নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্বার দেশে পেলাডা-২

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৫৪

'প্রথম দিকে শুধু ছেলেরাই ভিড় জমাতো খেলার জন্য। ভিলা মারিয়াসের ওই কোয়াদ্রাসটিতে বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। পেলাডায় যে সবসময় জোগো বনিতোর সুবাস পাওয়া যায়, তা কিন্তু নয়। মাঝে-মধ্যেই সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে দুই দল। নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে খুনোখুনিও ঘটে ! ভিলা মারিয়াসে তেমন কিছু না ঘটলেও হাতাহাতির জন্য কষ্ট করে কারণ খুঁজতে হয়না। শুধু দিনের একটা সময় বাদে। যখন পানি খাওয়ার ছলে বিরতি নিয়ে পেলাডায় নেমে পড়ে পাশেরই গ্যাস স্টেশনের সুন্দরী তন্বি কর্মচারী ক্লারা চাভেস। বয়স মাত্র ১৪ বছর'..........(প্রথম পর্বের পর)



ক্লারার পরনে আজ পালমেইরাসের জার্সি। বাড়ন্ত শরীরটায় দারুন মানিয়েছে। সে স্থানীয় একটি ক্লাবের মহিলা দলের খেলোয়াড়। দেশের ফুটবলে নিজেদের হাল পরিস্থিতিটা জানিয়ে দিল মুখে খৈ ফুটিয়ে। ব্রাজিলে মহিলা ফুটবল লিগ এখনো দোলনা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। জাতীয় লিগের বালাই নেই। খেলোয়াড়দের উপার্জনের প্রধান অলম্বন তাই ভিনদেশি লিগ। যেখানে রাজত্ব করছেন পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা মার্তা। উত্তর আমেরিকা কাত করে আরো উত্তরের সুইডিশ লিগ মাতিয়ে চলছেন 'স্কার্ট পরা পেলে।'

ক্লারার মনেও স্বপ্নের বীজ পোঁতা। তাই কমনীয় নারীত্বের লেবাসকে খুলে রেখেই ও পেলাডার কোর্টে নেমে থাকে । ছুটতে পারে বটে ! পাসিংয়ে তীক্ষ। রেশমী ড্রিবলিং। পাঁচ মিনিটেই বাগিয়ে নেয় দুই গোল !

পেলাডার সঙ্গে ক্লারার মিতালী নয় বছর বয়স থেকে। শুরু থেকেই সবার আর্কষনের কেন্দ্রবিন্দু। শরীরে বিপরীত লিঙ্গ ধারন করায় শক্তিতে পেরে উঠতো না। তাই কপালে জুটতো রাশি রাশি ল্যাং কিংবা কনুইয়ের গুঁতো । স্বপ্নে পানি ঢালতে থাকায় তার সয়ে যায়। কিন্তু গালি সহ্য হতো না। তখন চোখ বেয়ে টপটপ করে ঝরে পরতো ব্যর্থ আক্রোশ। এভাবেই কেটে গেল পাঁচটি রোদনভরা বসন্ত। ভিলাস মারিয়াসের ওই খাঁচার ভেতর কত এলো-গেল, কিন্তু ক্লারা নিজেকে শান দিয়ে টিকে রইল। এখন সে ইটের জবাবে পাটকেল ছুঁড়ছে। কোর্টের সেরা ফুটবলার বলে কথা ! আরও একটি গোওওওল। ক্লারার দল জিতে গেল। এভাবে একঘন্টা ধরে তারা জিতে চললো ম্যাচের পর ম্যাচ। কোয়াদ্রাসের ভেতর সে-ই একমাত্র মেয়ে যে কখনো হার মেনে পেলাডার কোর্ট ছাড়েনি।

'শুরুতে ছেলেরা আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতো। তারা মনে করতো খেলার অধিকার শুধু্ তাদেরই আছে। অনেকটা এরকম যে জায়গাটা তাদের বিধায় সেখানে শুধু তারাই থাকতে পারবে'-ক্লারা বলে চলে। 'অনেক মানুষই এমন মনে করে। হয়তো একদিন সব পাল্টে যাবে'-তার চোখে জিজ্ঞাসা।

ব্রাজিলিয়ানরা বিশ্বাস করে, মাঠের ভেতর গড়িয়ে চলা বলটা সবসময়ই অর্থবহ। যার ব্যাপ্তিটা শুধু একটি গোল কিংবা ম্যাচে সীমাবদ্ধ নয়। একটা উদাহারন দেই- ব্রাজিলের অনেকেরই বিশ্বাস 'জোগো বনিতো' অর্থাৎ 'প্লে বিউটিফুলি' আপ্তবাক্যটা সবার মনে ধারন করার নেপথ্যে রয়েছে বর্ণবাদের এক দীর্ঘ কলংকময় ইতিহাস !

একটা সময় ছিল যখন ব্রাজিলে সবাই মনে করতো, কৃঞ্চাঙ্গরা শাস্তি কিংবা পারিশ্রমিক গ্রহন ব্যতীত একজন শ্বেতাঙ্গকে কখনোই ছুঁতে পারবেনা। শুধু এই কারণে অনেকে্ই বিশ্বাস করে, পেলাডা খেলার সময় ব্রাজিলিয়ানদের পায়ে যে রেশমি মসৃন মসলিনের মতোই পেলব কারুকার্য ফুটে ওঠে, তা শুধুই বেঁচে থাকার একটা কৌশল মাত্র। প্রতিপক্ষের গায়ে সামান্যতম আঁচড়টুকু না কেটে তাকে শেষ করে দেয়া ! গোল করা। পাছে সমাজের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ হয়, তাই !

সেই পেলাডা এখন ব্রাজিলের বস্তিতে বেড়ে ওঠা একটি ছেলের খ্যাতি এবং কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জনের 'আশ্চর্যপ্রদীপ।' ২০১১ সালে ব্রাজিল একাই ইউরোপিয়ান লিগে রপ্তানি করেছে ৩০০ ফুটবলার। আর হাজারো খেলছে দেশের ঘরোয়া লিগগুলোতে মোটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।

ব্রাজিলের এককোনের শহর মানাউস। এখানে কোন কিংবদন্তি জন্ম নেয়নি। কিন্তু প্রতিবছর অনেকেই ঘর ছাড়ে ফুটবলের জন্য। নিশ্চয়তা শুন্য। তবুও স্বপ্নকে তাড়া নেশায় মানাউস বন্দর থেকে জাহাজে ওঠে অসংখ্য কঁচি-কাঁচা। পরবর্তি বন্দরে না থামা পর্যন্ত দিনের বেলাটা তারা ঘুমিয়ে কাটায় সিলিংয়ের 'হ্যামক'-এ (দোলনা)। রাত্রে পায়চারী করে ডেকে। কারো ভাগ্যে শিঁকে ছেড়ে। কেউবা ফেরে খালি হাতে। অনেকে তাও পারেনা ! গতবছর সাও পাওলোর স্টেট ক্লাব পর্তুগিজা স্যানতিয়েস্তার এক স্কাউট আমাজনের ভেতরকার শহর পারা থেকে ১২ জন কিশোর ফুটবলারকে নিয়ে ওঠেন জাহাজে। গন্তব্য সান্তোস। সেখানকার যুব টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্নে বুঁদ কচি প্রাণ গুলো। কিন্তু পৌঁছানোর পর একটি কক্ষে তাদের আটক করে রাখা হয়। সম্বল বলতে ছিল মাত্র তিনটি কম্বল। তাই দিয়ে কেটে যায় কয়েকরাত। খাবারটুকু পর্যন্ত দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক সাংবাদিকের কল্যাণে চিত্রগুপ্তের খাতায় নাম লেখানো থেকে তারা বেঁচেও যায় । কিন্তু এসব জেনেও মানাউসের কিশোর প্রতিভা কালেব ক্যাম্পেলো নাছোড়বান্দা। তার যুক্তি-' এমন কোন বিখ্যাত খেলোয়াড় জন্মেনি যে তাকে দেখে গোটা বিশ্বের সবাই মানাউসকে একনামে চিনবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কখনোই জন্মাবে না।'........(চলবে)





তথ্যসুত্র ঃ নিউ ইয়র্ক টাইমস

ঃ গ্লোবো স্পোর্তে



ছবি ঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০৯

রবিন একা বলেছেন: আলাদা অনুভূতি

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:২৮

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ। ব্লগে স্বাগতম।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৭

মামুন রশিদ বলেছেন: খুব ভালো পোস্ট । ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের আমেজ পেতে শুরু করেছি ।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০০

খেয়া ঘাট বলেছেন: সম্বল বলতে ছিল মাত্র তিনটি কম্বল। তাই দিয়ে কেটে যায় কয়েকরাত। খাবারটুকু পর্যন্ত দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক সাংবাদিকের কল্যাণে চিত্রগুপ্তের খাতায় নাম লেখানো থেকে তারা বেঁচেও যায় ।
++++++++++++++
চমৎকার , চলতে থাকুক সিরিজ।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

নাছির84 বলেছেন: এমন দুভার্গ্য সবচেয়ে বেশি মেনে নিতে হয় আফ্রিকান ফুটবলারদের।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

বেলা শেষে বলেছেন: আপনার প্রায় লেখাগুলোই আমি পড়েছি। সবগুলোই আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। good picturing, good writing.
অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
Salam & Respect to you.
Up to next time.

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। প্রায় সবগুলো লেখাই পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। সঙ্গে থাকবেন....অনেকদুর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো।
ওয়া আলাইকুম আস সালাম। কৃতজ্ঞতা রইল।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

বেলা শেষে বলেছেন: ok, brother.

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩২

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এই নিয়া ৩য় বার কমেন্ট করলাম নেট জটিলতায় পোস্ট হচ্ছে না :( না হইলে আর করমু না

লেখা সেরাম হইছে :)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪

নাছির84 বলেছেন: মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। সেরাম পাঠিকা শুধু আমার ব্লগে ঢুঁ মারলেই....... আমি খুশি !

৭| ০৩ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


দারুন একটা সিরিজ ছিল মিস করছি।

০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:১৮

নাছির84 বলেছেন: মিস করলেন কোথায় ?
এগিয়ে চলার পথে এরকম অনেব কিছু আমরা পেছনে ফেলে আসি। কেউ কেউ ফিরে তাকায়। পাছে মিস হয়ে যায় !
ফিরে দেখার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.