নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ...একটু লিখতে ভালোবাসি...এই যা...ব্লগে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক...তবে সা হো স এটাই আমার পুরো নামের সংক্ষেপ। \n\nসবার ব্লগিং হোক সুন্দর ও আনন্দময়।

গুরুর শিষ্য

একজন অতি সাধারণ মানুষ

গুরুর শিষ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাকাউ (রংপুরিয়া গল্প)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোট ভাইটার দাঁতের বিষ। সারারাইত নিন্দির দেয় নাই। মাও-বাফো করি চেঁছাইছে আর কান্দিছে। মনের দুঃখ মনত থিয়া শুতিছিনু।

সকালে উঠিয়া অর বিষ কেনে বেলা আরো বাড়ি গেইল। মেজাজটা কি যে খারাপ হইল কওয়া যাবে না। ঠ্যাংগের রক্ত মাথাত চড়িল। পারাস করি দিনু এক চড়।

চড় খেয়া কেনেবেলা অর কান্দন থামি গেইল। মোক কইল, ভাইয়া জগত করি এক জগ পানি দেতো। দাঁতটা উকরি গেইছে, আর বিষায়ছে না। মুই তাড়াতাড়ি পানি আনি দিনু।

কোলা-পিঠি ভাই ওর নাম রফিকুল মোর নাম শফিকুল। অয় সেভেনত পড়ে মুই নাইনত।

যাই হউক এলা আর রফিকুলের দাঁতের বিষ নাই। মোর মনটাও খুশি হইল। সরাআইতটা নিন্দির না পেয়া মেজাজটা খারাপ ছিল, এলা আর নাই।

ধুৎ চিন্তা করির টাইম নাই গার্লস স্কুলের সামনত যাবার নাইগবে। মিষ্টির দেখা করির নাইগবে। হামার স্কুল বন্দ, ওমারটা খোলা। হামারটা মেট্টিক পরীক্ষার সেন্টার, ওমারটা নোহায়।

যা কইছু কইছু মিষ্টি যে মোর হবু মাইয়া এইটা কথা কাকো কইম না। তোমাক কইলে তোমা সবাকে কেয়া দিবেন। সেলা কম আও হইবে না এলা।

ঘর থাকি ছোট ব্যাগটা নিয়া ব্যারে গেইল শফিকুল। ব্যাগত এক কেজির মতো জলপাই। সকালে কুড়াইছে। তাবল্লায় পাকা পাকা। এইলা এলায় মিষ্টি স্কুলত বান্ধবীর ঘর ভেনে খাবে।

এংকরি দুই-তিন বছর সকালে উঠি অক কোননা কোন খাবার জিনিস নিগি দেয় শফিকুল। একদিন চিঠি লেখি, ‘আই লাভ ইউ’ কেয়া দিছে!

মিষ্টি হাসিছিলো শফিকুল তাতে বুঝি নিছে-মিষ্টি অক ভালোবাসে। অয় বুঝিবে না। অর বাপ ভানে বুঝিছে। শফিকুলও জেএসসি পাস কইচ্ছে আর মিষ্টি এইবার জেএসসি দিবে। এলকার চেংড়া-চেংড়ির ঘর মার প্যাটত থাকি ‘আই লাভ ইউ’ বুঝে! আর অয় বুঝিবে না ওমার দুইজনের প্রেম চলেছে।

আইজও অনেকটা ঘাটা মিষ্টির সাথে হাঁটি গেইল শফিকুল। মেললা আলাপ করিল। স্কুল গেইতে এলাও ১৫ মিনিট হাঁটির নাইগবে। আর ক্লাস শুরু হইতে আরো আধঘণ্টা নাগিবে।

এমন টাইমে মিষ্টি শফিকুলক কইল; শফিকুল ভাই বাঁশবাড়ি আইচ্ছে কাহো দেখিবে না।কুয়াশাও পড়েছে। মোক একটা চুমা দেও।

শফিকুল কথাটা শুনি ভয় খেয়া গেল। জলপাইর ব্যাগটা মিষ্টিক দেইল। মিষ্টি ওইটা নিজের স্কুল ব্যাগত নিয়া। ওড়না আর চাদরখান একনা অইন্যরকম করি সরে দেইল। এরপর হাতবাড়ে ডাকেয়া কইল কঠে আইসো কেনে।

ক্লাস এইটের চেংড়ির ওড়না ছাড়া, আরো ফির বাঁশবাড়িত! ঠাণ্ডার মইধ্যত শফিকুল ঘামা শুরু করিল। এরপর আর কোন কথা না কেয়া পিছন পাদ্দি ফিরি মারিল দৌড়।
ওদি ইতি ভেংচি কাটিয়া স্কুল চলি গেইল।

রাজু অনেকক্ষণ দৌড়ি একটা শাকবাড়ির কোণাত বসিল। শাকবাড়িত মূলাও আছে। একটা মূলা অখড়ে খাইতে খাইতে ভাবা শুরু করিল। মিষ্টির ঘরের ঘরত রঙিন টিভি আছে সিডি আছে। ওইলা দেখি অয় ভালো করি প্রেম শিখিছে।

আর অর নিজের বাড়িত একটা টিভিও নাই! হাটত গেইলে যাও দোকানে-টোকানে একনা ছবি দেখা হয়। আর টাকাও নাই যে, বইর হলত যেয়া একখান ছবি দেখিবে। বাজারত কিছু ‘গোপন’ গল্পের বই পোয়া যায়। তাও কিনিলে মানসি খারাপ কয়।

আসলে ছবিত নায়ক-নাইকালা যেমন করি প্রেম করে অমন প্রেম না হইলে ফির অক প্রেম কয় নাকি!

মূলাটা খাইতে খাইতে বাড়ির পাদ্দি হাঁটা দেইল শফিকুল। স্কুল বন্ধ এইজন্য বাপ-মার সাথে আলু বাড়িত আলু তুলির নাইগবে। বাড়িত যেয়া শাক-ভত্তা দিয়া চাইট্টা গরম ভাত খেয়া আলু-বাড়িত গেইল।

অর বাপ-ভাই আলু তুলা শুরু কইচ্ছে। হলান্ডের আলু বড় বড়। অয়ও যেয়া তুলির ধরিল।

অর কেনেবেলা আলুগিলা দেখি শরম লাগা শুরু করিল। সকালে মিষ্টি যা দেখাইছে ওইলা আসলে কুন আলুর যোখন অয় ঠিক একটা বুঝির পাচ্ছে না। কয়টা গোল গোল আলু ধরি টিপি টিপি দেখিল। আসলে কেমন হবে বুঝিরে পারেছে না।

দূর শালার কেনে যে ধরি দেখুনু না। তাইলে আর এলা এত ভাবির নাগিন্না হয়।মনে মনে ভাবিল, কাইল ধরিয়ায় দেখিম ওইলা কেমন।

কামত শফিকুলের মন নাই দেখিয়া অর বাপ চিকরি উঠিল, কিরে বড় বাউ কামত তোর মন নাই কেনে। বেলাটা যে গড়ি আসিবে। তাড়াতাড়ি কর কেনে।

বাপের তাও দেখি, কামত মন দেইল শফিকুল। কোন আলুর যখন মিষ্টির বুক এইলা ভাবা বন্ধ করিল। দুপুরে বাড়িত খেয়া আসিয়া আরো কামত ধরিল। বিকালে আলু তুলা শ্যাষ হইলে গাও ধোইল। ঠাণ্ডার দিন হইলে কি হবে। কাম করি গাও গরম হইছে।

এরপর মার কাছত খাতা-কলম কিনির আলে টাকা নিয়া বাজার গেইল। একটা চায়ের দোকাতন পাঁচ টাকা টিকিট কাটিয়া ছবি দেখিল।ছবিলা কেনেবেলা ন্যাকেট ন্যাকেট!ছবি দেখিয়া বাড়ি যাবার সময় ভাবিল কাইল আর মিষ্টি ডাকাইলে পালে আসিম না।

রাইতত খেয়া দেয়া নিন দেইল।আজানের ওয়াক্তে উঠিয়া ফির মিষ্টির জন্যে জলপাই কুড়ির নাইগবে!

নিন থাকি একেবাড়ে ভোরে উঠি জলপাইতলাত গেইল। ওই জলপাই তলাত দিনতে মানসি ভুতের ভয়ে যায় না। আর শফিকুল যায় ভোরে!

সকালে রাস্তাত মেলাক্ষণ ধরি খাড়েয়া থাকিল। কিন্তু মিষ্টির কোন দেখা নাই। মনে মনে ভাবেছে, আইজ আর পালাইম না।

এই সময় মিষ্টির বান্ধবী ইতি আর নার্গিসের দেখা।

কি শফিকুল ভাইয়া তুই কেনে এটে খাড়েয়া আছিস। ওমরা কইল হাসি হাসি। ওমরাও একনা জানে!

ইতি কইল, তুই কি শুনিস নাই মিষ্টির কাণ্ড?

কি হইছে ফির? ককেনে ইতি।
অয় যে কাইল অর খালাতো ভাইর সাথে ঢাকা পালে গেইছে। চেংড়াটা গার্মেন্টস বালে কাম করে। কাইল রাইতত হামার পাড়াত যে চিকরা-চিকরি। রাইতত তোর আব্বাওতো আইসছিল।

মিষ্টির জন্যে আইজ সকালে হামাক দুইজনকে বাড়ি থাকি স্কুলত আসির দিবার চায় নাই। মেলা গাইলাইছে।

ইতির কথা আর না শুনি শফিকুল জলপাইর ব্যাগটা ফ্যালে দিয়া হাঁটা দেইল।

নার্গিস হাইসতে হাইসতে ব্যাগটা তুলি নিয়া কইল, এই পাকা জলপাই মিষ্টি হামাক কত খোয়াইছে। দুইজনে হাইসতে হাইসতে স্কুলের পাদ্দি হাঁটা দেইল।

শফিকুল হাঁটি নদীর পাড়ত যেয়া মনের দুঃখে অনেক্ষণ কান্দিল। ঠাণ্ডা গরম এমন কোন দিন বাদ দেয় নাই মিষ্টিক অয় সকালে দেখির যায় নাই। আর সাথে জলপাইর মতো কিছু না কিছু অনেক কষ্ট করি নিগাইছে।

মনে মনে কইল, মুই কি তাইলে এত বছর ধরি হাকাউ অর পাছত ঘুরছুনু?

নদীর পাড়ত জ্বলজ্বলে সূর্য দেখা যায়ছে। শফিকুল মনে মনে মেলা ভাবনা ভাবি চিন্তা করিল। আর এইলা ধান্দা না করি বই পড়িম ভালো করি। এমন ওয়াদাও করিল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনাকে সম্মান জানাই!

রাতে গল্পটা পড়ব।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০০

গুরুর শিষ্য বলেছেন: ধন্যবাদ...

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: ভাল নাগিল বাহে

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০১

গুরুর শিষ্য বলেছেন: নাইগবে না কেনে...ধইন্যবাদ

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: দাঁতটা উকরি গেইছে, আর বিষায়ছে না।


দাঁতটা উখড়ে গেছে।

সতর্কতার সাথে লক্ষ করতে হবে, "বিষায়ছে" এখানে ইংলিস ing ব্যবহৃত হয়েছে।

উখড়া [ ukhaḍā ] ক্রি. উৎপাতিত করা, উপড়ানো। [< সং. উৎ + খন্, কিংবা উৎ + ঘট্]। নো বি. উৎপাটন, উন্মূলন। ক্রি. উপড়ে ফেলা। বিণ. উপড়ে ফেলা হয়েছে এমন।

আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। (মাঝে মাঝে আপনাকে বিরক্ত করব)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০২

গুরুর শিষ্য বলেছেন: এমন বিশ্লেষণ আমি জীবনেও করিনি...তবে আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি...আর আমার কোন বিরক্তি নেই...

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আর আলু খাওয়া হইল নারে! কী দুঃখ!
বালক বুঝলো না, মূলার চেয়ে আলু ভাল!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৩

গুরুর শিষ্য বলেছেন: মূলার চেয়ে আলু ভাল! B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.