নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবোল-তাবোল ভাবনা

১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩

সাত সকালে বুয়ার ডাকে সাধের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। বাসায় বাজার নেই। তাই হাড়ি চড়েনি। বুয়ার অমুল্য কর্মঘন্টা বাঁচাতে ও নিজ পেট ভরাতে, অগ্যতা ফোলা চোখে ছুটতে হলো বাজারে। কাঁচা সব্জির লাইনে উঁকি দিতেই এক শুশ্রুমন্ডিত মধ্যবয়সী হেঁচকি দিল ‌‌''মাম্মু আহেন,বেবাক টাটকা ?

আধমরা বুড়ো পটলের দঙ্গলে আঙ্গুল ঠেলে বললাম-এ তো খালি বিচি রে ?

বিক্রেতার মুখ ভার। জিভ কেটে বললো-' ছিঃ মামু আফনেরা না শিকখি্ত মানুষ। এসব কি কহেন ?'

আমি তো অবাক। ‌'খারাপ কিছু বলিনি তো,ভাই।'

-মামা এইডা কি কন ? আফনের হগ্গল পাশ দিয়া মাইয়্যাছাওয়াল যাইতাছে ? আর আফনে ,,,,,?

ধৈর্য্ হারালাম-'তো কি বলতে হবে ?'

-বিচি না কইয়্যা দানা বা অ্ইন্য কিছু কন।

আর দাঁড়াতে পারিনি। টাকাটা কোনমতে গুঁজে দিয়ে বাকি বাজারগুলো সেরে বাসায় ফেরার পথে ভাবছি,এখন থেকে তাহলে বাজারের পটল-ঝিঙ্গে-কুমড়ো-করলার ভেতর দানা থাকে,বিচি নয় ! বস্তুত,এত বাক্যসচেতন বাজারের ধূলি-বালি ইতিপুর্বে কখনোই আমার ফুসফুসে ঢুঁ মারেনি।

বেনসন পুড়িয়ে বাসায় ফিরলাম। এই আকালের বাজারে অন্তত একজন সফেদ মানুষের দেখা পেয়েছি ! মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠলো। টিভিটা ছাড়লাম। ক্যাটরিনার মুখটা ভেসে উঠলো। ভিটের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞান ও বিপনন অনুন্নত থাকায় একদা আমরা যৌবনের আড্ডায় মুখের কাটারিতে যা প্রচুর ছিড়েছি,এখন আর তা সম্ভব নয়। এখন ক্যাটরিনারা চিকুর,কুন্তল,চুল বা বাল যাই বলুন না কেন,তার উৎপাটন মাহাত্ন্য বর্ণনা করার সময় খুবই নমনীয় থাকেন। হাসলে সবাই যদি অসভ্য ভাবে,আবার মুখটা ভার রাখলে সবাই যদি বোঝে, ব্যাথা লাগে ! তখন ? ক্যাটরিনাকে ছেড়ে খবরের কাগজে ডুব দিলাম। নানান রংয়ের খবর। রাজনীতি-দুর্নীতি-হানাহানি-সম্ভ্রমহানি-খুন ! তবুও মুখে রোচে না। বাধ্য হয়ে বিনোদনের পাতায়-'অমুক অভিনেতার তমুক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন'.....‌''চোখ ধাঁধানো সঙ্গীতশিল্পির দ্বিতীয় মেগাসিরিয়াল'..... কিংবা,ব্যান্ডে রবীন্দ্র ঝকমারি। আহ ! কত প্রতিভার ছড়াছড়ি। অল রাউন্ডার হতে এখন সবাই সব্যসাচী। লজ্জায় দুর্গারও মাথা কাটা !

সার্ধশত বছর আগে বঙ্কিম উপন্যাস লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ কবিতা। শুধু নজরুলই কয়েকবার কলম ছেড়ে নারদ সেজেছেন, কিন্তু ঘুর্ণাক্ষরেও কখনো কাননবালার গলায় শান দিতে যাননি। তাদের পরবর্তি রথী-মহারাথীরাও একই পথ অনুসরন করেছেন। তাদের হাতে কিন্তু এত 'কাজ' ছিল না। এখন দেখি যে সকলেই কাজ করছে। একঘেয়েমি লাগলে জায়গা বদল করছেন। তাদের সুখ্যাতি-কুখ্যাতিও নিয়েও কাজ হচ্ছে। তাতে খবরের কাগজগুলোর পাতা ভরছে,টিভি চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠানের রসদ পাচ্ছে,বিজ্ঞাপন আসছে,পসার জমছে।

নজরুল এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে,জসীমউদ্দিন বিমলগুহে,রবীন্দ্রনাথ বাতাসে। তাদের পয়দা কিংবা মৃত্যুবার্ষিকিতে প্রচুর 'কাজ' হয়। সবাই চোগা-চাপকান চেপে বসে পড়ে টিভির টক শো'তে। মাঝে-মধ্যে গান।শহরের বিভিন্ন পার্কে মঞ্চ পেতে রাবীন্দ্রিক ঢংয়ে তোলা হয় গিটারের ইন্দ্রজাল ! শতবর্ষের এই বহমান স্রোতে তাদের উচ্চারনগুলোও এখন মহাপ্রস্থানের পথে !

সময় নিজে পাল্টায়। অনেককিছু পাল্টে দেয়। এই যে আমি,শৈশবে কচি হাতখানি দিয়ে 'ক' লিখতেই কেঁদে ফেলেছি,বড় হয়ে কি দেখছি ? এখনকার কচি হাতগুলো গুগুল চেপে গোটা দুনিয়া মাপজোখ করে থাকে,কাঁধে পেটফোলা ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যায়। তার ভারে মাথা নুইয়ে পড়ে,যেন মাথাভর্তি বিবিধ রত্ন। আমাদের কিন্তু পাঁচখানা পুস্তকেই প্রাইমারি কেটেছে। ফুলপ্যান্ট পরে দশখানা এবং তারপর থেকে মনের ইচ্ছা ! এখন আর তার সুযোগ নেই। বাংলা-ইংরেজি-অংক-বিজ্ঞান-ব্যবসার ভিতগুলো শৈশবেই কচি মাথায় গড়ে দেয়া হচ্ছে। অবসর সময়েও নিস্তার নেই। চিত্রাংকন তো আছেই ! এতে করে,কচি গাছের চারাটি একটু বড় হলে যে কোন ফলবান বৃক্ষের আদল পায়। তারপর শুধু পরিচর্যা করতে পারলেই ফলভোগ। নিয়মটা শর্ট-কার্ট কিন্তু অব্যর্থ। মাথায় কিছু একটা ঘাই মারতেই পত্রিকাটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালাম। আচ্ছা,বঙ্কিম-উত্তম কিংবা বুলবুল আহমেদরা তো মরার সময় তাদের চেহারা নিয়েই মরেছিলেন। মানে,নিজ নিজ পেশায় জীবন ক্ষয় করায় তাদের সবারই একটা আলাদা পরিচয় ছিল। কিন্তু এখনকার সবার চেহারায় তো একের ভেতর দশ রকমের ছবি ! কোনটাই স্থায়ী নয়। সবমিলিয়ে জগাখিচুড়ী। মনটা একেবারে চুপসে গেল।

পরবর্তি প্রজন্মের ভাবনায় !

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:০১

জামান2021 বলেছেন: বর্তমান প্রজন্মই তো জগাখিচুড়ী প্রজন্ম।

১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

নাছির84 বলেছেন: সবাই কিন্তু নয়।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি একেবারে বৈঠকে স্টাইলে লিখে যান। মনে হয় মুখোমুখি বসেই গল্প শুনছি।
আর হাস্যরসতো অতুলনীয়।
"বিচি না কইয়্যা দানা বা অ্ইন্য কিছু কন।" হাহাশে।

১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:২২

নাছির84 বলেছেন: মানবকুকুর। উফ ! গায়ে আগুন ধরানো গল্প। আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা খুললে একটা রিকয়েষ্ট পাবেন। দয়া করে.........

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: ও এতো দেখি ,আপনি আপনার পোস্টেই কমেন্ট করেছেন।
আমি আমার পোস্টে গিয়ে আপনার এ মন্তব্য খুঁজছিলাম। :)

১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৮

নাছির84 বলেছেন: ওই গল্পটায় সবাই যা বলা বলে দিয়েছে। তাই আমি আর কিছু বলিনি। জীবনকে অনেক রংয়ের আয়নায় দেখতে আপনি সিদ্ধহস্ত।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আল্লাহ ভাল জানেন নিজের সন্তান দের কে এই জগা খিচুড়ির হাত থেকে রক্ষা করতে পারব কিনা ।। :(

১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯

নাছির84 বলেছেন: পারতেই হবে।

৫| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮

বোকামন বলেছেন:
লেখা শেষ করে আমারো মনটা একেবারে চুপসে গেল !!
এতটা চমৎকার লিখেন, মন্তব্য কী লিখবো ভেবে পাইনা।

২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৭

নাছির84 বলেছেন: ভাবাভাবি কিংবা মন্তব্যের কি দরকার ? শুধু পড়লেই চলবে। তাতেই শ্রম সার্থক।

৬| ১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮

ভাইটামিন বদি বলেছেন: কে বলেছে আবোল-তাবোল??? বড়ই গোছানো!
ভাললাগা রেখে গেলাম।

২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৮

নাছির84 বলেছেন: গোছানো শব্দটা জীবনে খুব কম শুনেছি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.