নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,

নাহিদ২৯

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখ...।

নাহিদ২৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব-৬

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০





মুল লেখকঃ কমান্ডার হাসান জামান খান



গ্রামের ঐ বাড়ী থেকে বের হয়ে ফিরছিলাম আর একটা বিষয়ে ভেবে খুব অবাক ছিলাম, বিষয়টা হলো এদেশের পুরুষের কোলে কিংবা পিঠে কোন শিশু সন্তানকে দেখতে পাচ্ছি না। শুধুমাত্র মহিলাদের পিঠেই শিশু। সারাক্ষন সন্তানকে পিঠে নিয়ে নিজ কাজে বাস্ত। হাটবাজারে সবজায়গাতেই মহিলারা কাজ করছে। সারাটা দিন পুরুষ গুলো করে কি ? এ দৃশ্যটা বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাতেও দেখা যায়। পথিমধ্যে গ্রামের এক বাজারের সামনে থামলাম । নানা ধরনের শাঁকসবজির পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে আম, পেপে, কলা , আনারস ইত্যাদি । দাম জিজ্ঞেস করলাম । খুবই কম দাম। ৬ টা বড় সাইজের পাকা আম ওজন করলে হয়তো ৫ কেজি হবে, মাত্র ৫০০ সাফা (৮০ টাকা )। আর ৬ টি পাকা পেপে ৪০০ সাফা ( ৭০ টাকা)।

এদেশের ফল যে খুবই মিষ্টি তা আমি জানি । সবচেয়ে বড় কথা হলো ফলে কোন ভেজাল নেই। কিছু ফল কিনে আবার পথ চলা। কিছুদুর এগুতেই দেখি এক মহিলা পাকা কলা ডুবন্ত তেলে ভাজি করছে। স্বাদ নেয়ার জন্য অল্প কিনে নিলাম। বাহ দারুনতো । মজার অভিজ্ঞতা। টহল শেষে বিকেল ৪ টার দিকে বাসায় এসে পৌঁছলাম। আমাকে দেখেই ফাতু টেবিলে খাবার দিলো। খেতে বসে তো একেবারে হতবাক ! এ কি, দুপুরের জন্য আমি বলেছিলাম মাছ , ভাত আর সবজী ভাজি আর সে কিনা রান্না করেছে ন্যুডলস আর ডুবা তেলে মাছ ভাজি। কি অবস্থা ! সকালে ফাতু যে কি বুঝেছে তা এখন বুঝতে পারলাম । মনের রাগে কোনরকম ঐগুলো দিয়েই পেট ঠাণ্ডা করে নিলাম। রাতে ওর উপর আর ভরসা না করে নিজেই রান্না ঘরের নিয়ন্ত্রণ নিলাম। তবে কিভাবে, কি যে রান্না করবো তা ভেবেই হতাশ। রান্নার উপর পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। প্রথমেই পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখের পানিতে নিজের গাল ভেসে গেলো। ঐ মুহূর্তে আমাকে দেখলে অনেকেই হয়তো ভাবতো বিদেশের মাটিতে তো তাই এত কান্না। চোখের সে কি জ্বালাপোড়া । বিলাসী মেনুর ভাবনা বাদ দিয়ে ডাল চালের খিচুড়ি চড়িয়ে দিলাম । দিলাম তো ঠিকই, কিন্তু খাবো কি দিয়ে। ঐ মুহূর্তে বাসায় ডিম থাকলে কি এত ভাবনার প্রয়োজন হতো ? ডিম হয়তো পরে কিনা যাবে কিন্তু এখন কি উপায় ? এ শহরে সন্ধা ৬ টা হতে না হতেই সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও রাতে বাহিরে ঘোরাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আছে। কারণ নিরাপত্তা। তবে আবিদজান থেকে টীম সাইটে আসার সময় কিছু টিনের মাছ কিনেছিলাম। কিন্তু রান্না করবো কি ভাবে? তা তো জানা নেই। মহা ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা। জিজ্ঞেস করবো এমন যে কেহই আশেপাশের চৌহুদ্দির মধ্যে নেই। আমি ছাড়া সারা করহুগু এমনকি ফেরকে জুড়েও আর কোন বাংলাদেশী নেই। হাড়ে হাড়ে উপলব্দি করতে লাগলাম, রান্না, এ যে মহা সাজা। মিশনে নিজের রান্না নিজেরই করতে হয়। তাই কিছু একটা তো করা চাই। কোন উপায় অন্ত না দেখে আলু চাপিয়ে দিলাম কয়লার চুলাতে, ভর্তা করবো সেই আশায় । সে আবার আরেক ঝামেলা। পেঁয়াজ কাটার সময়ের চোখের পানি না শুকাতেই আবার চুলার ধোঁয়া। সব মিলে একদম বিরক্ত লাগছিলো। ধুত, রাতে না খেলেই তো হতো। ডায়েটিংও হতো আর রান্নার ঝামেলাও থাকতো না। আবার ভাবলাম রান্নার যুদ্ধে যখন নেমেছিই তখন এত তাড়াতাড়ি হার মানা? না তা হবে না। নিজের রান্না নিজেই তো খাবো। এতো চিন্তার কি আছে ? মন্তব্য তো “চমৎকার” হবেই। এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম আর কখন খিচুড়ি হবে সে আশায় অপেক্ষা। যাই হোক এক পর্যায় খিচুড়ি নামিয়ে দেখি, হ্যাঁ খিচুড়িই হয়েছে বটে। চেয়েছিলাম ঝুরা আর এ কি হলো? সব গলে একাকার। পানি যতটুকু দেয়ার প্রয়োজন ছিল তাঁর চেয়ে বোধহয় বেশী হয়েছে। সব দেখে মনে হল দুপুরের ঐ নুডুলসই ভালো ছিল। জীবনে অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি কিন্তু রান্নার উপর যে প্রশিক্ষণ একান্ত জরুরি তা বুঝতে একটু দেরী হয়ে গেলো। কি আর করার, যখন খেতে বসলাম ঠিক তখনই টোগোর অফিসার এসে হাজির। টেবিলে খাবার দেখে জিজ্ঞেস করলো, ছে কি তু মজে ? (তুমি কি খাচ্ছ?) জবাবে বললাম “পটেটো স্মাশ উইথ ডাল ফ্রাইড রাইস”। এ কথা শুনে তাঁর মন্তব্য ছিল “এক্সসেলেন্তো” (চমৎকার), বন আপিতে (উপভোগ করুন )। উপভোগ ! কি যে উপভোগ করছি তা আমি ছাড়া আর কে জানে? যাই হোক, আমার সাথে খাবার জন্য ওকে আমন্ত্রন জানালাম । তবে সে খেয়ে এসেছিল বলে আর বসলো না। আমি যখন রাতের খাবার খাচ্ছি তখন বাংলাদেশে সময় ভোর ৪ টা। আরেকটু পরেই তো আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে কথা বলা যাবে। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে অন্ততঃ যোগাযোগ বাবস্থা ভালোই আছে। অজো পাড়াগাঁয়ে বসেও ইন্টারনেটের সুবাদে স্ক্যাই পে দিয়ে অন্ততঃ বাংলাদেশে কথা বলতে পারছি। ১৯৯৩ সনে লাইবেরিয়ার মিশন থেকে বাংলাদেশে চিঠি পাঠালে এক মাস লাগতো পৌছতে আর জবাব পেতে আর এক মাস। সে তুলনায় ২০১২ সালের কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টা ঠিক তখনই কল করলাম। সাতসকালে আমার ফোন পেয়ে তো আমার অর্ধাঙ্গিনী চমকে গেলো। কি ব্যাপার এত সকালে ফোন ! না তেমন কিছু না । রান্নার উপর তোমার কিছু উপদেশ দরকার। এত সকালে কেন? কোন সমস্যা? না, মানে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না । কি দিয়ে যে কি করবো? সবশেষে কিছু উপদেশ পেয়ে তো মনে হচ্ছিল এবার তো রান্নার উপর ডিগ্রী হয়েছে, ইনশাল্লাহ আর কোনো সমস্যা হবে না।



চলবে............

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.