নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নীল.... বেদনার অপর নাম....

নিলয় আহসান নিশো

নিরুপমা,তোমার রুপ আর তোমার কথা.... দুটোই এখন রুপকথা....

নিলয় আহসান নিশো › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাগ,জিদ,প্রেম, সংসার, অভিমান এবং ভুল সমাপ্তি.....

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৮

রাগ,জিদ,প্রেম, সংসার, অভিমান এবং ভুল সমাপ্তি....
লেখক: নিলয় আহসান নিশো
..
...
(১)
..
...
সন্ধ্যা ৭টা....
নিলয় অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেছে। অফিস থেকে এসেই ওয়াসরুমে ঢুকার আগেই বলবে আমাকে কড়া করে একটা কফি দাও, মাথা ধরে আছে। আমি কফি নিয়ে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।কারন সে ফ্রেশ হতে গিয়ে গোসল করতে শুরু করে দেয় কোন দিন।
আর আমি যখন তাকে ঠান্ডা কফি টা দিবো ঠিক তখনি শুরু হয়ে নিলয়ের সেই চিরচেনা অচেনা রুপের প্রকাশ।
অত্যন্ত বাজে ভাবে রাগ দেখাতে শুরু করে দিবে।এটা এখন মোটামুটি প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।
.
দরজায় নক হল...
আমি সাথে সাথে খুলে দিলাম। দেখি নিলয় বেশ বিদ্ধস্থ হয়ে আছে।
আমি ল্যাপটপ এর ব্যাগ টা হাতে নিয়েই বললাম যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমার কফি দিচ্ছি। বলেই ল্যাপটপ টা ওর টেবিলে রেখে কফি বানাতে গেলাম। এসে দেখি নিলয় রাগে গজগজ করছে।
কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারলাম না।আমি কফি টা নিলয়ের টেবিলে রেখে নিলয়ের কাছে গিয়ে ওর মাথা টা বুকে চেপে ধরে বললাম
বাবুনি কিছু হয়েছে?
আমাকে বলো...
নিলয় কিছু না চুপচাপ শাওয়ার নিতে গেল।
বেশ সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে এসে বললো চাকরিতে রিজাইন দিয়ে এসেছি।
.
আমি তখন কিছু না বলে চুপচাপ থাকলাম।
তারপর রাতের খাওয়া শেষ করে নিলয় রুমে গেল আর আমি সব কিছু গুছিয়ে রেখে নিলয়ের পাশে এসে শুইলাম। তারপর নিলয় কে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
হঠাত এত ভাল একটা জব ছেড়ে দিলে যে,
নিলয় খানিকটা সময় নিয়ে তারপর বললো
আজকে আমাদের একটা বড় কোম্পানির সাথে ডিল হবার কথা ছিল আর সেটা আমার প্রেজেন্টেশন ছিল।আমি সব কিছুই ঠিক ঠাক ভাবে শেষ করেছি।হঠাত কোন কারন দর্শানো ছাড়াই ওই কোম্পানি এর লোকজন ডিল টা পিছিয়ে দেয় এবং কিছুদিন সময় চায়।
এখন এমডি এটার জন্য আমাকে দোষ দিচ্ছে যা না তাই কথা শুনাচ্ছে। সেটা আমার সহ্য হয়নি। তাই তার মুখের উপর রিজাইন লেটার ছুড়ে দিয়ে এসেছি।
পরে অনেক বার ফোন করেছে এমডি।এপোলোজি টেক্সট ও পাঠিয়েছে।কিন্তু আমি আর ওই কোম্পানি তে জব টা করবো না।
.
নিলয় একটু ভেবে দেখো।এরকম একটা জব তুমি শুধু মাত্র তোমার বদমেজাজি স্বভাব আর রাগের জন্য ছেড়ে দিবে?
তোমার অফিসের বসের এত বড় লস হয়েছে।তাই সে একটু মাথা গরম করে কিছু একটা হয়তো বলেই ফেলেছে।তার জন্য সে তোমাকে সরি ও বলেছে।আমি মনে করি তুমি ভুল করছো।
নিলয় এবার নিজের আসল রুপে ফিরে এলো।
প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো নিরুপমা আমি চাই তুমি এই টপিক টা নিয়ে আমাকে কিছু না বলো।
সরি নিলয় আমি বলবই, তোমার এইসব ফালতু রাগের জন্য আমি অনেক সাফার করেছি।তুমি তোমার রাগ টা ছাড়ো নাহলে একদিন দেখবা তোমার সব কিছুই তোমার থেকে হারিয়ে গেছে।
নিলয় তুমি তোমার ফালতু রাগের জন্য এমন সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারো না।।
এইবার নিলয় সেই কাজ টা করলো যেটা আমি আমার নিলয়ের থেকে কখনোই আশা করি নি।
.
নিলয় আমার গালে প্রচন্ড একটা থাপ্পড় দেয় আর বলে তুমি তোমার সীমার মধ্যে থাকো নিরুপমা।
তোমাকে কোন কিছুর অভাবের মধ্যে কি আমি রেখেছি?
যদি না রাখি তাহলে আমার ব্যক্তিগত জিনিসে নাক গলাবে না।
আমাকে আমার মত করে চলতে দাও।
বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে বেলকোনি তএ চেয়ারে বসে রইলো।
আর আমিও গাল চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমাই গেছি টের ই পাই নি।
.
পরের দিন ফজরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে দেখি নিলয় বেলকনিতে চেয়ারেই ঘুমিয়ে আছে।আমি তার গায়ের উপর একটা চাদর দিয়ে একটা চিরকুট টেবিলের উপর রেখে চলে আসি আমার বাবার বাড়িতে। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি এবার নিলয় কে এমন শিক্ষা দিবো যে রাগ ছাড়তে বাধ্য হবে।আমি জানতাম নিলয় আমাকে ছেড়ে কখনোই থাকতে পারবে না।আর নিলয়ের রাগ কমানোর অস্ত্র হিসেবে আমি এটাকেই ব্যবহার করবো।
..
...
চিরকুট টা এমন ছিল...
"নিলয়,
তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না দিন দিন তোমার রাগ টা কোন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।ইদানীং তুমি সব সময় রেগে ধমক দিয়ে ছাড়া কথাই বল না আমার সাথে। আর কাল রাতে তুমি আমার গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছো।নিলয় আমি তোমাকে ভালবেসে তোমার সংসার করতে চেয়েছি।কিন্তু তোমার রাগ আমাকে সেটা করতে দিল না। নিলয় আমি আর পারছি না প্রতিনিয়ত এভাবে তোমার রাগের সাথে সংসার করতে।
তুমি এমন অনেক বার করেছো আমার সাথে।আমি রাগ করে বাবার বাড়িতে গিয়েছি তুমি সরি বলে আর এমন হবে না বলে অনেক বার আমাকে ফিরিয়ে এনেছো।কিন্তু তুমি তোমার কথা রাখো নাই।
তাই তুমি এবার এমন করার চেষ্টা ও করো না আমি আর তোমার সংসারে ফিরবো না।
হ্যা ফিরতে পারি এক শর্তে,
তুমি আগে সিদ্ধান্ত নাও তোমার জীবনে কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ...
আমি নিরুপমা নাকি তোমার বদমেজাজ আর রাগ....
যদি তুমি তোমার রাগ আর বদমেজাজি স্বভাবে ছাড়তে পারো তাহলে আমার আব্বুর কাছে মুচলেকা দিয়ে আমাকে নিতে এসো আর না পারলে মাস খানেক এর মধ্যে ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে সাইন করে দিও।
আর হ্যা এবার ভুলেও আব্বুর বাসার সামনে এসে ঘুর ঘুর করে আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করো না লাভ হবে না।কারন আমি এবার রেগে নেই।আমি শান্ত মস্তিষ্কে এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি।
হয়তো অনেক নিষ্ঠুর হয়ে গেল সিদ্ধান্ত টা কিন্তু কি করবো বলো
.
"মানুষ যখন কোন কারণে কারো দ্বারা কষ্ট পায়, মনে হয় তখন থেকেই সে নিষ্ঠুর হতে শিখে | কষ্টই হলো নিষ্ঠুর হওয়ার অন্যতম কারণ "
ভাল থেকো......
সময় এক মাস.....
..
...
(২)
..
...
"এই মেয়ে,
এই পিচ্চি মেয়ে তোমার কোন কান্ডজ্ঞান নেই?
তোমার ৪:৩০এ স্টেজ এ উঠার কথা এখন বাজে ৪:৫০।তোমার জন্য মন্ত্রী ২০মিনিট ধরে বসে থাকবে?
তুমি কি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছো নাকি রাষ্ট্রপতি? (অনেক জোরে ধমক দিয়ে)
ভাইয়া, আসলে শাড়ি পড়তে পারি না আমি তাই শাড়িটা পড়তে গিয়েই লেট হয়ে গেছে।
একদম চুপ (ধমক দিয়ে) এতটুকুন একটা মেয়ে আবার মুখে মুখে তর্ক করে।শাড়ি পড়তে পারো না তো পড়তে গেছো কেন?
ভার্সিটি তে ঢং করতে আসো?? নাকি পাংখা গজায় গেছে?
আমি আমার আব্বু আম্মুর এক মাত্র মেয়ে তাই কেউ আমাকে কখনো ধমক দিয়ে কথা বলে নি।
তাই আমি এই ধমক খেয়ে কাঁদতে শুরু করে দেই...."
এই পিচ্চি মেয়ে কাঁদছো কেন? কাজল নষ্ট হয়ে যাবে তো...
যাও স্টেজ এ যাও আমি কয়েক জন কে দিয়ে গান গাইয়ে ২০মিনিট পাস করে দিছি এখন আমি তোমার নাম ঘোষনা করবো মানপত্র পাঠের জন্য রেডী হয়ে নাও সাথে মেন্টালি প্রিপারেশন ও নিয়ে নাও।
স্টেজ এ উঠে আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিও না এটা আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর মানসম্মান এর ব্যাপার....
বলেই চলে যাচ্ছিল...
হটাত পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো...
এই পিচ্চি তোমার নাম টা যেন কি???
আমি বললাম......"নিরুপমা....নিরুপমা আহসান....
..

ভার্সিটি উঠে ২টা বছর পার করে দিয়েছি কিভাবে টেরই পাই নি।
কিন্তু এই বছর ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্টানে শিক্ষামন্ত্রী আসবে তাই ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বেশ বড় করেই অনুষ্টান এর আয়োজন করে।তাতে সব শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে। আমি দেখতে শুনতে বেশ ভালই সুন্দরী এক কথায় ভার্সিটি তে সেরা ৫ সুন্দরীর একজন এবং আমার ভয়েজ ও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। তাই আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি মানপত্র পাঠের কাজ টা আমার উপর বর্তায়।
আমি বেজায় খুশি কারন নিজের আধিপত্য সবাই চায়।আর আমার পদার্থবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট এ ফার্স্ট ইয়ার টু ফাইনাল ইয়ার এর মধ্যে আমাকেই সিলেক্ট করেছে মানপত্র পাঠ এর জন্য।
..
বিকেল ৪:৩০ মিনিট এ আমার স্টেজ এ উঠে মানপত্র পাঠ করার কথা।ডিপার্টমেন্ট এর হেড ম্যাম বলেছিল শাড়ি পড়ে আসতে।
আমি আসলে শাড়ী পড়তে পারি না। পৃথিবীর সেরা ১০কঠিন কাজের মধ্যে শাড়ি পড়ে হাটা টা নিঃসন্দেহে ৪-৫নাম্বারে থাকবে।তাই শাড়ি পড়তে এবং শাড়িটা সামলে হাটতে গিয়েই আমার দেরীটা হয়েছে।
আর হ্যা...
আমাকে যিনি ধমক দিলেন তার পরিচয় টাই তো দেয়া হল না...
উনি হলেন আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর ফাইনাল ইয়ার এর নিলয় ভাইয়া।
উনি অনেক অনেক বেশি ট্যালেন্ট এবং অনেক বেশি স্ট্রিক্ট । সব থেকে বেশি বাজে হল উনার #রাগ....
তাই আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এ তার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে।
ওই যে কথায় আছে না?
"দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য "
আমাদের নিলয় ভাইয়া তাদের মধ্যেই পড়ে।
..

সে যাই হোক ভাল ভাবেই মানপত্র পাঠ টা শেষ করেছিলাম।শিক্ষক ছাত্রছাত্রী সবাই অনেক ভাল ভাল প্রশংসা ও করছিল আমার স্টেজ থেকে নামতেই।
হঠাত কোথা থেকে নিলয় ভাইয়া এসে বললেন,
খুব ভাল ছিল পারফরমেন্স টা। আর হ্যা...নীল শাড়িতে বেশ ভালই মানিয়েছে তোমাকে।শাড়ি পড়া টা ভাল করে শিখে নিও। তোমাকে শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগছে।
বলেই চলে গেলেন।
..
...
(৩)
..
...
বেশ কিছুদিন ধরে নিলয় এর পিছন পিছন ঘুরছি।আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আমি তার পিছন পিছন ঘুরছি দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে।আমিও তালে তালে আছি কখন চান্দুকে একলা পাই।
তারপর সেদিন দুপুরে গিয়ে দেখি বেচারা ল্যাব রুমে ল্যাব করছে একা একা। মোল্লা স্যার তাকে স্যারের হয়ে এই ল্যাব টা নিতে বলেছে ২য় বর্ষের।বেচারা সেটারই প্রাকটিস করে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছে।
আমি ভাবলাম এইতো সুযোগ.....
তখন আমি সোজা ল্যাবে ঢুকে গিয়ে নিলয় কে ডাকলাম,
নিলয় শুনো, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
জুনিয়র এর মুখে তার নাম শুনে নিলয় আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
..
আমি আর তার অগ্নি দৃষ্টিকে ভয় পাই না
কারন আমই এখন নিলয় কে ভালবাসি....
হ্যা আমি এই প্রচণ্ড বদরাগী ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছি।
তার সব কিছুই আমার ভাল লাগে,
তার রাগ ভাল লাগে, তার ধমক ভাল লাগে, তার কঠিন চেহারা টা দেখতে ভাল লাগে, তার কথা ভাল লাগে, তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগে। তার এলোমেলো চুল গুলো ভাল লাগে। মাঝে মাঝে যখন পাঞ্জাবী জিন্স পড়ে ক্যাম্পাসে আসে তখন মনে হয় তার কাছে গিয়ে কপালে একটু কাজল দিয়ে দেই যেন মেয়েরা নজর দিতে না পারে....
এক কথায় আমি পাগল হয়ে গেছি নিলয়ের জন্য।
..
নিলয় আমাকে জোরে একটা ধমক দিল,
এই পিচ্চি, আমি তোমার সিনিয়র না? আমার নাম ধরে ডাকো কোন সাহসে?
এই শুনো, তুমি আমার সিনিয়র সেটা আমিও জানি আর শুনো আমি তোমাকে ভালবাসি। দুই বছর ভার্সিটি লাইফে অনেক প্রেমের প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করার রেকর্ড আমার ঝুলিতে আছে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি নিলয়।
.
আমার বান্ধবীর কে যখনি বলেছি আমি নিলয়ের প্রেমে পড়েছি...
তখনি সবার এক কথা প্লিজ দোস্ত নিজের জীবন টা নষ্ট করিস না।নিলয় ভাল ছাত্র হতে পারে কিন্তু ভাল মানুষ না।নিলয়ের রাগের কথা তো সবাই জানে ক্যাম্পাসের আর নিলয় রেগে গেলে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায়।পাব্লিক প্লেস আর প্রাইভেট প্লেস না বুঝেই সিনক্রিয়েট করে।
নিলয় কখনোই তোর মত সফট মাইন্ডের ঠান্ডা স্বভাবের মেয়ের সাথে মানিয়ে নিবে না।তোর জীবন টা নরক বানিয়ে দিবে ওর রাগ আর দুঃব্যবহার দিয়ে। প্লিজ নিরুপমা দোস্ত তুই নিলয় কে এই কথা বলিস না। তোর আগেও অনেক মেয়ে নিলয় কে প্রোপোজাল দিয়ে নিলয়ের কাছে অপমানিত হয়েছে।
আমি শুধু তাদের এটাই বলেছি,
নিলয়ের কাছে অপমানিত হতেও ভাল লাগে।
.
তারপর নিলয় যেটা করলো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।নিলয় আমার গালে চটাস করে একটা কষে থাপ্পড় মেরে বললো পিচ্চি মেয়ে কাজের সময় এই সব ফালতু কথা শোনার সময় আমার নাই।
আর তোমার মত অনেক মেয়েই আমাকে ভালবাসে। তুমিও তাদের মতই সাধারন একটা মেয়ে।এসব বাদ দিয়ে গিয়ে স্টাডি করো।যাও কাল ল্যাবে প্রাক্টিকাল আছে তোমাদের।
আর জীবনের যেন তোমার প্রেমের বাক্সো আমার সামনে না খুলো।
.
নিলয়ের প্রত্যাখ্যান টা আমি মেনে নিতে পারি নি।আমার মাথায় জিদ চেপে যায়।যেভাবেই হোক নিলয়কে আমার চাই।আমি আমার মা বাবার এক মাত্র মেয়ে আমি যখন যা চেয়েছি তখন তাই পেয়েছি।
সো, নিলয়কে যখন একবার ভালবাসি বলেছি তখন নিলয়কে আমার লাগবেই।আর আমাকে থাপ্পড় মারার শাস্তি টাও তাকে পেতে হবে সারাজীবন এর জন্য আমার স্বামী হয়ে থেকে।
.
বাসায় গিয়ে আমি একটা সুইসাইড নোট লিখে কয়েক ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে নেই আর ২-৩পাতা ট্যাবলেট খুলে ফেলে দিয়ে পাতা গুলো আমার রুমে ফেলে রাখি যাতে সবাই বুঝে আমি সব খুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছি।
সুইসাইড নোত ছিল,
.
"আমি আমার জীবনের চেয়েও নিলয় কে অনেক বেশি ভালবাসি,
সেই নিলয় যখন আমাকে প্রত্যাখ্যান করলো তখন এই জীবন রেখে কি লাভ, যদি বাঁচতে হয় তাহলে আমার নিলয়কে লাগবে"
নিরুপমা....
.
আম্মু আব্বু আমাকে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে যায়।
..
...
(৪)
..
...
পরের দিন ল্যাব ক্লাসে আমি অনুপস্থিত থাকায় নিলয় আমার কথা জিজ্ঞেস করতেই আমার বান্ধবীরা আমার শিখিয়ে দেয়া সব কথা বলে নিলয় কে এটা মানতে বাধ্য করে যে নিলয় যদি এই মুহুর্তে হাসপাতালে গিয়ে আমাকে
" ভালবাসি নিরুপমা"
না বলে তাহলে আমি মরে যাবো। এবং আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে নিলয়।
শেষ মেষ বেঁচারা নিলয় বাধ্য হয়ে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া নিয়ে হাসপাতালে দেখতে আসে।
আর আমার আম্মু যখনি দেখতে পায় এই সেই নিলয় যার জন্য তার এক মাত্র মেয়ে আজ মৃত্যু পথ যাত্রী তখন নিলয়ের হাত ধরে কি কান্নাকাটি।
বাবা আমার মেয়েটাকে বাঁচাও তুমি যা চাইবে আমরা তাই দিবো আমাদের একটাই মাত্র মেয়ে বাবা।
.
আম্মু এসব যা বলে বলুক আমার সমস্যা নাই। নিলয় কে আমার চাই সেটা যেকোন মুল্যে চাই। নিরুপমাকে অপমান করে নিরুপমার প্রেম প্রত্যাখ্যান???
আমি তোমাকে আমার করেই ছাড়বো নিলয়।(মনে মনে বলছিলাম হাসপাতাল এর ICU ইউনিট এ বেড এ শুয়ে।
ডাক্তার কে বলে আম্মু নিলয় কে আমার কাছে পাঠায়।
.
নিলয়: কিরে পিচ্চি, এরকম কাজ কেউ করে?
আমি: এটা বলতে এখানে আসছেন?(আপনি করে বলছি)
নিলয়: না আসলে কিভাবে যে বলবো...
আমি:মুখ দিয়ে বলবেন, ঢং না করে বলে ফেলুন, ছেলেদের ঢং দেখলে আমার গাঁ জ্বলে।
নিলয়: আসলে সেদিন....
আমি: সেদিন কি?
নিলয়:সেদিন নবীন বরন অনুষ্ঠানে তোমাকে নীল শাড়িতে দেখেই আমার অনেক ভাল লেগেছিল তোমাকে।
আমি: কিহহহহহহহহহহহ,তাহলে আমাকে থাপ্পড় মারলেন কেন?
নিলয়: আমি আসলে সিওর হতে চাচ্ছিলাম আসলে এটা তোমার প্রেম নাকি বাচ্চা বয়সের বাচ্চামি।তুমি তো এখনো পিচ্চি মেয়ে?
.
আমি: ওই মিয়া, কি পিচ্চি পিচ্চি করিস? আমি অনার্স ২য় বর্ষের একজন ছাত্রী, ২বছর আগেই বিয়ের বয়স পার করেছি।আর ঠিক সময়ে বিয়ে দিলে ২বাচ্চার মা হয়ে যেতাম।পিচ্চি নই আমি।কিন্তু তুমি চাইলে আমাকে ভালবেসে পিচ্চি ডাকতে পারো।
নিলয়: অকে ঠিম আছে তাহলে আমি যাই...
আমি: যাও মানে? কি বলতে আসছো সেটাই তো বলো নাই..
নিলয়: ওই যে তুমি যেটা বলেছিলা ল্যাব এ...... সেটা আমিও..
আমি: কি সেটা...???
নিলয়: ওই যে ভালবাসি আমিও.....

বলেই চলে যাচ্ছিল....
আমি: এই শুনে যাও....এভাবে বললে হবে না....ভাল করে বলো।
নিলয়: ভাল করে কিভাবে?
আমি:কাছে এসে আমাকে একটা লাভলি হাগ দিয়ে আমার কানে কানে বলো.....
নিলয়: আবার রেগে গিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
আমি: আমি তোমার রাগ আর রক্ত চক্ষুকে ভয় পাই না....আমার এখনি তোমার হাগ লাগবে, দাও.....
.
তখন নিলয় একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমাকে কানে মুখ লাগিয়ে আমাকে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কথা টা বললো,

"আমি তোমাকে চাই...
হ্যা নিরুপমা তোমাকেই আমার চাই...
আমার অলীক কল্পনায় তোমাকে আমার চাই...
আমার ঘুমন্ত স্বপনে তোমাকে আমার চাই...
আমার মনের সুপ্ত বাসনায় তোমাকে আমার চাই...
নিরুপমা তুমি ছিলে আমার সবটা জূড়ে...
নিরুপমা তুমি আছো আমার পুরোটা জুড়ে...
নিরুপমা তুমি থাকবে আমার শেষ নিঃশ্বাসেও...
নিরুপমা তুমি বাস করো আমার মনের মণিকোঠায়....
ভালবাসি তোকে....
অনেক ভালবাসি....
উম্মাহ........
আমার কপালে আমার প্রথম ভালবাসার প্রথম চিহ্ন একে দেয় নিলয়।
..
...
(৫)
..
...
২বছর পর......
২বছর টানা চুটিয়ে প্রেম করি নিলয়ের সাথে। এই ২বছর ছিল অনেক
ঘটনা বহুল।নিলয় কে যত কাছে পেতাম তত বেশি চাইতাম।দিন
দিন আমি নিলয়ের মাঝে ডুবে যাচ্ছিলাম। এই দুইবছর যে সবসময় রোমান্টিক আর সুন্দর মুহুর্তে ঘেরা ছিল সেটা কিন্তু নয়।এই ২বছরে

আমাদের অনেক খারাপ সময় ও কেটেছে কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়তে পারি নি।শক্ত করে দুজন দুজনের হাত টা ধরে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

.
কখনো কখনো নিলয়ের রাগের জন্য এমন পরিস্থিতি এর সৃষ্টি হয়েছিল যে দুজনেই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পড়েছিলাম।
কখনো আমার জিদ চেপে যেতো নিলয়ের এমন পাব্লিক প্লেস এ সিনক্রিয়েট করার জন্য যে অনেক দিন ধরে কথা বলা, দেখা করা সব বন্ধ করে দিতাম। বেচারা নিলয়ের যে তখন কি অবস্থা টাই না হত।
কিন্তু নিলয় অনেক সুন্দর করে আমার রাগ ভাঙাতো।আর প্রতিবার আমার রাগ অভিমান ভাঙানো দেখে আমি আবার বার বার নতুন করে নিলয়ের প্রেমে পড়তাম।
.
সেইবার ১৫দিন এর মত দেখা করা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।বাসা থেকেই বের হইনি ১৫দিন মোবাইল বন্ধ ফেসবুকে ব্লক & হোয়াটস এপ আন ইন্সটল করে দিয়ে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। বেচারা নিলয় এত দিন থাকতে না পেরে আমার বাসার সামনে বাইক নিয়ে এসে সকাল থেকে বসে ছিল আমি খেয়াল করি নি।
হঠাত বিকেল বেলা জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখি বেচারা সারাদিনের রোদ সহ্য করে নিচে দাঁড়িয়ে আমার জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।সেইবার আমি কেঁদে ফেলেছিলাম......
.
নিলয়ের মাস্টার্স শেষ হয়ে গেলে নিলয় একটা জবে ঢুকে যায় তাই আমাদের দেখা হওয়া টা কমে যায়।নিলয় সারাক্ষন ছটফট করতো দেখা করার জন্য। সেদিন আমাদের দেখা করার কথা ছিল ক্যাম্পাসে। তখনো নিলয় আসে নি তাই আমি আমার বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আর নোট শেয়ার করছিলাম।
কোথা থেকে হুট করে ঝরের বেগে নিলয়ের আগমন হল।
কিছু বুঝে উঠার আগেই সবাইকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিল।
তারপর আমাকে সোজা করে ধরে ধমক দিতে শুরু করলো।
এই তুমি এত ছেলের মাঝে কি কর?
তোমার এখানে কি?
তোমাকে কতবার বলেছি ক্যাম্পাসে আমি নাই তাই আড্ডা দেয়া বন্ধ কর?
আমি আস্তে করে বললাম নোট শেয়ার করছিলাম আমরা।
নিলয় তখন ধমক দিয়ে বললো কিসের নোট শেয়ার?
এইসব বাচ্চা পোলাপান তোমাকে কিসের নোট দিবে?
তোমার যত নোট লাগে সব আমি দিবো।
বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেল...
.
সন্ধ্য বেলা....
নিলয় আব্বু আম্মুর সামনে বসে আছে। আমি আমার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলাম।
.
নিলয়:নিরুপমার তো অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ তাই আংকেল আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি নিরুপমা কে বিয়ে করতে চাই আর মাস্টার্স টা আমার কাছে থেকেই করবে।
.
আব্বু: বাবা তুমি তো জানো আমাদের একটাই মেয়ে।তাই নিরুপমা যদি চায় তাহলে আমাদের এখনি বিয়ে তে আপত্তি নেই।
.
নিলয়: নিরুপমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি যা বলবো বা করবো তাতে নিরুপমা আপত্তি করবে না। আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
.
আব্বু: আচ্ছা বাবা তুমি এখন যাও। আমার একটা মাত্র মেয়ে।তার বিয়েটা আমি একটু ধুমধাম করেই দিতে চাই তাই কিছুদিন সময় নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে আমি তোমাকে জানিয়ে দিবো।
..
...
মাস খানেক পরেই নিলয়ের সাথে আমার বিয়ে টা ধুমধাম করেই হয়....
শুরু হয় আমার নিলয়ের সাথে আমার স্বপ্নের সংসার।
আমার সব টুকু স্বপ্ন যেন আমার হাতে ধরা দিয়েছে।
যদিও নিলয়ের রাগ টা দিন দিন বেড়েই চলেছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তবুও নিলয়ের প্রতি আমার ভালবাসাটা গুণোত্তর ধারায় বেড়ে চলেছে।
..
...
(৬)
..
...
১৫দিন হয়ে গেল...
নিলয় প্রতিদিন একবার করে আমাকে নিতে এসেছে।কিন্তু আমার এক কথা।আমি আর নিলয়ের সংসার করবো না।নিলয়ের রাগ ছাড়তে হবে তাহলেই আমি তার সংসার করবো।
কিন্তু নিলয় এটার গ্যারান্টি আমাকে দিতে পারে নাই।তাই আমিও যাই নি।
এভাবে চলে যাচ্ছে।আসলে নিলয় আমাকে ছাড়লেও আমি নিলয়কে ছাড়তে পারবো না। নিলয়ের রাগ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই।আমাকে যত ইচ্ছা রাগ দেখাক মারুক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।আমি আমার নিলয়ের রাগের মধ্যেও ভালবাসা খুজে পাই।সমস্যা হল নিলয় তার আসে পাশে যারা থাকে তাদের সবাইকেই রাগ দেখায় নিজের মধ্যে কন্ট্রোল রাখতে পারে না।
নিলয়ের বস সেদিন তাকে যত রাগ দেখিয়েছে নিলয় তার থেকে কয়েকগুন রাগ তাকে দেখিয়ে তার মুখের উপর রিজাইন লেটার ছুড়ে দিয়ে এসেছে।তবুও তার বস তাকে সরি বলেছে & তার রিজাইন লেটার রিজেক্ট করে তাকে জবে জয়েন করতে অনুরোধ করে মেইল করেছে আমি সেই মেইল টা পড়েছি।নিলয় অনেক ব্রিলিয়ান্ট তাই তার বস তাকে হাত ছাড়া করতে চায় না।
.
কিন্তু নিলয় যখন রেগে যায় তখন নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে যেটা নিলয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমার থেকে দূরে থাকলেই নিলয় বুঝতে পারবে।আর আমালে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তার রাগ কিছু টা হুলেও কমাবে।
আর আমার তো এখানেও সমস্যা নাই নিলয় প্রতিদিন আমাকে নিতে আসে আর আমি সুন্দর করে রান্না করে তাকে খাইয়ে বিদায় করে দেই যে আমি যাবো না।এদিকে আমার নিলয়ের যত্ন ও নিতে পারছি আর প্রতিদিন দেখতেও পাচ্ছি। নিলয় আমার জন্য সব করতে পারে সেটা আমি জানি।
কিন্তু নিলয় আমাকে গ্যারান্টি দিতে পারছে তার রাগ ছাড়ার।আর আমার শুধু এটাই দরকার।
.
দেখতে দেখতে ২৫দিন হয়ে গেল....
আমি বুঝলাম এইভাবে আমার কাজ টা হবে না। আমাকে আরেকটু কঠোরতাতা দেখাতে হবে। তাই ইফতি(আমার ছোট ভাই) কে দিয়ে সুন্দর করে একটা নকল ডিভোর্স পেপার ম্যানেজ করে নিয়ে নিজের কাছে রাখলাম।
তারপর নিলয় আসলে সেদিন আমি নিলয়ের সামনে না গিয়ে ইফতি কে দিয়ে খামে ভরে নকল ডিভোর্স পেপার টা নিলয় কে দিতে বললাম। আর ইফতি কে বললাম এটা তোমার ভাইয়া কে দিয়ে বলবে আপু এটা বাসায় নিয়ে ভাল করে পড়তে বলেছে।তারপর কি করবেন সেটা ২৫শে মে এসে জানাতে বলেছে।
নিলয় সেটা নিয়ে চলে যায় ২৮তম দিনে মানে ২৩শে মে।
.
আমি জানি নিলয় ডিভোর্স পেপার টা দেখা মাত্র পাগল হয়ে যাবে।আর ছুটে আসবে আমার কাছে।মুহুর্তেই আমি যা যা বলবো সব করতে রাজি হয়ে যাবে।
এদিকে নিলয়ের জন্য আমি সারপ্রাইজ প্লান করে রেখেছি।
২৫শে মে আমার নিলয়ের জন্মদিন।আর আমি তাকে তার এবাবের জন্মদিনে তার জীবনের সেরা উপহার টা দিবো।
.
হ্যা.... আমি নিলয়ের মেয়ের মা হতে চলেছি।আমার নিলয়ের মেয়ে চাই।আর সে যখন এটা জানবে তখন পাগল টা যে কি খুশি হবে সেতা ভাবতেই আমি পাগলল হয়ে যাচ্ছি।আমার নিলয়ের মুখে সেই খুশিটা দেখার জন্য আমি প্রতিটা মুহুর্ত গুনে গুনে কাটাচ্ছি।
আজ ২৪তারিখ....
কাল সন্ধ্যে বেলা নিশ্চিত নিলয় আসবে।
আর আমি তাকে তার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ টা দিয়ে তার সাথে আমার সাজানো গুছানো ছিমছাম সংসার টাতে ফিরে যাবো।
..
...
(৭)
..
...
২৫তারিখ সন্ধ্যা ৭টা.....
আমরা সবাই আব্বু, আম্মু, ভাইয়া(ইফতি) কেক নিয়ে নিলয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।নিলয় কে সারপ্রাইজ দিবো তাই....
আমার লাগেজ গুছানোই আছে।নিলয় আসলে কেক কেটে নিলয় কে সারপ্রাইজ টা দিয়ে খেয়েই নিলয়ের সাথে আমাদের সংসারে চলে যাবো।গিয়েই কাল শপিং এ বের হতে হবে।আমার ছোট্ট নিলিমার জন্য শপিং করতে হবে।আমার রাজকন্যার ঘর সাজাতে হবে।কত কাজ বাকি।
..
...
এমন সময় সৌরভ(নিলয়ের কাজিন ভাই) এর কল আসলো আমার ফোনে।
সৌরভ : ভাবী আপনি কোথায়?
.
আমি: আমি তো আমাদের বাসায় ভাই।

সৌরভ: আপনি তাড়াতাড়ি ল্যাবএইড হাসপাতালে চলে আসেন।
আমি নিলয় ভাইয়া কে নিয়ে ওখানেই যাচ্ছি।
.
আমি: কি হয়েছে আমার নিলয়ের...??? (চিৎকার করে)
.
সৌরভ: আমি আপনাদের বাসায় এসেছিলাম ভাইয়াকে বার্থডে উইশ করতে। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি ভাইয়া পুরো ঘরে বমি করে ভাসিয়ে ফেলছে।পরে ভাইয়া কে সরিয়ে নিতেই দেখি মিনিমাম ৩০-৪০টা সিডক্সিন খেয়েছে ভাইয়া। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসেন আমার খুব ভয় করছে।ভাইয়ার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসতেছে আর এখন নড়াচড়াও কম করছে।
.
আমি: তুমি শুধু আমি যাওয়া পর্যন্ত ওকে ধরে রেখো প্লিজ ভাই।
.
সৌরভ :ওকে ভাবি.. আমি হাসপাতালে চলে আসছি ভাইয়াকে ইমারজেন্সি তে নিয়ে গেল ডাক্তার রা.....
আপনি জলদি চলে আসুন.....
..
...
গল্পটি এখানেই শেষ......
.
আচ্ছা সেদিন হাসপাতালে কি হয়েছিল???
নিলয় কি সেদিন নিরুপমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য নাটক বানিয়েছিল?
নাকি নিলয় সত্যি সত্যি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল?
নাকি নিলয় নিরুপমার মত সুইসাইড এর অভিনয় করে নিরুপমাকে ফিরে পেয়েছিল?
.
কি হয়েছিল সেদিন হাসপাতালে....
..
...
সেদিন নিরুপমা যখন হাসপাতালে পৌছায় তখন নিলয়কে ইমার্জেন্সি থেকে বের করে মাত্র বেড এ রাখা হয়েছে।
২৪ঘন্টা পার নাহলে কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে ডাক্তার রা চলে গিয়ে নার্স কে নিলয়ের পাশে রেখে যায়।
.
১১ঘন্টা পর নিলয়ের জ্ঞান ফিরে...
নিরুপমা তখনো নিলয়ের মাথার কাছে বসে।
নিরুপমাকে দেখে নিলয় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
নিলয় অস্ফুট স্বরে বলতে শুরু করে....
.
নিরুপমা,
আমার বেঁচে থাকার আশা।আমার ভালবাসার প্রতিমা।আমি তোমাকে ছাড়া এক সেকেন্ড এর জন্য ও নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারি না।
সেই আমি অনেক চেষ্টা করেও ডিভোর্স পেপার টাতে সাইন করতে পারি নাই জান।আমার কাছে ডিভোর্স মানে যে কোন একজনের মৃত্যু। মৃত্যু ছাড়া তোমাকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। কিন্তু দেখো তুমি ডিভোর্স চাইছো আমার কাছে। তুমি কিছু চাইছো আমার কাছে আর আমি কিভাবে তোমাকে খালি হাতে ফেরাই বলো?
তাই আমার কাছে ডিভোর্স মানে যেটা সেটাই করেছি।
নিরুপমা,
তোমার কি মনেনে হয়? আমি আমার রাগের জন্য অনুতপ্ত হইনা?
প্রতিনিয়ত হই... অনেক চেষ্টা করেছি মেডিটেশন করেছি রাগ কমানোর জন্য।কিন্তু কোন লাভ হয়নি।তোমাকে আমি এবারো কিছু না কিছু বুঝিয়ে নিয়ে আসতাম।কিন্তু তুমি সেদিন বললে তোমাকে ছুয়ে কসম করে কথা দিতে যে আমি রাগ ছেড়ে দিবো।আমি পারি নি নিরুপমা তোমাকে ছুয়ে মিথ্যে কসম করতে।
আর আমি বুঝতেছিলাম আমি তোমার সাথে অনেক বেশি ই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।
তাই তোমার যে কষ্ট হত সেটা আমি বুঝতাম কিন্তু কি করবো বলো আমার রাগ টা আমাকে তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ফেলেছে।
তাই তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয়না।
তাই তোমাকে মুক্তি দিতেই আজ ৪০টা সিডক্সিন খেয়েছি।
আমি বাঁঁচবোনা নিরুপমা....
আমাকে বাঁচানো সম্ভব নয় ডাক্তার দের পক্ষে....
তুমি ভাল থেকো সব সময়....
..
...
নিলয় রে তোমার রাগ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই রে পাগল আমার।আমি তো শুধু তোমাকে একটু কন্ট্রোল এ আনতে বলেছিলাম রাগ টাকে।
আর তুমি কিভাবে ভাবলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো?ওটা নকল বানানো ডিভোর্স পেপার ছিল।আর আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্যন্য অপেক্ষা করছিলাম।
নিলয় তুমি বাবা হতে যাচ্ছো আমি তোমার মেয়ের মা হতে চলেছি.....
প্লিজ নিলয় তুমি ঠিক হয়ে যাবে.. তুমি যেমন আছো তাতেই আমি অনেক সুখী তাতেই আমিমি তোমার জন্য পাগল...
আমি পাগলের মত ভালবাসি তোমাকে....
..
নিরুপমা...
আমি বাবা হতে যাচ্ছি? আমার মেয়ে হবে? নিরুপমা আমার নিলিমা আমাকে বাবাই ডাকবে?
নিরুপমা ডাক্তার কে একটু বলো না আমাকে সুস্থ করে দিতে...
আমি আমার রানী আর রাজকন্যা কে নিয়ে আমার সুখের সংসার টাকে স্বর্গের রুপ দিতে চাই..
নিরুপমা আমি তোমাকে ছুয়ে কসম করছি আমি আমার রাগ ছেড়ে দিবো।
সব ঠিক হয়ে যাবে নিলয় সব...
নিরুপমা আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নিরুপমা আমাকে একটু শক্ত করে ধরো আমি মরে যাচ্ছি।নিলয় তোমার কিচ্ছু হবে না বলেই নিরুপমা নিলয় কে বুকে জড়াই ধরে চিৎকার করে ডাক্তার কে ডাকে।
নিলয় নিরুপমার বুকেই চিরতরে শান্ত হয়ে যায়...
.
ডাক্তার এসে সবাইকে সরি বলে চলে যায়.....
নিরুপমা সেদিনের পর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে প্যারালাইজড হয়ে যায়.....
৭মাস পরে নিলয়ের ফুটফুটে নিলিমার জন্ম দেয়..
কিন্তু কি দুর্ভাগা সে নিজের মেয়েকে একটু কোলে নেবার ক্ষমতাও নিরুপমার নেই.......
..
...
...
বি:দ্র: গল্পটি বাস্তব জীবনের ছায়া অবলম্বনে লিখা...
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। হোক সেটা নিলয়ের রাগ অথবা নিরুপমার জিদ।
ভাল থাকুক সবার ভালবাসা
.
♥ সমাপ্ত♥

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: জয় হউক ভালবাসার।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

নিলয় আহসান নিশো বলেছেন: ভালোবাসি তাই ভালবেসে যাই

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪৪

পলাশবাবা বলেছেন: প্রেমের বিয়েতে সঙ্গীর নেগেটিভ দিকগুলো নিয়ে অপত্তি তোলা ঠিক না। এতে শুধি সমস্যাই বাড়ে।
তবে মজার বিষয় হল বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যার দ্রুত সমাধানে পৌছান যায়।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

নিলয় আহসান নিশো বলেছেন: প্রেম জিনিস টা তখনি মধুর হয়ে উঠে

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: পড়তে ভালো লাগছিল।
শেষ অংশে মন খারাপ হয়ে গেল।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯

নিলয় আহসান নিশো বলেছেন: সব গল্পের শেষ টা প্রাপ্তির হয় না

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: এই যুগে কোনো সৎ প্রেম ভালোবাসা নাই।
যারা প্রেম ভালোবাসা করে তাদের উদেশ্য একটাই সেক্স।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০১

নিলয় আহসান নিশো বলেছেন: এতে '' প্রেম'' এর কোন দোষ নেই। দোষ তাদের যাদের উদ্দেশ্য প্রেমের দোহাই দিয়ে এসব নোংরামী করা।প্রেম চিরকালই বিশুদ্ধ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.