নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিজির ফালুদা!!

১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০৭



(প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ ফিজি গিয়েছিলাম গত বছর জানুয়ারিতে। ফেসবুকে সে সময় ফিজির দিনগুলো নয়ে ছোট ছোট কিছু পোস্ট দিয়েছিলাম। সেগুলো একত্রে করে তৈরি করা এই লেখা প্রকাশ করেছে priyo.com. দেখা যাবে এখানে। দুটো মজার তথ্য দিয়ে রাখিঃ ফিজিতে বেতন দেয়া হয় মাসে দুইবার, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক বেতনও দেয়া হয়। বাসা ভাড়াও দিতে হয় এভাবে । আর নাদি শহরে একটা সড়কের নাম বাংলাদেশ! কিন্তু এই নাম রাখার কারণটা বাংলাদেশীদের জন্য বেশ লজ্জার!!)

যে দেশের ভিসা পাওয়া সহজ, সে দেশে যেতেই আমার আগ্রহ সাধারণত বেশি! বাংলাদেশীদের জন্য ফিজিতে বিমান বন্দরে গেলেই ভিসা পাওয়া যায় (অন এরাইভাল ভিসা)- ছোট এই দেশটি ভ্রমণের সুযোগটা লুফে নিয়েছিলাম মুলত এই কারণেই। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ধনী, ছোট এই দেশটি দেখার আগ্রহ ছিল আরও দুটি কারণে। শৃনেছি দ্বীপ রাষ্ট্রটির কৃষকরা নাকি তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এবং সচ্ছল জীবনযাপন করে। বাংলাদেশে কৃষক ও কৃষি নিয়ে কাজ করি বলে এই তথ্যটা আমার কাছে ছিল দারুণ আগ্রহোদ্দীপক! দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণের আরেকটি কারণ রসনা জনিত! ফিজির ফালুদা!!

ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজি কিন্তু বেশ ধনী দেশ। কেমন ধনী? মাত্র ১৮৩০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশ ফিজির মোট জনসংখ্যা ৯ লাখের মতো! আমাদের ঢাকার জনসংখ্যার ২০ ভাগের একভাগও না! পর্যটন আর প্রাকৃতিক সম্পদ দেশটির প্রধান আয়ের উৎস, জনপ্রতি জিডিপি প্রায় ১০ হাজার ডলার, বাংলাদেশের প্রায় ১০গুন! দেশটির মূদ্রা ফিজিয়ান ডলার মানও বেশ শক্তিশালী, ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাওয়া যায় মাত্র ২ ফিজিয়ান ডলার।

ফিজির মানুষ যে বেশ আমুদে, সেটা শুনেছিলাম আগেই। নাদি বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশনের সামনে গিয়ে সেটা বেশ ভালভাবেই টের পেলাম। আগত যাত্রীদের গান গেয়ে বরণ করছে স্থানীয় একটি ব্যান্ড! সবার গায়েই ফিজির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টার বিমান যাত্রার ক্লান্তি ভুলে গেলাম, নিমিষেই! অবশ্য আমি বুঝতে পারিনি একটু পরেই আমাকে ক্লান্ত ও বিরক্ত করে ফেলার জন্য অপেক্ষা করছে সময়, বেশ কিছু বিড়মন্বনা নিয়ে।

লাইনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, ইমিগ্রেশনে একজন যাচ্ছে, আর ঠাস ঠাস করে পাসপোর্টে সিল মারছে ইমিগ্রেশন অফিসার। বিপত্তিটা বাঁধলো আমার বেলায়। বলা বাহুল্য সঙ্গের পাসপোর্টটা বাংলাদেশী বলেই! পাসপোর্ট দেখেই কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, পাশের ঘরে যেতে হবে আমাকে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, এক পর্যায়ে ধৈর্যহারাই হয়ে গেলাম, সেখানে থাকা ইমিগ্রেশন অফিসারকে বললাম, আমাকে কি তুমি তোমার দেশে ঢুকতে দিচ্ছ? না দিতে চাইলে বলে দাও, আমি ফিরে যাই। তাঁর সঙ্গে আমার মিনিট খানেকের কথোপকথন:
: ফিজিতে কেন এসেছেন?
: ফালুদা খেতে?
: (অবাক হয়ে) কী?
: (আমি ফালুদার ইংরেজি নাম জানি না, তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম): Fruit Juice with milk and various fruits and ingredients, with ice!
: ( অট্ট হাসি দিয়ে) কাউকে চেন এখানে?

আমাকে ফিজিতে আমন্ত্রণকারীর নাম বলতেই হেসে কর্মকর্তা বললেন, ও, সবজি রপ্তানি করে যে? বলেই নিজের মোবাইল থেকে ফোন করলেন। কী যেন কথা বলে দেখলাম, তিনি হাসছেন। ফোন রেখে পাসপোর্টে সিল দিতে দিতে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন, তোমার হোস্ট তোমার জন্য অপেক্ষা করছে! পরে জেনেছি, ছোট নাদি শহরে, আসলে সবাই সবাইকে চেনে।

পরে জেনেছিলাম। ফিজিতে আগে বাংলাদেশীদেরকেও কোনও প্রশ্ন না করেই ভিসা দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছু আদম ব্যবসাযী সেই সুযোগটা নিয়েই নিজেদের আখের গুছিয়েছে, আর নষ্ট করেছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। নিরীহ বাংলাদেশীদের অস্ট্রেরিয়া-নিউজিল্যান্ড পাঠানর কথা বলে ফিজিতে নিয়ে আসতো দালালরা। পরে সমূদ্র পথে পাচার করার চেষ্টা করতো। কখনো কখনো ম্যাপে সমুদ্রকে নদী হিসেবে দেখিয়ে নাকি বলা হতো- এই হলো ফিজি, আর এই হলো অস্ট্রেলিয়া। মাঝখানে নদী। ভিসা না পেলে নদী সাঁতরিয়েও চলে যাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। এই লোভ দেখিয়ে ফিজিতে এসে ফেলে রেখেছে এমন একজন বাংলাদশেীর সঙ্গে আমিও কথা বলেছি। মূলত, এসব কারণেই বাংলাদেমেিদর জন্য ভিসা এখন কঠিন করা হচ্ছে।

প্রথম দিন হোটেলে ঢুকতে গিয়েই ফ্যাসাদে পড়ে গেলাম! রেশেপসনিস্টকে জিজ্ঞাস করলাম, আপা, রুমে দুই-এক বোতল খাবার পানি আছে তো? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আছে, পরিষ্কার করা গ্লাস দেয়া আছে, টেপ থেকে পানি খেতে পার। জানতে চাইলাম, টেপের পানি কি পানের জন্য নিরাপদ? আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে যেভাবে হ্যাঁ বললো, বুঝলাম বেকুবের মতো প্রশ্ন হয়ে গেছে। ও তো আর জানে না, আমরা ওয়াসার পানি শুধু ফুটিয়া না, ফুটিয়ে তারপর ফিল্টার করে খাই। তাও মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয়, ফিলটারটা কি ঠিক আছে?!

হোটেলটা আসলে বিশাল এক রিসোর্ট। ফিজিতে জায়গার আসলে অভাব নেই। আর এ কারণেই নাদি শহরের সবচেয়ে বড় ভবন আমি তিন তলাই দেখলাম। হোটেলটার একেকটা রুম অনেক দূরে দূরে। রেস্টুরেন্টে খেয়ে রুমে যেতে যেতে যেতে আবার ক্ষুধা লেগে যায়। চেক ইন করে হেটে রুমে ঢুকে ক্লান্ত শরীরটা ধবধবে সাদা বিছানায় ছেড়ে দিলাম। শুয়ে শুয়েই পাশে থাকা সংবাদপত্রটির একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল। ফিজিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাঙ্ক ফুড নিষিদ্ধ করেছে সরকার! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা ক্যান্টিন, বা আশপাশের দোকানে জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় রাখা, বিক্রি করা যাবে না! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই সরকারের এই আয়োজন!

এক ঘুম ঘুমিয়ে উঠে দেখি ফিজির ঘড়ির কাঁটা প্রায় ৩ টার ঘরে, ঢাকায় তখন সকাল ৯টা। সময়ের ব্যবধান ঠিক ৬ ঘণ্টা। ঘুমের ব্যাঘাত যে হবে সেটা বেশ টের পাচ্ছিলাম। বিকালে তেমন কোনও কাঝ ছিল না। আশপাশটা একটু ঘুরে আসতে চাইলাম। বাইরে যাচ্ছিলাম, রাস্তার ওপারে যাব , দেখি গাড়ি আসছে। গাড়িকে সম্মান জানিয়ে, দাঁড়িয়ে গেলাম। গাড়িও দাঁড়িয়ে গেল। ভাবলাম, আমাকে তো আর জায়গা দিবে না, মনে হয় একটু পরেই যাবে, আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। গাড়ি সরে না, আমার দিকে তাকিয়ে চালক। আমি গাড়ির দিকে। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। একটু পর চালক হাত দিয়ে আমাকে যেতে বললেন, আমি ওপারে গিয়ে দেখি গাড়িও চলে গেল। আমাকে বিদেশি মনে করে খাতির করল কি না একটু দেখা দরকার। রাস্তার অপারে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখি, কোন পথচারী জেব্রা ক্রসিঙের সামনে এসে দাঁড়ালেই গাড়ি এসে থেমে যাচ্ছে! বাহ! ফেরার পথে জেব্রা ক্রসিঙে এসে দেখি কোন গাড়ি নেই, অপেক্ষা করলাম! গাড়ি থামানোর মজাটা আবার নিই! একটু পর একটা গাড়ি আসতে দেখেই দাঁড়ালাম ক্রসিঙের সামনে। যথারীতি গাড়ি থামল, আর আমি থ্যাঙ্ক ইউ বলে পাড় হয়ে আসলাম। ফিজি ব্রিটিশ কলোনি ছিল, ছিল বাংলাদেশও। ওরা ফিজিয়ানদের কি শিখিয়ে গেল, আর আমরা কি শিখলাম?
ফিজির মানুষ খুব আমুদে জানতাম, এখানে এসে দেখলাম এরা বেশ আলসেও! মানে কোন কিছুতেই কোনও তাড়াবহুড়ো নেই। সকাল ৯ টায় আমাকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার কথা, ১১ টার দিকে ফোন করে নিয়ে আসতে হলো! যেখানেই গিয়েছি, মানুষের মধ্যে এক ধরনের শান্ত-শিষ্ট ভাব দেখেছি। বাসে কোনও সহকারী বা আমাতের ভাষায় কোনও কন্ডাকটর নেই। চালকের পাশে একটা বক্স রাখা, যাত্রীরা নেমে যাওয়ার সময় সেখানে ভাড়া রেখে দিচ্ছি, ভাংতি লাগলে নিজেরাই সেখান থেকে নিয়ে নিচ্ছে। আমার স্টেশনে আসার একটু আগে, আমি সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি দেখে, চালকসহ প্রায় সবাই আমার দিকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিৎ! পাশের যাত্রী বললেন, বসে থাক, তোমার স্টেসনে আসলে গাড়ি থামবে। খেয়াল করলাম, প্রতিটি স্টপেজে গাড়ি এসে থামছে, যাত্রী আয়েসী ভঙ্গিমায় নামছেন, আবার কেউ থাকলে তিনি উঠছেনও বেশ ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে! দারুণ একটা আয়েসী ভাব। আমাদের ঢাকায় কেউ এভাবে নামতে-উঠতে চাইলে অন্য যাত্রীরাই তাঁর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বেন!
ফিজিয়ানদের অদ্ভূত আরেকটা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়লো হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সময়। ফিজিতে প্রায় ৩৮ ভাগ ভারতীয় বংশোদ্ভ’ত জনগোষ্ঠীর বসবাস। সিনেমা হলগুলোতে তাই হিন্দি সিনেমাই চলে বেশি। একটা হলে হিন্দি রইস ছবিটা দেখতে গেলাম। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, হাসির দৃশ্যগুলো আসলে দর্শক হাসলেও, অন্য সময় প্রায় সবাই চুপ। নায়ক পর্দায় আসলে হৈ হুল্লোড়, শিস দেওয়া-এর কিছুই নেই। ভেবেছিলাম সানি লিওন যখন লায়লা মে লায়লা নিয়ে পর্দায় হাজির, তখন তো একটু শিস বাজবেই! একদমই নয়! বরং হল জুড়ে পিন পতন নিরবতা!! ছবি দেখা শেষ হলে, ধীরে ধীরে সবাই হল থেকে বের হয়ে গেল!
একদিন সারাদিনই ঘুরাঘুরিই করতে হয়েছে, নাদির এই মাথা, ওই মাথা! সকালে গিয়েছিলাম প্রায় ১০০ কিমি দূরে সিগাতলার পাহাড়ি এলাকায়। যেতে যেতে জানলাম, ফিজিতে চাকরিজীবীরা বেতন পায় মাসে দুইবার! সরকারি-বেসরকারি সবাই। কেউ কেউ পায় সাপ্তাহিক। বাড়ি ভাড়াও নেয়া হয় দুই বারে। ভাল কিন্তু জিনিসটা। অনেক সময় মাসের মাঝামাঝিতে অনেকের টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, ধার দেনা শুরু হয়ে গেলে বেতন পাওয়ার আগেই খরচ হয়ে যায়! এ থেকে বের হতে বেশ কষ্ট হয়। মাঝামাঝি কিছু টাকা পেলে ভালই হয়! 
জানলাম, ফিজিতে গাড়ি ৮০ কিমির বেশি গতিবেগে চালান নিষেধ। চলতি পথে অনেক জায়গায় দেখেছি লেখা, Highest National Speed 80km/hrs ! পুলিশকে দেখলাম বিশেষ গতি বন্দুক (Speed Gun) দিয়ে গাড়ির গতিবেগ পরীক্ষা করছে, গতি ৮০ বেশি হলে আটকানো হচ্ছে গাড়ি!

ফিজিতে আমার এই সফরটার দেখভাল করেছে PIFON নামের একটি সংগঠন। কাইল তার প্রধান। একজন কৃষক নেতা, নিজে কৃষক, একটা সমবায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান, স্থানীয় চার্চের পুরহিত, আর কত কি? এক দুপুরে কাইল আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ওর বাড়িতে। প্রায় ১৩ একরের বাড়ি বিশাল একটা কৃষি খামার! এখানে কৃষি আর কৃষকদের নিয়ে মানুষ কিভাবে গর্ব করে, তার একটা উদাহরণ তাঁর বাড়ির সামনে রাখা গাড়িতে লাগানো কিছু স্টিকার। কাইলের স্ত্রীর গাড়ির পিছনে লেখা, আমার ভালবাসা একজন কৃষকের জন্য! এদের সৌখিন কিন্তু আনন্দময় ও লাভজনক কৃষিকাজের ধরন দেখে কৃষক হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে! 

আমাকে একটা পেঁপে বাগান দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফিজির কৃষি কত বড় ব্যবসা তার একটা উদাহরণ এই পেঁপে বাগান। প্রত্যন্ত পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই বাগান যিনি করেন তিনি ফিজির সবচেয়ে বড় বোতলজাত পানি কোম্পানির মালিক! তিনি এখনও কৃষি ব্যবসা ছাড়েননি! এত বড় ব্যাবসায়ি কিন্তু একটি কৃষি সমবায়ের সাধারণ সদস্য। ফিজিতে এবং আশপাশের দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে পেঁপের প্রচুর চাহিদা। আগে একবার বলেছিলাম, সাধারণ ফিজিয়ানদের কাছে বন্দুক নেই, আছে কিছু কৃষকের কাছে! নিজেদের পশু-গরু ছাগল চরানর জন্য নাকি এইগুলা লাগে!

দেখেছি প্রত্যন্ত এলাকার একজন কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনার ঘাস কারপেটিং করা! তিনি সবজি আর ফলের চাষ করেন। দুই দিনে যা দেখলাম আর বুঝলাম তা হলঃ ফিজিতে কৃষি একটা লাভজনক ব্যবসা। আমাদের অধিকাংশ কৃষক কোন রকমে জীবন যাপনের অবলম্বন হিসেবে কৃষি কাজ করে, এখানে তেমনটা নয়। এখানে ব্যবসাকে সামনে রেখেই কৃষি কাজ চলে। আর এক্ষেত্রে কৃষকদের বড় শক্তি সমবায়। কৃষকের উৎপাদনের দেখভাল করা, বাজার তৈরি করা, ক্রেতা ধরে দেয়া, বিদেশে রপ্তানি করার কাজটি করে দেয় সমবায়। এরকম কৃষি সমবায় বাংলাদেশে করা গেলে, আমার দেশের কৃষকও হতে পারে দারুণভাবে সফল। এমন ছোটখাট সাফল্যের উদাহরণ এখনই আছে, প্রয়োজন একে সম্প্রসারিত করা।

কৃষিকে উদ্ভাবনী শক্তি আর উদ্যোগ দিয়ে কিভাবে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করা যায়, তারই 'ভয়াবহ' একটা নজির দেখলাম ফিজিতে। দিন-রাত সময়ের পার্থক্যের কারণে প্রায় নির্ঘুম রাত কাটাতে কাটাতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম , কিন্তু মূল শহর থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিমি দূরে পাহাড়ের উপর প্রতিষ্ঠিত আভিভা ফারমস দেখে চাঙ্গা হয়ে গেলাম যেন! লেভি টোরা নামের এই ভদ্রলোক প্রায় ৬৫ একর জমিতে আখ চাষ করতেন। এক সময় দেখলেন অনেক কষ্ট করেও তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। একে লাভজনক করার জন্য, তিনি এখানে একটা স্থানীয় বিরল জাতের নানা গাছের বাগান করলেন, চাষ করলেন নানা ঔষধি গাছের। আর সব করলেন অরগানিক, কোন রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার না করে। অনেক পর্যটক এখানে আসেন ফিজির বিরল স্থানীয় নানা জাতের গাছ দেখতে। এখানে পর্যটকরা বাগান ঘুরে দেখতে পারেন ঘোড়ায় চড়ে! বাগান দেখতে হলে লেভিকে দিতে হবে প্রায় ১২৫০ টাকা, ঘোড়ায় চড়ে বাগান দেখতে হলে দিতে হবে প্রায় ৪ হাজার টাকা। আছে রেস্টুরেন্ট। পর্যটকরা এখানে এসে তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটাতেও পারবেন! এখানে অনেকে এখন আসেন সভা-সেমিনার করতে। খুব কম করে হলেও লেভির বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা!  
ঈশ! এরকম কত কিছুই যে বাংলাদেশে করা যেত!!

টানা ঘুরাঘুরির পর একদিন বিকালে কিছুটা ফুস্রত মিলে যাওয়ায় গিয়েছিলাম নাদি শহরে নিও টাউন সমুদ্র সৈকত এলাকায়। ফিজির মানুষের মতোই শান্তশিষ্ট! আপাত দৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও ফিজির আশীর্বাদ এই সমুদ্রই ওদের জন্য আবার বিপদ জনক। প্রচুর ঘূর্ণিঝড় হয় এখানে। জুলাই ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত ৮ টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, নিম্নচাপ ছিল ১১টি। ২০১৬ সালে ওয়িন্সটন নামের ঝড়ে ফিজির ক্ষতি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার! সমুদ্র সৈকত থেকে ফিরছিলাম। ট্যাক্সি চলেই যাচ্ছিল, আমার চিৎকার শুনে ড্রাইভার বেচারা ভয় পেয়ে থামিয়ে দিল গাড়ি। গাড়িটাকে ঘুরিয়ে কিছু পথ ফিরে গিয়ে তো আমি অবাক! ভেবেছিলাম হয়ত দেখার ভুল, কিন্তু আসলেই শব্দটা ‘বাংলাদেশ’! এখানে একটা সড়কের নাম বাংলাদেশ সড়ক! তবে, ট্যাক্সি ড্রাইভার এই নামের যে ইতিহাস জানালো, তা বেশ বিব্রতকর। উনি জানানেল, বিচ এলাকায় খালি জায়গাগুলতে আগে কিছুই ছিল না। কিছু গরিব লোক এসে এখানে ঘর বাড়ি বানানোর পর থেকে নাকি তারাই এর নাম রেখেছে, বাংলাদেশ! মেজাজটা বিগড়ে গেল। ছবি তুলছিলাম দেখে রাস্তাটার পাশেই বাড়ি এমন একজন এগিয়ে আসল, তার কাছেও জানতে চাইলাম ইতিহাস। প্রায় একই উত্তর! ড্রাইভার আর ওই লোক কিছু প্রশ্ন করতে চাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম! তাহলে কি বাংলাদেশ থেকে একদল লোক গিয়ে ওখানে বস্তি গড়েছে? ইন্টারনেটে কিছু খুঁজলাম, পেলাম না। সাধারণত এক দেশের সরকার অন্য আরেকটি দেশকে সম্মান জানিয়ে সে দেশের নামে সড়কের নামকরণ করে। আশা করি এই বাংলাদেশ রোডের বেলায় তেমন কিছুই হয়েছে!

আমাকে ফিজিতে নানা জায়গায় নিয়ে গেছে কাইটু। স্থানীয় কৃষক সংগটনে কাজ করে কাইটু, গাড়িও চালাতে পারে। ফিজিতে মনে হলো সবারই গাড়ি আছে। যে সংস্থার আমন্ত্রনে গিয়েছি, তাতে কাজ করে চারজন। সবাই অফিসে আসে গাড়িতে করে। একটি সভায় ছয় জন কৃষক নেতা এসেছিলেন, সবাই নিজ নিজ গাড়িতে করেই এলেন! তো সেই কাইটুই আমাকে জানিয়েছে নানা কিছু। একদিন কাইটুর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে:

কাইটুঃ আমাদের জনপ্রিয়তম খেলা রাগবি, গত অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছি আমরা। তোমাদের প্রিয় খেলা কি? 
আমিঃ এই মুহূর্তে ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। 
কাইটুঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি জানি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্তিশালী দেশ। আমি ক্রিকেট খেলা দেখি শুধু যদি তোমাদের একজন বোলিং করে, ওর বল যে কোথা থেকে কোথায় যায় ব্যাটসম্যান বুঝেই না! নাম... ।।
আমিঃ মোস্তাফিজ?
কাইটুঃ হ্যাঁ হ্যাঁ! 
ক্লান্ত আমি একটু আধশোয়া ছিলাম গাড়িতে, এবার একটু নড়েচড়ে বসলাম! বললামঃ সাকিব আল হাসান, বিশ্বের এক নাম্বার খেলোয়াড়! ও কিন্তু আমাদের দেশের! 
কাইটুঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি জানি। Al-rounder Number one. 
(বুকটাই তো ফুলে গেল! ধন্যবাদ বাংলার ক্রিকেটার!)

ফিজিতে খাওয়া-দাওয়ায় কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি আমি। ভারতীয় খাবার পাওয়া যায় প্রচুর। আর হালাল মাংসও বেশ পাওয়া যায়। ফিজিতে নাকি প্রায় সব মাংসের দোকান চালায় মুসলমানরা। বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্টে দেখলাম লেখাই আছে- হালাল ফুড। মনে হচ্ছিল দেশীয় খাবারই খাচ্ছি। তবে সবচেয়ে দারুণ লেগেছে সেই খাবরটাই! ফালুদা! অবশ্য ফালুদার মতো কিছু খেতে হলে,যেতে হবে ম্যানিলায়। সেখানকার হালো হালোই এই পর্য়ন্ত আমার কাছে সেরা! সেকথা না হয় বলা যাবে অন্য কোন এক লেখায়!

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০০

আল ইফরান বলেছেন: বেশ লম্বা পোস্ট, তারপরও খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন।
কৃষির উপরে জোর না দিতে পারলে দিনশেষে আমাদের নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
বাংলাদেশ রোডের নামকরনের পেছনের কাহিনী শুনে বেশ খারাপ অনুভুতি হল।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২০

মুনিরেভ সুপ্রকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: সবটাই অনেক সময় নিয়ে পড়লাম। ভালো লেগেছে। ভ্রমন কাহিনী সবসময়ই আমাকে ভালো লাগে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষাতে থাকলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪

মুনিরেভ সুপ্রকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর আর সাবলীল।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫

মুনিরেভ সুপ্রকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:০০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর ভ্রমন কাহিনী।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নাম !!! ভেরি গুড।

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: যাক ভালো হলো, ঘুরে এলেন। আপনি আর কয়টি দেশে গেছেন?

৭| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: সুন্দর, গতিশীল লেখা। পড়ে খুব ভালো লাগলো।
আমাদের আদম ব্যবসায়ী আর এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের কারনে দেশের দুর্নাম হয়। এর যেন কোন শেষ নেই!!! কেউ রাস্তা পার হতে চাইলে গাড়ীর থেমে যাওয়া উন্নত দেশগুলোর একটা সাধারন প্র্যাকটিস।

৮| ২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কি কৃষিতে চাকুরী করেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.