নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঁচমিশালি

MD Nahidul Hasan

সবাই তো বলে নিজেকে অতি সাধারণ বলে।আমি না হয় নিজেকে অসাধারণ একজন বললাম।

MD Nahidul Hasan › বিস্তারিত পোস্টঃ

হলুদ হিমু নীল শার্ট(রম্য)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:২৮

হলুদ হিমু নীল শার্ট
লেখকঃ নাহিদুল হাসানview this link
_____________________
মেয়েটার নাম হিমু।হলুদ রঙ সে বড্ড ভালোবাসে।সবকিছুতেই তার হলুদ রঙ চাই।এমনকি তরকারিতেও সে মারাত্মক হলুদ খায়।মাঝেমধ্যে তো সে খাওয়ার পর হাতও ধোয় না।তার নাকি হাতে হলুদ রঙ দেখতে অনেক ভালো লাগে।এই রোজার ঈদে সে হাতে মেহেদী দেয় নি,হলুদ দিয়েছে, তাও আবার সেমাইয়ের উপর থেকে নিয়ে।যদিও আগে এমন করত না,মেহেদীই দিত।তবে কোরবানির ঈদে গরুর রক্ত দিত।কিন্তু ইদানীং সে অতিরিক্ত হলুদ হয়ে গিয়েছে।জসবকিছুতেই তার হলুদ চাই।এখন তো সে দাঁত ব্রাশও করে না।
রোজার ঈদ হিমুর ভালোই কাটলো।শহরে ফিরে এসেছে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল।ঈদে তারা প্রায় প্রতিদিনই রোস্ট খেয়েছে।এখন আর বনমোরগ ভালো লাগে না।নাম শুনলেই বমি চলে আসে তার।সে তার মাকে বলল যাতে আর বনমোরগ রান্না না করে।স্বাদে ভিন্নতা দরকার।তার বাবাও সমর্থন দিয়ে বলল,"সহমত ভাই।গতকাল আপনাকে স্বপ্নে দেখছি"।হিমুর মা দাঁত কড়মড় করার পর তার হুশ আসলো।সে বুঝতে পারে যে কথাটা হিমু বলেছে, তার বড় ভাই, মানেনেতা না।চেতনা পুরাপুরি ফিরে আসার পর সে(হিমুর বাবা) কথার মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করল।বলল,সব মুসলমান একে অন্যের ভাই।যেহেতু হিমু মুসলমান সেহেতু সেও আমার ভাই"।কিন্তু কাজ হল না।উল্টা ঝাড়ি খেল
হিমুর মা রান্না করছে।এইদিকে হিমুর বাবা ডেল কার্নেগীর "তেল" নামে একটা বই পড়ছে।এই বইটার খবর কেউ জানে না।প্রকাশিতই হয় নি, জানবে কি।হিমুর বাবার এক বন্ধু এনে দিয়েছে,ডার্ক ওয়েব থেকে ডাউনলোড করে।বইটা বেশ কাজের।মানুষকে তেল মারার পদ্ধতিগুলো বিজ্ঞানের আলোকে বর্ণনা করা হইছে।হিমুর বাবা মনে মনে ভাবলো, "কাল মার্ক্স সমাজতন্ত্রকে বৈজ্ঞানিক রূপ দিয়েছে, আর কার্ণেগী তেলবাদকে।"" বাহ!চমৎকার তো!" কথাটা হিমুর বাবা নিজে নিজেই বলে উঠল।সাথে সাথে সে এটি তার ফেইক একাউন্ট থেকে পোস্ট করে দিল।রিয়েল একাউন্ট থেকে দেওয়া যাবে না।কারণ ঐ নেতার সাথে তার ফেসবুকে এড আছে।পোস্ট দেখলে সব শেষ।বেটা মেয়রের বাম হাত বলে কথা।
এইসব ভাবতে ভাবতে হিমুর বাবা ঘুমিয়ে পড়লো। অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল।দেখছিল যে, সে ড্রেনের টেন্ডারটা পেয়ে গেছে।আর যেই নেতার পিছনে ঘুরত,যাকে ফ্যামিলি মেম্বারে "father" হিসাবে এড করছিল সে কোনো এক অজানা কারণে তার হাতে-পায়ে ধরে কানতাছে।যেই প্রতিশোধ হিসাবে কানে-গালে একটা মারতে যাবে, অমনি হিমু আর হিমুর মায়ের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙে গেল।
তারা দুজন ঝগড়া করছে আর একজন আরেকজনের চুল টানতাছে।হিমু বারবার চিল্লাইয়া বলতাছে,"হলুদ রঙের সামনে কোনো কিছু না।কোনোকিছুর সাথে আপোষ নয়"।পরে জানা গেল সমস্যা হইছে রান্নার বিষয়বস্তু নিয়া।হিমুর মা রান্না করতে চাইছিল গরুর মাংস আর কাঁচ কলা ।আর এই তরকারি খেলে হিমুর কষা হয়,হলুদতায় আঘাত করে।কালো তো হয়ই,মাঝেমধ্যে রক্তও বাহির হয়।হিমুর বাবাও এতে সহমত পোষণ করল।তার সমস্যা আরও বেশি।তার টয়লেটে গেলে মনে হয় পিছন দিয়া জোড়া বাচ্চা বাহির হইতাছে।স্বার্থ তার বেশি থাকলেও প্রতিবাদ বেশি করল হিমু।এদিকে হিমুর মাও ঘাড়ত্যাড়া।আগে অবশ্য ছিল না।অনেক ঝগড়াঝাটির পর অবশেষে সিদ্ধান্তে পৌছালো যে, মাংসের চর্বির ওজনে ইসুবগুল দিতে হবে।এতে হয়তো সমতা আসবে।

মোটামুটি কিছুদিন কেটে গেল এইভাবেই। কোরবানির ঈদ প্রায় এসে গেল,আর মাত্র কিছুদিন বাকি।সবার শপিং কমপ্লিট।হিমু নিল লেদারের থ্রি-পিছ,হিমুর মা লেদারের শাড়ি আর হিমুর বাবা লেদারের বেড কাভার।গত দুইবছর অবশ্য সে লেদারের রুমাল এবং গামছা নিয়েছিল।এইবার ড্রেনের টেন্ডার পাওয়ার পর থেকে সে একটু ক্লাসি হওয়ার চেষ্টা করছে।আর এই বেডকভারের একটা গোপন সুবিধাও আছে।হিমুর বাবা প্রায়ই নাকি স্বপ্নে টয়লেট দেখে।
এরই মধ্যে হিমুদের গরু কিনা শেষ হলো।গোলাপীর মধ্যে নীল।হরিণ,গরুর ব্রিডের ফল।হিমু গোলাপি রঙের কাহিনি জানতে চাইলে বেপারি আরিয়ান জলিল জানায় যে,ব্রিডিংয়ের সময় নাকি কেউ চার্লি পুথ আর ভানি কাপুরের "গুলাবি" গানটা প্লে করছিল।
ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি।হিমু অনেক কান্নাকাটি করতাছে।সে একদিন আগে কোরবানি দিতে চাইতাছে।কারণ তার রক্ত দরকার,হাতে দেওয়ার জন্য।আগেই বলা হয়েছে,সে কোরবানির ঈদে হাতে মেহেদীর পরিবর্তে রক্ত দেয়,আর রোজার ঈদে হলুদ।আগে অবশ্য সে এমন করত না।ঈদের দিনই সব রক্ত নিত।কিন্তু এইবার রোজার ঈদে সে আফরান নিশুর সবগুলা নাটক দেখছিল।এরপর থেকেই সে কেমন জানি ম্যাচিউরড আর ঘাড়ত্যাড়া টাইপের আচরণ করতে শুরু করে।তবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং আর কান্নাকাটির টেকনিকটা সে আরও আগের থেকেই জানতো।কারণ সে মেহজাবিন আর অপূর্বের নাটক অনেক আগে থেকেই দেখত।অবশেষে তার বাবা রাজি হলো। কোরবানি দিতে না,রক্ত দিতে।বলল যে,ইনজেকশন সিরিঞ্জ দিয়ে লেজ থেকে রক্ত নিয়ে হাতে দিতে।হিমু Zayn Malik এর মতো ঠোঁট বাকা করে হাসি দিয়ে চলে গেল কাছারিঘরে গরুর কাছে।
চারদিক নিরব,স্তব্ধ। হিমুর বাবা নেটফ্লিক্সে "রমজানের (সাওয়াল)ঐ ঈদের পরে এলো খুশির ঈদ" গানটা শুনছিল।হঠাৎ কাছারিঘর থেকে "হিহিহি" আওয়াজ আসলো। হিমুর বাবা বুঝতে পারলো যে, হিমু স্টার প্লাসে "Nazar" দেখতাছে।আর হাসিটা দিলরুবার।এইদিকে হিমুর মাও চলে গেল কাছারিঘরে নাটক দেখতে।কিন্তু যা দেখলো তাতে তার চোখ কপালে উঠে গেল।জোরে ডাকতে লাগলো হিমুর বাবাকে।হিমুর বাবা তো এসে প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারলো না।সে বলে উঠল,ও মা,এ তো হিমু না,জোম্বি"।হিমুর মা কারেকশন করে বলল,ভ্যাম্পায়ার,ভ্যাম্পায়ার । হিমুর বাবার মনে হচ্ছে সে নেটফ্লিক্সে কোনো হরর সিরিজ দেখতাছে।সে দেখল তাদের গোলাপি-নীল গরুটার ঘাড়ে মাথা নেই।নিস্তব্ধ চামড়াহীন দেহটা পরে রইল সোফার উপর।আর হিমু পাইপ দিয়ে রক্ত খাচ্ছে।এবার সে বুঝতে পারলো কেন হিমু এবোরসনের পর এবোরসনের বাকেটের থেকে হামাগুড়ি দিছিল।সে তৎক্ষনাৎ রাশিয়ান মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ বের করলো। বলা বাহুল্য, এটাও সে ডার্ক ওয়েব থেকে কিনছিল।সে মুহুর্তের মধ্যে বুলেট লোড করে শেষ করে দিল ভ্যাম্পায়ার হিমুকে।
এরই মাধ্যমে শেষ হলো হলুদ হিমুর ক্ষুদ্র জীবন।উল্লেখ্য, হিমু মরার আগে গরুর চামড়ার নীল অংশ দিয়ে শার্ট বানিয়ে নিয়েছিল এবং পড়েও নিয়েছিল।
হিমুর মা পুরো সময় চুপ করে ছিল।শুধু একবার বলেছিল,"হলুদ হিমু নীল শার্ট "
কে জানতো এই হলুদ প্রেমিক হিমুর জীবনের শেষ সময় কাটাবে নীল শার্ট পড়ে?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ ভালোই রম্য।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৫

MD Nahidul Hasan বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর হইছে

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০০

MD Nahidul Hasan বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.