নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

কপি পেস্ট পোস্ট X( X( X( X( X(

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৭

আর দশটা প্রসব বেদনাকে নকল করে জরায়ু গড়িয়ে বেরিয়ে এসেছিল কিংশুক। নাঁড়ি কাটার পর সদ্যজাতকে কোলে নিয়ে আবিস্কারের সুরে চেঁচিয়ে ওঠেন দাদী,‘-ওরে, এ দেহি আমার লালের লাহান।’

সেই শুরু। হামাগুড়ি থেকে থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা পর্যন্ত লালের বেবিফেস ছিল কিংশুক। রক্তাভ চামড়ার জন্য কিংশুকের পুর্বপুরুষকে সবাই লাল নামে ডাকতো। পিতৃপ্রদত্ত নাম লালন। যৌবনে বউয়ের খোঁপায় নিয়ম করে লাল জবা গুঁজে দিতেন লালন সাহেব। তাই প্রথম রক্তবীজের নাম দিয়েছিলেন কিংশুক। পা থেকে মাথা পর্যন্ত বাবার আদল পেলেও একটি জায়গায় পিতা-পুত্রের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে। চিকন বুদ্ধির জন্য গ্রামজুড়ে খ্যাতি ছিল কিংশুকের বাবার। কিংশুকে সবাই চেনে অন্যকারণে। একদিনকার কথা-‘কিংশুকের মায়ের খুব অসুখ। তাকে ছেড়ে ওঠার কায়দা নেই লালন সাহেবের। ডাক্তার ডাকতে তাই ছেলেকে পাঠালেন হাতে টাকা গুঁজে। কোমরে বাঁধা ঠুনঠুনিতে ছন্দ তুলে এক দৌড়ে ডাক্তার বাড়ি পৌঁছালো কিংশুক। কিন্তু জরুরী কাজ হেতু ডাক্তার যেতে পারবেন না। তাই এক বোতল ঔষধ দিয়ে কিংশুককে তিনি বললেন-চার চামচ করে তিনবেলা খেতে হবে। দুইদিন পর রোগির অবস্থা আমাকে জানাবে। তারপর অন্য ব্যবস্থা।

কিংশুক বোতল হাতে বাজারে যায়। গুনে গুনে ২৪ টি চামচ কিনে বাসায় ফেরে। ছেলের হাতে চামচের বহর দেখে অবাক চোখে বাবা বলেন-এত চামচ দিয়ে কি হবে ? কিংশুক ঠোট উল্টিয়ে বলে-বারে, তিনবেলার চামচ হিসেব করলে দুইদিনে তো চব্বিশটি চামচই হয়। আমি তো বেশি আনিনি ! জবাব খুঁজে পায়না তার বাবা। কিংশুকও বুঝে উঠতে পারেনা বাবার ভ্রকুটির অর্থ।

তবে একটি ব্যাপারে সবার কাছে কিংশুক রীতিমতো ওস্তাদ সমতুল্য। সেটা নকলবাজিতে। পাঁচ ক্লাসে থাকতে ফার্স্টবয় নাসিরের সঙ্গে ভারী ভাব ছিল কিংশুকের। বার্ষিক পরীক্ষায় তার পাশেই বসেছিল কিংশুক। কিন্তু একমাস পর রেজাল্ট শিটে কিংশুকের নাম খুঁজে পাওয়া গেল না। ওদিকে ভাগের কলা কিছুতেই ছাড়বেন না লালন সাহেব। মাস গেলেই স্কুলে মোটা বেতন গুনতে হয় তাকে। ছেলের ফলাফলের ওপর তার সমাজে মুখ দেখানোও নির্ভর করছে। তাই প্রধানশিক্ষককে চেপে ধরলেন লালন সাহেব। স্কুলের সমস্ত পরীক্ষার খাতা ঘাঁটা হলো, কিন্তু কোথাও কিংশুকের খাতা খুঁজে পাওয়া গেল না। শুধু নাসির উদ্দিন নামে দুটি খাতা পাওয়া গেল। শেষ পর্যন্ত হাতের লেখা দেখে লালন সাহেব নিশ্চিত হন, একটির লেখক তার ধন্যিপুত্র। হেডমাস্টার তখন ফোঁড়ন কেটে বলে বসেন-‘আপনার ছেলেতো একখান কপি-পেস্ট পোস্ট।’ তখন থেকে স্কুলে কিংশুকের আড়ালে-আবডালে সবাই তাকে ‘কপি-পেস্ট’ নামে ডাকতো।

এই খ্যাতিটা সে ত্রিকেট মাঠেও ফলায় দারুন মুন্সীয়ানায়। ডিশ অ্যান্টেনার বদৌলতে ত্রিকেটের অ,আ,ক,খ বাদ দিত না কিংশুক। দুনিয়ার তাবৎ বোলারদের বোলিং অ্যাকশন সে নকল করতো অবলীলায়। তার ছয়বলে ডোনাল্ড,ওয়াকার,ওয়ালশদের মনে পড়ে যেত সবার। এভাবেই একদিন মাঠে উপস্থিত এক উর্বশীর কাছে নিজের উইকেটটি সমর্পন করে বসে কিংশুক।

ছন্দার পটলচেরা চোখে তাকিয়ে সর্বনাশের নদী দেখতো সে। তার কুল নাই,কিনারা নাই। ঠাঁই নাই। তবুও গহন মনের গভীর জ্বালামুখ থেকে নিঃসৃত ভালবাসার সুধা ওই দুই চোখে সমর্পন করতো কিংশুক। এভাবে কেটে গেল কয়েকবছর। কিন্তু ভুলেও সে কোনদিন ছন্দার উঞ্চতার খোঁজ করেনি। আর দশটা রোমিওদের ভালবাসার ভাষা নকল করতে চায়নি কিংশুক। পাছে, প্রেয়সী তাকে সাধারন ভেবে বসে কিনা তাই। কিন্তু একদিন ঘটে গেল উল্টোটা।

কিংশুক তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া। ছন্দারর সঙ্গে তার দেখা হলো। টিএসসির ইট-কাঠ বেষ্টিত গ্রীক মহামানবের সমাধিসৌধের পাশে যুগলবন্দি হয় দুজন। আবেগের বশে তখন ছন্দাকে জীবনের প্রথম চুমুটা উপহার দেয় কিংশুক। শীতের ভোরে খেজুর রসের পেয়ালায় লম্বা চুমুক টানার মতো স্বাদ পায় তার তামাক পোড়া ঠোঁট। হাওয়ার মর্মরে ছন্দার দুরু দুরু কাঁপন লাগে ছন্দার নিরাপদ বুকে। মাথা উঁচু দেবদারুর নিচে দাঁড়িয়ে তছনছিয়া ঠোঁট ঠেলে কৌতুক করে ছন্দা বলে -‘দিন দিন তোমার দুঃসাহস বাড়ছে কিংশুক। এই নকল আপ্যায়নের অর্থ কি ?

বজ্রাহতের মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে কিংশুক। ঢাকার বাস ধরার সময় এই তকমাটি সে মাটিচাপা দিয়ে এসেছিল। কিন্তু ছন্দা ফের তা খুঁড়ে বের করলো। বাকরুদ্ধ কন্ঠে কিংশুক তাই বলে-‘বুঝলাম না।’ ছন্দার মুখে তখন বিরক্তির ঝামা ঘষা-তুমিও আর সবার মতো। এই নকল ভালবাসায় আর কতদিন ? আমার ভিন্ন কিছু চাই।’

আর কথা বাড়ায়না কিংশুক। প্রথম যৌবনের নির্ভেজাল আবেগ পুঁজি করে সে চোরাবালিতে ঝাঁপ দিয়েছিল। কিন্তু আজ সেই চোরাবালিই কিনা ঠেলে বের করে দিতে চাইছে তাকে! ছয় নম্বরে চেপে বাদুর ঝোলা হয়ে তাই সে বাসায় ফেরে। সেদিন রাতে তার নতুন করে জন্ম হয়। মনে চাপে ভিন্ন কিছু খোঁজার নেশা। হলের পাশে জারুল গাছটার বাকল পাল্টানোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিংশুকও বদলায় নিজেকে। কথায়,কাজে সবখানে নিজেকে সে বাকিদের চেয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপনের প্রানান্ত চেষ্টা করে যায়। তার প্রথম প্রমান পান বেপারী স্যার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কচকচানি তার কন্ঠে ফুটতো ভাষনের মতো। কানের পোকা বেরিয়ে আসার ভয়ে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই তুলোর সাহায্য নিত। স্যারের ক্লাসে একদিন বন্ধুর সঙ্গে পেছন বেঞ্চে ফিসফিস করছিল কিংশুক। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয় ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারার ব্যবচ্ছেদ। হাতে বন্দুক থাকলে নিরীহ মানুষের লোলুপ দৃষ্টিও পোষা কবুতরের ওপর পড়ে। বেপারী স্যারও তেমনি অব্যর্থ নিশানায় কিংশুককে কাত করে প্রশ্ন করলেন,‘ওহে অর্বাচীন, বলতো একনায়কতন্ত্র কাকে বলে ?খুশকির জঙ্গলে বারকয়েক আঙ্গুল ঠেলে কিংশুক জবাব দেয়,‘জনমতের বিপক্ষে কোনকিছু করাই একনায়কতন্ত্র। এই যেমন আপনি আমাদের নিরীহ কয়েকটি কানকে খুবলে খাচ্ছেন, সেটাও একধরনের একনায়কতন্ত্র।’আর কথা বাড়ানোর সুযোগ পায়নি কিংশুক। তার আগেই চোস্ত ইংরেজিতে বেপারী স্যার বলে ওঠেন-গেট আউট।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুনোর আগ পর্যন্ত ক্লাসে মাঝেমধ্যেই শব্দটি উপহার পেত কিংশুক। তবে চাকুরীজীবনে উপহার পেয়েছে ভিন্ন কিছু। ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খেলে অফিসের বড়কর্তা তা সহ্য করবে কেন ? একদিন গভীর মনোযোগের সঙ্গে লিখছিল কিংশুক। কি এক দরকারে বড়কর্তা ডাকলেন তাকে। কিংশুক তখন লেখায় মগ্ন। চেয়ার ছেড়ে উঠে আসার পরিশ্রমটুকু সুদে-আসলে তুলে নিতে তাই খিস্তি দিলেন বড়কর্তা-‘কানের ফুটোয় কি জননেন্দ্রিয় ঠেলেছেন ? ডেকে ডেকে আমার গলায় যে চরা পড়ে গেল।’

সেদিনই আত্মসমর্পণ করে অফিস ছাড়ে কিংশুক। তারপর দীর্ঘসময় বেকারের ঘানি। ততদিনে ছন্দাও সফল হয় তার ভিন্ন কিছু খুঁজে পেতে। শুধু রাতের পর রাত নির্ঘুম চোখে দুরের বাতিঘর খুঁজে গেছে কিংশুক। একসময় পেয়েও যায় সে। আবারো এক অখ্যাত দৈনিকে। এবার তার নতুন বস বেশ রসিক মানুষ। মুখে পান চিবিয়ে একদিন তিনি কিংশুককে জিজ্ঞেস করলেন-মেয়েদের টেনিসের কোন জিনিষটি আপনাকে টানে ? অগ্রাহ্যের ভঙ্গিতে কিংশুক জবাব দেয়-প্রাইজমানি। ঠাট্টার হাসিতে ফেটে পড়ে বস বলেন-‘আরে,আপনি তো দেখছি সলিড ভরযুক্ত অপদার্থ। শুধু অর্থলোভ করলে চলবে,মাংসের পুরও তো দেখতে হবে। চুলে পাক ধরলো, তবু সৃজনশীল হতে শিখলেন না।’

রাগে গা জ্বললেও নামটা মনে ধরে কিংশুকের। ভরযুক্ত অপদার্থ। আহঃ খাসা নাম বটে একখানা ! ভর ছাড়া পদার্থ হয়না। কিন্তু সে ভরযুক্ত অপদার্থ। নিজের অনু-পরমাণুতে অনাবিস্ক্রিত ইলেকট্রন-প্রোটনের ভর খুঁজতে সে উঠে পড়ে লাগে। লেখালেখির পোকা খুবলে খায় তার অস্তিত্ব। রাতে ভাল ঘুম হয়না। গী দ্য মোঁপাসার অমৃতবচনটি সে শয়নে-স্বপনে মনে করে-‘লেখার প্রাণ হলো প্রথম লাইন এবং শেষ লাইন।’বিষয় নির্বাচন করতেই তিনদিন লেগে যায় কিংশুকের। মাইক্রাসফট ওয়ার্ডে তা ফলাতে আরো সাতদিন। এতদিনে মনের মতো একটি কাজ করতে পেরে কিংশুকের শিঁড়দারা বেয়ে ওঠা-নামা করে রোমাঞ্চ। শতবার লেখাটি এডিট করে পাঠিয়ে দেয় ব্লগে। রাত চলে যায় চোখের পাতায়। ঘড়ির কাঁটাকে তার খুব ধীর বলে মনে হয়। সকাল অবধি মনে দানা বাঁধে হাজারো স্বপ্ন। একদিন সে বিখ্যাত ব্লগার হবে,হাজারো কমেন্টসে ভেসে ছেয়ে যাবে তার ব্লগ। খুব নাম কামাবে,দলে দলে তার পিছু নেবে ছন্দার মতো ‘ভিন্ন কিছু’র খোঁজকারিরা। এইসব ভাবনার বোঝা মাথায় চেপে রাস্তার পাশের সাইবার ক্যাফেতে সে ঢুঁ মারে সবার আগে। ডেস্কটপের স্টার্ট বাটন চাপার সময় বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দটা পরিস্কার শুনতে পাচ্ছিল। ব্লগে ঢুকে সবার আগে তার চোখ পড়ে প্রথম কমেন্ট-এ

‘কপি-পেস্ট পোস্ট !’























মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৯

বোকামন বলেছেন: :(

১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১১

নাছির84 বলেছেন: সত্যিই তাই।

২| ১৪ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: :(

১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১১

নাছির84 বলেছেন: খারাপ লেগেছিল।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১

ইমিনা বলেছেন: সত্যিকারের ঘটনা মনে হইতেছে।
তবুও কিংশুক সম্পর্কে জানতে বিশেষ আগ্রহ বোধ করছি।।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

নাছির84 বলেছেন: আমি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.