নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী প্রগতিঃ বাংলাদেশ বাস্তবতা

১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২৪

নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারের জন্য বক্তব্য তৈরি করতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য উপাত্তের সঙ্গে পরিচয়৷ সেগুলোই আজ প্রকাশ করেছে priyo.com. পড়া যাবে এখানে

সার সংক্ষেপঃ
জিডিপিতে নারীর অবদান এখন প্রায় ৩৪% (মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বক্তৃতা)।কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে আরও অনেকটা পথই বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে। দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান ৬৪.৪%, অথচ ভূমিতে গ্রামীণ নারীর মালিকানা মাত্র ২ থেকে ৪% । বাংলাদেশের ৪৪% নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কাজে জড়িত, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী (৪৯.৪%), দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩৫.৬% নারী (পরিসংখ্যান ব্যুরো), অথচ সেই নারীর কাছে আছে দেশের মোট ভূমি মালিকানার মাত্র ২-৪%!
নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীর উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসার দাবিদার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারী-পুরুষ বৈষম্য রোধের প্রায় সবগুলো সূচকে স্পষ্ট ব্যবধানেই সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দি গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী নারী-পুরুষ সমতার নানা সূচকে, বিশেষ করে শিক্ষা ও অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে স্পষ্টতই অনেক এগিয়ে। সামাগ্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৭তম। অন্যদিকে মালদ্বীপ ১০৬, ভারত ১০৮, শ্রীংলকা ১০৯, নেপাল ১১১, ভুটান ১২৪ এবং পাকিস্তান আছে ১৪৩তম অবস্থানে। প্রতিবেদনটিতে দেশের সরকারি কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নারী-পুরুষ বেতন বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশের আগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, দেশের নারী শ্রমিকের প্রধান কর্মস্থল পোশাক খাতে নারী ও পুরুষ পোশাক শ্রমিকের মজুরি বৈষম্য কমেছে। বর্তমানে পোশাক খাতে কর্মরত পুরুষ শ্রমিকেরা গড় ৭ হাজার ২৭০ টাকা ও নারী শ্রমিকেরা ৭ হাজার ৫৮ টাকা মজুরি পান। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি ব্যবধান প্রায় ৩ শতাংশ। এই গবেষণায় গড় বৈষম্য কমতে দেখা গেলেও, দেখা গেছে মাত্র ৩.৩% কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আছে। আবার পোশাক কারখানা আধুনীকীকরণ বা যান্ত্রিকীকরণের ফলে নারী কর্মীরা কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন। পোশাক কারখানার মালিকরা মনে করছেন যে, নারী শ্রমিকেরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকবেন। আর এর ফলে পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০১৫ সালে পোশাক খাতের নারী শ্রমিক ছিল ৬৪%, বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬০%-এ।
২০১৫ সালের এক গবেষণায় পরিসংখ্যান ব্যুরো দেখিয়েছিল যে, কৃষি কাজে একজন পুরুষ কর্মী পাচ্ছেন দৈনিক ২৯৯ টাকা, অথচ একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছেন ২২৬ টাকা। দুটি বেসরকারি সংস্থার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি যেখানে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, সেখানে একজন নারী শ্রমিকের আয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। বিআইডিএস একটি গবেষণায় পেয়েছে যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫৭% নারী কর্মী তার পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে গড়ে ৫২% কম বেতন পান, এবং শুধু কম বেতনের কারণে ৩৩% নারী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। অনেক ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি পদোন্নতির বেলায়ও নারীকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে এই ধরনের পরিস্থিতি খুবই দেখা যায়। মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রেও রয়েছে সংকট।
গত বছরে প্রকাশিত অন্য আরেকটি গবেষণা বলছে, কৃষিতে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৬৯% নারী কৃষক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মূলত: রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের অভাব এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে দেশের নারী কৃষকদের এমন অবস্থা। জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১, কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা-১৯৯৬,এবং জাতীয় কৃষি নীতিমালা ২০১০ তে নারী কৃষকের সুনির্দিষ্ট সংখা, ব্যাখ্যা ও সেবার পরিধি নির্ধারিত নাই। কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালায় ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক, বর্গচাষী, ভূমিহীন কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমশক্তি যারা মৎস্য, বন ও গবাদি পশু খাতে সংযুক্ত তাদের ভূমিকা বিশেষায়িত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ‘ডাটাবেজ’ তৈরি থাকলেও নারী কৃষকের জন্য সেটা নেই। ফলে যথাযথভাবে ঋণ ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় নারী কৃষকরা।
নারী শ্রমিকের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদেরও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ব্যাংক খাতের অবহেলা বেশ স্পষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে দেশে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ দেশের মোট ব্যাংক ঋণের মাত্র ০.৭৬% পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা!
টেকসই লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে হলে নারীর প্রতি বৈষম্য অবশ্যই রোধ করতে হবে। কারণ এসডিজি’র ৫ নম্বর লক্ষ্যই হলো- জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারীও বালিকাদের ক্ষমতায়ন। এতে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সকল ক্ষেএে নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য দুর করা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যকিÍগত জীবনে নারীর নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় সম সুযোগ এবং কার্যকরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এসব লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশহগ্রহণ বাড়তেই হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন, তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংউচ্চশিক্ষা এবং কর্মস্থলেও নারীর অধিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থি মোট শিক্ষার্থীর ৫০%, মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার্থী ৫৩%, কলেজ পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থী ৪৭% হলেও উচ্চ শিক্ষায় এখনো নারীর অংশগ্রহণ পিছিয়ে। চিকিৎসা ও আইনসহ পেশাগত শিক্ষায় নারী মাত্র ৩৮%, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ৩৩%। প্রাথমিক স্কুলে ৬০% নারী শিক্ষক হলেও, মোট সরকারি চাকরিজীবীর মাত্র ২৪% নারী।(জনকণ্ঠ)। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৫% এর মতো শিক্ষক নারী (যুগান্তর)।
নারীর ক্ষমতায়ন বা উন্নয়নের সমস্ত সম্ভাবনা ভেস্তে দিচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতনের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বিঘিœত হচ্ছে। মহিলা পরিষদের একটি হিসাব বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ২৫৫ জন নারীকে ও যৌন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে মাট ১০৭৯ জন নারী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০১৭ সালের শুধু অক্টোবর মাসেই পারিবারিক নির্যাতনে ২৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়। গত বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩০৫টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০৭ জন নারীকে স্বামী হত্যা করে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে ৩৯ জন। ব্র্যাকের গকেষণা অনুযায়ী ২০১৬ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৫টি; যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৬টি। ২০১৭ সালের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৩ জন, আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৭৫৭ জন, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২৮ জন ও অন্যান্য ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৮৮ জন। এই ধরনের পরিস্থিতি নারী উন্নয়নে প্রধানতম বাধা। উল্লেখিত পরিসংখ্যানের চেয়েও বাস্তবতা আরও করুন, কারণ ইউএনডিপি একটি গবেষণায় দেখেছিল যে, নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না।
দেশের মোট জিডিপিতে নারীর অবদান এখন প্রায় ৩৪% (মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বক্তৃতা)।কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে আরও অনেকটা পথই বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে। দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান ৬৪.৪%, অথচ ভূমিতে গ্রামীণ নারীর মালিকানা মাত্র ২ থেকে ৪% । বাংলাদেশের ৪৪% নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কাজে জড়িত, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী (৪৯.৪%), দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩৫.৬% নারী (পরিসংখ্যান ব্যুরো), অথচ সেই নারীর কাছে আছে দেশের মোট ভূমি মালিকানার মাত্র ২-৪%!
নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীর উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসার দাবিদার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারী-পুরুষ বৈষম্য রোধের প্রায় সবগুলো সূচকে স্পষ্ট ব্যবধানেই সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দি গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী নারী-পুরুষ সমতার নানা সূচকে, বিশেষ করে শিক্ষা ও অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে স্পষ্টতই অনেক এগিয়ে। সামাগ্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৭তম। অন্যদিকে মালদ্বীপ ১০৬, ভারত ১০৮, শ্রীংলকা ১০৯, নেপাল ১১১, ভুটান ১২৪ এবং পাকিস্তান আছে ১৪৩তম অবস্থানে। প্রতিবেদনটিতে দেশের সরকারি কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নারী-পুরুষ বেতন বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশের আগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, দেশের নারী শ্রমিকের প্রধান কর্মস্থল পোশাক খাতে নারী ও পুরুষ পোশাক শ্রমিকের মজুরি বৈষম্য কমেছে। বর্তমানে পোশাক খাতে কর্মরত পুরুষ শ্রমিকেরা গড় ৭ হাজার ২৭০ টাকা ও নারী শ্রমিকেরা ৭ হাজার ৫৮ টাকা মজুরি পান। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি ব্যবধান প্রায় ৩ শতাংশ। এই গবেষণায় গড় বৈষম্য কমতে দেখা গেলেও, দেখা গেছে মাত্র ৩.৩% কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আছে। আবার পোশাক কারখানা আধুনীকীকরণ বা যান্ত্রিকীকরণের ফলে নারী কর্মীরা কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন। পোশাক কারখানার মালিকরা মনে করছেন যে, নারী শ্রমিকেরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকবেন। আর এর ফলে পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০১৫ সালে পোশাক খাতের নারী শ্রমিক ছিল ৬৪%, বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬০%-এ।
২০১৫ সালের এক গবেষণায় পরিসংখ্যান ব্যুরো দেখিয়েছিল যে, কৃষি কাজে একজন পুরুষ কর্মী পাচ্ছেন দৈনিক ২৯৯ টাকা, অথচ একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছেন ২২৬ টাকা। দুটি বেসরকারি সংস্থার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি যেখানে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, সেখানে একজন নারী শ্রমিকের আয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। বিআইডিএস একটি গবেষণায় পেয়েছে যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫৭% নারী কর্মী তার পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে গড়ে ৫২% কম বেতন পান, এবং শুধু কম বেতনের কারণে ৩৩% নারী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। অনেক ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি পদোন্নতির বেলায়ও নারীকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে এই ধরনের পরিস্থিতি খুবই দেখা যায়। মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রেও রয়েছে সংকট।
গত বছরে প্রকাশিত অন্য আরেকটি গবেষণা বলছে, কৃষিতে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৬৯% নারী কৃষক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মূলত: রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের অভাব এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে দেশের নারী কৃষকদের এমন অবস্থা। জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১, কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা-১৯৯৬,এবং জাতীয় কৃষি নীতিমালা ২০১০ তে নারী কৃষকের সুনির্দিষ্ট সংখা, ব্যাখ্যা ও সেবার পরিধি নির্ধারিত নাই। কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালায় ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক, বর্গচাষী, ভূমিহীন কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমশক্তি যারা মৎস্য, বন ও গবাদি পশু খাতে সংযুক্ত তাদের ভূমিকা বিশেষায়িত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ‘ডাটাবেজ’ তৈরি থাকলেও নারী কৃষকের জন্য সেটা নেই। ফলে যথাযথভাবে ঋণ ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় নারী কৃষকরা।
নারী শ্রমিকের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদেরও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ব্যাংক খাতের অবহেলা বেশ স্পষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে দেশে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ দেশের মোট ব্যাংক ঋণের মাত্র ০.৭৬% পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা!
টেকসই লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে হলে নারীর প্রতি বৈষম্য অবশ্যই রোধ করতে হবে। কারণ এসডিজি’র ৫ নম্বর লক্ষ্যই হলো- জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারীও বালিকাদের ক্ষমতায়ন। এতে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সকল ক্ষেএে নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য দুর করা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যকিÍগত জীবনে নারীর নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় সম সুযোগ এবং কার্যকরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এসব লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশহগ্রহণ বাড়তেই হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন, তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংউচ্চশিক্ষা এবং কর্মস্থলেও নারীর অধিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থি মোট শিক্ষার্থীর ৫০%, মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার্থী ৫৩%, কলেজ পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থী ৪৭% হলেও উচ্চ শিক্ষায় এখনো নারীর অংশগ্রহণ পিছিয়ে। চিকিৎসা ও আইনসহ পেশাগত শিক্ষায় নারী মাত্র ৩৮%, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ৩৩%। প্রাথমিক স্কুলে ৬০% নারী শিক্ষক হলেও, মোট সরকারি চাকরিজীবীর মাত্র ২৪% নারী।(জনকণ্ঠ)। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৫% এর মতো শিক্ষক নারী (যুগান্তর)।
নারীর ক্ষমতায়ন বা উন্নয়নের সমস্ত সম্ভাবনা ভেস্তে দিচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতনের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বিঘিœত হচ্ছে। মহিলা পরিষদের একটি হিসাব বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ২৫৫ জন নারীকে ও যৌন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে মাট ১০৭৯ জন নারী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০১৭ সালের শুধু অক্টোবর মাসেই পারিবারিক নির্যাতনে ২৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়। গত বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩০৫টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০৭ জন নারীকে স্বামী হত্যা করে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে ৩৯ জন। ব্র্যাকের গকেষণা অনুযায়ী ২০১৬ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৫টি; যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৬টি। ২০১৭ সালের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৩ জন, আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৭৫৭ জন, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২৮ জন ও অন্যান্য ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৮৮ জন। এই ধরনের পরিস্থিতি নারী উন্নয়নে প্রধানতম বাধা। উল্লেখিত পরিসংখ্যানের চেয়েও বাস্তবতা আরও করুন, কারণ ইউএনডিপি একটি গবেষণায় দেখেছিল যে, নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: নারীদের অনেক উন্নতি হয়েছে, এখনও হচ্ছে, আর ভবিষ্যৎ তো পড়েই আছে।

লেখাটা একটু বড় হয়ে গিয়েছে।:P তবে অনেক কিছু জানা হল।।:)

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: সত্যিকার অর্থে দেশে খুব একটা নারীর উন্নয়ন ঘটেনি।
এখনও একটা মাস্টার্স পাশ করা মেয়ে কোথাও একা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে সাহস পায় না।
আচ্ছা, দেশে যে একটা মহিলা উন্নয়ন অধিদপ্তর আছে- গত বিশ বছরে তারা নারী উন্নয়ে কি কি কাজ করেছে? কেউ কি আমাকে তা জানাতে পারবেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.