের শাসনামল। কাদিরজংল ইউনিয়নের নির্বাচন। রাত কাটালাম ভোট কেন্দ্রের ভিতরেই। সকাল থেকে বেশ ভালই চলছিল সব কিছু। আমার সহজ সরল, বোকা-সোকা আব্বাকে দেখলাম রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে এদিক অদিক ছুটছেন। কোথাও কোন কমতি বা ব্যত্যয় হতে দেবেন না তিনি। এই ইউনিয়নে তখন একচ্ছত্র আধিপত্য সিরাজ চেয়ারম্যান নামের একজনের। তিনিও প্রার্থী। হঠাৎ দুই ট্রাক ভর্তি গুন্ডা বাহিনী আসলো, হকিস্টিক আর রাম দা সবার হাতে। মানুষজনকে সরিয়ে তারা ভোট কেন্দ্রে ঢুকল। কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে নিলো, সবাই ভয়ে অস্থির। আমি আব্বার সামনে বসে আছি, একজন তার সামনে এসে গ্লাসটা টেবিলে ভাঙল বেশ শব্দ করে। কয়েকটা টুকরা এসে পরল আমার চোখে। ঐ লোকটা আব্বাকে বলল, সার সিলটা আমার কাছে দেন। আব্বা ওইদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে, সব ছেড়ে আমার চোখের সামনে এসে বললেন, দেখি দেখি বাবা, চোখে পরসে কিসু??!! সামনে থাকা লোকটাকে ধমক দিয়ে বললেন, যাও এখান থেকে! লোকটা বোধ হয় একটু থতমত খেয়ে গেল। পিছনে থাকা একজন এসে আব্বার কাছে থাকা ব্যালট কাগজগুলা জোর করে নিয়ে যেতে চাইলেন। একদিকে আব্বা আর একজন আনসার অন্যদিকে ওদের কয়েকজন টানছেন। এর মধ্যে ভিতর- বাহির সব জায়গায় চিৎকার চেঁচামেচি চলছে, ককটেল ফাটানো হচ্ছে। আতংক। একজন গুন্ডা আব্বাকে ধমক দিয়ে বল্ল, ছাড় কইলাম। পাশে থাকা আরেক গুন্ডা ধমক দিলো ঐ গুন্ডাকে, ঐ বেটা রাখ। সে আব্বাকে বলল, সার চাইরা দেন। বুঝলাম, গুন্ডা আব্বার ছাত্র! পিছন থেকে একজন এসে আবার কলার চেপে ধরল, সাহসী আনসার তবু ছাড়তে নারাজ, বলল, সার আপনি যতক্ষণ আছেন আমিও আছি। পুলিশ কিন্তু চলে গেছে আগেই। গুন্ডা বাহিনী আসার ঠিক আগে আগে পুলিশ চলে যায়। আব্বা একটা কৌশল করলেন, সবাইকে বললেন সব কিছু দিয়ে দেন। ওরা নিয়ে যাক। এই তুমরা সব নিয়ে চলে যাও, আমাদের যেতে দাও। গুন্ডারা সব কাগজ নিয়ে চলে গেল। আব্বা হাসলেন, অন্যরা একটু অবাক হয়ে গেলেন। আব্বা বললেন, কাগজ আর সিল দিয়ে কি করবে, আমাদের সাইন পাবে কোথায়?? চলেন আমরা উপজিলায় চলে যাই!! সবাই হাততালি দিয়ে উঠলেন। রাস্তায় আব্বা আর আবার টিমকে কয়েকবার আটকানো হলো। আব্বার কথা একটাই, সব দিয়া আইসি মিয়ারা! পুরা রাস্তায় এই নিয়ে কি হাসাহাসি সবাই। গুন্ডাদের বোকা বানানু গেছে। যার নির্দেশে এই হামলা সেই সিরাজ চেয়ারম্যানও আব্বার ছাত্র, তাই গুন্ডাদের নাকি নির্দেশ দেয়া ছিল যেন আব্বাকে অসম্মান করা না হয়। পরে জেনেছি, গুন্ডাদের দলনেতা ছিল আব্বার খালাত বোনের ছেলে! মানে আমার ফুফাত ভাই!! আব্বা বুঝেছিলেন গুন্ডারা যখন বুঝতে পারবে সাইন দরকার তখন তাকে খুঁজবে। আব্বা তাই বাড়ি না গিয়ে করিমঞ্জ উপজিলায় তার এক সহকর্মীর বাসায় আমাকে নিয়ে পালিয়ে থাকলেন। ঐ বাসায় থেকেই আমরা শুনছিলাম মোটর সাইকেলের শব্দ। তখন এত মোটর সাইকেল ছিল না, শুনছিলাম সিরাজ চেয়ারম্যান নিজে আব্বাকে খুজছিলেন। আব্বার কয়েকজন সহ কর্মীর কাছে গিয়ে আব্বার কাছে মাফ চাইছিলেন, আর সাইন খুজছিলেন। পাননি। ঐ নির্বাচন আবার হয়েছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.