নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘হে ঈশ্বর, পোপ আমাদের। মেসি আমাদের। তাহলে বিশ্বকাপটাও কেন আমাদের নয় ?’

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪৬

‘ঘরের মধ্যে বাবাকে দেখে কেমন লাগে, ব্রাজিল’?

ফাইনালে ওঠার পর রিও ডি জেনিরোয় এক ব্রাজিলিয়ানকে উদ্দেশ করে খোঁচাটা দিয়েছিলেন এক আর্জেন্টাইন। পরে তা গানে রূপান্তরিত করা হয়। আকাশি-সাদার সমর্থকরা তারই সুরে ঢেউ তুলতে চেয়েছিল মারাকানায়। যেন ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়টা ছিঁড়ে-খুঁড়ে যায়! ঈশ্বর মুচকি হেসেছিলেন। তাই মারাকানাকে দেখতে হলো মুদ্রার অপর পিঠ। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পরই প্রমাণ হয়ে গেল গ্যারি লিনেকারের সে কথাটি একেবারেই সত্যি ‘ফুটবল খুবই সরল একটি খেলা। যেখানে বাইশ জন মিলে নব্বই মিনিটব্যাপী একটি বলের পিছু ধাওয়া করে এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানরাই সব সময় জিতে থাকে।’

লিনেকারের এ কথাকে ব্রাজিলিয়ানদের বিশ্বাস করতেই হবে। ১-৭ বলে কথা! কিন্তু রিও ডি জেনিরোকে যারা কয়েকদিনের জন্য আর্জেন্টাইন কলোনি বানিয়ে ফেলেছিল, সেই লক্ষাধিক আকাশি-সাদার সমর্থক সাবেক ইংলিশ ষ্ট্রাইকারের এ কথাটি শুনলে নিশ্চিতভাবেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ত কোপাকাবানার জলে! কেউ কেউ হয়তো উল্টো প্রশ্নও ছুঁড়ে দিতে পারে,‌' তাহলে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে মারাকানাকে ঢেলে সাজানো কেন? আর, কেনই বা রোজারিওতে ম্যারাডোনার মন্দিরে মেসির নামে পুজো?

এক কথায়, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাছে মারাকানার ফাইনালটা ছিল মেসির ম্যারাডোনা হয়ে ওঠার মঞ্চ। কিন্তু তাদের মধ্যে অন্তত একজন ব্যক্তিও কি ঘুর্ণাক্ষরেও টের পেয়েছিলেন, ২৪ বছর আগে রোম স্টেডিয়ামে জন্ম নেয়া সেই ক্ষতটা টিকে যাবে এবারও?

টিভি পর্দায় মেসিদের গায়ে নীল জার্সি দেখে ’৯০-এর ফাইনাল ম্যাচটা দেখা আর্জেন্টিনার অনেক প্রবীণ সমর্থক নিশ্চয়ই চমকে উঠেছেন? আরে! এটা তো সেই অভিশপ্ত জার্সি! যেটা পরে জার্মানির কাছে হেরেছিল ম্যারাডোনার দল। আর, রানার্সআপের পদক গলায় পরার সময় অঝোরে কেঁদেছিলেন স্বয়ং ম্যারাডোনা।

আচ্ছা, মেসিরা কি তাহলে শপথ করে নেমেছিলেন যে, ম্যারাডোনার সেই চোখের জল আজ নীল জার্সিতেই মুছে ফেলব! কিন্তু, ম্যারাডোনা থেকে মেসি হয়ে দুই যুগ পরও আর্জেন্টিনার জন্য নীল জার্সিটা অভিশাপ হয়েই থাকল। আর্জেন্টাইনরা ফুটবলকে এখন ‘দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম খেলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তাদের তিল পরিমাণ দোষ দেওয়া যাবে না। পেটে ২৮ বছরের ক্ষুধা থাকলে অমন ভুল-ভাল অনেকেই বলে থাকে !

ফাইনালে ব্রাজিলিয়ানদের জন্য টিকিটের সর্বনিম্ন মুল্য ছিল ৮৭ পাউন্ড। বাদবাকিদের পকেট থেকে টিকিটপ্রতি খসেছে ৪৪০ মার্কিন ডলার। ম্যাচ শেষে মারাকানার বাইরে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকা এক আর্জেন্টাইন কিশোরীর হৃদয়ের আর্তি তুলে দিলাম, ‘হে ঈশ্বর, পোপ আমাদের। মেসি আমাদের। তাহলে বিশ্বকাপটাও কেন আমাদের নয়?’

সোফিয়া ওজেদা পেশায় কারখানার শ্রমিক। বিশ্বকাপ শুরুর আগে দুই মাস ওভারটাইম খেটে সে ব্রাজিলে আসার অর্থ জোগাড় করেছে। ’৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা যখন কাপটা উঁচিয়ে ধরেছিলেন, তখন তার জন্মও হয়নি। চার বছর পর রোম স্টেডিয়ামে ম্যারাডোনা যখন কাঁদছিলেন, তখনও নয়। অথচ ’৯০-এর সেই জ্বালার পুরোটাই বুকে আগলে রেখেছেন আর্জেন্টিনার নতুন প্রজন্মের এ প্রতিনিধি। ও গ্লোবোর সঙ্গে আলাপচারিতায় সেই ফাইনালের শেষ দিকে মেক্সিকান রেফারি এডগার কোডেসালের বিতর্কিত পেনাল্টির প্রসঙ্গ উঠতেই সোফিয়ার চোখে শ্রাবণের অঝোরধারা! ‘তখন আমার জন্ম না হলেও পরিবারের বাকিদের মুখে সেই ফাইনালের গল্প শুনেই বড় হয়েছি। আমার দাদা এখনও জীবিত। তিনি এখনো ম্যারাডোনার কথা বলেন। কিন্তু হায়! তার আক্ষেপ এবারও ঘুচল না'- সোফিয়ার আর্তি।

সোফিয়ার মতোই আর্জেন্টিনা থেকে ব্রাজিলে উড়ে এসেছেন জোসেফ। ’৮৬ বিশ্বকাপ তার কাছে শৈশবের অষ্পষ্ট কালিঝুলি মাখা স্মৃতি। কিন্তু ’৯০-এর জ্বালা ভালোই পুষে রেখেছেন। তাই বললেন, ‘আমি শপথ করে বলছি, সামনের দিনগুলোতে ব্রাজিলের মাটিতে এই হার কখনোই ভুলতে পারব না।’

আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ত্রিশের নিচে। সেখানকার প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ এর আগে কখনোই তাদের দেশকে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে দেখেনি। স্বপ্নটা পূরন হলেও তার শেষটা হলো বিরহ দহন নিয়ে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের উল্লাস তাতে কমেনি, বৈকি বেড়েছে! ‘মারাকানাতে আর্জেন্টিনার জয় ব্রাজিলিয়ানরা কখনোই দেখতে চায় না। তেমন কিছু ঘটলে আমাদের আজীবন কৌতুকের শিকার হতে হতো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে শেষ পর্যন্ত তা ঘটেনি' মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন গ্যাব্রিয়েল আলভিন নামে এক ব্রাজিলিয়ান।

ফাইনালের এই হারে আর্জেন্টিনা কিন্তু ’৯০-এর মতো অদৃষ্টকে দোষারোপ করতে পারবে না। অন্তত দুটি পরিষ্কার গোলের সুযোগ তারা পেয়েছিল। বুয়েন্স এইরস তাই এখন কান্না-হাসির মিশেলে এক অদ্ভুত ভুতুড়ে নগরী। সেখানে কেউ প্রার্থনায় নিমগ্ন, কেউ আবার চোখে জল ছেড়ে মেতেছে ধ্বংসযজ্ঞে। আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। তাই দেখে নিশ্চয়ই এক গাল হেসে নিচ্ছেন রিও ডি জেনিরো শহরের মেয়র এদুয়ার্দো পেইস ? বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি নিজেই তো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ফাইনালে আর্জেন্টিনা যদি ব্রাজিলকে পরাজিত করে, তাহলে আমি আত্নহত্যা করব। ওদের মেসি এবং পোপ আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সবকিছু জিতে নিবে।'

ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন। '৮৬-তে তার হাত আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিল বিশ্বকাপ। এবার সেই একই হাত বাঁচিয়ে দিল এদুয়ার্দো পেইসের প্রাণ। পার্থক্য একটাই, ২৪ বছর আগে হাতটা ভর করেছিল দিয়াগো ম্যারাডোনার ওপর। কিন্তু এবারের ফাইনালে অমন দুটি গোল মিসের পর যে কেউই বলবেন, আর্জেন্টিনা হয়তো নিজে থেকেই চায়নি !

তাই, লিওনেল মেসিরও আর ম্যারাডোনা হয়ে ওঠা হয়নি।



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহাকার! হাহাকার!

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫

নাছির84 বলেছেন: ব্যাপার না ভাই। সেরে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। :P

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

মদন বলেছেন: +++++++++++

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

নাছির84 বলেছেন: ভাই বোধহয় ব্রাজিলের সমর্থক ? :P

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:১৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আমি জার্মানি ছিলাম। কিন্তু আর্জেন্টিনার ব্যথাটা বুঝি। ফাইনালে হারা কখনই হাহাকার ছাড়া আর কিছু দেয় না।

২১ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০১

নাছির84 বলেছেন:
অভিনন্দন হে 'ডাই ম্যানশ্যাফট' (জার্মান দলের নিকনেম) সমর্থক। কিন্তু, প্রফেসর সাহেব,ব্যাথা বুঝে কি হবে ? বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন দল তিন-তিনটে সহজ গোলের সুযোগ হেলায় নষ্ট করলে, ম্যাচ শেষে তাদের হাতে কি থাকা উচিত ?
ট্রফি নাকি স্বরচিত শোকপত্র ?
আপনাকে মানতেই হবে, আর্জেন্টিনা ম্যাচটা জিততে পারতো। কিন্তু জার্মানির মতো দলের বিপক্ষে হেলায় সুযোগ নষ্ট করলে তার পরিণতিটা কি হতে পারে, সেটা তো ২৪ বছর আগেই একবার টের পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। সত্যি বলতে ইউরোপিয়ান দলগুলোর মতো লাতিনরা কখনোই অতীত থেকে শিক্ষা নেয় না। আবেগই তাদের শিক্ষক এবং ভুল করার জায়গা।
কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, আবেগের আঁকশি দিয়ে সবসময় সফলতারও নাগাল মেলে না।
তাই লিওনেল মেসিরও আর ম্যারাডোনা হয়ে ওঠা হলো না !
পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রফেসর। ভাল থাকা চাই। সবসময়।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল বলেছেন প্রিয় ব্লগার। যান্ত্রিক নিখুঁত ফুটবলের কাছে আবেগি জোগো বনিতো হেরে গেল ওই আবেগের কারণেই।

তবে আমি বলি জার্মানি জেতায় আরেক দিক থেকে ভাল হয়েছে। আর্জেন্টিনা জিতলে আমাদের যা স্বভাব দেখা যেত পরের দিন দুইচারজন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক খুন হয়ে গেছে, একাধিক আহত। তাঁর চেয়ে এটাই ভাল!

শুভসন্ধ্যা।

২১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

নাছির84 বলেছেন: সহমত প্রকাশ করছি।
পাশাপাশি এটাও বলছি, লাতিন ফুটবল এবং ইউরোপিয়ান ফুটবলের মধ্যে পার্থক্যের যে মুলো এতদিন আমাদের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তা সর্বৈব মিথ্যে।
এখন প্রায় সবাই একইরকম ফুটবল খেলে। ট্যাকটিস নির্ভর-শরীরি ফুটবল। ‌'রোমান্টিক কোচ' খ্যাত টেলে সান্তানাকে ১৯৮২ বিশ্বকাপে একবার সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন-‌'আপনার দল জিতলেও প্রচুর গোল হজম করছে। তাহলে রক্ষনভাগের দুর্বলতা কি মেনে নিচ্ছেন ?'
জবাবে ব্রাজিলের তৎকালিন কোচটি বলেছিলেন-'ফুটবলে যারা বেশি গোল করে তারাই তো ম্যাচ জেতে ?'
এমন দর্শন এখন খুঁজতে যাওয়া বোকামি। স্রেফ বোকামি।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

ইমিনা বলেছেন: গল্প চাই, গল্প ...
খুব শিগগির গল্প চাই ।।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

নাছির84 বলেছেন:
কে, হে তুমি গল্পপিপাসু অর্বাচীন বালিকা ?
গদ্যের গদাধারী ধরণীতে, তিয়াসে যার
বুক ফাটে, আহা ! সে তো জানেনা
এ যে আঁধারের কাছে আলোর প্রার্থনা !

এ পৃথীবির ব্যঞ্জনা বড়ই অদ্ভুত।
এখানে মসজিদ-মন্দিরের চৌকো,
পাত্রে আর্থিক প্রেম চলে দেদারসে।
অথচ প্রার্থনাগৃহের চৌকাঠ টপকে,
ওই যে খানিক দূরে উপবিষ্ট,
ছিন্ন পটের মধুকর, তার পাত্রে
টাকা-আনা-পাইয়ের দঙ্গলে
কয়েক ফোঁটা ঘৃণাও মিশে থাকে।
ঈশ্বর তাকে নিয়ে সরস, কিন্তু
ভীষন স্বার্থপর !
নিজপাত্র ঠিকই প্রার্থনায় আলোকিত,
কিন্তু তারই সৃষ্টি আজ বেশুমার
ঘৃণায় অন্ধকারে পতিত।
তাই গল্প থেকেও এখন গল্পের আকাল,
অভিমানে জরা-গ্রস্থ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
শুধুই পদ্যের নাম।



.............ইয়ে মানে, গোস্তাখি মাফ করবেন। একটু চেষ্টা করে দেখলাম :P। ভা্ল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.