নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,

নাহিদ২৯

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখ...।

নাহিদ২৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব -৪

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩



মুল লেখকঃ কমান্ডার হাসান জামান খান



আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব -৩

রাত ৮ টা । ৫৫০ কিলোমিটার পথ আতিক্রম করে করহগু শহরে পৌঁছলাম। করহগু বাংলাদেশের একটা উপজেলা শহরের মতই । পাহাড় ঘেঁষে লাল মাটির রাস্তা আর টিনের ছাউনি দেয়া ছোটো ছোটো বাড়ীঘড়। যুদ্ধ বিধস্থ বাড়ীগুলো যেন নীরব সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফেরকে আরও ৫০ কিলো মিটার দূরে। তবে অতদুর আর যেতে হবে না। কারণ ফেরকে টীম করহগুতেই অবস্থান করছিলো। দীর্ঘ ভ্রমন শেষে ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। ভিনদেশী সঙ্গী অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম রাতে থাকার কি বাবস্থা? হোটেলে নিয়ে বলল আজ রাত এখানেই কাটান । হোটেল বটে, অবস্থা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। খাবার নেই, পানি নেই, এ কি অবস্থা ! কোথায় এসে পড়লামরে বাবা। এটাই নাকি করহগু শহরের শ্রেষ্ঠ হোটেল। কি আর করার, না খেয়েই ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমনি সময় দরজায় আওয়াজ। ঠক ঠক, ঠক ঠক। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম, খুলে দেখি উরুগুয়ের অফিসার কিছু খাবার আর এক বোতল মিনারেল পানি নিয়ে হাজির। আমাকে দিয়ে বলল, এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল দেখা হবে । শুভ রাত্রি বলে চলে গেলেন। তখন ক্ষুধায় আমার পেট চু চু করছিলো বলে আর দেরী না করে খাবারের পর্ব সেরে নিলাম। পেটে ক্ষুধা থাকলে যে সবই অমৃত তা আফ্রিকার খাবার খেয়ে বুঝতে পারলাম। আচেনা জায়গা আর অচেনা মানুষ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ঝি ঝি পোকার ডাক। আশেপাশে মানুষের কোন সাড়াশব্দ নেই। ঐদিন আকাশে মেঘ জমেছিল বলে কিছুক্ষন পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল । শুনেছি, ম্যালেরিয়ার জন্য এ দেশের একটা মশার কামড়ই নাকি যথেষ্ট। তাই অলসতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে মশা প্রতিরোধক ঔষধ খেয়ে সাড়া শরীরে Anti Mosquito Spray ছিটিয়ে নিলাম। রুমের ভিতরে একেবারে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভাবছিলাম এভাবে যে কতদিন কাটাতে হবে? কিছুক্ষন পর আশেপাশের অবস্থার সাথে নিজেকে পরিচিত করার জন্য হোটেলের প্রধান ফটকের দিকে এক পা, দু পা করে আগাচ্ছিলাম। একটু এগুতেই কিছু লোকের খুশগল্পের আওয়াজ শুনতে পেলাম। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল বলে তাঁদের খুজে পেতে আর দেরী হয় নি। সংখ্যায় তিন জন, কয়লার আগুনে ছোট একটা পাত্র বসিয়ে চা বানাচ্ছে আর সামনে প্লেট ভর্তি উলি পোকা ভাজি। তিনজনই খুব মজা করে খাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছিল ঝালমুড়ি খাচ্ছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ভুজামে লা তে ? ( অর্থাৎ আপনি কি চা পছন্দ করেন ?) জবাব দিলাম, ন মেরছি, মনামি। ( না ধন্যবাদ, বন্ধু )। আমার কথা শুনে ওরা বুঝতে পারলো আমি বিদেশী। কথা আর না বাড়িয়ে কোনরকমে বিদায় নিলাম। রুমে ফিরে ঘুমের সাথে লড়াই করতে করতেই টেবিল ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে উঠলো। নিজেকে প্রস্তুত করে অফিসে হাজির হলাম সকাল ৮ টায় তারপর অফিস থেকে বাসস্থানের খোঁজে বের হয়ে পড়লাম । টোগো সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাপ্টেন জেকপা খুব আগ্রহ নিয়ে আমার সঙ্গী হলো । পরিবার পরিজন ছেড়ে সেই এশিয়া থেকে আফ্রিকার মাটিতে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি তাই সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। সে বলল “আমি আফ্রিকান, আফ্রিকার মাটিতে আপনি আমার অতিথি, আপনার দেখাশুনা করার দায়িত্ব আমার” । চমৎকার তাঁর কথা, তাঁর ব্যবহার। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। টোগোর ঐ অফিসার ফ্রাঙ্কফন (ফরাসী ভাষায় পারদর্শী) ছিল বলে অতি সহজেই চমৎকার একটা বাড়ী খুঁজে গেলাম। জনাব মোহাম্মাদ মুসা বাড়ীর মালিক । টিনের চাল দেয়া ছোট একটা বাড়ী। চারদিকে দেয়াল ঘেরা । মাটির রাস্তায় পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় পৌছতে হয়। কাছেই মসজিদ। যা হোক, দায়িত্ব পালনের স্বার্থে আইভরি কোস্টে এক বছর থাকতে হবে তাই পরবর্তী দিনগুলোর জন্য নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.