নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

‌'মেসি' হওয়ার দায়......শেষ পর্ব

১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩

রোজারিওতে মেসির এমন আরো অনেক গল্প সবার মুখে মুখে। এই যেমন ধরুন, একবার এক ম্যাচে গোটা প্রথমার্ধ তাকে বাথরুমে আটকে রেখেছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা। মেসি দরজা ভেঙ্গে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ।

বয়স বেড়ে চলার সঙ্গে তার এসব গল্পগুলোও আরও প্রগাঢ় হয়েছে। গেটাফের বিপক্ষে একক প্রচেষ্টায় সেই গোল । বিলবাওয়ের বিপক্ষে ইঞ্চিপরিমান জায়গার ভেতর টাচ এন্ড মুভ। সবরকম জহরতই মজুদ আছে।

টেকনিক্যালি,বলকে পায়ে নিয়ে দুর্দান্ত গতিটাই মেসির সবচেয়ে বড় অস্ত্র।আর্জেন্টাইনদের মুখে বিদ্যেটি-la pelota atada । অর্থাৎ, বল দখলে রাখার সঙ্গে গতির ফুলকি। এতে করে প্রতিপক্ষ এলোমেলো হয়ে পড়ে।সতীর্থরাও জায়গা পেয়ে যায় দৌড়ানোর। এক ঢিলে দুই পাখি আর কি !

গোলক্ষুধাও আশ্চর্যকর !।চকোলিট বাজির অভ্যেসটা এখনো ছাড়তে পারেননি। এটাকে কি বলবেন ? সহজাত প্রবৃত্তি ?

বার্সায় আসার গল্পটা সবাই জানে। ১৩ বছর বয়সি মেসি অনুশীলনে একাই চার-পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করতেন। তারপর ভাবলেশহীন মুখে এমনভাবে পজিশনে ফিরতেন, যেন কিছুই ঘটেনি ! বহু বছর পর তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিজের খেলার ষ্টাইল বিচারে কোন দলকে বেছে নেবেন-আর্জেন্টিনা নাকি স্পেন (প্রস্তাব এসেছিল) ? মেসির জবাব,'আর্জেন্টিনা। হ্যাঁ, স্পেনে হয়তো আমি বেড়ে উঠেছি। সেখানকার অনেককিছু আমার জীবনকে গঠন করেছে। কিন্তু খুব ছোটবেলায় শেখা খেলাটা আমি এখনো ভুলিনি।'

আর্জেন্টিনার রাজধানি বুয়েন্স এইরস থেকে ১৮০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে বসে আছে রোজারিও। রিও পারনা নদীর কাছাকাছি শহরটা বেশ মোচড় নিয়েছে। ‌'এল চে'র জন্মস্থান বলেই হয়তো, কে জানে ! চে গুয়েভেরার জন্মস্থান ছাড়াও আর্জেন্টিনার জন্য রোজারিও ঐতিহাসিক। ১৮১২ সালে এখানেই প্রথম ওড়ানো হয়েছিল আকাশি-সাদার তেরঙ্গা। আরও আছে। একটি আনঅফিসিয়াল জরিপ অনুযায়ী দেশটির বেশিরভাগ পুরুষ বিশ্বাস করে, রোজারিওই সর্বোত্তম নারীদের প্রজননের তীর্থস্থান !

সে যাক গে,রোজারিও থেকে মোট দুটি ক্লাব প্রিমিয়ার ডিভিশনে প্রতিদ্বন্দিতা করে থাকে। নিউওয়েলস ওল্ডবয়েজ এবং রোজারিও সেন্ট্রাল। সাপে-নেউলে সম্পর্ক। শহরটারই এক রেষ্টুরেন্ট মালিক হুয়ান জ্যাকব। প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছেন কমোডোর সেন্ট্রাল। মেসির প্রসঙ্গ উঠতেই চোখমুখ কুঁচকে বসলেন ! তার এক দাবী এক দফা-'মেসি ইউরোপে বড় হয়েছে।' তারপর একপর্যায়ে বোঝাতে শুরু করলেন, গত বছর সেন্ট্রালের মাঠের জায়ান্টস্ক্রিনে মেসির ছবি ভেসে উঠতেই কিনা সবাই কি দুয়ো দিল ! এখানেই শেষ নয়। ‌'মেসির যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন চলেনা। কিন্তু তাকে সঙ্গে নিয়ে অাপনি কখনোই কোন, সেন্ট্রাল সমর্থকের মন জয় করতে পারবেন না'-জ্যাকবের যুক্তি।

মেসির শৈশবের একটা বৃহৎ অংশ কেটেছে নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে। তাই জ্যাকবের কথাই ঠিক। যদিও নিউওয়েলস ক্লাবের অনুভূতিটাও কুসুম কুসুম গরম। সেখানকার বুড়ো বুড়ো সমর্থকদের ভাবভঙ্গি এমন যে,মেসিকে নিয়ে তাদের গর্ব হলেও,জাতীয় দলের থেকে রোজারিওর ম্যাচ দেখাই তাদের বেশি পছন্দের !

মেসি তার দাদী সেলিয়াকে হারান দশ বছর বয়সে। পিতামহির হাত ধরেই ফুটবলের সঙ্গে তার পরিচয়। অবাড়ন্ত মেসিকে তার থেকে বড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য কোচদের চাপ দিতেন সেলিয়া। তাকে এতটা পথ পেছ ফেলে এসেও মেসি কিন্তু সেইসব স্মৃতির প্রতি আজও শ্রদ্ধাশীল। এখনো গোল করলে বুকে ক্রস আঁকার পর ডান হাতে চুমু খেয়ে আকাশে তাকিয়ে দুটি হাত উঁচিয়ে ধরেন মেসি। ওটা তার দাদীমার জন্যই । বেঁচে থাকতে তো আর বংশপ্রদীপের রবি হয়ে জ্বলে ওঠা দেখে যেতে পারেননি। তাই ওভাবেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে চলছেন মেসি।

সেলিয়ার পরোলোকগমনের কিছুদিনের মধ্যেই নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের কোচিং ষ্টাফ টের পান,তাদের সেরা খেলোয়াড়টির শরীরে কোথাও কোন একটা অসঙ্গতি আছে। এমনকিছু, যা তার শারীরিক বৃদ্ধিকে ব্যহত করে বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্থ করছে। ডাক্তারেরা ধরে ফেললেন। গ্রোথ হরমোন ডেফিয়েন্সি। সিদ্ধান্ত হলো, মেসির স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন একটি করে ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন। যার মুল্য ৯০০ মার্কিন ডলার।

তার বাবা স্থানীয় একটি স্টিল ফ্যাক্টরির শ্রমিক। মা পার্টটাইম ক্লিনার। খরচের যুদ্ধে তারা দুইবছর টিকতে পেরেছিলেন। এরপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এক পারিবারিক বন্ধু। বার্সেলোনার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। একদিন ট্রায়ালের ব্যবস্থা হয়ে গেল। বাকিটা সবাই জানে। হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে ন্যাপকিন পেপারে মেসির সঙ্গে চুক্তি সেরেছিলেন বার্সার তৎকালিন ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাস। তারপর থেকেই মেসি লা মাসিয়ার। বার্সার। স্পেনেরও কি ?

মেসিকে কাতালান স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ছুটির পর সোজা অনুশীলনে। নিয়ম-শৃঙ্খলার জন্য স্পেনে লা মাসিয়ার একটা আলাদা সুনাম আছে। তাইবলে মেসির একাকিত্ব কেউ টের পায়নি। প্রতিদিন একটি করে ইঞ্জেকশন, স্কুল এবং ফুটবল-এই তিনে মিলে জীবন। বাবা দেখতে আসলে,মেসি দরজা বন্ধ করে প্রায়ই কাঁদতেন। পাছে, বাবা দেখে ফেলেন ! তাই মেসি বস্তি থেকে উঠে না আসলেও জীবন তাকে কম কশাঘাত করেনি।

হতে পারেন, চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। কিন্তু তাতে অার্জেন্টাইনদের কিস্যু যায় আসেনা। তাই ' ২০১১ সালের পর থেকে আকাশি-সাদায় মেসির ধারাবাহিকতা থাকার পরও তাকে শুনতে হয়,‌'ও শুধুই ক্লাবের ফুটবলার।'

কিন্তু এবার আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সিটির ওজন কতো ? ২৮ বছরের শিরোপা খরা ? দিয়াগো ম্যারাডোনা হয়ে ওঠা ? কত চাপ ! তাও , বিশ্বকাপটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রাজিলের মাটিতে ! কোন আর্জেন্টাইনের জন্য এর চেয়ে ভাল উপলক্ষ্য আর কি হতে পারে ?

৫২৫, এস্তাদো দে ইসরায়েল, রোজারিও।

চাইলে ঠিকানাটা টুকে রাখতে পারেন। মেসির আঁতুরঘর। তার শৈশব কেটেছে ওই ঠিকানার বাড়িটায়। এখন কেউ থাকেনা। কাঁচা-পাকা বাড়িটি এখনো মেসিদের দখলে। তার পাশেই ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন হুয়ান লোপেজ। মেসির শৈশবের প্রসঙ্গ উঠতেই হাতটাকে কোমর অব্ধি নামিয়ে লোপেজ জানালেন,ওই বয়স থেকেই ফুটবল নিয়ে রাস্তায় ছুটতেন মেসি। তখন তাকে কেউ চিনতো না। আর্জেন্টিনায় অমন প্রতিভা এন্তার । মেসিকে সবাই চিনেছে স্পেনে থাকাকালিন। এখনকার সমীকরনটা তাই এরকম-‌আর্জেন্টিনার মেসিকে প্রয়োজন। মেসির প্রয়োজন দেশের সমর্থন। এই লেনাদেনায় মেসি এখনো পিছিয়ে আছেন। কারণ দেশ কিছু না দিলেও জাতীয়তাটুকুই সারাজীবনের প্রাপ্তিসম। শুধু একবার চোখ বুঁজে ভাবুন তো, ১৩ বছর বয়সি একটা ছেলে। যে কিনা অসুস্থ। বাবা-মাকে ছেড়ে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে সোজা বিদেশ-বিভুঁইয়ে। একসময় খ্যাতি ধরা দিল। স্প্যানিশ জাতীয় দলে খেলার প্রস্তাবও আসলো। কিন্ত ওই যে ১৩ বছরের শৈশব,তার টানেই কি আকাশি-সাদার জন্মভূমিকে বেছে নেন মেসি ?

জবাবটা শুধু তিনিই দিতে পারবেন। এসব নিয়ে কখনো তো মুখ ফুটে কিছু বলেননি। বলকে দিয়ে কথা বলান।গত মে মাসে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিতে দেশের মাটিতে পা রাখতেই বুয়েন্স এইরস বিমানবন্দরে তাকে অপমান করেছিল কিছু উন্মাদ ভক্ত। 'আর্জেন্টিনা সমন্ধে কিছু জানো কি'-এমন প্রশ্নও করেছে কেউ কেউ। এসবকিছুর জবাব দেয়ার সেরা উপায় যদি হয় ফুটবল,তাহলে তার সেরা মঞ্চটা নিশচয়ই বিশ্বকাপ ? অর্থাৎ, মেসি নিজেও জানেন, এবার না হলে আর কখনোই নয় !

ম্যারাডোনা '৮৬ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ২৬ বছর বয়সে। মেসির বয়স এখন ঠিক তাই। সেই ম্যারাডেনা, যার ৩৮ তম জন্মদিনে উদ্ভব হয়েছিল নতুন একটি ধর্মের ! ‌'ইগলেসিয়া ম্যারাডোনা।' ইংরেজিতে চার্চ অব ম্যারাডোনা। ১৯৯৮ সালের ৩০ অক্টোবর ম্যারাডোনার ভক্তদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে এ নতুন মতবাদ। এখন যার অনুসারী সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। প্রশ্ন হলো-ধর্মটার পীঠস্থান কোথায় ?

মেসির শেকড় যেখানে প্রোথিত, সেই রোজারিওতেই 'ইগলেসিয়া ম্যারাডোনা'র জন্ম। এবার আপনারই বলুন, মেসির পক্ষে কখনো কোনদিন কি ম্যারাডোনা হয়ে ওঠা সম্ভব ?

কারণ, রোজারিওতে মেসি একজন মানুষ। বড়জোর ফুটবল সেলিব্রিটি । আর , ম্যারাডোনা খেলা ছেড়ে দেয়ার পর ১৭ বছর কাটিয়ে দিলেও আজও সেখানকার ঈশ্বর !







তথ্যসুত্র ঃ নিউইয়র্ক টাইমস।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২০

মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার লেখা, মেসি সম্পর্কে দারুণ কিছু তথ্য জানলাম ।

১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

২| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

nurul amin বলেছেন: খেলাটা যে জন্মগত প্রতিভা মেসিই এর আদর্শ প্রমাণ।

১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

নাছির84 বলেছেন: হুঁম।

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:৫২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট ।

১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ সেলিম ভাই। ভাল থাকবেন।

৪| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯

আর্টিফিসিয়াল বলেছেন: দারুন কিছু জানলাম। ব্রাজিল সমর্থক হিসেবে মেসির ভালই খোঁজ খবর রাখেন।ধন্যবাদ।

১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকবেন।

৫| ২১ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৬

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ হাসান ভাই। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৬| ২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:১৯

আহসানের ব্লগ বলেছেন: মেসিই সেরা ;)

২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:৪২

নাছির84 বলেছেন: কে জানে ভাই ? আমাদের কাজ তর্কটাকে আরও বেগবান করা...সেটাই করে যাই।

৭| ২৩ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫

আমিজমিদার বলেছেন: অস্থির পোস্ট।

২৩ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১১

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ জমিদার ভাই। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.