নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলা নয় রুপকথা !

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

প্রাগৈতিহাসিক এক সফরের গল্প (১২ই জুলাই, ২০১৩)
****************************
১৮৭৭ সালে অফিসিয়ালি প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার নয় বছর আগে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড সফরে যায় অস্ট্রেলিয়া। চার্লস লরেন্স ছিলেন সে দলের কোচ এব্ং অধিনায়ক। ১৪ সদস্যের সে দলে শুধু লরেন্সই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার। বাকি সবাই ভিক্টোরিয়ার আদিবাসী! ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত চার্লস ডারউইনের 'অরিজিন অব স্পেসিসে'র ধাক্কায় তখন গোটা ইউরোপ তোলপাড়। লরেন্সের ইচ্ছা ছিল, আদিবাসী ক্রিকেটারদের দিয়ে ইংলিশদের মনে 'বাহারি উপজাতি' সম্বন্ধে একটা ধারণা দেওয়া। মানতেই হবে, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সে প্রচেষ্টায় তিনি সফল হয়েছিলেন শতভাগ !
( ১.ইংল্যান্ড সফরে আসা অষ্ট্রেলিয়া আদিবাসি ক্রিকেট দল। ২. আদিবাসিদের গতিসম্রাট জেলেনাচ (জন কিউজেন্স), ভাল ব্যাটও করতেন।----ছবিঃ বিবিসি)
সফরটি শুরুর আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কারণ, ভিক্টোরিয়ার আদিবাসীদের রক্ষায় কেন্দ্রীয় বোর্ড জানায়, ইংল্যান্ডের বেতাল আবহাওয়ার সঙ্গে আদিবাসীরা খাপ খাওয়াতে পারবেন না। আগের বছর সিডনি সফর হয়েছিল চার আদিবাসী মারা যাওয়ায়। তাদের অন্তত দু'জনের মৃত্যুর কারণ ছিল নিউমোনিয়া। তবু লরেন্স একপ্রকার বাধ্য হয়ে ভিক্টোরিয়া থেকে ওই ১৩ আদিবাসীকে সিডনি পোতাশ্রয় পর্যন্ত নিয়ে আসেন সম্পূর্ণ চোরাকারবারির কায়দায়! সেখান থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পশমি সুতো বহনকারী পালতোলা জাহাজে চেপে তিন মাসের বেশি সময় সাগরে ভেসে ১৩ মে ইংল্যান্ডের গ্রেভসন বন্দরে পেঁৗছান লরেন্স ও তার আনকোরা ক্রিকেটাররা।
প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়ায় ২৫ মে ওভালে সারের বিপক্ষে। ওই ম্যাচসহ পরপর টানা পাঁচটি ম্যাচে লরেন্সের দল হারলেও তারা প্রতিদিন গড়ে আট হাজার দর্শকের হৃদয় ঠিকই জিতে নেন। বেশির ভাগ ম্যাচই ছিল দু'দিনের। তৃতীয় দিনে ক্রিকেট খেলার বদলে মাঠে আদিবাসী ক্রিকেটাররা নানা রকম কসরত দেখাতেন। এর মধ্যে ছিল ১০০ গজ পেছনে দৌড়ানো, বুমেরাং (এক ধরনের ছুরি) ছোড়া ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, আদিবাসীদের অদ্ভুতুড়ে সব নাম উচ্চারণ করতে না পারায় ইংলিশ দর্শকরা মাঠে তাদের কসরত দেখে আলাদা আলাদা উপাধি দেয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন 'ডিক-এ-ডিক'। তার কাজ ছিল, ছোট্ট খুপরির মতো একটি শিরস্ত্রাণ পরে মাঠে দাঁড়ানো, আর দর্শকরা তাকে উদ্দেশ করে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট বল ছুড়ত। ১২৬ দিনব্যাপী গোটা ট্যুরে দর্শকরা মাত্র একবারই তার মাথায় বল লাগাতে পেরেছিল!
ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে অন্তত একটি ম্যাচ খেলতে মরিয়া ছিলেন লরেন্স। মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) প্রথমে নিমরাজি থাকলেও পরে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। তৃতীয় দিনে আদিবাসীদের কসরত দেখানো নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। লর্ডসের পরিবেশের সঙ্গে নাকি তা খাপ খায় না। একজন আর্ল এবং কাউন্ট নিয়ে গঠিত ইংলিশ দলের বিপক্ষে দেড় দিনের মধ্যেই লরেন্সের দল হার মানে। বেঁচে যাওয়া সময়টুকুতেই বিভিন্ন কায়দা-কসরত দেখিয়ে লর্ডসের মন জিতে নেন আদিবাসীরা। পরে এমসিসিও তাদের বিবৃতিতে বলতে বাধ্য হয়, 'আদিবাসীদের ওই অংশটুকু না থাকলে দর্শকরা আশাহত হতো।'
হর্ষধ্বনি পাওয়ার সঙ্গে লরেন্সের দলে ট্র্যাজেডিও ভর করে। তাদের সেরা ফিল্ডার কিং কোল কাঁধে আঘাত পেয়ে আহত হওয়ার পর যক্ষ্মা ও নিউমোনিয়ার প্রকোপে মারা যান। তবে সবমিলিয়ে মোট ৪৭টি ম্যাচের মধ্যে ১৪টি জয়ের পাশাপাশি ততসংখ্যক ম্যাচ হারে লরেন্সের দল। বাদবাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়। অফিসিয়ালি ওই ট্যুরে ২ হাজার ১৭৬ ইউরো লভ্যাংশ এলেও তার একটি কানাকড়িও আদিবাসীদের দেওয়া হয়নি। ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসী প্রতিরোধ আইন হওয়ায় পর থেকে বহির্বিশ্বে তাদের আর ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়নি। এর ঠিক ১২৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ফের দেখা যায় একজন আদিবাসীকে, তিনি জ্যাসন গিলেস্পি।
প্রথম সে সফরে আদিবাসীরা অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও তাদের মানসিক অবস্থার দারুণ বর্ণনা দিয়েছিলেন সাবেক অসি টেস্ট ক্রিকেটার অ্যাশলে মেলেট। লরেন্সের দলের ওই সফর নিয়ে ২০০২ সালে তার লেখা 'লর্ডস ড্রিমিং' বইয়ের কিছু লাইন এরকম_ 'তারা সুখী ছিল। কারণ অষ্ট্রেলিয়ায় তখন আদিবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হতো। বর্ণবৈষম্য ছিল সমাজের নিয়তচিত্র। তুলনা দিতে গেলে বলতে হবে, সিডনি বন্দর থেকে তারা যেন মহাকাশযানে চেপেছিল চাঁদে যাওয়ার উদ্দেশে!'

ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি (২৫ নভেম্বর, ২০১৩)
**************

১৮৬৪ সালে লন্ডনের ব্যাটারসিয়া পার্কে সেক্রেটারি একাদশ বনাম প্রেসিডেন্ট একাদশের মধ্যকার ম্যাচটি দিয়েই এফএর বেঁধে দেওয়া নিয়মে প্রথমবারের মতো ফুটবলের পথচলা শুরু। তারপর কত কিছুই তো ঘটে গেল। প্রাণঘাতী সংঘর্ষ থেকে শুধু পেলের খেলা দেখতে আফ্রিকায় সাময়িক যুদ্ধবিরতিও। কিন্তু এটা তো মুদ্রার এক পিঠ মাত্র। অপর পিঠে অসংখ্য বিজয়গাথার মাঝে আজও স্বমহিমায় টিকে আছে এমন একটি ম্যাচ, যার ফলাফলে কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য!
(ওয়েম্বলিতে 'ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স'দের সঙ্গে করে মাটে নামছেন ফেরেঙ্ক পুসকাস (বায়ে সবার সামনে), ছবি ঃ বিবিসি)
১৯৫৩ সাল। ওয়েম্বলিতে এক লাখ কুড়ি হাজার দর্শক। বেশিরভাগেরই প্রত্যাশা ছিল 'ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স'দের হার। কারণ ওয়েম্বলিতে তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারেনি। যদিও প্রতিপক্ষ দল তিন বছর ধরে অপরাজিত থাকা ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরি। তখন ফুটবলকে একান্তই নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করা চলা নাক-উঁচু ব্রিটিশদের বিপক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক দলটির মুখোমুখি হওয়াকে গণমাধ্যমগুলো তকমা দেয় 'ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি'।
স্ট্যানলি ম্যাথুজ, আলফে রামসিদের আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি ছিল না। কারণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য তখনও অস্ত যায়নি। উপমহাদেশ হাতছাড়া হলেও ব্রিটিশদের করতলে ছিল আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশ। তা ছাড়া কয়েক মাস আগেই মাউন্ট এভারেস্টকে পদানত করে ব্রিটিশরা। পক্ষান্তরে হাঙ্গেরির অবস্থা তথৈবচ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। জোসেফ স্ট্যালিনকে অনুসরণ করে হাঙ্গেরিকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন নতুন কমিউনিস্ট নেতা রাকোসি। হাঙ্গেরির তখনকার কোচ গুস্তাভ সেভেস নিজেও ছিলেন সরকারদলীয় সদস্য। মনেপ্রাণে সমাজতান্ত্রিক সেভেস মন্তব্য করেছিলেন, 'পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের লড়াইটা শুধু সমাজেই নয়, বরং মাঠেও হবে।'
সামরিক বাহিনীতে কিছুদিন থাকায় দেখতে খাটো ফেরেঙ্ক পুসকাসকে সবাই তাকে ডাকত 'গ্যালোপিং মেজর' (ক্ষুদে কামান)। গোল করতে কষ্মিনকালেও কখনো ডান পা কিংবা মাথা ব্যবহার করেননি। শুধু বাঁ পা-কে সম্বল করে ৮৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি কীভাবে ৮৩ গোল করেছিলেন, তা আজও ফুটবলপণ্ডিতদের গবেষণার বিষয়; সেই পুসকাসকে তাক করে ইংলিশ খেলোয়াড়রা টিটকারি মারে_ 'ওই হোৎকা ক্ষুদে ছোকরাটাকে দেখ।' জবাবে ম্যাচ শুরুর ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় ইংলিশদের জালে বল পাঠিয়ে দেন পুসকাস। ২৮ মিনিট পর ইংল্যান্ড ১ :হাঙ্গেরি ৪। হাঙ্গেরি শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জেতে ৩-৬ ব্যবধানে। কিন্তু টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যাচের ফলাফলটা হতে পারত ইংল্যান্ড ৩ : হাঙ্গেরি ১২!
শেষ বাঁশি বাজার পর ওয়েম্বলি এতটাই চুপসে গিয়েছিল যে, মাঠে একটা পিনপতন শব্দেও তারা হয়তো কেঁপে উঠত। কয়েক মাস পর হাঙ্গেরির 'নেপস্ট্যাডিওনে (জনগণের মাঠ) আবারও পুসকাসদের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। এবার হারের ব্যবধান ৭-১! 'থ্রি লায়নস'দের ইতিহাসে আজও সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের কলঙ্ক তিলক এই হার।
১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত ব্রিটিশরা বিশ্বকাপে অংশ নিত না এই ভেবে যে, নন-ব্রিটিশদের সঙ্গে খেললে তাদের সম্মান ভুলুণ্ঠিত হবে; কিন্তু হাঙ্গেরির বিপক্ষে ওই দুটি হারের পর ব্রিটিশদের দিবাস্বপ্ন ভেঙে যায়, যার ব্যাখ্যায় ইংরেজ ইতিহাসবিদ এরিক হবসওয়াম বলেছিলেন_'ব্রিটিশরা খেলাটিকে দুই মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। সে কারণে তারা নিজেদের মাপত আলাদা উচ্চতায়; কিন্তু ওই ম্যাচের পর তাদের সে বিশ্বাসে চিড় ধরে।'
ম্যাচটিকে পুঁজি করে ১৯৯৯ সালে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক পিটার টিমার। ছবিটির নামও ৬ :৩। হাঙ্গেরীর ফুটবলে পুসকাসের অবদানটা এক কথায় বর্ণনা করেছেন দেশটির খ্যাতনামা লেখক পিটার এসত্রানজি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল_ বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কে? এসত্রানজি জবাব দেন_ 'কে আবার, পুসকাস।'
ইতিহাস পাল্টে দেয়া সেই ম্যাচটার ষাট বছর পূর্তি আজ!

ফুটবলে থেমেছিল মহাযুদ্ধ ! (২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩)
*******************

নাইজেরিয়া তখন গৃহযুদ্ধে কাঁদছে, যার হোতা ছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াকুবু এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওজুকু। রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের মাঝেই লাগোস বিমানবন্দরে অবতরণ করে সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির উদ্দেশ্য বিশ্বসফরের অংশ হিসেবে একটি প্রীতিম্যাচ খেলা। শেষ পর্যন্ত সান্তোসের একজন খেলোয়াড়কে কেবল একনজর দেখার জন্য ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিলেন দুই সমরনায়ক। ফুটবলে যাদের অরুচি আছে, তারাও জানেন সেই খেলোয়াড়ের নামটা_ এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো। সবাই ডাকে 'পেলে'।
(বেলজিয়ামের লেপার শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। বড়দিন এলেই জায়গাটি ভরে যায় ফুলেল শ্রদ্ধায়। ছবি ঃ বিবিসি)
লিভারপুলের কিংবদন্তি ম্যানেজার বিল শ্যানকি একবার বলেছিলেন, 'কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, ফুটবলের মহিমা জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে তুলনীয়। তাদের এ মানসিকতায় আমি খুবই মর্মাহত। কেননা, ফুটবল এর চেয়েও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
আবেগমথিত বাক্যে ১৯৬৭ সালে পেলের ঘটনাটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন শ্যানকি। স্কটিশ ওই ভদ্রলোক বিশ্বাস করতেন, সামান্য চর্মগোলক দিয়ে যুদ্ধের ভয়ঙ্করতাকেও রুখে দেওয়া সম্ভব। তিনি শিখেছিলেন ইতিহাস থেকে। ৯৯ বছর আগে পৃথিবীতে এমন একটা মুহূর্ত এসেছিল, যখন ফুটবল কিছুক্ষণের জন্য হলেও থামিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ!
সালটা ১৯১৪। প্রথম মহাযুদ্ধের পাঁচ মাস চলছে। ইতিহাসখ্যাত ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে জার্মান ও ব্রিটিশ সেনাদের রক্তে সিক্ত হয়ে উঠছিল ফ্লান্ডার্সের মাটি। এরই মধ্যেই এলো বড়দিন। এই উপলক্ষে দুই শিবিরকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠান স্বয়ং পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট। বলেছিলেন, 'দেবদূতদের গান গাওয়ার রাতে থেমে যেতে পারে অস্ত্রের ঝনঝনানি।' কিন্তু তার আকুতি কোনো পক্ষই কানে তোলেনি।
সেই ফ্লান্ডার্সেই ২৪ ডিসেম্বর মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির সৈন্যরা হার মানিয়ে দেয় কল্পনাকেও। ক্রিসমাস ইভিনিংয়ে বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল জার্মান সেনারা। তাদের সাজানো ক্রিসমাস ট্রির আলো ও প্রার্থনাসঙ্গীতের শব্দ শুনতে পায় ব্রিটিশ সেনারা। তারাও বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ব্রিটিশ সার্জেন্ট ক্লেমেন্ত বার্কারের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়, সাদা পতাকা হাতে ট্রেঞ্চ থেকে সর্বপ্রথম 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ বের হয়ে আসেন এক জার্মান সেনা। সে আমাদের বলল, তোমরা এখন গুলি থামালে আমরাও সকালে (বড়দিন) গুলি করা বন্ধ রাখব।' ব্যস, এরপর আর থামাথামি নেই। অস্ত্র রেখে পিলপিল করে বেরিয়ে আসে দু'পক্ষের সেনারা। কিছুক্ষণ আগেও যারা মেতে উঠেছিল পাইকারি হত্যাযজ্ঞে, তারাই বড়দিনের উপহার হিসেবে নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে খাবার, সিগারেট, অ্যালকোহল, জামার বোতামসহ নানা প্রয়োজনীয় বস্তু। বার্কারের পাঠানো ওই চিঠি থেকে জানা যায়, নো ম্যানস ল্যান্ডে ভোজবাজির মতো ফুটবল উপস্থাপন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সেনা। কোত্থেকে তিনি বলটা পেয়েছিলেন, তা অবশ্য জানাননি বার্কার। ফুটবল পেয়েই অস্ত্র রেখে ব্রিটেন এবং জার্মানি ভাগ হয়ে পড়ে দুটি দলে। তার আগে অবশ্য নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে থাকা ৬৯টি মৃতদেহ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করে দু'পক্ষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি শেষ পর্যন্ত হার মানলেও ওই ফুটবলযুদ্ধে তারা ব্রিটেনকে পরাজিত করেছিল ৩-২ ব্যবধানে।
ঘটনার শতবর্ষ পূর্তি হবে ২০১৪ সালে। সে উপলক্ষে ফ্লান্ডার্সে একটি ফুটবল মাঠ বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার বছর ১১ মাসব্যাপী সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহতের সংখ্যা দেখে এতটুকু কেঁপে ওঠেননি বিখ্যাত স্কটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। বরং ওই ফুটবল ম্যাচটাকে একমাত্র সুখস্মৃতি হিসেবে রেখে শার্লক হোমস স্রষ্টা মন্তব্য করেছিলেন, 'এতসব নৃশংসতার মাঝে শুধু ওই একটা মনুষ্যত্বের পর্বই (ফুটবল ম্যাচ) মুছে দিতে পারে যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি।'


(সবগুলো লেখাই বেশ পুরোনো। ভাল লাগতে পারে ভেবে ভাগাভাগি করে নিলাম)
ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: এটা কি আপনার মৌলিক লেখা নয়?

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

নাছির84 বলেছেন: হুঁম আমার মৌলিক লেখা। দিন তারিখও দেয়া আছে। দৈনিকে লিখেছিলাম। ভাবলাম ব্লগের পাঠকদের জন্যও দিয়ে দেই। পড়লে হয়তো মজা লাগবে.....। কিন্তু এটা জিজ্ঞেস করার কারণ কি ভাইয়া ?
ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ খুব চমৎকার একটা পোষ্ট।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। লেখাগুলো কি আপনার তোলা ছবিগুলোর মতোই ফ্রেমে বেঁধে রাখার মতো ? বেশ আগে দৈনিক সমকালে ফিচারগুলো প্রকাশিত হয়েছিল।
আমার প্রশ্নের কিন্তু জবাব পেলাম না ?
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ছবিগুলো চমৎকার, লেখাটাও বেশ। প্রশ্নটা করেছিলাম আপনার লেখাকে কপি-পেষ্টারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩

নাছির84 বলেছেন: দুঃখিত ভাইয়া। আমি বুঝতে পারিনি। ব্লগে নিমন্ত্রন রইল.....

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৭

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম।

পরে পড়ব।

ভাল পোস্ট।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। পড়লে খুশি হবো। ভাল থাকবেন।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯

ইমিনা বলেছেন: অফিসে কাজের ফাকে কিংবা গাড়ীতে বসে এতো বড় পোস্ট পড়া সম্ভব না। ছোট ছোট করে লিখতে পারেন না ? :( :(

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৬

নাছির84 বলেছেন:
ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় দৃশ্যগুলো চোখে পড়ে.....গাড়ীতে বসে থাকা অপরাজিতাদের কেউ কেউ আনমনা হয়ে চুলে বিলি কাটছে, কেউ বা অলস দৃষ্টি হানছে সেলুলার ফোনে। তর্জনী, অনামিকা, কনিষ্ঠাদের
সবাই ব্যস্ত কি-প্যাড কিংবা স্ক্রিন নিয়ে ! আবার কেউ কেউ গাড়ীতেও 'ব্রাঞ্চ' (ব্রেকফাষ্ট+লাঞ্চ) সেরে থাকেন। প্রশ্ন হলো,,,,দৈনন্দিন জীবনের এতসব কাজ যদি গাড়ীতে বসেই করা সম্ভব হয়...তাহলে আমার সামান্য পেটমোটা লেখাটা এমন কি দোষ করলো ?
লেখাগুলো ছোটই, কিন্তু একসঙ্গে তিনটি লেখা পোষ্ট করায় আয়তনে বড় হয়ে গেছে। তবে যতদুর মনে হয়, কোন কবিতাপ্রেমীর অন্তত খেলার কচকচানি পছন্দ হওয়ার কথা নয় ? :P তবুও পড়তে হবে...নইলে কিন্তু খেলবো না :P
ভাল থাকবেন। ছোট করে লেখার উপদেশটা মনে থাকবে।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

মামুন রশিদ বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট! অনেক মজার ইতিহাস জানলাম । খেলা নিয়ে আপনার লেখালেখির হাত খুবই ভাল, ফুটবল নিয়ে আপনার লেখা সিরিজটার কথা মনে পড়ছে ।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৬

নাছির84 বলেছেন: ব্লগে সেই শুরুর দিনগুলো থেকে আপনার সমর্থন, স্তুতি এবং মুল্যবান দিক নির্দেশনা পেয়ে আসছি। ফুটবল নিয়ে আরও একটা সিরিজ লেখার ইচ্ছে আছে। কিন্তু সময় এবং মেজাজ, দুটোই এখন আমার প্রতিকূলে। এমনিতেই টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে লেখাটার পরবর্তি খন্ডের রসদ খুঁজে পাচ্ছিনা। X(
নতুন গল্প কবে পাব ? দ্রুত হাত চালান...নইলে কিন্তু আপনাকে নিয়েই একটা গল্প লিখে ফেলবো !!!
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৬

আছিফুর রহমান বলেছেন: অসাধারণ। পুসকাস আমার ফুটবল নায়ক। উনার ফুটবল ক্যারিয়ারটাই রহস্য ঘেরা ১৯৫৪ সালে কেন যে পুসকাসের হাতে কাপ উঠলো না সেটাই রহস্য। ১৯৫৪ সালের জার্মানিকে কেউ মনে রাখে নি। কিন্তু পুসকাস, কসিস, হিদকুটেকে সবাই মনে রেখেছে।

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:১০

নাছির84 বলেছেন: পুসকাস তো সর্বকালের সেরাদের একজন। 'মিরাকল অব বার্ন'-এর ওই ম্যাচে জার্মানি কিন্তু খেলেই জিতেছিল। তবে একটা প্রশ্নের জবাব আজও পাওয়া যায়নি-লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক দাবী করেন ১৯৫৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দল ডোপ নিয়েছিল। সম্ভবত-Methamphetamine. পরবর্তিতে ওই গবেষক দল 'ডোপিং ইন জার্মানি' নামে একটি বই বের করেন। কিন্তু ১৯৫৪ বিশ্বকাপ সেখানে অর্ন্তভুক্ত হয়নি ! 'গ্যালপিং মেজর'(পুসকাস) ছাড়াও হাঙ্গেরির ওই দলে আরও পাঁচজন খেলোয়াড় ছিল একসঙ্গে ডাকা হতো ‌'ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স'। ফুটবলের ইতিহাসে দুটি দল আছে যাদের বিশ্বকাপ না জয়ী সর্বকালের সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়-পুসকাসের হাঙ্গেরী এবং জিকোর 'ব্রাজিল'। অর্থাৎ ১৯৮২ বিশ্বকাপে সক্রেটিস,ফ্যালকাওদের নিয়ে গঠিত ওই দলটা।
ভাল থাকবেন।

৮| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সবগুলো খেলা ও ঘটনা চোখের সামনে ঘটে যেতে দেখলাম। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে নেপালকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, বিজয় নিশ্চিত জেনেই এ লেখাটায় মনোযোগী ছিলাম বেশি। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী লেখা।

শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন আপনাকে।

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২২

নাছির84 বলেছেন: প্রতিটা বিজয় উপভোগ করুন। মুশফিকদের পাশে থাকুন। আপনার প্রো-পিকটা তন্ময় হয়ে দেখছিলাম। একেকটা ছবি কি একেকটা বয়সের ধাপ ?

৯| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪৩

না পারভীন বলেছেন: না পড়ে কমেন্ট করলে কি কোন দোষ হবে ? খেলাধুলা আর ভ্রমণ কম ভাল পাই আবার পোস্ট দাতাকে ভাল পাই এই আর কি !!

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

নাছির84 বলেছেন: শরমে মাখনের লাহান গইল্লা পরতাছি। লোর (দৌড়) দিয়ে একখান বাটি আনেন। বাটিতে আমারে ধইরা ফ্রিজে রাইখ্যা দ্যান। :P :P :P
ভ্রমন ভালা পান না !!!!!! ঘরকুনো ডাক্তারআপু।

১০| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

ইমিনা বলেছেন: অপরাজিতাদের দিকে খুব বেশী নজর দেওয়া হয় বুঝি ? মন্দ নয় ...
হিহ হি হি ...

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১২

নাছির84 বলেছেন: আজ্ঞে, নজর না দিয়ে উপায় আছে !!! উনাদের নাম তো আর খামাখাই 'অপরাজিতা' হয়নি, তাই না ?
আর ছেলেরাও তো মানুষ :P

১১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:২৩

মারুফ হোসেন বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন, শুভেচ্ছা।

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

১২| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪

হানিফ রাশেদীন বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ব্লগে স্বাগতম...

১৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই চমৎকার একটা পোষ্ট! অনেক ভালো লাগল। প্রিয়তে নিলাম।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

নাছির84 বলেছেন: ব্রাজিলিয়া্ন ফুটবল নিয়ে একটা কিছু লেখার চেষ্টা করছি। আশাকরি ওটাও আপনার প্রিয়'র ঝুলিতে ঠাঁই করে নেবে।
ধন্যবাদ কাল্পনিক ভাই। ভালবাসাটুকু তুলে রাখলাম। পরে একসময় ফেরৎ দিয়ে দেব।

১৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ উপভোগ্য লেখা।

২২ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:১৪

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুব ভাই। খেলাধূলা নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে আছে। আশা করি, সঙ্গে থাকবেন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.