নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রুয়েফ, অপহরন ও ম্যাচ পাতানোর গল্প !!

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪০

‘ফুটবল একধরণের আর্ট। ফুটবল স্কুলগুলো ডাচ আর্টিষ্টদের সম্মিলিত শিল্পকর্ম’-ডাচ কোচেস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে কথাগুলো। সঙ্গে একটা তুলনাও টানা হয়েছে-‘আমাদের কোচেরা আধুনিক যুগের রেঁমব্রান্ট।’

বেশ অদ্ভুতুড়ে তুলনা। তাই না ? সতেরশ শতকে ডাচদের একটা সোনালী যুগ ছিল। রেঁমব্রান্ট তখন ডাচ ইতিহাসে তো বটেই, গোটা ইউরোপিয়ান চিত্রশিল্পেরই রাজপুত্তুর। কিন্তু চিত্রশিল্পের সঙ্গে ফুটবলের সম্পর্ক কি ? তাও আবার ‘আধুনিক রেঁমব্রান্ট’ !

ডাচদের ফুটবল ইতিহাসে দুটি ভাগ আছে। ইয়োহান ক্রুয়েফ এ দুটি পর্বের সেতুবন্ধ। ক্রুয়েফ পুর্ববর্তি ডাচ ফুটবল ছিল একেবারেই সাদামাটা, নির্ভেজাল প্রাগৈতিহাসিক। ’৭৪ বিশ্বকাপে রাইনাস মিশেলের সঙ্গে জুঁটি বাঁধলেন ক্রুয়েফ। ফুটবল পেয়ে যায় নতুন দিশারীকে। মাঠে কারো কোন পজিশন নেই। সবাই ডিফেন্ডার,সবাই মিডফিল্ডার,আবারও সবাই ষ্ট্রাইকার ! প্রতিপক্ষের পায়ে বল গেলে মাঠ ছোট করে ফেল। কিন্তু বল দখলে নেয়ার পর সেই মাঠকেই বড় বানাও-এসব আপ্তবাক্য মিলিয়েই টোটাল ফুটবল। ক্রুয়েফ ছিলেন তার কেন্দ্রবিন্দু। বিটলসের যেমন জন লেনন !

অতীত এবং আধুনিকতাকে একসুত্রে গেঁথে নতুন কিছু উদ্ভবের এ রেওয়াজ ডাচ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।যেমন ধরুন, টিউলিপের জন্ম তুরষ্কে। কিন্তু নেদারল্যান্ডস ভেবে অনেকেই ভুল করেন। হয়তো ডাচদের হাত ধরেই ফুলটার আরও কিছু শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হওয়াই এই ভুলের নেপথ্য কারণ। আবার, রটারডাম শহরে গাড়ীর চেয়ে কালো রংয়ের সাইকেলের সংখ্যা বেশি। অথচ শুনলে অবাক হবেন,কালো রংয়ের ওই সাইকেলগুলো সর্বপ্রথম তৈরির দাবীদার ইংল্যান্ড। তাও মহিলাদের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ! ডাচরা মানিয়ে নিতে পারেনি। তাই ফুটবলের মতো সাইকেলেও ‘ইমপ্রোভাইজেশন’-এর আঁচড় পড়েছে।

এবার আসি, আর্জেন্টিনার গল্পে।

ব্রিটেন,নেদারল্যান্ডস এবং আর্জেন্টিনা। কোন মিল খুঁজে পেলেন কি ? ফুটবলে লিগ প্রথা প্রচলনের আঁতুরঘর এ তিন দেশ। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার অবস্থান তৃতীয়। উনিশ শতকের শেষের দিকে কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক রেলপথ নির্মানের জন্য আর্জেন্টিনায় পা রাখেন। তারাই সর্বপ্রথম ফুটবলের প্রচলন ঘটান দেশটিতে। ব্রিটিশদের এ দেনা শোধ করতে না পেরেই হয়তো আজও আর্জেন্টিনার কিছু ক্লাব বিলেতি গন্ধ ধরে রেখেছে-নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ,রিভারপ্লেট,বোকা জুনিয়র্স। যদিও ইতিহাসের কচকচানি তুলে রাখাই ভাল। কারণ বাঙ্গালী ইতিহাস নয়, দিয়াগো ম্যারাডোনায় ভুলে আর্জেন্টিনাকে সর্বপ্রথম ঠাঁই দিয়েছিল তাদের হৃদয়ে। এরপর বাতিস্তুতা এবং কয়েকজন ‘নতুন ম্যারাডোনা’র হাত ঘুরে সেই দায়িত্বটা এখন চেপেছে লিওনেল মেসির কাঁধে।

লাতিন ফুটবল মানেই ছোট ছোট পাসের পসরা। বল প্লেয়ারদের দৃষ্টিনন্দন স্কিল। তার মাধ্যমে গোলমুখ খোলার একটা ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একসুত্রে গেঁথে আর্জেন্টাইন ফুটবল যেন একটা আস্ত সুগন্ধির কৌটো ! একদা তা বহন করেছেন ম্যারাডোনা। এখন মেসি। কিন্তু এ পরম্পরার শুরু করেছিলেন কে ?

মারিও আলবার্তো কেম্পেস।

আর্জেন্টিনা ওই একবারই বিশ্বকাপ আয়োজক। ১৯৭৮। ফাইনালে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ ক্রুয়েফবিহীন নেদারল্যান্ডস। জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন কেম্পেস। আর্জেন্টাইন ফুটবলে ব্যক্তিপূজার শুরুটা কি তখন থেকেই ?

ব্রাজিলের কবি-সাহিত্যিকদের শহর সাও পাওলোতে আগামিকাল যে লড়াইটা হতে যাচ্ছে, সেটা বিশ্বকাপ ডাচ-আর্জেন্টিনা ‘ক্লাসিক’-এর পঞ্চম লড়াই। সবমিলিয়ে নবম। এরমধ্যে ওই একটা ম্যাচই আর্জেন্টিনার সবেধন নীলমনি জয়। ’৭৮ ফাইনালের প্রথম লড়াই। তবে, ব্রাজিল ভক্তরা চাইলে ৩৬ বছর আগের সেই জয়কে ‘কলঙ্ক' আখ্যাও দিতে পারেন ! এজন্য আমাকে শাপ-শাপান্ত করে লাভ নেই। তার চেয়ে একটা গল্প শুনুন-

১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনায় সামরিক ক্যূ সংঘটিত হয়। যার হোতা ছিলেন হোর্হে রাফায়েল ভিদেলা। প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা মার্টিনেজকে উৎখাত করে মতা দখল করেন সামরিক বাহিনির এ উর্দ্ধতন কমান্ডার। শুরু হয় রক্তগঙ্গা। মানবাধিকার লংঘন তখন ভিদেলার জন্য ডাল-ভাত। টুর্নামেন্ট শুরুর কয়েকদিন আগে খুন হন বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ওমর অ্যাকটিস। সবার ধারণা, বিশ্বকাপ আয়োজনে সরকারের প্রচুর দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন ওমর। প্রাণ হারানোটা তারই খেসারত। টুর্নামেন্ট বয়কটের হুমকিও দিয়েছিল কিছু দেশ।

যার সর্বাগ্রে ছিল নেদারল্যান্ডস ! শেষ পর্যন্ত তারাই উঠে যায় ফাইনালে !

উইকিপিডয়া বলছে, আর্জেন্টিনার তৎকালিন সামরিক শাসকের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধই ক্রুয়েফের ’৭৮ বিশ্বকাপ বর্জনের মুল কারণ। কিন্তু তার ৩০ বছর পর ক্রুয়েফের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে সম্পুর্ণ ভিন্ন এক গল্প। এক রেডিও ইন্টারভিউয়ে ক্রুয়েফ জানান,বিশ্বকাপে অংশ নিলে তার পরিবারকে অপহরন করার হুমকি দেয়া হয়েছিল ! ১৯৭৭ সালে ক্রুয়েফ যখন বার্সেলোনার, ঘটনাটা তখনকার। ক্রুয়েফের জবানীতে,‘আমি তখন বার্সেলোনায়। সেখানে আমার মাথায় একটা বন্দুক ঠেকানো হয়। হাঁত-পা বাঁধা ছিল। আমার স্ত্রীকেও বেঁধে রাখা হয়।ছেলেপুলে ছিল বার্সেলোনার একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকায় বেঁচে যায়।’

শেষ পর্যন্ত ঘটনাটার নিষ্পত্তি কিভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে ক্রুয়েফ আজও নিশ্চুপ। কিন্তু পরবর্তি চারমাস ‘টোটাল ফুটবল’ এর শ্রেষ্ঠ পূজারীটির পরিবারের দিন-রাত্রি কেটেছে পুলিশি নিরাপত্তায় এবং ওই বছরই কমলা জার্সিটা খুলে রাখেন ক্রুয়েফ।

’৭৮ নিয়ে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে পেরুর বিপক্ষে কমপক্ষে ৪-০ গোলের জয় না পেলে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠা হতো না। কঠিন এ ম্যাচটাই তারা জিতে নেয় ৬-০ ব্যবধানে। বছরখানেক পরে পেরুর এক সিনেটর জানান,তাদের দেশ থেকে কিছু রাজনৈতিক বন্দি গ্রহন করতে রাজি ছিল আর্জেন্টিনা। তারই মুল্য হিসেবে আর্জেন্টিনা দাবী করেছিল, পেরুকে বড় ব্যবধানে হারতে হবে !

ডাচ-আর্জেন্টিনা লড়াই নিয়ে এই যে এতসব বিতর্ক,এন্তার রোমাঞ্চ,সারি সারি গল্পগাঁথা-সবই এখন ইতিহাসের হিরণ্ময় পাতা। যার আলোয় আগামির পথ খুঁজে নেয় সবাই। অ্যারেনা ডি করিন্থিয়ান্সে আগামিকাল যখন ডাচদের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা, তখন ইতিহাসের ওই অধ্যায়ের দ্বার খুলে যাবে আপনাই। শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত সেখানে যোগ দেয়ার অপেক্ষায় থাকবে সম্পুর্ণ নতুন একটি পাতা।

ম্যাচটা যেহেতু দেখছেন, তাই আমি-আপনি-আমরা সবাই সেই পাতাটির রাজসাক্ষী ইতিহাসের খেরোখাতায়।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেকগুলো ঘটনা সমন্বয় ঘটিয়ে চমৎকার একটি কলাম ধর্মী লেখা লিখেছেন। বিশেষ ক্রে ১৯৭৮এর বিশ্বকাপের এত কেলেঙ্কারীর কথা জানা ছিল না! ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।

১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২১

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ দেবদূত। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.