নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিষ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:০৫

রান্নাঘরে ঢুকেই আনোয়ারার চক্ষু চড়কগাছ !

মেঝেতে অগুনতি লাল পিঁপড়ে দল বেঁধে সদর্পে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষনা করছে।সানকির ভাতে পিঁপড়ে,সালুনে তো তাকানোরই জো নেই। যেন সরোবর ! সানন্দে সবগুলো হাবুডুবু খাচ্ছে। আনোয়ারা অবাক হলেও ভড়কে গেল না। সানকিটা চুলোর আঁচে দিয়ে ঝাড়ু হাতে মেঝে পরিষ্কারের কাজে লেগে গেল। ভাতটা এদিকে চরচর করছে,আনোয়ারা ওমুখ হতেই দরজায় গোঁত্তা খেলেন। মচমচ শব্দে প্রতিবাদ জানিয়ে উঠলো বুড়ো পাল্লা দুটো। তাই শুনে ভেতরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠে আনোয়ারার রুগ্ন স্বামী-‌‌'কে ?...কে...কে এলো ?

এই এক জ্বালা ! দেহটা হাড় জিরজিরে,হাড্ডি কখানাও তাকিয়ে রয়। তার ওপর শরীরের আধখানা খেয়েছে পক্ষাঘাতে। কিন্তু তায়জালের কান দুটো বেজায় খাড়া। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর যত অসঙ্গতি আছে,তার সবকিছুর ক্ষতিপুরণ বিধাতা যেন ওর কানদুটোয় ঢেলে দিয়েছেন ! কোনরকম আওয়াজ পেলেই তায়জালের বদ্ধমূল ধারনা হয় যে,ছেলেটা বোধহয় দরজায় কড়া নাড়ছে। আনোয়ারার স্পষ্ট মনে আছে,এক গভীর রাতে রাতুল হামলে এসে পড়েছিল দরজার ওপর,করাঘাত করতে করতে বলেছিল,‌‌'মা...মা...দরজা খোল ! দরজা খোল মা...'

আনোয়ারা খিলটা টান দিতেই রাতুল ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকেই দেরি না করে দরজা আটকে দেয়। আতঙ্কে ওর মুখটা পাংশুবর্ণ। চোখে সন্দিগ্ধ ত্রাস। আনোয়ারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রাতুল ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে-‌‌'পুলিশ....মা...পুলিশ আমার পেছনে !'

-'পুলিশ ! পুলিশ কেন বাবা ! কি করেছিস তুই ?'

-‌'আমি...আমি' খোকার গলা ভিজে যায়। 'জানিনা মা...জানিনা কিভাবে কি ঘটে গেল ! মেয়েটা শুনশান রাস্তায় একা বাড়ি ফিরছিল। আমি ওকে.....কেন জানিনা....জানিনা....।'

আনোয়ারার বাকিটা বুঝে নিতে অসুবিধে হয়নি। খোকা একটা মেয়েকে.....কিন্তু কেন ! কি জন্য ! খোকা তো এমন ছিল না। ঘরের চৌকাঠ পারি দিলেই তিনি ছেলের প্রশংসা শুনতেন। তবে কেন এমন হল ! শেষ পর্যন্ত রক্তও বিশ্বাসঘাতকতা করলো ! রাগে,ঘেন্নায়,লজ্জায় আনোয়ারার ইচ্ছে করে মাটি ভেদ করে পাতালপুরীতে মুখ লুকায়। কিন্তু অবিচল চোখে আনোয়ারা জিজ্ঞেস করেন-'মেয়েটা.....মেয়েটা কি তবে...?'

রাতুল শুধু কাঁদছে। তার গলা থেকে কান্নাভেজা শব্দগুলো চুঁইয়ে পড়ে ' মেয়েটা মরে গেছে মা....আমি ওকে মারতে চাইনি...খুব ভয় পেয়েছিলাম...এমন চেঁচানো শুরু করলো ! তাই গলা টিপে ধরেছিলাম...এখন আমার ফাঁসি হবে তাইনা মা ? '

এমন প্রশ্নের জবাব পৃথী্বির কোন ভাষায় দেবে মায়েরা ? নিখিলের নানা কোনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অযুত-নিযুত রাশি রাশি শব্দরাজিও বুঝি আনোয়ারার মুখে এসে অজানা এক শূন্যতায় থমকে দাঁড়ায় ! সেদিন তার পায়ের তলার পৃথীবি থরথর করে কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু চোখেমুখে তার লেশমাত্র না ফুটিয়ে আনোয়ারা দাঁড়িয়ে ছিলেন পাথরের মূর্তির মতো। তার মুখে ছিলনা প্রাণ,চোখে শুধুই বোবা অন্ধকার !

তায়জাল সেদিনও ভেতরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলেছিলেন-'কি হয়েছে,খোকা কাঁদছে কেন?'

-‌'কিছু না' আনোয়ারা তার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রাতুলকে জিজ্ঞেস করে-‌'পুলিশ তোকে বাড়িতে ঢুকতে দেথেছে?'

-'জানিনা মা...কিচ্ছু জানিনা। তবে ওরা আমাকে ঠিকই ধরে ফেলবে....তারপর ফাঁসিতে লটকে দেবে...আমি কি করবো মা...কোথায় যাব ' রাতুল ডুকরে ওঠে।

আনোয়ারার নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। নোনা জলের বানে দু'চোখে তা ফুটে ওঠে। খোকার কান্না তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ছোটবেলায় খোকা কাঁদলেই সব কাজ ফেলে ছুটে তিনি কোলে তুলে নিতেন সোনার ময়না পাখিটিকে। আদরে-সোহাগে ভুলিয়ে দিতেন সব দুঃখ-ব্যথা।

সেই সোনার ময়না পাখিটি এখন বড় হয়েছে। আর তাকে ভোলানো যায়না। উল্টো সে ভোলাতে না পারলে জোর করে। প্রয়োজনে খুন করে ! তবুও লালসা চরিতার্থ করে ছাড়ে ।

আনোয়ারা মনে মনে কি যেন ভাবছেন ! আজ হোক কাল হোক পুলিশ এ বাড়িতে আসবেই। খোকাকেও বেশিদিন কোথাও লুকিয়ে রাখা যাবেনা। তার মনে অন্য একটা ভাবনা উঁকি দিল। আচ্ছা,খোকা একটা মেয়েকে নষ্ট করেছে,তাকে খুন করেছে ! এ শিক্ষা সে পেল কোথায় ! এমন শিক্ষা তো তারা দেননি। ছিঃ আনোয়ারার গা গুলিয়ে উঠলো। বাথরুমে ঢুকে গলায় অঙ্গুলি করে কিছুটা বমিও করলেন। হঠাৎ তার পা দুটো জ্বলে-পুড়ে উঠলো। নিচে তাকাতেই আনোয়ারা দেখলেন কয়েকটা লাল পিঁপড়ে কামড় দিয়ে লটকে আছে। আনোয়ারার প্রচন্ড রাগ হলো। তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন-'কালাই,..কালাই।'

কালাই আনোয়ারার বিশ্বস্ত পরিচারক। সব কাজে সিদ্ধহস্ত। তায়জালদের তালুক থাকাকালিন বংশ পরম্পরায় তারা এ বাড়িতেই বসবাস করছে। সংসারের মতো এখন বাড়িরও ভগ্নদশা। বাকি শরীকরা শহরে। ভাঙ্গা বাড়িতে তিনজন মানুষের হাতের লাঠি ওই কালাই। এক ডাকেই সে ছুটে এলো-'ডেকেছেন আম্মা ?'

-'পিঁপড়ের উৎপাত বড্ড বেড়ে গেছে। টোপবিষটা নিয়ে আয়।'

-'টোপ তো ফুরিয়ে গেছে আম্মা। সেদিন চিলেকোঠায় তেলাপোকা মারতেই তো সব লেগে গেল্'। কালাই একটু ভাবে। তারপর মাথা চুলকে বলে-'ক্ষেতে দেযা বিষ আছে আম্মা। এনে দেই ? তবে,সাবধান চোখে-মুখে গেলে সর্বনাশ।'

আনোয়ারার ভাবলেশহীন মুখে এক চিলতে ক্ষনপ্রভা উঁকি দিল কি ? তিনি বললেন-'আচ্ছা নিয়ে আয়। আর টেবিলে খাবার দে।'

-'জি,আম্মা।'

কালাই বেরিয়ে যেতেই আনোয়ারা শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন,'-ভাবিস না খোকা। একটা ব্যবস্থা হবেই। তুই বরং খেতে আয়।'

ফজরের আযানের আগেই পুলিশ এসে গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে তল্লাশী চালায়। কিন্তু রাতুলের টিকিটিও খুঁজে পায়না। তরুন অফিসারটি আঙ্গুল তুলে হুমকি দিয়েছিল-'একটা ধর্ষক-খুনীকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। সোজাসুজি বলুন কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছেন্। নয়তো...!'

আনোয়ারার শুধু নীরব দৃষ্টি তুলে নিজের অজ্ঞতার জানান দিয়েছিলেন। ধরাধমের এমন কোন আঁতসী কাঁচ নেই যা দিয়ে পাথরের মতো কঠিন সেই দৃষ্টির ভেদ জানা যায়। বিড়বিড় করে বলেছিলেন-'জানি না।' আনোয়ারার পা দুটো আবারও জ্বালা করে উঠলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। কালাই খাবার ও বিষ দুটোই দিয়েছিল। শুধু পিঁপড়েই মরলো না।



************************



বহুদিনের বাড়িটা এখন পরিত্যক্ত দুর্গের মতো ভেঙ্গে পড়েছে। একসময় ঈগলের ডানার মতো দু দিকে বাহু প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিল বাড়িটা। বাঁ দিকের ডানাটা প্রায় ধংস্ব হয়ে গেছে। শুধু কয়েকটা দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে নিরুপায় সেপাইয়ের মতো। ডান দিকটার অবস্থা তবু একটু ভাল। তিনটে ঘরে আলো জ্বলছে। অর্থাৎ ওই কয়েকটা ঘরে মানুষ বসবাস করে। রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে এতক্ষন তাই দেখছিল লোকটি।

বাড়িটাকে সে একদৃষ্টে দেখছে। বলা যায় মাপজোখ করে নিচ্ছে। লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাড়িটার মোটামুটি সব তথ্যই তার জানা। প্রায় দশ বছর হয়ে গেল এ বাড়ির ছেলে ফেরারী আসামি হয়ে নিরুদ্দেশ। উঠতি বয়সের ছেলে ছিল। একটি মেয়েকে ধর্ষনের পর হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তারপর থেকে কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি । পুলিশের সন্দেহ,বাবা-মা'ই তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এর সপক্ষে কোন প্রমান মেলেনি। তাই পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

ওই তিনটি ঘরের কোথায় কি আছে-তাও লোকটা জানে। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাকে জানতে হয়। অরক্ষিত বাড়িতে বুড়ো-বুড়ি থাকলে অপারেশন চালানোর জন্য আরও ভাল। তাছাড়া বাড়িটির ধারে-কাছে আর কোন বাড়ি নেই। চেঁচালেও কেউ শুনবে না। বুড়োটা পঙ্গু। বুড়িটিও চোখে ঠিকমতো দেখতে পায়না। থাকার মধ্যে আছে শুধু এক চাকর। বুড়োটা সম্প্রতি কিছু জমি-জমা বিক্রি করেছে। ফর্মা মারফত লোকটা জানে বুড়োটার ব্যাংকে কোন হিসেব নেই। অর্থাৎ নগদ টাকা বাড়িতেই আছে।



স্যুটকেসের হাতলটা শক্ত করে ধরে লোকটা নিজের গলা ফের পরখ করে নেয়-'খালাম্মা, আমি রাতুলের বন্ধু। এ পখ দিযেই যাচ্ছিলাম,ভাবলাম দোয়া নিয়ে যাই।'কথাটা কি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে ? রাতুল সমন্ধে এর বেশিকিছু তো সে জানেনা। আচ্ছা,অত ভনিতার কি দরকার ? সরাসরি নাইলনের রশিটা ব্যবহার করলেই তো হয় ? এক ফাঁসেই বিনা রক্তপাতে খেল খতম। জীবনের প্রথম খুনটা তো সে এভাবেই করেছিল !



যৌবনের প্রথম ভাগেই এতিম কিন্তু সুন্দরী একটি মেয়ের দিকে তার চোখ পড়েছিল। ইনিয়ে-বিনিয়ে কাজ না হওয়ায় জোর করে সে মেয়েটাকে বিয়েও করেছিল। তারপর যেন নরক নেমে আসে তাদের সংসারে। রোজ অভাব-অনটনের ফিরিস্তি,খিস্তি-খেউড়, এককথায় যাচ্ছে-তাই জীবন। তারই মাঝে একদিন রাতে সে ঘরে ফিরল বেহেড মাতাল হয়ে। বউ কিন্তু হাসি-খুশি সাজপটিয়সী ! লোকটা কিছুটা অবাক। সে খিস্তি দেয়-'কিরে মাগী,পটের বিবির মতো সাইজ্যা বইস্যা আছিস ? মতলব কি ?

-'একটা গল্প শুনবে ? পরীর গল্প।'

-'রাইত-দুপুরে আবার কিয়ের গল্প ? শুইয়া পড়' লোকটা খেঁকিয়ে ওঠে।

-'আহা শোনইনা' বউয়ের আদুরে আকুতি।

আগুনের কাছে গেলে মোম গলবেই। লোকটাও গলে পড়লো-'ক দেহি শুনি।'

-কি সুন্দর পাখা দুটো ওর,ঠিক যেন মুক্তোর গুঁড়ো দিয়ে তৈরি। কিন্তু উড়তে পারেনা জানো ! ডানা দুটো ছেঁটে সেলাই করা। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বারোমাস চার দেয়ালে বন্দি থাকে। রাস্তা দিয়ে গাড়ী যায়,মানুষ যায়,বাইরে রোদ ওঠে,বৃষ্টি পড়ে,পরীটার খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সবার সঙ্গে ডেকে কথা বলতে। কিন্তু কথা বলাতো অনেক দুর,জানালা খোলাও বারন। পরীদের অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। মনিব সঙ্গে করে নিয়ে বের হলেই কেবল একটু-আধটু মাপা আকাশ কপালে জোটে।



বউটা একটু দম নেয়। তারপর আবার শুরু করে-



সব নিষেধ মেনে পরীটা এতদিন চুপচাপ শান্তই ছিল। কিন্তু একদিন তার মনিব ঘুমিয়ে পড়ায় সে একটু জানালা খোলার সুযোগ পায়। সামনের রাস্তাটা শুনশান,টুপটাপ পাতা ঝড়ে পড়ছে,রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে দুপুর। পরী মুগ্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ সে দেখে সাইকেলে করে একজন মালা বিক্রি করছে। সেই একফালি দুপুরে হঠাৎ মুক্তির আনন্দে পরীটার কেমন যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল। সাইকেলওয়ালা পরীকে শুধায় -'মালা নেবে'? পরী হাত বাড়ায়। এভাবে পরীর কাছে অনেক মালা জমা হয়ে যায়। কিন্তু সাইকেলওয়ালা একটিরও দাম নেয়না।



লোকটা আবারও খিস্তি দিয়ে ওঠে-'হ্যায় কি জমিদারের বাচ্চা যে মালার দাম নিব না ?' বউটা শান্ত কন্ঠে জবাব দেয়-সবগুলো মালার দাম চেয়েছিল আজকে। কিন্তু পরীর কাছে তো টাকা নেই। পরীদের টাকা,দুঃখ-কষ্ট কিংবা কোন অনুভূতি থাকতে হয়না। তাহলে তারা পরী হতে পারেনা।



লোকটা নড়ে-চড়ে বসে। তার চোখে মুখে রাজ্যের ভাবনা। বউটি বলেই চলে-সবগুলো মালার দাম দিতে না পারায় পরীটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সে বলে,আমার তো কিছুই নেই। কি দিয়ে তোমার দাম দেব ? মালাওয়ালা জবাব দেয়,ডানা আছে তো তোমার। তবু উড়তে পারোনা কেন ? এত ভয় কিসের ? দেখ বাইরে কেমন পথ হারানোর বাতাস ছেড়েছে,চলে এসো। যদি আসতে পারো সবগুলো মালা তোমায় দেব।'



নিজের দাম্পত্যজীবন লোকটার চোখের সামনে হঠাৎ করেই ভেসে উঠেছিল।তীব্র ক্রোধে নোঙ্গর ছেঁড়া বউয়ের গলায় মশারীর নাইলন পেঁচিয়ে সে তখনই তার মালা কুড়োনার সাধ সাঙ্গ করেছিল।



'বুড়ো-বুড়ির বিদায়টাও ঠিক ওভাবেই করেই করবো ' লোকটা স্থির করে।





****************



‌'তুমি খোকার বন্ধু ' তায়জাল তার অথর্ব শরীরটাকে কোনমতে সোজা করার চেষ্টা করে। ‌'কেমন আছে সে ?' খোকা কোথায় আছে তুমি জান ?'

রজব গলা খাঁকারি দেয়। এই মুহুর্তে তাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলতে হবে। সর্ন্তপনে গেট খোলার সময় চাকরের সামনে পড়ে গিয়ে তার সব পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে। 'রাতুলের বন্ধু' পরিচয়টা দিয়ে কোনমতে সে রক্ষা পেয়েছে। নিজের নাম বলেছে রজব। নামটা আসল নয়। হঠাৎ করেই মাথায় চলে এসেছে।

--'চিন্তা করবেন না চাচাজান। রাতুল ভাল আছে। আপনাদের কথা খুব বলে। কিন্তু আসতে পারেনা। আসলেই যে গ্রেফতার হবে।'

-'তাই বলে বুড়ো বাপটাকে একবার দেখে যেতে নেই' তায়জালের কন্ঠে অস্থিরতা। আনোয়ারা বাধ সেঁধে বলেন-'আহা কি শুরু করলে,ছেলেটাকে একটু বিশ্রামের সুযোগ তো দেবে। তা,কয়েকদিন থাকবে তো বাবা ?'

রজব এবার বাধ্য হয়েই মুখ খুললো-'থাকার সুযোগ নেই চাচী আম্মা। ব্যবসার কাজে এদিকে এসেছিলাম। রাতুলের মুখে আপনাদের কথা অনেক শুনেছি। তাই দেখা করতে এলাম।'

-'তাই বলে কোন খবর না দিয়েই এভাবে আসতে হয়' আনোয়ারার কন্ঠে প্রচ্ছন্ন অভিযোগ। 'আজকের রাতটা তো থেকে যেতে পার। তোমরা শহুরে মানুষ। আমাদের রান্না হয়তো মুখে রুচবে না' বলে বাড়ির পিছে ভাঙ্গা দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থাকে আনোয়ারা।

রজব আর দিরুক্তি না করে রাজি হয়ে যায়। এমনিতেই সে অনেক পাপ করেছে। মারার আগে দুঃখিনি মা'কে কষ্ট দিয়ে কি লাভ ? তাছাড়া মাঝরাতেই তো কাজ সারার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যাবে...।





***************



আজ রাতে অন্ধকারের ঢল নেমেছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খানখান। অভুক্ত কোন এক কুকুরের বেসুরো কান্নার সুর দুর থেকে ভেসে আসছে। ভগ্নস্তুপের দেয়ালটার পাশে দাঁড়িয়ে অকারণেই মাথায় ঘোমটা টানলেন আনোয়ারা। দশ বছর আগে এই দেয়ালটা মেরামত করা হয়। তার ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি।

'খোকা কে এসেছে বল তো?' দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে মাটিতে স্নেহতুরা হাত বোলাতে বোলাতে বলেন আনোয়ারা। 'তোর বন্ধু এসেছে। বলেছে তুই নাকি ভাল আছিস। ও তো জানেনা তুই কোথায় আছিস। ওর জানা দরকার কি বলিস ? তোর খুব একা একা লাগে,তাইনা খোকা ? চিন্তা করিস না,তোর বন্ধু এখন থেকে তোর সঙ্গে থাকবে।' পরম মমতার সঙ্গে হাত বোলাতে বোলাতে হঠাৎ 'উফঃ' করে আর্তনাদ করে ওঠেন আনোয়ারা। পিঁপড়ের কামড়ের জ্বালায় শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখ। হিসহিস করে বলেন-'পিঁপড়ে !....পিঁপড়ের উৎপাত বড় বেড়েছে।'

হঠাৎ সেই অন্ধকারের মধ্যে শোনা গেল কালাইয়ের গলা,'ক্ষেতে দেয়া বিষের শিশিটা নিয়ে আসবো, আম্মা ?

আনোয়ারার চোখে ক্রুর হাসি !





মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:২৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: ভগ্নস্তুপের দেয়ালটার পাশে দাঁড়িয়ে অকারণেই মাথায় ঘোমটা টানলেন আনোয়ারা। দশ বছর আগে এই দেয়ালটা মেরামত করা হয়। তার ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি।
'খোকা কে এসেছে বল তো?' দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে মাটিতে স্নেহতুরা হাত বোলাতে বোলাতে বলেন আনোয়ারা। 'তোর বন্ধু এসেছে। বলেছে তুই নাকি ভাল আছিস। ও তো জানেনা তুই কোথায় আছিস। ওর জানা দরকার কি বলিস ? তোর খুব একা একা লাগে,তাইনা খোকা ? চিন্তা করিস না,তোর বন্ধু এখন থেকে তোর সঙ্গে থাকবে। --

এই জায়গায়টায় এসে ঠিক বুঝতে পারলাম না। খোকাকি পালিয়ে যায়নি?

দশ বছর আগে দেয়ালটা মেরামত করা হয়.............ঠিক ধরতে পারছিনা ঘটনাটা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৩

নাছির84 বলেছেন: খোকা পালাবে কিভাবে ? তার আগেই তো বিষ মেশানো খাবার খেয়ে খুন হয়ে যায়। দেযালটা তার স্মৃতিচিহৃ হিসেবে মেরামত করা হয়। যদিও উল্লেখ করিনি...এতটুকুতে চলবে ?

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: ও মাই গড.........এতো গভীর চিন্তা। এখন অসাধারণ মনে হলো। তবে আমার মতো পাঠকের মনে হয় বুঝতে একটু কষ্ট হবে।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস। যদিও বাটনটা কাজ করছেনা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৬

নাছির84 বলেছেন: আপনার মতো পাঠক নয়...বলুন আমার মতো লেখকের উচিত আরও একটু খোলাসা করে লেখা। ....প্লাস বুঝিয়া পাইলাম এবং গল্পটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৫

সুমন কর বলেছেন: ভালো হয়েছে।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৭

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ। আমার বেশকিছু বন্ধুর নাম সুমন। তালিকাটা বাড়াতে আপত্তি নেই। ব্লগে স্বাগতম।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আনোয়ারা মনে মনে কি যেন ভাবছেন ! আজ হোক কাল হোক পুলিশ এ বাড়িতে আসবেই। খোকাকেও বেশিদিন কোথাও লুকিয়ে রাখা যাবেনা। তার মনে অন্য একটা ভাবনা উঁকি দিল। আচ্ছা,খোকা একটা মেয়েকে নষ্ট করেছে,তাকে খুন করেছে ! এ শিক্ষা সে পেল কোথায় ! এমন শিক্ষা তো তারা দেননি। ছিঃ আনোয়ারার গা গুলিয়ে উঠলো।

ঠিক এই যায়গায় সন্দেহ হয়েছিল ...

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। কালাই খাবার ও বিষ দুটোই দিয়েছিল। শুধু পিঁপড়েই মরলো না।

এখানে এসে শিউর হয়েছি ...।


০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

নাছির84 বলেছেন: গল্প শেষের আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছেন আপু ! নাহ,আমার দ্বারা কিছু হবে না।

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পের আইডিয়াটা দারুণ লাগল লেখক।

আর দৃশ্যপটগুলোও সুন্দর। পিঁপড়েরা হামলে পড়ছে ঘরের জিনিসপাতির ওপর, সাইকেলে করে একজন মালা বিক্রি করছে, মায়ের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং পিঁপড়ের কামড়ের জ্বালায় শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখ। হিসহিস করে বলেন-'পিঁপড়ে !....পিঁপড়ের উৎপাত বড় বেড়েছে।' - এসব জায়গা পড়তে ভালো লেগেছে।

শুভকামনা রইল।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

নাছির84 বলেছেন: গল্পটা একটানে লিখেছি। সে কারণে আপনার উল্লেখিত জায়গাগুলি বাদে বাকি লাইনগুলো হয়তো গল্পের আদলে লিখতে পারিনি। এটা আমারই ব্যর্থতা। গল্পের আইডিয়া ভাল লেগেছে জেনে প্রেরণার চৌবাচ্চা আবারও ভর্তি হয়ে গেল ! ধন্যবাদ শঙ্কু।

৬| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১০

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: ফাইন ত ! লিখার চমকে ভাল লাগল ।
ভাল থাকুন ।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

নাছির84 বলেছেন: প্রিয় ব্লগার/লেখকদের ভাল লাগলে আমার শ্রম সার্থক। তবে,ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার সঙ্গে উপদেশও কামনা করছি........ভাল থাকবেন মাহমুদ০০৭।

৭| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯

মামুন রশিদ বলেছেন: অন্য রকম একটা গল্প পড়লাম, অনেক ডীপ ।


++

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৩

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ।শুভেচ্ছা রইল। কোন রকম....জানতে ইচ্ছে করছে ?

৮| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ভাইরে ভাই! কঠিন!

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:০৭

নাছির84 বলেছেন: কি ! তাই নাকি ! আমি তো ভেবেছিলাম সরল অংকের মতোই সরল ?

৯| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

মশিকুর বলেছেন:
গল্পে জট ছিল, তবে জট খোলার পর্যাপ্ত উপকরণও ছিল। আপনার আইডিয়া গুলো চমৎকার। +++++++

শুভকামনা।।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩

নাছির84 বলেছেন: আইডিয়া !!!!....গোটা জীবনটাই তো একটা চমৎকার আইডিয়া। কত উপকরনই না লুকিয়ে আছে নিঃশ্বাসের এই বিশ্বাসে !
জট পাকাবেই কারণ সমাধানটা ধারে-কাছেই কোথায় লুকিয়ে থাকে।
আমরা কেউ তা খুলতে পারি, কেউ পারিনা। যারা পারেনা, তাদের কাছে জটই জী্বন। বাকিসব মিথ্যে।
শুভ কামনা ভাই।
আপনার লেখাগুলো পড়ছি। আপাতত এটুকু বলতে পারি....গোছালো লেখা। ভাবনার খোরাক আছে।
ভাল থাকবেন।

১০| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

জুন বলেছেন: অসাধারণ । জটিল লাগলো আনোয়ারর চরিত্র। সত্যি দারুন লিখেছেন রহস্যময় গল্প নাছির ।
+

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রো পিকটা কি কলমি ফুল ?

১১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: অসাধারণ গল্প +++++্

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ স্বর্ণ ঈগল।

১২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

জুন বলেছেন: না কলমী ফুল নয় । এটা কেমন যেন মাঁদার গাছ টাইপের নাম জানিনা। সুসং দুর্গাপুরের এক বাসার উঠোন থেকে তোলা।

আপনার এই গল্পটা আমাকে দারুন ভাবালো।আনোয়ারা যে শুধুমাত্র নীতিবান তাই নয় । তার মানসিক চরিত্রটাও এবনর্মাল। আপনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রহস্যময় গল্পটি লিখে গেছেন। যদিও খুনাখুনির গল্প আমার ভালোলাগে না । তবে আপনি তার কোন রগরগে বর্ননা দেন নি ।
প্রিয়তে নিলাম এত ভাবনার গল্পটিকে নাছির ৮৪ ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০০

নাছির84 বলেছেন: পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাবে আমরা অনেক সময়ই নিজের অজান্তেই অপ্রকৃতিস্থ আচরন করে থাকি।
খুনটা কি তারই ফলাফল ? যদিও তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য আনোয়ারা আচরনটা কিন্তু বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।
অর্থাৎ,একই সঙ্গে প্রকৃতস্থ এবং অপ্রকৃতস্থ-দুইই আমাদের মনে বিরাজমান। শুধু চাহিদামতো ঘোমটা পাল্টানোর অপেক্ষা.....
মজার ব্যাপার হলো, আমরা সবাই নিজেদের নীতিবান ভাবতেই ভালবাসি। হতে পারে তা বোকার স্বর্গে বসবাস করার মতো। কিন্তু পাগলের সুখ তো মনে মনে.......।
আমি রহস্য গল্প লিখতে পারিনা। খুনোখুনির গল্প পড়তে ভালই লাগে কিন্তু লেখার যোগ্যতা অর্জন করে উঠতে পারিনি। হচ্ছে কি, আমাদের গোটা জীবনটাই তো রহস্যে ভরপুর। খেয়াল করে দেখবেন, দৈনন্দিন কর্মকান্ডে আমরা অনেককিছুই গোপন করে থাকি। সেগুলো একসুত্রে গেঁথে ফেলে খানিকটা কল্পনার ফানুস উড়িয়ে দিলেই তো বেশ স্বাস্থ্যবান একটা রহস্য গল্প দাঁড়িয়ে যায় ?
রগরগে বর্ণণা দেয়ার প্রয়োজন ছিল কি ?
লাউডগা সাপ দেখেছেন নিশ্চয়ই ? যার আরেক নাম পংখীরাজ। সূতোর মতো চিকন সবুজাভ শরীরটা মিশে থাকে গাছের সবুজে। আলাদা করে চেনার উপায় নেই। চুপচাপ নিষ্পন্দ শরীরটার নড়াচরাও হয় খুব কম। কিন্তু একবার বিরক্ত হলে হঠাৎই চকিত লাফে......এক ছোবলে জীবননাশ !
দুনিয়াতে এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাই না ?

১৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২

সোমহেপি বলেছেন: অনেক শার্প----

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

১৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

না পারভীন বলেছেন: বাহ ! কঠিন মা । মা ছেলেকে খারাপ হয়ে যাওয়ার আগেই ঠিক করতে পারেনি এতে মায়ের দোষ নেই । অনেকের নিয়তিই থাকে খারাপ হয়ে যাওয়া ।


৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২২

নাছির84 বলেছেন:
সন্তান তো আর শ্যালো মেশিন নয়...যে গোল্লায় যাওয়ার আগে কিছুক্ষন খ্যাঁক খ্যাঁক করে কেশে প্রাথমিক পুর্বাভাস দেবে ?
ঘরের বাইরে সন্তান কোন তল্লাটে কি করছে...তা দুনিয়ার কোন মা জানতে পারে ? শুধু চোখের ভাষা পড়ে যেমন গোটা শরীরের কর্মকান্ড টের পাওয়া যায়না, তেমনি নিজের সন্তানকে কখনোই একজন মা খোলনলচে জানতে পারেন না। ভাল-মন্দ যাই হোক..সন্তান মনে করে সত্য জানালেই ঝামেলা...আর মায়ের ভাবনা, বাছার ঝামেলাকে ভাগাভাগি করে নেয়া।
সভ্যতার শুরু থেকেই জীবনের এ দুটি পথ সমান্তরাল। মেলার কোন সম্ভাবনা নেই..আমি অন্তত তাই মনে করি।
নিয়তির মারপ্যাঁচে অনেকেই খারাপ পথে পরিচালিত হয়, তা ঠিক। কিন্তু প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নৈতিকতার কিছু মৌলিক কাঠামো গড়ে ওঠে। বিশ্বাসের সেই ভিত্তিতে ঘা পড়লে....তা যদি নিজ সন্তানও দিয়ে থাকে...তবুও বিবেক জেগে উঠতে বাধ্য। কেননা, আপন জঠর হতে যার জন্ম তার ভাল-মন্দ সবকিছুর ভাগই তো নিতে হবে। বিচারের দায়িত্বটা তাই আনোয়ারা নিজ হাতেই তুলে নেয়.......।
দুনিয়াতে এমন মায়ের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

১৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

বৃত্তবন্দী শুভ্র বলেছেন: সুন্দর + +

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৬| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১:০৬

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: টুইস্ট টা ধাক্কা দেবার মত ভয়ঙ্কর ।
বর্ণনা বরাবরের মতই চমৎকার ।

তবে সুস্থ কোন মানুষ এত নির্লিপ্ত ভাবে খুন করতে পারে না , মাথা ঠাণ্ডা রেখে ক্রাইম করা এক ধরনের অসুস্থতা । যদিও মনে হচ্ছে সে তার অপরাধ বোধ থেকে আর ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরিস্থিতির ফেরেই এমন কাজ করেছে , তারপরও ভয়ংকর !

আসলে হিউম্যান বিহেবিয়্যার খুবই অদ্ভুত একটা ব্যাপার ।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৪৫

নাছির84 বলেছেন: 'শেষ পর্যন্ত রক্তও বিশ্বাসঘাতকতা করলো ! '

বিবেকের কিছু মৌলিকবোধ ধাকে। অভিজ্ঞতার গুঁতোয় তার কোন একটা নড়ে গেলে মানুষ মধু থেকে বিষেও পরিণত হতে পারে।

‌'সেই সোনার ময়না পাখিটি এখন বড় হয়েছে। আর তাকে ভোলানো যায়না। উল্টো সে ভোলাতে না পারলে জোর করে। প্রয়োজনে খুন করে ! তবুও লালসা চরিতার্থ করে ছাড়ে ।'

আনোয়ারা অবশ্যই অপ্রকৃতস্থ। কিন্তু নির্বোধ নয়। সে কিন্তু সবকিছু খুব ভালভাবেই ধামাচাপা দিয়ে এসেছে। এখন আরও একটি খুন করতে যাচ্ছে। শুধু বোধের জায়গাটি নড়ে যাওয়ার জন্য !
আমাদের চোখে আনোয়ারা কি এজন্যই গরল ? তাকে জিজ্ঞেস করলে সে কিন্তু বলবে, সরল। এমন দ্বিচারিনীসুলভ আচরন আমাদের সবার মধ্যেই প্রোথিত। কোনটা প্রকাশ হয়, কোনটা হয়না।
কিন্তু আমরা সবাই ভাল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.