নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলা নয় শুধুই খেলা !

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০৭

শরণার্থী শিবির থেকে ক্রিকেটের মঞ্চে (২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪)

******************************

একসময় আফগানিস্তানের প্রতিটি ঘরেই থাকত একে-৪৭। ছেলে-বুড়োর ঠিক নেই, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সবাই হাতে তুলে নিয়েছিল মিখাইল কালাশনিকভের ভয়ঙ্কর সুন্দর সৃষ্টি। তখন ১৯৭৯ সাল। সোভিয়েত আগ্রাসনে রক্তাক্ত আফগানিস্তানের মাটি। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে থাকে অসংখ্য আফগান শরণার্থী। তাদের মধ্যে খোবাই ইসমাইলের পরিবারও ছিল। পেশোয়ারের জালোজাই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় তারা। দেশ ছাড়ার ছয় বছর পর খোবাইয়ের ঔরসে জন্ম নেওয়া প্রথম সন্তানটি হয়ে পড়ে ক্রিকেটের পোকা। নয় চাচার অসম্মতি সত্ত্বেও ছেলেটি পরিবারের চোখ এড়িয়ে পাকিস্তানের রাস্তার বুকে একখণ্ড উইলোকে সম্বল করে এঁকে চলতো ভবিষ্যতের নকশা। অবিরত শেল পড়ার আওয়াজে প্রতিদিনই কেঁপে উঠত তার বুক। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান বিশ্বকাপ জেতার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিরও কপাল খুলে যায়। ক্রিকেটকে রোজকার অভ্যাসে বেঁধে ফেলা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সে ধীরে ধীরে শিখে নিতে থাকে খেলাটির আদর্শলিপি। দেশে তালেবান শাসন শুরু হওয়ায় তখন আর পৈতৃক ভূমিতে ফিরতে পারেনি খোবাইয়ের পরিবার। অথচ ২২ বছর পর সেই ছেলেটাই এখন গোটা আফগানিস্তানের মাথার মুকুট। অনেকে বলেন, আফগান ক্রিকেটের রাজপুত্তুর। কিন্তু পিতার চোখে শুধুই-মোহাম্মদ নবী।

(ক্রিকেট এখন আফগান কিশোর-কিশোরিদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাড়ির ভেতর বোলিংয়ে শান দিচ্ছে এক কিশোর। ছবিঃ আল জাজিরা)



ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক শাসনের শেকল গুটিয়ে নেওয়ার সঙ্গে 'ক্রিকেট' রেখে গিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। তবে শুধু আফগানিস্তান ছাড়া। সেই উনিশ শতকে (১৮৩৯) অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধচলাকালে রাজধানী কাবুলের বুকে প্রথম ক্রিকেটের স্টাম্প পুঁতেছিল ব্রিটিশরা। তারপর শতবর্ষ কেটে গেলেও ক্রিকেটের দেখা মেলেনি। ১৯৯৫ সালে গঠিত হয় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ২০০১ সালে তারা আইসিসির অন্তর্ভুক্ত সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৩ সালে এসিসিও সদস্যপদ উপহার দেয় তাদের। হঠাৎ করেই ক্রিকেটের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের কাছ থেকে আফগানদের এতকিছু অর্জনের কারণ খুঁজতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে সেই ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে। ক্রিকেটে আফগানদের উত্থান নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র 'আউট অব অ্যাশেজ' দেখে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রিচার্ড স্ট্যাগ বলেছিলেন, 'ওরা এমনভাবে ক্রিকেট খেলে, যেন যুদ্ধ করছে!' অস্ত্র ছেড়ে ক্রিকেটে ফেরার পর এত অল্প সময়ের ব্যবধানে টি২০ বিশ্বকাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে জায়গা করে নেওয়া আফগানরা কিন্তু তিন কাঠির খেলাকে প্রকারান্তরে যুদ্ধ বলেই মনে করে। তাদের এ 'বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচ্যগ্র মেদিনী' মানসিকতার নাড়ি পোঁতা পাকিস্তানের সেই আফগান শরণার্থী শিবিরগুলোতে, যেখানে রোজ টেপটেনিস ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থেকে দেশের মৃত্যু-উপত্যকাকে ভুলে থাকতেন মোহাম্মদ নবীর মতো আফগান জাতীয় দলের আরও কিছু ক্রিকেটার।

করিম সিদ্দিকী তাদেরই একজন। পাকিস্তানের শরণার্থী শিবির কাচাকারায় তার বেড়ে ওঠা। ক্রিকেটের প্রেমে পড়াও ওখানে। দিয়াশলাই তৈরির ফ্যাক্টরিতে বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে দিনের বেলা করিম মেতে থাকতেন ক্রিকেট নিয়ে। ওই একই ক্যাম্পে ছিলেন তাজ মালিক। নব্বইয়ের সেই দশকে মালিকই প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন আফগানিস্তান ক্রিকেট দল গড়ার। খেলোয়াড় সংগ্রহ করার জন্য তখন পাকিস্তানের প্রতিটি আফগান শরণার্থী শিবির চষে বেড়িয়েছেন পরবর্তীকালে 'আফগান ক্রিকেটের জনক' নামে পরিচিতি পাওয়া মালিক। সবখানেই যে সফল হয়েছেন তা নয়। মালিকের নিজের ভাষায়, 'ভালো খেলোয়াড়দের সবাইকে কাবুলে ফেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করতাম; কিন্তু তাদের বাবারা আমাকে ধমকাতেন। বলতেন, দেশে ফিরলে আমার সন্তান মরে যাবে।'

তালেবান শাসনামলে জনসমক্ষে অনেক খেলাই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। নিয়ম অমান্য করলে কাবুল স্টেডিয়ামে সবার সামনে দেওয়া হতো জবাই! অথচ তালেবানদের অনেকেই নবী এবং করিমদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন একই শরণার্থী শিবিরে। অনেকেই ক্রিকেট খেলেছেন। বিবিসির প্রতিবেদক জাফর হান্দের বক্তব্য অনুযায়ী, 'আফগানিস্তানে আয়োজিত বেশকিছু ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তালেবানদের অনেক হোমড়া-চোমড়া উপস্থিত থেকে নিজ হাতে পুরষ্কার বিতরণ করেছেন।' অথচ, তখন ফুটবল খেলার অর্থ ছিল সেধে মৃত্যুকে নিমন্ত্রণ করা! তালেবানদের এ মানসিকতায় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে আসলে ফুটবলের শর্টস এবং ক্রিকেটের ট্রাউজার।

২০১৫ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে আফগানিস্তান জায়গা করে নেওয়ার পর রাজধানী কাবুলে সৃষ্টি হয়েছিল দেখার মতো দৃশ্য। বুলেটের খোসায় ভরে গিয়েছিল শহরটির রাস্তাঘাট। মনের ভেতর গুমরে মরা থরো থরো আবেগ প্রকাশ করতে কালাশনিকভের ট্রিগারে টান দেওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই যে শেখেনি আফগানরা ! তবে একটা দৃশ্য পাল্টে গেছে। অতীতে আফগানরা বুলেট খরচ করত শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য। এখন সেই বুলেটই আফগানরা ঊর্ধ্বাকাশে ছুড়ে আনন্দপ্রকাশের সঙ্গে একটা বার্তাও যেন পাঠায় সৃষ্টিকর্তার কাছে--তারা শুধু যুদ্ধ করে টিকে থাকতেই শেখেনি, খেলতেও জানে!



সুর্যোদয়ের শচীন (১৫ নভেম্বর, ২০১৩)

************

শুধু নিরেট ক্রিকেটীয় সংখ্যা বাদ দিলে আজ অবধি শচীন টেন্ডুলকার যা যা অর্জন করে চলেছেন, তা কি সত্যিই তিনি চেয়েছিলেন? এই যে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ, রাশি রাশি স্তুতিবাক্যের সঙ্গে ঈশ্বরতুল্য সম্মান লুটিয়ে পড়ছে মাত্র সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার মানুষটির পদতলে, অবসরের পর এসব তার কি কাজে লাগবে? তার চেয়ে বরং টেন্ডুলকারের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে লোভনীয় বস্তু হতে পারে সবুজ একটা মাঠ, জনাকয়েক প্রতিপক্ষ, হাতে একখানা উইলো দণ্ড আর ধেয়ে আসা একজন আগ্রাসী পেসার।

এই অপূর্ব লোভে ডুবেই তো ক্রিকেটের সঙ্গে 'একই বৃন্তে দুটি কুঁড়ি' হয়ে পাক্কা ২৪ বছর কাটিয়ে দিলেন টেন্ডুলকার। ইতিহাসের পাতায় যুগসৃষ্টি করলেন নিজের নামে। চোখে কান্না, মুখে হাসি নিয়ে এখন তার অবসরের ক্ষণ গণনা করছেন ভক্তরা। এমনটা যে ঘটবে, হেমন্ত কেনক্রে তা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিলেন ২৫ বছর আগে!

(শচীনের উত্থানের সময়কার ছবি। 'ইন্ডিয়া টুডে')

মুম্বাইয়ের ক্রিকেট কর্তারা একসময় বলতেন, কাঙ্গা মেমোরিয়াল লীগে কেউ মেরে-কেটে টিকে থাকতে পারলেই রঞ্জি ট্রফিতে তো অবশ্যই, ভারতের জার্সি পরার কপালটাও খুলে যেতে পারে। কারণটা নিখাদ ক্রিকেটীয় কাঙ্গা লীগে তখন ২২ গজের সবুজাভ উইকেট ছিল ভীষণ আর্দ্র, আউটফিল্ডে ছিল ইয়া বড় বড় ঘাসের রাজত্ব, আর তখন বৃষ্টির মধ্যেও দিব্যি খেলা চলত। পরিবেশটা সব মিলিয়ে পেসারদের কাছে জিভে জল আনার মতো। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এর মধ্যে আবার ব্যাটসম্যানদের খেলতে হতো হেলমেট ছাড়াই! কিন্তু কোচ রমাকান্ত আচেরকারের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। ১৯৮৪ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সী শিষ্যকে নিয়ে তিনি হাজির জন জন ব্রাইট ক্রিকেট ক্লাবে। ভীষণ লাজুক ছেলেটিকে কয়েক মৌসুমের জন্য চেয়েছিলেন ক্লাবটির মালিক প্রকাশ কেলকার; কিন্তু আচেরকারের এক কথা_ 'আগামী মৌসুমে সে আরও উচ্চপর্যায়ের ক্রিকেটে খেলবে।' বলা বাহুল্য, আচেরকারের সে শিষ্য আজকের শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।

পরবর্তী তিনটি বছর আচেরকারের স্কুটারের পেছনে বসে টেন্ডুলকার শুধু ঘুরেছেন মাঠ থেকে মাঠে, ব্যাট করেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রান করেছেন তেল-চুপচুপে মেশিনের মতো। সেটা হোক কাঙ্গা লীগ, পুলিশ শিল্ড কিংবা বয়সভিত্তিক স্কুল টুর্নামেন্ট। জাইলস শিল্ডে টানা পাঁচটি সেঞ্চুরির সুবাদে মুম্বাইয়ের প্রথম বিভাগীয় ক্লাব ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় (সিসিআই) ডাক পড়ে টেন্ডুলকারের; কিন্তু ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রচলিত একটি নিয়ম বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। আশির ওই দশকে সিসিআইর ড্রেসিংরুমে আঠারো বছর বয়সের নিচে যে কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। শুধু টেন্ডুলকারের জন্য আলাদা করে বোর্ডমিটিং ডেকে নিয়মটি পাল্টে নিয়েছিলেন সিসিআই কর্মকর্তারা।

১৯৮৮ সালের জুলাইয়ের কথা। কর্নাটক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের বিপক্ষে কাঙ্গা লীগের ম্যাচে মুখোমুখি হয় সিসিআই। আচেরকারের আদেশ মেনে টেন্ডুলকার ব্যাট করতে নামেন চার নম্বরে। ক্রিজের অপর প্রান্তে তার সঙ্গী ছিলেন সিসিআই অধিনায়ক হেমন্ত কেনক্রে। অভিজ্ঞতাঋদ্ধ কেনক্রে জানতেন, 'কাঙ্গা লীগে বল পিচ করে ধেয়ে আসার আগে মুখে কাদা ছিটকে এসে লাগে।' আর ক্রিজে এসেই টেন্ডুলকার মুখোমুখি হন তখনকার বেশ সমীহ-জাগানিয়া সিমার শারদ রাওয়ের; কিন্তু কিসের কি! নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে দু'চোখে রাজ্যের অবিশ্বাস নিয়ে কেনক্রে দেখলেন শারদ রাওয়ের প্রথম ডেলিভারিটি কী অবলীলায় সোজা ব্যাটে খেলে সীমানাছাড়া করল মাত্র ১৫ বছর বয়সী ছেলেটি! সেই স্মৃতি হাতড়ে টেন্ডুলকারের পেশাদারী ক্রিকেট জীবনের প্রথম অধিনায়ক বলেন, 'প্রথম দিন থেকেই একটা ব্যাপার সবাই পরিষ্কার বুঝে যায়, এ ছেলেটা এমন কিছু করতে এসেছে, যা এর আগে কেউ করার দুঃসাহস দেখাতে পারেনি।'

টেস্ট-ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান, একশ' সেঞ্চুরির এভারেস্ট তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ। কিন্তু বয়স তো কোনোকালেই পৃথিবীর কোনো অতিমানবকে একটুকু ছাড় দেয়নি। তাই আর যে কারও তুলনায় ক্রিকেটকে সর্বোত্তম ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে এতটা পথ হেঁটে এসেও টেন্ডুলকার পাল্টাতে পারলেন না জীবনের সেই অমোঘ সত্যটা_ একসময় আউট হতেই হয়!



শুধু ছোট ভাইটির জন্য...(১৫ নভেম্বর, ২০১৩)

******************

শচীনের ম্যাচ চলাকালীন মুম্বাইয়ে মারাঠি সাহিত্যের আঁতুড়ঘরখ্যাত 'সাহিত্য সহবাস হাউজিং সোসাইটি'র একটি নির্দিষ্ট বাড়ির চিত্রটা ঠিক এরকম-বেল বাজালে কেউ দরজা খোলে না, দুপুর বারোটার সময়ও গেটের সামনে পড়ে থাকে দৈনিক পত্রিকা। সব জানালা বন্ধ। অথচ বাড়ির ভেতর লোক আছে। তাদের মধ্যে একজন আবার গাড়ি নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়েন অজানা গন্তব্যে। স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে ছোট ভাইয়ের ব্যাটিং মনে মনে ভিজুয়ালাইজ করার চেষ্টা করেন তিনি। তখন আবার তার মা বসেছেন প্রার্থনায়। ছোট ছেলেটি মাত্র একখানি কাঠের দণ্ড হাতে ১২১ মানুষের অমানুষিক প্রত্যাশার চাপ সামলানোর যুদ্ধে নামলে মায়ের মন কি আর ঠিক থাকে! এখানেই শেষ নয়; মায়ের মতোই প্রার্থনায় বসে থাকেন ওই বাড়িতে বসবাসকারী আরও চার ব্যক্তি। তারা সবাই বাড়ির মধ্যে খানিকটা চলাফেরা করলেও বিশেষ একজন ঠায় স্থাণুর মতো বসে থাকেন বিছানায়। তার নড়াচড়ায় শচীনের উইকেটটাও যদি পড়ে যায়!

ভাবছেন কুসংস্কার। দোষ দেওয়া যাবে না। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে সাহিত্য সহবাসের ওই বাড়িটি আর সবার কাছে কুসংস্কারের অভয়ারণ্য মনে হলেও অন্তত শচীনের কাছে নয়। ওটা যে তার পিতৃনিবাস। ওখানেই শৈশবকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন তিন কাঠির খেলায় ভারতকে দীর্ঘ সময় একা টেনে চলা ব্যক্তিটি। তারই এক পর্যায়ে দুর্দান্ত চঞ্চল শচীনের উৎপাতে তিতি-বিরক্ত হয়ে কোচ রমাকান্ত আচরেকারের ডেরায় ছোট ভাইকে সঁপে দেন মেজভাই। এরপর থেকে পৃথিবীর ২২ গজে শচীন আজ অবধি যা কিছু কীর্তি গড়েছেন তার নেপথ্য সঞ্চালক ছিলেন গাড়িতে বসে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়া সেই মেজ ভাই অজিত টেন্ডুলকার।

(মুম্বাইয়ের সাহিত্য সহবাসে শচীনের পিতৃনিবাস 'উষাকাল'। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল অভূতপুর্ব সেই অভিযাত্রা। ছবিঃ দ্য হিন্দু)

ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্কটা চিরন্তন, সব পরিবারেই থাকে; কিন্তু স্রেফ ভাইয়ের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে নিজের জীবনের গতিপথটা সীমিত করে দেওয়ার নজির এ গ্রহের আর কোনো মুলুকে আছে? ১৯৮৯ সালে করাচিতে শচীনের অভিষেকে মাঠে ছিলেন অজিত। তারপর থেকে ভাইয়ের খেলা দেখতে আর কখনোই মাঠে যাননি। ঘরে বসেও শচীনের লাইভ ম্যাচ না দেখে এতগুলো বছর হাইলাইটসেই মিটিয়েছেন মনের তৃপ্তি। ২৪ বছর ধরে মেনে চলা এ নিয়মটার ব্যত্যয় ঘটছে আজ। সাহিত্য সহবাসের বাড়িটিতে আজ আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাই থাকবেন ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে। দুই যুগ আগে বিস্ময়কর যাত্রায় বের হয়ে ঘরের ছোট ছেলেটির বাড়ি ফেরার প্রহর গোনার ক্ষনটা যে আজ থেকেই শুরু হচ্ছে!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, শচীনকে পর্দার আড়ালে থেকে মানসিক প্রণোদনা যুগিয়ে চলা ব্যক্তিটি গত ২৪ বছরে একটিবারের জন্যও প্রচারমাধ্যমের আলোয় আসার প্রয়োজন মনে করেননি। শচীনের বিদায়ী মঞ্চে ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত আলোচনাচক্রে সেই অজিত জানালেন, '৯৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন বাবার মৃত্যু শোককে শক্তি বানিয়ে পরের ম্যাচেই শচীনের সেঞ্চুরি হাঁকানোর নেপথ্য ঘটনা, 'ফেরত তো পাঠাতেই হতো। প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর বাবাকে গিয়ে বলি, শচীনকে জানাইনি। ও তখন শ্রীলংকায়। পরদিন ওর সেঞ্চুরির কথা বাবাকে জানাতেই কী খুশি। আমার মনে হয়, সেদিন বাবা পাঁচ মিনিটের জন্যও জীবন ফিরে পেলে বলতেন, এ কি! আমার শোকে বাড়িতে বসে আছ কেন? যাও দেশের হয়ে খেলো গে।'

শচীনের মা কখনোই মাঠে বসে তার ছেলের খেলা দেখেননি। এবার দেখবেন। অজিত জানান, 'মা ভীষণ এক্সাইটেড। এর আগে তিনি কখনোই মাঠে যাননি। আমার মনে হয়, মা গ্যালারিতে বসেও ছেলের জন্য পুজো করবেন।' অভ্যাসের চিরায়ত রীতির জন্য তা না হয় মেনে নেওয়া গেল; কিন্তু শচীনের ম্যাচ চলাকালীন সাহিত্য সহবাসের বাড়িটির ওই হাল হয় কেন? অজিত জানালেন, 'আমরা বাড়িতে থাকলেও ওর খেলা কখনও লাইভ দেখি না। মা বসেন প্রার্থনায়। ওর বউ অঞ্জলি বিছানা থেকে নড়ে না। আসলে এসবের বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। আমরা শুধু চেয়েছি ব্যাটিং ক্রিজে অন্তত স্পিরিটে ওর সঙ্গে থাকতে। ও যেন জানে, পরিবার ওকে কখনও নিঃসঙ্গ থাকতে দেয়নি।'

১৯ নভেম্বর থেকেই সাহিত্য সহবাসের চিত্রটা পাল্টে যাবে। শচীনকেও আর ভাবতে হবে না, গোটা দেশের আনন্দ জোগানোর অমানুষিক দায়িত্বটা তার ওপর। তাই অজিতেরও মিলে যাবে ছুটি। কিন্তু এমনটা কি সত্যিই চেয়েছিলেন তিনি? 'অবসর একদিন নিতেই হতো। এটাই তো জীবনের ধর্ম। তবে ওয়াংখেড়েতে যাচ্ছি গোটা পরিবার নিয়ে। চুটিয়ে ওকে শেষবারের মতো দেখতে।'





(সবগুলো লেখাই পুরোনো। ভাগাভাগি করে নিলাম। যদি ভাল লাগে....)

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২৫

নিরীহ বালক বলেছেন: ২০১৫ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে আফগানিস্তান জায়গা করে নেওয়ার পর রাজধানী কাবুলে সৃষ্টি হয়েছিল দেখার মতো দৃশ্য। বুলেটের খোসায় ভরে গিয়েছিল শহরটির রাস্তাঘাট। মনের ভেতর গুমরে মরা থরো থরো আবেগ প্রকাশ করতে কালাশনিকভের ট্রিগারে টান দেওয়া ছাড়া আর কিছু যে শেখেনি আফগানরা। শুধু একটা দৃশ্য পাল্টে গেছে। অতীতে আফগানরা বুলেট খরচ করত শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য। এখন সেই বুলেটই আফগানরা ঊর্ধ্বাকাশে ছুড়ে আনন্দপ্রকাশের সঙ্গে একটা বার্তাও যেন পাঠায় সৃষ্টিকর্তার কাছে _ তারা শুধু যুদ্ধ করে টিকে থাকতেই শেখেনি, খেলতেও জানে!

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩০

নাছির84 বলেছেন: ওরা সত্যিই খেলতে জানে। ব্যাপারটা আরও ভালভাবে টের পাওয়া যাবে কয়েকবছর পর..................।

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দুটোই চমৎকার লাগল। মাঠে আফগানদের আচরণ এতটা আক্রমণাত্মক কেন বুঝতে পারলাম এখন।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৫৫

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রোফেসর। ক্রিকেটে ‌‌'বডিল্যাঙ্গুয়েজ' বেশ গুরুত্বপুর্ণ। আফগানদের মধ্যে তার বহিঃপ্রকাশ হয়তো একটু বেশি। তবে মাঠের মধ্যকার আচরনে ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব না ঘটাই বাঞ্চনীয়। ম্যাচের উত্তাপে কিছু ঘটলে, বরং সেটা চিত্তাকর্ষক।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:





শেষ লিখাটা কি আগে আপনার পোষ্টেই পড়েছিলাম?

দুর্দান্ত পোষ্টে +++

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৫৬

নাছির84 বলেছেন: তিনটি লেখাই ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলাম।পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা।

৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৩৪

নিশাত তাসনিম বলেছেন: দারুণ পোস্টটি ভালো লাগলো।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৫৮

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। জয়া আহসান বুঝি আপনার খুব প্রিয় অভিনেত্রী ?

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

"চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ সেথা শির" বলেছেন: ক্রিকেটে আফগানদের উত্থান নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র 'আউট অব অ্যাশেজ' দেখে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রিচার্ড স্ট্যাগ বলেছিলেন, 'ওরা এমনভাবে ক্রিকেট খেলে, যেন যুদ্ধ করছে!


আফগান বিশ্লেষণ খুবই ভালো লাগল আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারন। ধন্যবাদ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

"চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ সেথা শির" বলেছেন: একটা টপিকে কি একটা প্রসঙ্গ হওয়া্ই ভালো নয়। এর মধ্যে শচীন আসলো কোথা থেকে?

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

নাছির84 বলেছেন: তিনটা লেখা একসঙ্গে করে ‌‌'খেলা নয় শুধুই খেলা'। ক্রিকেটের অসামান্য কিছু গল্প। সবগুলো লেখাই পুরোনো। সময়টাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এক টপিকে একটা প্রসঙ্গ হওয়াই ভাল। পাঠকের সুবিধা হয়। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার ফিচার লিখেছেন। খুবই ভালো লাগল।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০১

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ কাল্পনিক ভাই। ভাল থাকবেন।

৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: বরাবরের মতোই চমৎকার।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:০১

নাছির84 বলেছেন: ধনবাদ হাসান ভাই।
ইয়ে...মানে একটা আবদার ছিল। ভাবছি পরিচিত সবাইকেই কথাটা বলবো----একটা নিটোল ভালবাসার গল্প চাই...টক-ঝাল-মিষ্টি-নুনছাই।
একটু চেষ্টা করে দেখবেন কি ?
ভাল থাকবেন।

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

ইমিনা বলেছেন: জে,জে ...
বরাবরের মতোই চমৎকার লেখা :) :)

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

নাছির84 বলেছেন:
মাদামোয়াজেল....
বরাবরের মতোই মচৎকার মন্তব্য.. :P :P
কবিতাদের তো ছেড়ে যাওয়া কথা নয় ! বুদ্ধিমতী মেয়ে বলে কথা ? আমার কাছে কিন্তু কবিতার বোকা মেয়েটাকেই ভাল লাগে। যদিও ওই প্রবাদটা সত্য-'থাকিতে দন্ত, বাঙ্গালী না বোঝে মর্ম' :-0 :-0 :-P :-P

১০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

ইমিনা বলেছেন: কবিতার মেয়েটা বুঝি বোকা টাইপের ছিল?
হিহ হিহ হি ...

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

নাছির84 বলেছেন: বোকা না হলে কেউ কবিতা লেখে ?এখন বোমা মারলেও কেউ মনের কথাটা খুলে বলেনা। সেখানে পটপট করে একজন তার সকল মনের ভাবনা-চিন্তা লিখে প্রকাশ করছে, আর বাকিরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা পড়ে যাচ্ছে ! বোকাই তো ? তবে এ বোকা বুদ্ধিমতী বোকা ! নইলে কবিতা এসে জুড়ে বসতো না।

১১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

ড্রিমার বলেছেন: লিখাটা ভালো হয়েছে ধন্যবাদ আপনাকে । http://www.sampadona.com একটি বাংলা পত্রিকা ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ওয়েব পোর্টালটা কি আপনার ?

১২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

মামুন রশিদ বলেছেন: সাহস আর সরলতার জন্য পাঠানদের ভাল লাগে । কিন্তু পাকিস্থানে রিফুজি ক্যাম্পে তারা শুধু ক্রিকেটই শিখেনি, সাথে শিখেছে পাকি ভন্ডতা । হাহাহা

মজা করে বললাম, পোস্ট চমৎকার হয়েছে ।

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২১

নাছির84 বলেছেন: মজা কিংবা অমজা যাই হোক না কেন সত্য তো সত্যই ? শরণার্থী শিবির সমন্ধে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। তবে পাকিস্তান সমন্ধে যে ধারনা পোষন করি, সেই দৃষ্টিকোন থেকে আপনার সঙ্গে সহমত। ‌'ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা'-কথাটা আফগানরা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। যদিও তারা বেশ উন্নতি করেছে। কিন্তু ক্রিকেটকে এখনো মনে ধারন করতে পারেনি। তার প্রমান কথায় কথা নিজেদের যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতি হিসেবে উপস্থাপন করা। বাউন্ডারির ভেতরে যারা ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে আনে তারা আর যাই হোক, ক্রিকেটার নয়।
কথাগুলো আফগানদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখেই বললাম। ভাল থাকবেন।

১৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

ছবিঘর বলেছেন: দারুন লিখেছেন। অনেকগুলো ভালোলাগা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

নাছির84 বলেছেন: কতগুলো ভাল লাগা ?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.