নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৩০

একই বৃন্তে দুইটি ফুল-উপমাটি তাদের ক্ষেত্রে ঠিক খাটেনা। মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। তিনাব দেখতে শ্যামবর্ণ। দীর্ঘকায়। গোলাকার মুখে দাড়ির জঙ্গল।চুলগুলো চিরুনির সঙ্গে তালাকপ্রাপ্তা। চঞ্চু নাক ও এক জোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ।

ঋণাব খাটো কিন্তু ফর্সা। চোখে সবসময় একটা তন্ময় ভাব। দাঁড়ি আছে তবে মুখের সঙ্গে মানানসই করে ছাঁটা। মাথায় টুপি।

তাদের অন্তরের বসবাসও দুই মেরুতে। একজন,পেশায় কলেজের শিক্ষক। আধুনিকতার সঙ্গে মানানসই নিপাট ভদ্রলোক। আরেকজন ধর্মভীরু। বাড়ির চেয়ে মসজিদেই সময় কাটান বেশি। তিনাবের চোখ যখন খোলাফায়ে রাশেদিনের নানা প্রান্তর চষে বেড়ায়.ঋনাবের ঠোঁট তখন সেইসব পবিত্র বাণীই মধুর সুরে আওড়ায়।কখনো কো্রান পাঠ,কখনোবা বেহেশতী জেওর। হামদ-নাত ঠোঁটস্থ।

তিনাব ‌'মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী' গুনগুন করে গায়। মাঝে-মধ্যে সিগারেটও খায়। ঋনাব ওজুটুকু পর্যন্ত অটুট।

এইভাবে বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে তিনাব জ্ঞান বিতরন এবং ঋণাব ধর্মচর্চা করে যাচ্ছিল। একই বাড়িতে।

কিন্তু তাদের সর্ম্পকটা মোটেও দা-কুমড়ো সুলভ নয়।কলহ কি জিনিষ তা এরা জানেনা। তার সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর কারণটা বোধহয়,আর্থিক দিক থেকে কেউ কারো মুখাপেক্ষি নয়। জমিজমাও আছে এন্তার।দুই ভাইয়ের দিন কাটে দুধে-ভাতে।

তিনাব ইতিহাসে এম.এ। চাকুরীর মুল্লুক ঘুরে এখন এলাকার কলেজের প্রফেসর। ঋণাবও ফাজিল পাশ করে একটি স্কুলে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু মনে বৈরাগি বসত করায় কয়েক বছর পর হাঁপিয়ে ওঠে। চাকুরী ছেড়ে আজ পাঁচ বছর হলো সে নিজেকে সমর্পন করেছে ইসলামের পথে। দুই বিঘা জমির ওপর তাদের বসতবাড়ি। পুকুরভর্তি মাছ জল কাটে। চার-খানা কাঁচাপাকা ঘর। থাকার জায়গার অভাব নেই। কিন্তু পৃথীবির প্রতি পদে পদে অনিশ্চয়তার কথা ভেবেই হয়তো,দুইভাইয়ের কেউই আজ পর্যন্ত বিয়ে-থা করেনি। তাদের বাবা্-মা গত হয়েছেন বেশ কবছর। ছাত্রজীবনে তিনাব সাত-ঘাটের পানি খেয়েছে। অরুচি আসাতেই বোধহয় ঘরে বউ তোলেনি। তার ছোট ভাই একবার খাওয়ার চেষ্টা করেছিল,কিন্তু তনিমাকে রাস্তা ট্রাকই খেয়ে দিল। সেই থেকে ঋনাব আরশের সঙ্গে একটা অদৃশ্য যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন,ওই ব্যাখ্যাতীত বস্তুটি বেয়ে একদিন তনিমা নেমে আসবে !

তাদের বাড়িতে আরও একটি প্রাণী বাস করে। রুমু। বারো বছরের মেয়েটির সঙ্গে দুইভাইয়ের রক্তের কোন সম্পর্ক নেই,আবার সে গৃহপরিচারিকাও নয়। তিনাবের বাবা-মা বেঁচে থাকতে বাড়ির কাজের মেয়েটি সদ্যজাত সন্তানকে রেখে আরেকজনের হাত ধরে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে অস্বীকার করে বসে তার স্বামী। সেই থেকে তিনাবদের বাড়িই রুমুর দুনিয়া। তিনাবের বাবা-মা প্রয়াত হওয়ার পর থেকে অতবড় বাড়িটায় ওই দুটি আপনভোলা মানুষের জুতোসেলাই থেকে চন্ডিপাঠ পর্যন্ত হয়ে আসছে, বলতে গেলে রুমুর হাতে। বিনিময়ে সে উপহার পেয়েছে থরে-বিথরে ভালবাসা। রুমুকে নিজের সন্তানের চোখেই দেখতো তিনাব ও ঋনাব। রুমুর চোখে তারা নিজেদের ভবিষ্যত দেখতো্। কিন্তু নিজের ইচ্ছা কখনো চাপিয়ে দিত না।রুমুর স্বাধীনতার ব্যাপারে দুই ভাইই ছিল উদারহস্ত। তবে,তারা মনে মনে আশা করতো যে বড় হয়ে রুমু তার পথকেই বেছে নে্বে। কিন্তু এভাবে্ চলতে থাকার পর হঠাৎ একদিন রুমু অসুখের পথ বেছে নিল। বেশুমার বমি সঙ্গে রক্ত !

দুশ্চিন্তায় তিনাব ও ঋনাবের ঘুম হারাম। বড় ভাই আধুনিক, স্বভাবতই সে এলোপ্যাথি ডাক্তার ডেকে আনে। ঋনাব কিছুটা আপত্তি তুলেছিল-''আহা,মশা মারতে কামান কেন ? বাউ-ফাউও তো (কু-বাতাস) লাগতে পারে ? ''বলে তিনাবকে থামাতে চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ঠেকাতে পারেনি।

ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন। একটা ইঞ্জেকশন দিতে চাইলেন কিন্তু ঋনাব রুখে দাঁড়ানোয় তা আর সম্ভব হয়নি। নিরুপায় হয়ে একবার শুধু তার হাসপাতালে দেখানোর অনুরোধ করলেন। তবে বাকি চিকিৎসা ঠিকমতোই চললো। রুমুও বেশ সেরে উঠলো। কিন্তু সাতদিন না যেতেই আবারও বমি,এবার সঙ্গে জ্বর। ঋনাব প্রমাদ গুনলো। বড় ভাইকে সে বললো-''ডাক্তার-ফাক্তারে তো কিছু হলো না। মসজিদের ইমাম সাহেবের দোওয়া নিলে কেমন হয় ? বড় পরহেজগার কামেল মানুষ।'

-ডাকো দেখি একবার।

ইমাম সাহেব আসলেন। পানি পড়া দিলেন। ভিটার দক্ষিন কোণে তাবিজ পুঁতে বাড়িও বন্ধ করলেন। ঋনাব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কিন্তু রুমুর নিশ্বাস ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে এলো। জ্বরে সে প্রলাপ বকতে শুরু করলো। দুইভাই এবার রুমুকে নিয়ে হাসপাতালে গেল। প্রথম রাত দুই ভাই জেগে কাটিয়ে দিল। রুমু সংজ্ঞাহীন। দ্বিতীয় রাতেও তাই। তৃতীয় রাতে দুই ভাই একে অপরকে ঘুমিয়ে নেয়ার তাগিদ দিলেও দুজনেই সজাগ থাকলো। রুমুর জ্ঞান ফেরেনি তখনো। ঋনাব ফজরের নামাজ পড়ে ভাইকে বললো-''কৈটুলায় মেদিনীপুরের হুজুর এসেছেন। তার দোওআ কবুলের বহু কীর্তি আছে। আমি যাচ্ছি।'

-একটু দ্রুত ফিরে এসো। অবস্থা ভাল মনে হচ্ছে না।

-আচ্ছা।

বিকেলের আগেই ঋনাব ফিরে আসলো। আবারও পানির বোতল হাতে। কিন্তু এবার সে বেশ সন্তুষ্টচিত্তে বললো-'‌বাবা,নিজে আমার মাথায় বলেছেন,সেরে যাবে। বেশ জোরে ফুঁও দিছেন। তিনবেলা দুই চামচ করে মধুর সঙ্গে খাওয়াতে হবে।'তিনাবের মুখে ক্ষণপ্রভা।

সেদিন গভীর রাতে রুমুর জ্ঞান ফিরলো। ঘন্টা খানেক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার পর বমি করলো। চোখের দৃষ্টি অস্বাভাবিক।

তাই দেখে তিনাব পাগলপ্রায়। পাশের বিছানায় ঘুমন্ত ভাইকে জাগিয়ে সে বললো-'‌এক্ষুনি ডাক্তার ডাক। রুমু যেন কেমন করছে।'

-বলো কি !

ঋনাব উন্মাদের মতো নিচে গিয়ে দেখে ডাক্তার নেই। ফোন করতে হবে। টেলিফোনটা কানের কাছে নিয়ে ঋনাব চেঁচাতে লাগলো-'‌হ্যালো,ডাক্তার সাহেব আমার আর ইঞ্জেকশন দেয়াতে আপত্তি নেই। আপনি এখনি একবার আমাদের কেবিনে আসুন। যা বলবেন,তাই হবে। একবার জলদি আসুন।'

তিনাব ততক্ষনে বোতলটা খুলে চামচ করে রুমুর মুখে পানি ঢালছে,আর সাপের মন্ত্র পড়ছে-‌'বলেছিল তো সেরে যাবে।''

রুমু সাড়া দিল না।







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৪০

খেয়া ঘাট বলেছেন: মৃত্যুভয় বড় ভয়,,,,,,,,,,বিশ্বাস নড়ে ওঠে।
দুদিকের বিশ্বাসই বদলে যায়।
++++++++++++++++++++++++++++++++
যথারীতি প্লাস।

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৯

নাছির84 বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। একটা ভালবাসার গল্প চাই......হবে কি ?

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: খেয়া ঘাট বলেছেন: মৃত্যুভয় বড় ভয়,,,,,,,,,,বিশ্বাস নড়ে ওঠে।
দুদিকের বিশ্বাসই বদলে যায়।
++++++++++++++++++++++++++++++++
যথারীতি প্লাস।


সাথে আর একটু যোগ করছি , ভালোবাসার প্রিয়জন কে হারানোর ভয় টা ও কাজ করে ...


১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪২

নাছির84 বলেছেন: তাই বলে,সারাজীবন এক পথে হেঁটে মুহুর্তের মহিমায় মোড় নিতে হবে..? জীবনের বাকিসব ক্ষেত্রে এমন কিছু করলে সবাই দুয়ো ছাড়া অন্য কিছু দেয় না। শুধু এই.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.