নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্বার দেশে পেলাডা-১

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৩৫



ব্রাজিলে বল কখনোই থামেনা। তুলতুলে ঘাসের গালিচা থেকে বালুকাময় সৈকত কিংবা খোঁয়ার রাস্তা, সবখানেই চোখে পড়ে গোলাকার বস্তুটি। এমনকি জল থৈ থৈ বর্ষাতেও বলটার রেহাই মেলেনা !

বাইশজন মিলে সামান্য একটা চর্মগোলককে ধাওয়া করার খেলাটি সর্বপ্রথম গ্রীক এবং রোমানদের মস্তিস্কপ্রসুত ধারনা। তখন হাত-পা দুটোই চলতো। শতাব্দির পর শতাব্দি পেরিয়ে হাল আমলে বিচ্ছিন্ন হাত-পা ! রাগবি বয়ে চলে হাতে, এসোসিয়েশন ফুটবল পায়ে। প্রয়োজনে মাথাও চলে। এই ‘ফুটবল’কেই ব্রাজিলিয়ানরা বলে- ‘ফুতবল’(futeball)। চোস্ত পর্তুগিজে-‘ফুউউ-চিইই-বল’(fuu-chii-ball)।’যদিও তা আদতে ফুটবল। রসিকতার কথা হলো, ব্রাজিলের ‘ফ্যাভেলা’গুলোর (বস্তি) গলি-ঘুপচি থেকে অভিজাত শহরের রাস্তা পর্যন্ত বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা অতটা চোখে পড়েনা, যতটা নজর কাড়ে ‘পেলাডা’ !

ব্রাজিলিয়ানদের কাছে শব্দটার অর্থ-‌‌'নগ্ন যুবতী'। ব্যাখ্যা মিললো এক হোটেল দারোয়ানের কাছে। সাক্ষাৎ রাত্রি দ্বিপ্রহরে ! গদাইলষ্করি চালে পায়চারি করছিলেন ফ্ল্যামেঙ্গার রাস্তায়। হোটেল মালিকের লাভের গুঁড় খোঁজায় বরাদ্দ কর্মক্লান্ত শরীরের খাদ্য, রাতের ঘুম থেকে সময় চুরি করে নিশ্চিন্তে ঢেলে যাচ্ছেন পেলাডা'র তরে । অপেক্ষা করতেই জুটে যায় আরও কয়েকজন। সোডিয়াম বাতির তলে সবাই মিলে ভাগ হয় দুটি দলে। এক পক্ষের পরনে টি-শার্ট এবং শর্টস। আরেকদল বলতে গেলে অর্ধ-উলঙ্গ ! পরনে শুধুই শর্টস। কোন দর্শক নেই। পাশেই মধ্যরাতের উন্মত্ত সৈকতের হল্কা। রাস্তায় ভ্রমজাগানিয়া নির্জনতা।মাঝের এক চিলতে জায়গায় বলের গড়িয়ে চলা। প্রথম গোলটি হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউই রণে ভঙ্গ দিলনা। মাত্র ১০ মিনিটব্যাপি ম্যাচটা জেতার পর পেশায় দারোয়ান অগাস্তো কুইন্তেল দ্য লিমা জানালেন-' বেঁচে থাকতে

ব্রাজিলিয়ানদের চাই

শুধু নারী এবং পেলাডা।’

প্রমান মিললো কালোয়াৎ। অগাস্তোদের ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হলো আরেকটি ম্যাচ। তার যবনিকাও ঘটলো কোন দল প্রথম গোল করার পর। এভাবে চলতেই থাকলো একটার পর একটা.....। ফ্ল্যামেঙ্গোর পর্তুগিজ গির্জায় তখন ভোরের ঘন্টা বাজার অপেক্ষা।

রাতের প্রথম প্রহরে নেমে পড়ে ছাত্র-চাকুরীজিবি কিংবা একটু অভিজাত শ্রেনী। রাত গাঢ় হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমায়েত হয় ভিখিরি, হোটেল বয়,ভবঘুরে থেকে ছিঁচকে অপরাধীও । একটার পর একটা ম্যাচ গড়িয়ে চলে সকাল পর্যন্ত। জুতোর সংখ্যা হাতে গোনা। বেশিরভাগেরই নগ্ন পা। তলায় চাপা পড়ে অসংখ্য সূচালো খোঁয়া । রক্তপাত ব্যতীত কোন ম্যাচই শেষ হয়না।

বেপরোয়া খেলতে গিয়ে লুকাস ড্যানিয়েল পা ছিলে নিয়েছে। বয়সে কিশোর। পরনে শতচ্ছিন্ন প্যান্ট। তার এক কোনা দাঁত দিয়ে কেটে নিয়ে সে মুছে ফেলে ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত প্রবাহ। ড্যানিয়েলের দল এইমাত্র হেরে গেছে। বিপক্ষ দলের অধিনায়ক দিয়াগো তার ইয়ার। সম্পর্কেও কাজিন। শিষ দিতেই সে ছুটে আসে। দিয়াগোকে নিজের ক্ষতস্থানটি দেখিয়ে জ্ঞান বিতরনের ভঙ্গিতে ড্যানিয়েল বয়ান করে-‘আমার পায়ের আঙ্গুল একবার সরে যায়। বলটা এত জোরে লেগেছিল যে হাড় জায়গাচ্যুত হয়। খুব কেঁদেছিলাম ।’ এটুকু বলেই ড্যানিয়েল লম্বা একটা দম নেয়। মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটিয়ে বলে-‘ আঙ্গুলটি আমি নিজের চেষ্টাতেই সঠিক জায়গায় জোড়া লাগাই। এখন আরো ভাল খেলতে পারছি ।’

আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে দুই ভাই নজর রাখছিল মোবাইলের ঘড়িতে। নিজেদের পালা এলেই মাঠে নেমে পড়তে হবে। কিন্তু সহসাই গোল হয়না। ড্যানিয়েল বক বক করেই চলে। তার নিবাসের কথা। জায়গাটার নাম ফুগোওতেরিও। রিও ডি জেনিরোর মাঝে পাহাড় কেটে বানানো বস্তি। সেখানে নাকি সকালে একবার পেলাডা শুরু হলে শেষ হয় পরদিন সকালে !

'আমরা যখন খুশি তখন খেলি'-দিয়াগোর উক্তি।

'' তোমার ওই ছেলেটার কথা মনে আছে,যে সবসময় পেলাডায় পড়ে থাকতো। আমরা তাকে নেইমার বলে ডাকতাম ?' ড্যানিয়েলের জিজ্ঞাসা।

ঘাড় কুঁচকে দিয়াগোর পাল্টা প্রশ্ন -' ও এখন কোথায় ?'

'জানিনা। একটা বড় দল লুফে নিয়েছে। তারপর এখানে আর দেখিনি'- জবাব দিয়েই চুপ হয়ে যায় ড্যানিয়েল। দিয়াগোর মুখেও কুঁলুপ। এই হলো তাদের স্বপ্ন। ফ্যান্টাসির জগৎ। ক্ষত সৃষ্টিকারি এই ষ্ট্রিট ফুটবল খেলেই উঠে এসেছেন রোমারিও। রিভালদো। রোনালদো। আদ্রিয়ানো এবং আরও অনেকে....।

ইউরোপের বড় ক্লা্বগুলোর স্কাউটদের নজর সবচেয়ে বেশি পড়ে থাকে ব্রাজিলের 'ফ্যাভেলা'গুলোর প্রতি। মাঝে-মধ্যে তারা নিজেরাই ম্যাচের আয়োজন করে। স্কাউটদের মন জিততে পারলেই কেবল, আটলান্টিককে কাঁচকলা দেখানোর সুযোগ। তারপর সামর্থ্য অনুযায়ী শাসন করো ইউরোপ !

দিয়াগোই প্রথমে মুখ খুললো-‌'আমি ফ্ল্যামেঙ্গার (স্থানীয় ক্লাব) জুনিয়র দলে ট্রেনিং করেছি। কিন্তু স্কাউটরা নেয়নি। কারণ, আমার বয়স বেশি।' হঠাৎ গোওওওল। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে দুই ভাই। 'আসল ষ্ট্রিট ফুটবল দেখতে চাও ? আমাদের ফ্যাভেলাতে এসো। তখন দেখবে '-চোখ টিপে বলেই ষোল বছর বয়সি ভাইকে নিয়ে ছুট লাগায় ড্যানিয়েল।

ব্রাজিলের প্রতিটি রাজ্যের বলের গতিপথ অন্যটির চেয়ে আলাদা। রিওতে কি সুমদ্রতট, কি বস্তির অন্ধকারময় রাস্তা-ঘাট। সবখানেই পেলাডা। প্রকোপটা অ্যাত্তেরো'য় বেশি দেখা দেয় বর্ষাকালে। আর মিনাস গেরেইসের জনগন তো বল বানাতে বেছে নেয় যে কোন কিছু !

'আমি মোজা দিয়ে বল বানাতাম। কার্ডবোর্ড দিয়েও বানিয়েছি। তারপর প্লাষ্টিক ব্যাগ। অনেক সময় দেখা যেত বলটা গোলাকার হয়নি। কিন্তু তাতে আমাদের কোন সমস্যা হতো না'-বলেন মিনাস গেরাসের বাসিন্দা ফ্রেড। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপেই পাঁচ গোল করা ষ্ট্রাইকারটি বলেই চলেন-‌'আমরা গোলপোষ্ট বানাতাম পাথর কিংবা স্যান্ডেল দিয়ে। কখনো কখনো পাহাড়ে খেলতাম।দুইজন-দুইজন কিংবা তিনজন-তিনজন করে ম্যাচ খেলা হতো। তবে ছিল গোলপোষ্ট একটাই। তাও সবচেয়ে উঁচু জায়গাতে। খুব মজা হতো। কিন্তু বলটা একবার পড়ে গেলে গোটা পাহাড় ঘুরতে হতো।'

দেশের রং পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে টিকে থাকার পথটাও পাল্টে নিয়েছে ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতির অংশ বনে যাওয়া পেলাডা । সাও পাওলোর কথাই ধরুন, সেখানে একসময় খেলাটা হতো দুই নদী পিনহেইরো এবং তিয়েতের তীরে। খেলোয়াড়েরা ছুটে গিয়ে আঁজলা ভরে পানি খেতে পারতো। নদীর কিনারের এই 'ফুটবল'কে থুক্কি, ফুতবলকে ব্রাজিলিয়ানরা বলে-'ফুতবল ডি ভারর্জেয়া।' অর্থাৎ নীচু ভূমির খেলা।

সাও পাওলো দক্ষিন আমেরিকার অন্যতম প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার পর থেকে পেলাডার চেহারাও পাল্টাতে শুরু করে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে দালান-কোঠা। খালি জায়গা খুঁজে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। পেলেও ভাড়ার অংকটা আশাহত করবে। পেলাডার ব্যাপ্তিটাও তাই ক্রমশ ছোট হয়ে আসে। ছাঁটাই হতে হতে এখন তা ঢুকে পড়েছে অল্প একটু জায়গায় স্টিল কিংবা লোহার খাঁচার মধ্যে। যার আরেক নাম 'কোয়াদ্রাস'।

সাও পাওলোরই ভিলা মারিয়াস এলাকার এমন একটি কোয়াদ্রাস। ঘাস মরে হলদেটে। খটখটে শুকনো মাঠটিতে পড়ে গেলে নির্ঘাৎ ছিলে যাবে। কিন্তু খেলার অপেক্ষায় খাঁচার বাইরে চলছে ঠ্যালা-ঠেলি। উত্তেজনা। হুল্লোর। কোলাহল। ভেতরে চলছে লড়াই। প্রতি দলে পাঁচজন করে। ম্যাচ শেষের সময়সীমা তিন গোল। ঘড়ির প্রয়োজন নেই।

প্রথম দিকে শুধু ছেলেরাই ভিড় জমাতো খেলার জন্য। ভিলা মারিয়াসের ওই কোয়াদ্রাসটিতে বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। পেলাডায় যে সবসময় জোগো বনিতোর সুবাস পাওয়া যায়, তা কিন্তু নয়। মাঝে-মধ্যেই সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে দুই দল। নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে খুনোখুনিও ঘটে ! ভিলা মারিয়াসে তেমন কিছু না ঘটলেও হাতাহাতির জন্য কারণের অভাব নেই। শুধু দিনের একটা সময় বাদে। যখন পানি খাওয়ার ছলে বিরতি নিয়ে পেলাডায় নেমে পড়ে পাশেরই গ্যাস স্টেশনের সুন্দরী তন্বি কর্মচারী ক্লারা চাভেস। বয়স মাত্র ১৪ বছর..........(চলবে)





তথ্যসুত্র ঃ নিউইয়র্ক টাইমস।

ঃ গ্লোবোস্পোর্তে ।

ছবি ঃ ইন্টার নেট

















মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৭

মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ! ব্রাজিলিয়ানদের ফুটবল নেশা ওদের রক্তে মিশে আছে । পড়তে খুবই ভাল লাগলো ।

ব্লগে আপনাকে খুব একটা পাইনা কেন? আপনার গল্প মিস করি ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০

নাছির84 বলেছেন: মামুন ভাই আমার গল্প মিস করে !!! ভাবতেই ভাল লাগছে। আসলে ব্লগে কেন আসা হয়না্, তার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। ইদানিং সবকিছু থেকেই বিমুখ হয়ে পড়ছি। তেমন ভাল কোন গল্পের রসদও খুঁজে পাচ্ছিনা। এই লেখাটাও উদ্দেশ্যহীন। কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করছিল, তাই লিখে ফেললাম।
পড়ার জন্য অনেক ধনব্যাদ মামুন ভাই। ভাল থাকবেন।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: দারুন
++++++++++++
পরের পর্বে গেলাম।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

নাছির84 বলেছেন: পরের পর্বে নিয়ে যাওয়াটাই আমার প্রাপ্তি....

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভাল লাগছে ...
মাথা ফাকা করে এই সব লেখা পড়তে হয় , চোখ বুলিয়ে কিচ্ছু বোঝা জায় না ,তাই হয়ত দেরী হল ...।

তোমার লেখার ব্যাপারে কিছু নাই বা বললাম :)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৪

নাছির84 বলেছেন: দেরি করলেন কেন ? নতুন একটা গল্প জরিমানা করা হলো। অতি সত্ত্বর দেনা পরিশোধ করুন। নইলে...!!!

৪| ০৩ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

পরের পর্ব পড়ে আসি ...

০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:১৪

নাছির84 বলেছেন: আসার কি দরকার ? একেবারে শেস করে গেলে হয় না ? :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.