নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

ম্যাচ পাতানো এখন ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্প !

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১১। সুমেরুবৃত্ত বন্দী ফিনল্যান্ডের শহর রোভানিয়েমিতে হাঁড়কাপানো শীত পরেছে। সাত সকালেই শহরটির সেন্ট্রাল পুলিশ স্টেশনে খবর এলো, উইলসন রাজ পেরুমাল নামে সিঙ্গাপুরের এক নাগরিক এই মুহুর্তে জাল পাসপোর্ট নিয়ে রোভানিয়েমিতে অবস্থান করছেন। পেরুমাল সম্পর্কে তথ্যদাতা ব্যক্তিটির কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু আদায় করে করতে পারেনি পুলিশ কর্মকর্তারা। দেশটিতে তার অতীত কর্মকান্ডেরও কোন রেকর্ড ছিল না। এ কারণে পেরুমাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশ খুব গোপনে তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় নিয়ে আসে।

তিনদিন পর স্থানীয় ফুটবল ক্লাব রোভানিয়েমি প্যালোসুয়েরার পার্শ্ববর্তী একটি ফরাসি রেঁস্তোরায় পেরুমালকে ওই ক্লাবেরই তিনজন ফুটবলারের সঙ্গে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখা যায়। তিনজন ফুটবলারই ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। ১-১ ব্যবধানে ড্র ম্যাচের বিরতির সুযোগে তারা পেরুমালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। রোভানিয়েমি পুলিশ যা বোঝার বুঝে নেয়। পরের দিন ভুয়া পাসপোর্টের জন্য গ্রেফতার হন পেরুমাল। প্রাথমিক সন্দেহ অনুযায়ী খবরটা ফিনল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশন হয়ে ফিফার সদর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেয় রোভানিয়েমি পুলিশ। এক সপ্তাহ পর শহরটিতে পা রাখেন ফিফার নিরাপত্তা প্রধান ক্রিস ইটন। পেরুমালকে তিনি ছয় মাস ধরে গোটা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলেন। ফিনিশীয় গোয়েন্দাদের ইটন জানান, যে ব্যক্তিটিকে তারা গ্রেফতার করেছেন, সে বিশ্বের ভয়ংকরতম ফুটবল ম্যাচ জুয়াড়িদের একজন!

পাঁচটি মহাদেশজুড়ে পেরুমাল কর্তৃক গড়াপেটা করা ম্যাচের সংখ্যা একশোরও বেশি। সেখান থেকে লুটে নেয়া মুনাফার অঙ্ক প্রায় ৬.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে এশিয়ান ফুটবলের ভিত নড়িয়ে দেয়া ‘এশিয়াগেট’ কেলেঙ্কারির পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল, এমনকি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গেও পেরুমালের জড়িত থাকার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ফিনল্যান্ডে জেলবাস করাকালীন তার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘কেলন কিংস’-এর একটি লাইন তুলে দিলাম— ‘২০১০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে নাইজেরিয়ার নাম লেখানোর নেপথ্য নায়ক আমি। আমার পরিকল্পনা কাজ করেছে! হুন্ডুরাস এবং নাইজেরিয়াকে বিশ্বকাপে খেলানোটা আমার ব্যক্তিগত সাফল্য হয়ে থাকবে!’ ফুটবলবিশ্বে তাই পেরুমালের অপর নাম-‘গডফাদার অব ম্যাচ ফিক্সিং’।

সিঙ্গাপুরের এক দরিদ্র পরিবার থেকে স্থানীয় লিগ, তারপর ফুটবলের আন্তর্জাতিক মঞ্চ- সবখানেই দাপিয়ে ম্যাচ গড়াপেটা করেছেন পেরুমাল। বর্তমানে হাঙ্গেরি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকা ৪৯ বছর বয়সী এ ব্যক্তিটির প্রথম টিভি সাক্ষাত্কার নেয় সিএনএন। সেখানে পেরুমাল যা যা বলেছেন, তা শোনার জন্য ফুটবলমোদীদের কর্ণকুহর কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়! ‘কতগুলো ম্যাচ গড়াপেটা করেছি তা কখনোই হিসেব করিনি। সংখ্যাটা হতে পারে ৮০ থেকে ১০০।’ শুধু তাই নয়। ‘এমনও ঘটেছে আমি খেলোয়াড়দের বেঞ্চে বসে ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বুঝে তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। ব্যাপারটা এতটাই সোজা ছিল যে স্বয়ং কোচ পর্যন্ত আমার কথা শুনতে বাধ্য হয়েছেন’—বলেন তিনি।

ফুটবল ম্যাচ গড়াপেটা সন্দেহে মোট চারবার গ্রেফতার হয়েছেন পেরুমাল। সর্বশেষ ফিনিশীয় পুলিশের মুঠোবন্দী হওয়ার পর তার সুমতি ফিরে আসে। রাজসাক্ষী হয়ে পেরুমাল এখন তার স্যাঙ্গাত্ এবং গডফাদারকে ধরতে পুলিশকে সাহায্য করছেন। ‘শৈশবে স্বপ্ন দেখতাম একদিন সৈনিক হবো। কিন্তু স্কুলে পড়াকালীন নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসা হয়নি। ম্যাচ পাতানো চক্রের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত্ ঘটে উনিশ বছর বয়সে’—নিজের বইয়ে জানান পেরুমাল।

১৯৯৮ সালে জিম্বাবুয়ে-বসনিয়া প্রীতি ম্যাচ পাতানোর চেষ্টা দিয়ে পেরুমালের গড়াপেটা ক্যারিয়ার শুরু। ২০০৯ সালে ‘এশিয়াগেট’ কেলেঙ্কারিতে জিম্বাবুয়ের ফুটবলার এবং অফিসিয়ালদের কব্জা করে নেন পেরুমাল। এরপরই তার নামটা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। সিএনএনের কাছে তার দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, গড়াপেটাকৃত ম্যাচে সাফল্যের হার ৭০%-৮০%। আসরের নামগুলোও চমকে দেয়ার মতো—অলিম্পিক, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব, নারী বিশ্বকাপ, কনকাকাফ গোল্ড কাপ এবং আফ্রিকান নেশন্স কাপ।

ফিনিশীয় পুলিশ পেরুমালকে গ্রেফতার করার পর জানতে পারে, তার গডফাদারের নাম ট্যান সিট ইং, যিনি ইতালিয়ান পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং এই মুহুর্তে সিঙ্গাপুর পুলিশের নজরবন্দী আছেন। পেরুমালকে গ্রেফতার করার পর তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ৩৮ টি দেশের ফুটবলার এবং কর্মকর্তার নম্বর খুঁজে পায় পুলিশ। ইন্টারপোলের তথ্য অনুযায়ী, খেলাধুলায় গড়াপেটা এখন ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শিল্প, যার ৭০ ভাগ অর্থেরই যোগান দেয় ফুটবল! এজন্য ফিফার কর্মপন্থাকেই দায়ী করলেন পেরুমাল, ‘ফিফা বর্ণবাদ থামাতে এত কিছু করছে কিন্তু ম্যাচ পাতানোর বিপক্ষে তেমন সরব ভুমিকা পালন করছে না। থলের বিড়াল বেরিয়ে আসলে সম্ভবত লজ্জায় তাদেরই মাথা কাটা যাবে।’ সিএনএন, ইনভিজিবল ডগ, টেলিগ্রাফ।



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৯

ফা হিম বলেছেন: ভয়াবহ অবস্থা!! এইসব গডফাদারদের না ধরে আসরাফুলকে নিষিদ্ধ করা হয়, হায় সেলুকাস!!

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০

নাছির84 বলেছেন: গডফাদারদের ধরে কান টানলে মাথাও চলে আসবে ! অতএব, কান পর্যন্তই থাক, মাথা তার কাজ করুক। এতে করে তথাকথিত ফুটবল সংগঠকরা যদি দু পয়সা রোজগার করে সংসার (বাড়ি/গাড়ী/ক্ষমতা/নারী) চালাতে পারে, তাহলে আপনার-আমার ক্ষতি কি ?
সাধারন, কিংবা অতি নগন্য ছা-পোষা ফুটবলমোদীদের আবেগের কোন দাম নেই। এ ঘোর কলিযুগে উহা কেবল অন্তরতলেই শোভা পায়।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: খেলা এখন কি আর শুধু খেলা আছে। পুরোটাই ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার বাজী চলে। এতে যে ফিফা কিংবা আইসিসি জড়িত থাকবেনা সেটা কেমন করে হয় ?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

নাছির84 বলেছেন:
যদি লাগে লোভের ছোঁয়া
খেলা নয় শুধুই খেলা !

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ওরে বাপস। বিশাল ব্যাপার!

প্রথম প্লাস রইল প্রিয় নাছির।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০

নাছির84 বলেছেন:

এক কুড়ি মসলিন শাড়ীকে সামান্য একটা ম্যাচবক্সে পুরে দিলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, ফিচারটার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। পাতিলশুদ্ধ দুধ রেখে আমি শুধু ননীটাই উপস্থাপন করতে পেরেছি। আরও খোলাসা করে লিখলে বোঝাতে পারতুম, ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং এখন রোজ সকালে উঠে ব্রাশ করার মতোই স্বাভাবিক !
কিন্তু সময়ের সল্পতা এবং মনের জরাজীর্ণ অবস্থায় লেখাটা খোলাসা করতে পারিনি। এভাবে মানুষ শুধু নিজ স্বপ্নেই লেখক হতে পারে, বাস্তবে নয়। দোয়া করবেন প্রফেসর অন্তত, আমাবস্যার চাঁদ হয়েও যেন মাঝে-মধ্যে আপনাদের মাঝে এমন বিশাল ব্যাপারগুলোকে তিন আঙ্গুলের এক চিমটি ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি। এতে আর কিছু না ঘটলেও আমার আসল নামটা অন্তত সবাই ভুলে যাবে ! :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.