নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উগান্ডায় গরিলার গরিমা!

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

(উগান্ডা ভ্রমণের দ্বিতীয় অংশ, ছেপেছে ইত্তেফাক। একটু মনে হয় বড়ই হয়ে গেছে!)
উগান্ডায় প্রবেশ করতে বিমানবন্দরেই অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়। পর্যটক আকর্ষণ করতেই সরকারের এই নীতি। প্রচুর পর্যটকের আগমন সেই নীতি যে বেশ সুফল দিচ্ছে তারই প্রমাণ দিচ্ছিল। বিমানবন্দরে বিদেশির খুব ভিড়! উগান্ডার গভীর জঙ্গল আর গরিলা দেখতেই নাকি আসেন পর্যটকেরা। ৫০ ডলার দিয়ে ছোট একটা ফরম পূরণ করে বিমানবন্দর থেকে সহজেই ভিসাটা নিয়ে নিলাম। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হিসেবে সম্ভাব্য যে বিড়ম্বনার আশঙ্কা করেছিলাম, আমাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে সেই আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হলো! পাসপোর্ট আর পূরণ করা ফরম পরীক্ষা করতে করতে আমার নামটা ছাড়া ভিসা অফিসার আর তেমন কিছুই জানতে চাইলেন না, এমনকি দেশের নামও না! মোটা গলায় থ্যাংক্যু বলতে বলতে পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে দিলেন, সেখানে দেশের নামের পাশে কী লিখলেন শুধু তিনিই বলতে পারবেন! আজও মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করি, আমি বুঝি না!
ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে, লাগেজ সংগ্রহ করে বাইরে আসার সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট তাঁর কারিশমা ঠিকই দেখাল! সবুজ চিহ্নিত শুল্ক এলাকা দিয়ে বের হওয়ার সময় অন্যসব যাত্রীদের পাসপোর্ট অন্যমনষ্কভাবে একবার দেখেই ফেরত দিচ্ছিলেন দুইজন মহিলা কর্মকর্তা। আমার পাসপোর্টে বাংলাদেশ লেখা দেখেই কি-না একটু সতর্ক হয়ে গেলেন! থাকতে আসিনি, একটা সভায় যোগ দিতে এসেছি শুনে প্রথমে মনে হলো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁদের একজন। ছোট ছোট বেশ কিছু প্রশ্ন করতে করতে পাসপোর্ট দেখতে লাগলেন। এই সময় আমার গায়ের রংটা আরেকবার বেশ কাজে দিলো বলেই আন্দাজ করলাম! হাসতে হাসতেই একজন বললেন, তোমার দেশের সবাই কি তোমার মতো এমন উজ্জ্বল তামাটে রংয়ের? এটা খোঁচা নাকি প্রশংসা প্রথমদিকে চট করে ঠিক ধরতে পারিনি, নারী কর্মকর্তার ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখে নিশ্চিত হয়ে গায়ের রং নিয়ে গর্ব করার বিরল সুযোগ পেয়ে গেলাম! যথাসম্ভব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে আমি বললাম, আমাদের বাংলাদেশে সাদার কাছাকাছি মানুষ আছে যেমন, তেমনি তোমাদের মতো এমন কালোর কাছাকাছি রংয়ের মানুষও আছে, কিন্তু আমার মতো রংয়ের মানুষ আসলে তেমন একটা পাওয়া যায় না! আর এই রংয়ের মানুষের মন কিন্তু খুব ভালো হয়, তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে যেতে দিতে পারো। শিওর শিওর বলে হ্যান্ডশেক করতে করতে লজ্জায় আরও সুন্দর কলো হয়ে যাওয়া মুখে আমাকে বিদায় জানাতে একেবারে শেষ দরোজা পর্যন্ত এলেন সিরেমানা নামের কালো সুন্দরী সেই শুল্ক কর্মকর্তা। অন্যজনও দূর থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানালেন দূর থেকে!
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে দারুণ একটা অনুভূতি হলো। রাতের অন্ধকারে ঠিক দেখতে না পারলেও, বেশ বুঝতে পারছিলাম, পাহাড়ের আশপাশ দিয়েই যাচ্ছি। ডানে-বামে পাহাড়ের গায়ে জ্বলতে থাকা বৈদ্যুতিক বাতির আলোগুলো জোনাকি পোকার মতো মনে হচ্ছিল। ড্রাইভারকে একটু থামতে বললাম, মিনিট দশেক শুধু চেয়েই থাকলাম। বাংলাদেশের কথা মনে পড়ল, গরিব দেশগুলোকে প্রকৃতি কী সুন্দর করেই না সাজিয়েদেয়! বিমানবন্দর থেকে অবশ্য যতই মূল শহরের দিকে যাচ্ছিলাম, প্রকৃতির সাজানো বাগানে মানুষের কষাঘাতের যন্ত্রণা অনুভব করছিলাম। চারদিকে ইট-কাঠ আর সিমেন্টের ছড়াছড়ি, বিশৃঙ্খলভাবে। রাস্তাঘাট, ভবন খুব একটা যে গোছানো নয় সেটা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। কোথাও কোথাও রাজধানীকে মনে হচ্ছিল আমাদের কিশোরগঞ্জ শহরের মতো!
বিমান বন্দর থেকে মূল রাজধানী শহর প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে। সম্ভবত সেদিন আকাশে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ, পথে যেতে যেতে তাই অনেক কিছুই দেখা হয়ে গেল। শহরটা একটু দেখার লোভে ড্রাইভারকে একটা দোকানের সামনে থামাতে বললাম। ডার্লিং সুপারশপ নামের একটা দোকানের সামনে থামল গাড়িটা। সুপারশপটা আসলে আমাদের পাড়ার জেনারেল স্টোরের মতোই। ঢাকার সিএনজিগুলো যেমন চারপাশ থেকে লোহার বেড়া দেওয়া, দোকানগুলোও তা-ই। প্রায় সবগুলো। এক বোতল পানি কিনলাম ১০০০ শিলিং দিয়ে! উগান্ডার স্থানীয় মূদ্রার মান খুবই কম। আগে থেকে না জেনে আসলে জিনিসপত্রের দাম দেখে এখানে হার্টফেল করতে হতো। বিমানবন্দরে ডলার ভাঙানোর পর আমার তো প্রায় মিলিয়নিয়ার হয়ে যাওয়ার অবস্থা! এখানে ১০০০ শিলিং মানে বাংলাদেশের ৩০ টাকার মতো।
তখন অনেক রাত। কয়েকটা বার, ড্যান্স বার দেখলাম খোলা। ট্যাক্সি চালকের কাছে জানতে পারলাম, এখানে ইংলিশ ফুটবল লিগ খুবই জনপ্রিয়। খেলা নিয়ে বাজি ধরার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখানে বৈধ, এবং প্রকাশ্যেই সেটা চলে। বাজিকরদের এরকম বেশ কয়েকটা দোকান দেখলাম, সামনে সাইনবোর্ডে বাজির দরও লিখে রাখা। বাংলাদেশে এরকম কোনো দোকান নেই জেনে ট্যাক্সি চালক আমাকে একটা বাজির দোকানে নিয়ে গেল। দেখলাম চরম উত্তেজনা সবার মাঝে, খেলা তখনো শুরু হয়নি। খেলা দেখা, জুয়া খেলার পাশাপাশি অন্যান্য আরও অনেক বিনোদনের ব্যবস্থাই আছে এখানে। বিভিন্ন ধরনের মদ, পানীয় পরিবেশন করছে স্বল্পবসনা কয়েকটি মেয়ে। ড্রাইভারের কাছ থেকে জানলাম, এই সব জুয়া বা বাজি খেলার দোকানগুলোতে প্রায়ই মারামারি লেগে যায়।
ভোরে ঘুম ভাঙল বকপাখির গানের শব্দে! পাশের লেকে হাজার হাজার বক। আশ্চর্য হয়ে গেলাম কালো রংয়ের বক দেখে! জীবনে কখনো কালো রংয়ের বক দেখিনি। একটা গাছে একই ডালে কালো আর সাদা বক দেখলাম খেলা করছে। সাদা-কালোর ভেদাভেদ এরা এখনো বুঝেনি হয়তো, যেমনটা মানুষ বুঝে গেছে!
সকালের নাস্তা খেতে গিয়ে আফ্রিকার মানুষদের খাদ্যাভ্যাসের ধরন বুঝতে পারলাম। পাউরুটির টুকরো, কলা, ডিম, ফলের টুকরো সব বিশাল বিশাল সাইজ। পাউরুটির এক টুকরো দিয়েই পেটের অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। পরে আরও দেখেছি, ওদের সিঙ্গারা আমাদের সাধারণ ১০টা সিঙ্গারার সমান। আর ওরা প্রতিবার খাওয়ার সময়ই কলার ভর্তা খায়, এত এত পরিমাণে।
পরের দিন গেলাম বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া লেক দেখতে। রাজধানী কামপালাকেও একটু ভালো করে দেখার সুযোগ পেলাম। পুরো রাজধানীটাই মনে হলো পাহাড়ের ওপর। কামপালা নামকরণের ইতিহাসটাও বেশ মজার। পাহাড় আর জঙ্গলের কারণে এক রাজা শিকার করা আর খেলাধুলা করার জন্য এই জায়গাটাকে বেছে নেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের হরিণ পাওয়া যেত। ব্রিটিশরা এখানে কলোনি স্থাপন করার পর এর নাম দেয় দি হিল অব ইমপালা। ইমপালা হলো একধরনের হরিণ। এই হিল অব ইমপালাকে স্থানীয় ভাষায় উচ্চারণ করা হতো আকাসোজি কেমপালা। এখানে ইংরেজি থেকে স্থানীয় ভাষায় নাকি এভাবেই রূপান্তরটা ঘটে, যেমন ‘এ মোটর কার’ এর স্থানীয় ভাষা হলো এমোটোকা! এভাবেই কেমপালা নাকি আস্তে আস্তে কামপালা হয়ে যায়। পরে ব্রিটিশরাও এই নাম ব্যবহার শুরু করে।
ভিক্টোরিয়া লেক এলাকাটা আসলেই সুন্দর। এই লেক উগান্ডার জন্য আশীর্বাদ। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই লেকের ওপর। আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এই লেকের মোট আয়তন প্রায় ১৮৪০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি কেনিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডা দিয়ে বয়ে গেছে। এই লেক সাধারণ জেলেদের একমাত্র অবলম্বন হলেও এখন তারা বেশ সংকটে আছেন। নাইল পাচ নামের একধরনের মাছের বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হয় ১৯৫০ সালের দিকে। এই জাতের মাছ অন্যান্য স্থানীয় জাতের ছোট ছোট মাছ খেয়ে ফেলে, ফলে অনেক স্থানীয় মাছই বিলুপ্তির পথে। কথা হলো স্থানীয় কয়েকজন জেলে ও তাঁদের কয়েকজন নেতার সঙ্গে। তাঁরা বিষয়গুলো নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের চোখ-মুখের ভঙ্গি বলে দিচ্ছে যে, তাঁরা ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন। বাণিজ্য যেখানে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় সেখানে কি আর কয়েকজন জেলের স্বার্থ বিবেচ্য হবে?
ভিক্টোরিয়া লেকে যাওয়া-আসার পথে উগান্ডার গ্রামের সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল। প্রায় সব গ্রামের মাটি লাল। লাল মাটির সৌন্দর্য যেমন দেখেছি, তেমনি দেখেছি আফ্রিকার সেই চেনা দারিদ্র্য। ভাঙা, জীর্ণ-শীর্ণ ঘরবাড়ি, শীর্ণকায় ছেঁড়া জামা-কাপড় পরা মানুষ। উগান্ডার জনসংখ্যার বড় একটা অংশ দরিদ্র। এদের মধ্যে আবার গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে জেলে কৃষকরাই বেশি দরিদ্র। গ্রামের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে এই পরিসংখ্যানের সত্যতা বেশ ভালোভাবেই টের পেলাম। রাজধানীর কাছাকাছি এক বাজারে গিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পুরো বাজারটাই পুরনো কাপড়-চোপড়ের দোকান, ভাঙ্গা-পুরনো নানা জিনিসপত্রে ভর্তি। খাবারের দোকানগুলো নোংরা। ঔষধের দোকানগুলোও দারুণভাবে স্বাস্থ্যহীন। ফুটপাতেই বিক্রি হচ্ছে ওয়াইন। উগান্ডার যেখানেই গিয়েছি কোক, পেপসি, সেভেন আপ, বিয়ার, ওয়াইন—কিছু না কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা হবেই। আর সংগীত? মন্ত্রীর পদমর্যাদার লোক আছেন, এমন একটা বেশ সিরিয়াস অনুষ্ঠানেও কোনো একজনের বক্তব্য শেষ হতেই উপস্থাপক চিত্কার করে বলছেন, মিউজিক! আর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় উদ্দাম ডিসকো মিউজিক!
একদিন রাজধানীটা ঘুরিয়ে দেখানো হলো আমাদের। রাজধানী ঘুরে দেখার সময়ই একটা ইংরেজি পত্রিকায় বাংলাদেশের নাম দেখে চমকে গেলাম! বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি লিজ দেওয়ার কথা ছিল উগান্ডার। বাংলাদেশি কোম্পানি সেখানে কৃষি কাজ করবে। এরই বিরোধিতা করছিল স্থানীয় কৃষকরা। সংবাদটি ছিল তার ওপরই। দেশটার মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক। রাজধানী দেখলে সেটা বোঝা যায়। কয়েকটি সরকারি প্রাসাদ ছাড়া সব জায়গায় দারিদ্র্য। প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরেও এর সেরকম উন্নত না হওয়ার বিষয়টা বেশ ভাববার। পর্যটকদের জন্য উগান্ডা হতে পারে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। নানা কারণে সেটা হয়ে উঠছে না। শুধু উগান্ডা নয়, আফ্রিকার প্রায় কোনো দেশই ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিকতার ছোবল থেকে এখনো পুরোপুরি রেহাই পায়নি।
উগান্ডা ভ্রমণের সবচাইতে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা কিন্তু ইদি আমিনের বাড়ি, বা প্রাসাদ দেখা নয়। সবচাইতে রোমাঞ্চকর ছিল কয়েকটা পাহাড়ি গরিলার সঙ্গে সাক্ষাত্! মাত্র কয়েক ফুট দূর থেকে! আমরা গিয়েছিলাম বিউইন্ডি ইমপেনট্রেবেল ন্যাশনাল পার্ক নামের এক জঙ্গলে। কামপালা থেকে প্রায় সারাদিন লেগে যায় সেখানে পৌঁছাতে। খুব সকালে রওনা দিয়ে রাতে গিয়ে সেই জঙ্গলে তাঁবুতে থাকার পরিকল্পনায় কীভাবে যেন আমিও রাজি হয়ে গেলাম। পার্ক বা জঙ্গলের নামটাই কিন্তু ভয় জাগিয়ে দেয়। এই পার্কের নামই মপেনট্রেবেল, মানে যার ভিতর দিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব! ঘন বাঁশঝাড়ের কারণে এই জঙ্গলে চলাচল করা খুব কঠিন, এই জন্যই নাকি এর এরকম নাম। সেই ভয়ংকর পার্কেই কিনা রাত্রিযাপন করতে হবে, তাও আবার তাঁবুতে! সঙ্গে থাকা দক্ষিণ আমেরিকান লোকজন তো দারুণ হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত। ছবি তুলছিল নানা ভঙ্গিমায়, কীভাবে যেন আমার ক্যামেরার চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় ছবিই তুলতে পারলাম না অসাধারণ ওই মুহূর্তগুলোর! আমি তাদের সঙ্গে আনন্দে যোগ দিচ্ছি, আবার ভয়েও আছি। রাতের বেলায় মনে হলো তাঁবুর একেবারে পাশেই গরিলা ডাকছে!
পরের দিন বেশ অনেকটা পথ হেঁটে জঙ্গলের আরও ভিতরে গিয়েছি গরিলা দর্শনের আশায়। পাথুরে পাহাড় আর ঝোপ-ঝাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ঘণ্টা দুই পরে হঠাত্ চোখে পড়ল এক বিশাল গরিলা। ওরে বাবা! পাহাড়ি গরিলা দেখতে আসলেই পাহাড়ের মতো! এরা নাকি পুরো পৃথিবীতে সংখ্যায় মাত্র ৪০০-এর মতো হবে। গরিলা দেখে আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না নিজের চোখকে! সম্বিত্ ফিরে পেলাম সহযাত্রী একজনের ধাক্কায়। সামনে থাকা গরিলাটা মনে হলো বেশ বুঝতে পারে তার কদর। তাকে দেখতে যে এখানে অনেকে আসে, সে খবর সে মনে হয় সে ভালোই রাখে। তার চালচলনে আমি স্পষ্ট এক ধরনের গরিমা দেখেছি!
আমি গরিলার দল দেখতে চেয়েছিলাম। একটা মাত্র দেখে মন ঠিক ভরছিল না। সঙ্গে থাকা গাইড আশ্বস্ত করল, এটাই এখানকার নেতা। নেতা সব সময় কিছু বাচ্চা গরিলার আশপাশে থাকে। তার মানে আশপাশে আরও কিছু গরিলা আছে অবশ্যই। গাইডের কথা প্রমাণিত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। মিনিট বিশেক চুপচাপ বসে থাকতেই দেখা মিলল আরও কয়েকটা বাচ্চা গরিলার! সিনেমায়, টিভিতে কত দেখেছি এই বিশালদেহী গরিলা, অথচ আজ জলজ্যান্ত কয়েকটা গরিলা আমার চোখের সামনে! অবিশ্বাস্য! নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আগেই সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল গরিলাদের সঙ্গে খুব বেশি খাতির না জমাতে, আর কখনো যদি চোখে চোখ পড়ে যায়, তাহলে মুচকি হাসি দিতে! এই গরিলারা নাকি গুমড়ো মুখ একদম পছন্দ করে না! ভাগ্য ভালো কোনো গরিলার চোখে আমার চোখ পড়েনি, কলজে শুকিয়ে যাওয়া অবস্থায় কি আর মুখে হাসি ফোটানো যায়!?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ ভোর ৫:২০

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: অপূর্ব উপস্থাপনা;
অতি অবশ্যই প্রিয়তে
চমৎকার প্রাঞ্জল লেখনীর পোষ্টটি উপহার দেওয়ার জন্যে লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ট্যুর নিশ্চয়ই শেষ হয়নি অতটুকুনে, পুরোটাই শেয়ার করবেন প্রত্যাশা করছি................

২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৬

মুনিরেভ সুপ্রকাশ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: জানলাম
ভাল লাগল

৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম পোষ্টে প্রচুর ছবি না থাকলে ভালো লাগে না।

২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২০

মুনিরেভ সুপ্রকাশ বলেছেন: ঠিক। উগান্ডার প্রায় সব ছবি আমি হারিয়ে ফেলেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.