নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

শচীন !

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮

কান শুনতে না চাইলেও সংবাদটার প্রতীক্ষায় ছিল সবাই। অবশেষে এলো সেই খবরটা, চুপিসারে নিয়তির পরিহাস হয়ে। মুম্বাইয়ের তটে আরব সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ এখন ভারতের ক্রিকেট-ঈশ্বরের গা থেকে রঙিন পোশাক খসে পড়ার মর্সিয়ায় বিলীন। হায় ! বুকের মধ্যে সুখের ব্যাথা বাজে, এ বুঝি বিরহ দহন লাগে !

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ভারত সফরে আসার পাঁচ মাস আগের ঘটনা। দিস্তা দিস্তা কাগজে তখন ফুটছে টেন্ডুলকারের ব্যবচ্ছেদ! প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল না পেয়ে অসহিষ্ণু ভক্তরা যেন পারলে তাদের ঈশ্বরকে 'একঘরে' করে রাখে। টেন্ডুলকার তখন নিজ মাটি ছেড়ে জার্মানভূমিতে। অ্যাডিডাসের হেডকোয়ার্টারে গিয়েছিলেন কী এক কাজে। ভিনদেশে তাকে একনজর দেখতে ভিড় করেছিল প্রায় হাজার পাঁচেক ভারতীয় অভিবাসী। তা দেখে অ্যাডিডাসের এক নির্বাহী বিস্ময়ে থ বনে বলেন, 'খোদ লিওনেল মেসিও এমন অভ্যর্থনা পায়নি এখানে।' সেই নির্বাহী জানতেন না, রক্ত-মাংসের কোনো মানুষকে ঈশ্বর বানানোর মহৌষধটা ভারতবাসীর শিকড়েই প্রোথিত। আবার সেই ঈশ্বরকে আসনচ্যুত করতেও তারা সিদ্ধহস্ত !

ইতিহাস বলে, মহাত্মা গান্ধী ও জওয়াহেরলাল নেহরুর মতো নেতারাও মুক্তি পাননি অসহিষ্ণু জাতিটির কাছ থেকে। ভারতীয়দের স্বাধীনতার পথ দেখানো গান্ধীকে দিতে হয়েছিল রক্ত, নেহরুকে সইতে হয়েছিল অপমানের গ্গ্নানি। আর টেন্ডুলকারের গা থেকে অলক্ষ্যে খুলে নেওয়া হলো রঙিন পোশাক। সন্দীপ পাতিলদের কাছে বয়সের ঢাল থাকলেও ৩৭ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে 'ডাবল সেঞ্চুরি'র স্বাদ তারা পাননি। তাদের কাউকে দেখেই ক্রিকেট-স্কুলে ভর্তি হয়নি কোটি কোটি ক্ষুদে। তাদের কারও ব্যাটিংই একসূত্রে গাঁথেনি গোটা ভারতকে, যা ফুটেছে শুধু টেন্ডুলকারের ৩৮ ইঞ্চি উইলোতে। ৪৬৩ ম্যাচ, ১৮,৪২৬ রান, ৪৯টি সেঞ্চুরি !

চাপ সামলাতে সেই কল্পিত ঈশ্বরের গা থেকে ঘাম ঝরেছে নিদারুণ। নইলে ৯৯তম সেঞ্চুরিটির পর কিসে ভর করেছিল টেন্ডুলকারকে? ১৭ টেস্টে ৩১.৭৬ গড়ে ৯৫৩ রান; ১৪ ওয়ানডেতে ৩৩.৭৮ গড়ে ৪৭৩ রান_ একটি সেঞ্চুরিও নেই। অধৈর্য অপেক্ষায় ঘেমে ওঠা তার পূর্বসূরি ও ভক্তরাও গলা মেলায় জিম মরিসনের সঙ্গে, 'শুধু প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছু পাবে না।' অতএব, শুরু হলো সমালোচনা।

মিরপুরের মাটিতে যখন সেই 'শততম' মুক্তাটি রেকর্ডের মুকুটে সংযোজন করলেন টেন্ডুলকার, ভারতজুড়ে তখন কী উচ্ছ্বাস! যার ছিটেফোঁটা পড়ে বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপেও। কিন্তু টেন্ডুলকার ছিলেন নির্লিপ্ত, ভাবলেশহীন। শতকোটি ভক্তদের প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়া মহানায়ক বলেই ফেলেন, 'যেখানে যাই, সেখানেই শুধু মাইলফলকের ব্যাপারে আলোচনা। সবাই আমার শততম সেঞ্চুরিটির কথা বলে। কিন্তু ৯৯টি সেঞ্চুরি নিয়ে কেউই কথা বলে না। মানসিকভাবে তাই সবকিছু কঠিন হয়ে পড়েছিল।'

নিজেদের বানানো ঈশ্বরকে নিজেরাই শূলে চড়ানোর উদাহরণ বোধকরি এর থেকে ভালো আর হয় না !

টেন্ডুলকারের অভিষেকের আগের নয়টি বছর ছিল ভারতবাসীর জন্য হতাশার। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তখন রক্তাক্ত মুরাদাবাদ, ভাগলপুর। ইন্দিরা গান্ধীর রক্তঝরার প্রতিশোধে মরল শিখরা। কপিল (হিন্দু), আজহার (মুসলিম), রজার বিনি (খ্রিস্টান) ও মনিন্দর সিংয়ের (শিখ) একটি পোস্টার তখন কেড়ে নেয় গোটা ভারতের দৃষ্টি। সেই পোস্টারের ক্যাপশন ছিল_ 'একসঙ্গে খেলতে পারলে, আমরা একসঙ্গে বাঁচতেও পারি'। সেই সময়ের কোলেই আলোকবর্তিকা হয়ে আসেন টেন্ডুলকার। ১৯৮৯ সালে করাচির মাটিতে পাকিস্তানের পেসদানবদের মুখোমুখি হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হলো তার অধ্যায়। চতুর্থ টেস্টে তার নাক ফেটে ঝরল রক্ত। কিন্তু নামের পাশে লেখা হলো জ্বলজ্বলে ৫৭ রান। তখনই জন্ম নেয় একটি প্রদীপ, যার আলোয় দীপ্যমান হয় ভারতের রাম-রহিমরা।

পাঁচ বছর পর ৭৯তম ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরিটি পান টেন্ডুলকার। সত্য হয় গাভাস্কারের কথা, 'প্রথমটি পেয়ে গেলে কেউ তাকে থামাতে পারবে না।' পারেননি শেন ওয়ার্নও; বরং ১৯৯৮ সালে শারজায় শচীনের 'মরুঝড়ে' বালুচাপা পড়েছিলেন অসি জাদুকর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি আর ফাইনালে নিজের ২৫তম জন্মদিনকেও সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙান শচীন। ভারতবাসী পেয়েছিল শিরোপা। আর রাতের ঘুমে শচীনকে 'দুঃস্বপ্ন' হিসেবে পেয়েছিলেন ওয়ার্ন।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারত-কেনিয়া ম্যাচের আগে বাবাকে হারান টেন্ডুলকার। সৎকার থেকে ফিরেই কেনিয়ার বিপক্ষে শচীনের ওই মসৃণ সেঞ্চুরিটি ছিল তার বাবার প্রতি অব্যক্ত ভালোবাসা। শূন্য চোখে আকাশপানে শচীনের সেই হাহাকার দৃষ্টি ক্রিকেটের হিরন্ময় ছবিগুলোর একটি। এমনসব আবেগঘন ছবিতে আর সাজবে না ৩০০ বলের ক্যানভাস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ৪০ বছর পরই নাকি ঝাপসা হতে থাকে দৃষ্টি। সেখানে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় ব্যবধানে বলে পা নিতে পারছেন না ভারতবাসীর ঈশ্বর!

২৩ বছরে থরে-বিথরে দেওয়ার পরও শচীনের এই অক্ষমতা ভক্তদের কাছে তাই ক্ষমার অযোগ্য !





(শচীন টেন্ডুলকার ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর খানিকটা লিখেছিলাম। শেষ করতে পারিনি। লেখাটা দৈনিক সমকালে প্রকাশিত হয়। যারা ক্রিকেট ভালবাসেন পুরোনো এ লেখাটা তাদের জন্য....)



লিংক ঃ Click This Link

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫

লেখোয়াড় বলেছেন:
+++++++++++++++++++
+++++++++++++++++=+++++++++++

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভ্রাতা। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

মামুন রশিদ বলেছেন: দুর্দান্ত!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই। আমার ব্লগবাড়িতে ইদানিং আপনাকে দেখাই যাচ্ছে না !

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

সুমন কর বলেছেন: দেখে গেলাম।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

নাছির84 বলেছেন: আবার এসে পড়ে যাওয়ার নিমন্ত্রন রইল।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: নাক ফেটে যাবার পর যেমন করে আবার ব্যাট বাগিয়ে নেমেছিল তরুণ শচিন, এখনও ভাবলে রোমাঞ্চ হয়!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৮

নাছির84 বলেছেন: তখনবার যুগটাই ছিল আলাদা। পেস বৈচিত্রে ভরপুর ! এদেরকে শাসন করে শচীন যত রান করেছে, তার প্রতিটিই ক্রিকেটের ব্যাকরণে ঠাঁই পাওয়ার মতো। তবে আমার চোখে শচীন সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান নয়। সে গল্প আরেকদিন হবে.........
ভাল থাকবেন প্রফেসর। শুভ কামনা।

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১১

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ হাসান ভাই। ভাল থাকবেন।

৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ক্রিকেট ভালবাসি --- শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.