নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুহুর্তের মহিমা

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৮

ছেলেটির মধ্যে অসাধারন কিছু ছিল না। অতি সাধারন জিন্স আর টি-শার্ট পরা আঠারো-উনিশ বছরের ছোকরা। রোদে পোড়া ত্বকে দাড়ি-গোঁফ উঠি উঠি করছে। পায়ে ফুটপাতের চটকদার স্যান্ডেল।

অদুরে তার চেয়েও কম বয়সি একটি মেয়ে বসে আছে।

গ্রীষ্মের তপ্ত দ্বি-প্রহরে স্টেশনটা খাঁ খাঁ করছে।

কড়ে গুনে জনাকয়েক যাত্রী হবে। সান বাঁধানো বেঞ্চিতে বসে আছে দুই বুড়ো-বুড়ি। বাক্স-প্যাঁটরার বহর দেখেই বোঝা যায় তাদের সামনে অনেক দুরের পথ। চায়ের দোকানটায় বসে আছে আরও ক'জন। বেহুদা সময় কাটাচ্ছে। বাকি দুইজনের মধ্যে ওই ঢ্যাঙ্গা-পাতলা ছোকরা এবং লাউডগা মেয়েটা। আর কিছু কুলি আর ফেরিওয়ালা স্টেশনের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত করছে। রেলের লোকজন যে যার কাজে শশব্যস্ত। এমন শান্ত-নিস্তরঙ্গ পরিবেশের মধ্যে ছেলেটির গহন মনের অন্দরে কেমন যেন একটা পুলক জাগানিয়া উদ্দীপনা অকারণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করলো।

বেচারার দোষ ছিল না। এই বয়সে সব যুবকই এমন একটু-আধটু করে থাকে।তাদের ইচ্ছে হয়,ফাঁপা বুকটা ফুলিয়ে চলতে,মাথা উঁচিয়ে হাঁটতে। চলনে-বলনে পৌরুষের মাহাত্ন্য ফুটিয়ে তোলার অফুরান কায়দা কসরত চলে আরকি। মনটাও চায়,মেয়েটা তার কথা ভাবুক। শিরা-উপশিরায় তাকে নিয়ে কুলুকুলু বেগে শোণিতস্রোত বয়ে চলুক। কারণে অকারণে নিজেকে সাড়ম্বরে জাহির না করতে না পারলে, উফঃ জীবনটা অসহ্য ! যৌবনে এমন সকলেরই হয়ে থাকে।

মেয়েটাকে ইতিপুর্বে কখনোই দেখেনি ছেলেটা। উত্তেজনার আধিক্য সম্ভবত সেজন্যই।একটা কুলিকে দেখে ছেলেটার কন্ঠস্বর অকারণে চড়ে যায়।গলায় অসম্ভব রকম বেমানান পৌরুষ ঢেলে হাঁক দেয়- কুলি, এই কুলি-

কুলি হাজির দু হাত কচলাতে কচলাতে।

-কি টানন লাগবো ?

আমার মালপত্র ট্রেনে তুলে দিবি। ঠিক আছে ?

-আইচ্ছা । দশ ট্যাকা লাগবো ?

-বলিস কিরে ? শায়েস্তা খাঁর জমানা চলছে বুঝি ? কুড়ি টাকার একটা নোট দেব,ভাল দেখে একটা বগিতে তুলে দিস ?

কুলির চোখে বিষ্ময়। মুখে হাসির প্রভা। কাঁচা-পাকা দাড়িতে তা দিতে দিতে সে বলে-আইচ্ছা তুইলা দিমুনে।

-পারবি তো ?

-পারমু সাহেব।

মধ্য বয়সি কুলিটার পিঠ চাপড়ে দেয় ছেলেটা। মেয়েটা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে।

-আফনের মালপত্র কুনখানে সাহেব ?

সামান্য একটা ট্রাভেল ব্যাগ ছাড়া ছেলেটার কাছে আর গুরুতর ভারী কিছু ছিলনা। মেয়েটাকে দৃষ্টিতে গেঁথে ছেলেটা হাত দিয়ে অদুরে থাকা ট্রাভেল ব্যাগ দেখিয়ে দেয়। তারপর কুলিকে জিজ্ঞেস করে- ট্রেন কি লেট ?

-ঘন্টাখানেক হইবো মনে হয়।

ছেলেটার কন্ঠে রাগত স্বর।কপাল কুঁচকে বলে-নাহ,কমপ্লিন না করে আর পারা যাবে না,দেখছি।

অভিযোগের উদ্দেশ্য-বিধেয় অবশ্য অনুক্তই থাকলো।

কুলি চলে গেল।

ছেলেটা কিছুক্ষন পায়চারী করে। গুনগুন করে গান গায়। চোখে চকিত চাহনি নিয়ে যেন দেখছে না এইভাবে মেয়েটাকে আরেকবার দেখে নেয়।বলা বাহুল্য মেয়েটাও তাকিয়ে ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ায় সে চোখ সরিয়ে নেয়।

এরই মধ্যে এক ঝালমুড়িওয়ালা এসে হাজির। মেয়েটি ইঙ্গিতে তাকে ডেকে নেয়।-ঝালমুড়ি দিন তো ?

পথ খুলে যাওয়ায় ছেলেটা ঝালমুড়িওয়ালার দিকে এগিয়ে যায়।-ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা কত করে ?

- পাঁচ টাকা স্যার।

-ওইটুকু ঠোঙ্গা পাঁচটাকা ! এ তো তেঁতুল পাতায় ভাত কিনে খাওয়া !- দুই টাকায় দিবি ?

-না,স্যার পারুম না।

-পারবিনা মানে ? তোরা তো পেটের বারোটা বাজানোর সঙ্গে টাকাও লুটে নিস ?

-কি যে কন স্যার। এহন চানাচুরের দামও চড়া। ভাল মুড়ি তো বাজারেই নাই।

-চানাচুরের দাম কতো ? শুনেই দেখি ?

ঝালমুড়িওয়ালার চোখে রাগত দৃষ্টি।-খামাখা প্যাঁচাল পারা বাদ দ্যান। ঝালমুড়ি লাগবো ? তো এক ঠোঙ্গাই লইবেন ?

ছেলেটার দুই চোখ ঝালমুড়িওয়ালাকে আপাদমস্তক মেপে নেয়। তারপর গর্জে ওঠে-তোর কাছে যত মুড়ি-চানাচুর আছে সব কিনে নিতে পারি। আর তুই আমাকে ঠোঙ্গা সাধিস ?

ঝালমুড়িওয়ালা অম্লান বদনে হেসে ওঠে।

-হাসছিস কেন ? তোর মুড়ি-চানাচুরের দাম কতো ?

মেয়েটার চোখে রাজ্যের শঙ্কা। ঝালমুড়িওয়ালা জবাব দেয়-সাড়ে পাঁচশো টাকা।

ছেলেটা মানিব্যাগ বের কড়কড়ে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে বলে-খুচরো করে দামটা রেখে দে।

ঝালমুড়িওয়ালা এতটা আশা করেনি। কী অনিবর্চনীয় পুলক জাগানিয়া অনুভূতি ছেলেটার মনকে নাচিয়ে যাচ্ছিল', তা ঝালমুড়িওয়ালার মতো ক-অক্ষর গোমাংস বুঝবে কিভাবে ? টাকা হাতে সে ভাংতির খোঁজে বের হলো।

মুড়ি-চানাচুরের সঙ্গে মশলার স্তুপের দখল পেয়ে ছেলেটি একইসঙ্গে মানসিকভাবে তৃপ্ত ও কিছুটা বিব্রত। মেয়েটিকে সে বললো-এখান থেকে কিছু নিন।

-না না লাগবে না। আমি তো এক ঠোঙ্গাই খেতে পারবো না। যে ঝাল ! মেয়েটির ভ্রু পল্লবে কৌতুকের আভাস।

সারি সারি ঠোঙ্গা বলতে গেলে সে জোর করে মেয়েটির ব্যাগের ওপর রেখে দিল। ঠোঙ্গার দঙ্গল দৃষ্টিকটু হলেও মেয়েটি কিছু বললো না। লজ্জায় আনত নয়নে সে শুধু ইতি-উতি তাকাতে থাকলো।

-ওগুলো ট্রেনে যেতে যেতে শেষ করবেন। এই ট্রেনেই যাচ্ছেন তো ?

-আমি পরের ট্রেনটাতে যাব।

-ও, আচ্ছা।

ছেলেটার মুখের আলো দপ করে নিভে গেল। সে আবারও পায়চারী শুরু করলো। কিছুক্ষন পর থামলো । মৃদু শিষ দিল। মরুভূমির মাঝে গুটিকয়েক মরুদ্যানসম দাঁড়ি-গোঁফে দুই-একবার তাও দিল। সামনেই কাঁঠালচাঁপা গাছের একটি ডালে সবে আড়মোড়া ভাঙ্গতে শুরু করেছে কলিগুলো। ছেলেটা মাঝের দুরত্বটুকু মেপে লাফ দিয়ে একটি ফুল পারার চেষ্টা করলো। সফলও হলো। চোখেমুখে বিজয়ীর ভাব নিয়ে সে ফের মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

ট্রেন এসেছে।

ছেলেটার ট্রাভেল ব্যাগ আর কিছু ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা নিয়ে কুলিটা একটা বগিতে তুলে দিল। বিনিময়ে কুড়ি টাকার একটা চকচকে নোটই পেল। ছেলেটা বগিতে উঠে জিনিষপত্র ঠিকঠাক করে আবারও প্লাটফর্মে নেমে আসলো।

মেয়েটার চোখ তারই অপেক্ষায় ছিল। ছেলেটি যা বোঝার বুঝে নিল। ট্রেন নড়তে শুরু করলো। ছেলেটা কিন্ত ট্রেনে উঠি উঠি করেও উঠছে না। ট্রেনের গতি যখন বেশ বেড়েছে,তখন শেষ বাহাদুরিটা দেখাতে সে ফরাসিদের কায়দায় মাথা নুইয়ে মেয়েটার দিকে একটি ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিল।তারপর বগির দরজায় উঠতে লাফ দিল। কিন্তু সহসা পা ফসকে একেবারে চলন্ত ট্রেনের নিচে-

আর কিছু করার সুযোগ সে পেল না।





-বনফুলের গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা।















মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বনফুলের অনেক পুরানো গল্প, নামটা দিয়ে দিলে ভাল হত।

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

নাছির84 বলেছেন: বনফুলের 'জৈবিক নিয়ম' গল্পটির ছায়া নিয়ে লিখেছি। সুপরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। নামটা এখনই দিয়ে দিচ্ছি।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫

বোকামন বলেছেন:
কোন শর্ট-ফিল্মের স্ক্রিপ্ট পড়ছিলাম মনে হলো। কিন্তু লেখক সাহেব কখন যে শব্দ জাদুতে ফিল্ম খানা দেখিয়েও দিলেন, পড়া শেষ করে বুঝলুম।

ওয়াও !!!
[২+]

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১১

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ বোকামন। তবে গল্পটা মৌলিক নয়। আমি শুধু ঝেড়ে-পুঁছে অতীতটুকু সরানোর চেষ্টা করেছি।

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

বোকামন বলেছেন:
পোস্টে ২+

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫

নাছির84 বলেছেন: তাই !

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হুম ...
সুন্দর ।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৫৯

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০০

নাছির84 বলেছেন: ঈদ মোবারক ।

৬| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: একটানে পড়লাম। অনেক ভালো লাগা রইলো। ঈদমোবারক।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০১

নাছির84 বলেছেন: প্লাস বুঝিয়া পাইলাম। ঈদ মোবারক।

৭| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++++

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০১

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ। ঈদ মোবারক।

৮| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কিরে ভাই নতুন পোস্ট কই ? সামু সুধু আমাদের ছাড়ে নাই , আমরা ও দেখি সামু তে লেখা ছেড়ে দিছি ।।?

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৬

নাছির84 বলেছেন: হুঁম, আমরাও!

৯| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১০

অপ্রচলিত বলেছেন: চমৎকার! ++++++
বনফুলের খুব প্রিয় একটি গল্পের ছায়া অবলম্বনে লিখেছেন।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

নাছির84 বলেছেন: বনফুল আমার ভীষন প্রিয় একজন লেখক। আপনারও পছন্দের জেনে খুশি হলাম। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

১০| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩৪

উদাস কিশোর বলেছেন: ভালা লাগা রইলো

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

নাছির84 বলেছেন: উদাস কিশোরের ভাল লাগা গ্রহন করিলাম। আমার দুনিয়ায় স্বাগতম। ভাল থাকবেন।

১১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০০

ইমিনা বলেছেন: শেষটায় এটা কি ঘটলো ???
:|| :|| :||

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫

নাছির84 বলেছেন: কিছুই না। কিশোর বয়সে সবার মনে যে প্রেমের বুদবুদ সৃষ্টি হয়, ছেলেটা তা সহ্য করতে পারেনি।
এমন তো অহরহই ঘটছে। খোঁজ রাখে কে ?

১২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

ইমিনা বলেছেন: বেশ ভালো লাগছিলো পড়তে
কিন্তু শেষটা মেনে নিতে পারলাম না।
এরকম পরিণতি ওয়ালা গল্প আজকাল সহ্য করতে পারি না।
কি মজায় মজায় গল্পটা পড়া শুরু করেছিলাম :( :(

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২১

নাছির84 বলেছেন: জীবনে কখনো শুনেছেন, ভালবাসার ফাঁদে ধরা দিতে গিয়ে কেউ কখনো পরিণতির কথা ভেবেছে ? ছেলেটা ট্রেনে ভালভাবে উঠে গেলে মেয়েটা কিন্তু ওকে সারাজীবন মনে রাখতো না। ছেলেটা মারা গেল বলেই তো মেয়েটার মনে আজীবনের জন্য একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকলো। অবশ্য এটা সম্পুর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
মেনে নিতে পারেননি শুনে খুশি হলাম। কিন্তু সহ্য ক্ষমতা থাকা উচিত। লোহার সহ্য ক্ষমতা আছে বলেই পুড়ে পুড়ে একসময় তা খাঁটি অঙ্গারে পরিণত হয়।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা। ‌'দুঃখবিলাসি হবো বলে' কবিতাটার মন্তব্যে একবার তাকানোর অনুরোধ করছি....

১৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪

ইমিনা বলেছেন: "ভালবাসার ফাঁদে ধরা দিতে গিয়ে কেউ কখনো পরিণতির কথা ভেবেছে ?"
...
হু, একদম ঠিক কথা ।।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

নাছির84 বলেছেন: খাঁটি কথা সবসময় নয় খাঁটি,
মনটা খাঁটি হলেই কেবল,
খাঁটি কথা খাঁটি................ :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.