নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোনালদো : ফুটবলই যার বইপত্র !

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬

উত্তর আটলান্টিকের বুকজুড়ে থাকা দ্বীপটির আয়তন মাত্র ৩০৯ বর্গমাইল। মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হলেও বুনন পোশাক, ফুলবাগান, মৎস্যচারণ ক্ষেত্র এবং চমৎকার ওয়াইনের জন্য মাদেইরার একটা আলাদা খ্যাতি আছে ইউরোপজুড়ে। পর্তুগালের এ দ্বীপটি ঐতিহাসিক দিক থেকেও বেশ ওজনদার। ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিড (জলদস্যু), নেপোলিয়ান, উইনস্টন চার্চিলের মতো মানুষদের পা তো পড়েছেই, এমনকি 'লৌহমানবী' মার্গারেট থ্যাচার পর্যন্ত ১৯৫১ সালে মধুচন্দ্রিমার জন্য বেছেনিয়েছিলেন আগ্নেয়পর্বত শোভিত এ দ্বীপ, যার অপর নাম 'পার্ল অব আটলান্টিক'। বিশ্বজুড়ে দ্বীপটির পরিচিতি লাভের নেপথ্যে তাদের থেকে বেশি অবদান রাখা ব্যক্তিটির পোস্টারে এখন ছেয়ে গেছে মাদেইরার রাজধানী ফুনচালের রাস্তাঘাট। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।



মেক্সিকো বিশ্বকাপে দিয়াগো ম্যারাডোনা মহানায়ক হয়ে ওঠার এক বছর আগে ফুনচালের জরাজীর্ণ এক টিনের ঘরে মারিয়া ডোলোরেস দস সান্তোস অ্যাভেরিওর কোলজুড়ে তার জন্ম। সংসারের চতুর্থ নতুন মুখ। বাবা হোসে ডিনিসি অ্যাভেরিও পেশায় পৌরসভার মালী হলেও আদতে একজন মদ্যপ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে খুব পছন্দ করতেন। ডিনিসি অ্যাভেরিও তাই সখ করে চতুর্থ সন্তানের নাম রাখেন রোনালদো। ছেলের বয়স যখন আট বছর, তখন মাদেইরার ফুটবল ক্লাব অ্যান্ডোরিনহায় ইকুইপমেন্ট ম্যানেজারের কাজ পেয়ে যান ডিনিসি। পেশাদার কোনো ফুটবল ক্লাবে বাবার হাত ধরে ওই প্রথম পা রাখেন রোনালদো। বাকিটুকু ইতিহাস।



পর্তুগালে ইউসেবিওর স্থান 'ঈশ্বরতুল্য'। কিন্তু তার পর যদি কেউ থেকে থাকেন, সেই ব্যক্তি অবশ্যই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অ্যান্ডোরিনহা থেকে স্পোর্টিং লিসবন, তারপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং হাল আমলে রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের প্রাণভোমরা হিসেবে খেলে চলার পাশাপাশি ২০১৪ বিশ্বকাপের অন্যতম তারকাও মাদেইরার ২৯ বছর বয়সী ওই জেদি ছেলেটি, যিনি শৈশবে ক্লাসটিচারকে চেয়ার ছুড়ে মেরেছিলেন অযাচিত বকা খাওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে! গত বছর রোনালদো ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার জিতে নেওয়ার কিছুদিন আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল_ মেসি এবং রোনালদোর মধ্যে সেরা কে? জবাবে ব্ল্যাটার বলেছিলেন, 'দু'জনের মধ্যে একজন চুলের পরিচর্যায় বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে থাকে। আমার কাছে তাই মেসিই পছন্দের ফুটবলার।' পরদিন ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল_ 'সবাই মেসির মতো মার্জিত ফুটবলারদেরই বেশি পছন্দ করে। তার পরও রোনালদো একাই একটা দিক দখল করে থাকবেন।'



এই হলেন রোনালদো। মাঠে যার ক্ষুরধার ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষরা খাবি-খাওয়ার পাশাপাশি মাঠের বাইরেও তার 'মোহাক' চুলের শোভায় উর্বশীরাও মজে যায়। তার প্রতিটি ফ্যাশন স্টাইলকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফ্যানরা পাগলের মতো অনুকরণ করে। এক কথায়, গ্গ্নোবাল আইকন। কিন্তু রোনালদোর এতটা পথ হেঁটে আসা হতো না, যদি তার শৈশবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা নিতেন স্থানীয় খেলোয়াড় ফার্নান্দো সউসো। পরে রোনালদো যাকে অভিহিত করেছেন তার ক্যারিয়ারের 'গডফাদার' হিসেবে।



ছয় বছর বয়সেই নিজের ফুটবল প্রতিভাটা গোটা মাদেইরায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রোনালদো। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাক্ষণ মেতে থাকতেন ফুটবল নিয়ে। এমনকি ঘুমুতে যেতেন বলটাকে বুকে জড়িয়ে! সউসার ভাষায়_ 'সে খেলাটাকে এত বেশি পছন্দ করত যে, এ জন্য সে খেতে ভুলে যেত। যখন তার হোমওয়ার্ক করার কথা, তখন দেখা যেত রোনালদো বলটা নিয়ে পরিবারের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে নিজ কামরার জানালা গলে বের হচ্ছে! আসলে ফুটবলই ছিল তার বইপত্র।'অ্যান্ডোরিনহা থেকে রোনালদোকে ডেকে নেয় মাদেইরার আরেকটি বড় ক্লাব ন্যাসিওনাল। তারপর থেকেই রোনালদোকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে থাকেন সউসা। পর্তুগালের তারকা গড়ার কারখানা হিসেবে খ্যাত ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে রোনালদোর ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেন দেন সউসা। যথারীতি টিকেও যান তার শিষ্য। সেবারই প্রথমবারের মতো নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বের শহর লিসবনে পাড়ি জমান রোনালদো, কিন্তু ফিরে আসেন কিছুদিন পরই। সউসা খুব অবাক হন। রোনালদোর বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে জানতে পারেন, লিসবনের জীবন তাদের ছেলের কাছে নরকতুল্য! কারণ, বাবা-মা ন্যাওটা রোনালদো একাকিত্ব সইতে না পেরে প্রতি রাতেই স্পোর্টিং লিসবনের একাডেমিতে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে তারপর ঘুমুতে যেতেন। শুধু তাই নয়, রোনালদোর মুখে মাদেইরার আঞ্চলিক টানটা তার সতীর্থদের কাছে ঠাট্টার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অতএব, হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে রোনালদো ফিরে এলেন নিজ জন্মভূমিতে। কিন্তু সউসা মেনে নিতে পারেননি। রোনালদো তার মায়ের অনুগামী ছিলেন। এ কারণে মারিয়া ডোলোরেসকে বুঝিয়ে রোনালদোকে ফের এয়ারপোর্টে নিয়ে যান সউসা। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত রোনালদো যতবার ফিরে গেছেন মাদেইরার মাটিতে, ততবারই দেখা গেছে, এয়ারপোর্টে কমপক্ষে হাজারখানেক ভক্ত তার জন্য অপেক্ষা করছে। নিয়মটার ব্যত্যয় হয়নি কখনোই!



হবেই বা কীভাবে? ট্রান্সফারের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন, সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্তির রেকর্ডও গড়েছেন, জিতেছেন লা লীগা, প্রিমিয়ার লীগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা। বিশ্বজুড়ে তার ভক্তের সংখ্যা কয়েক কোটি। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে ২০০৪ ইউরোর ফাইনালে ওঠাই এখন পর্যন্ত রোনালদোর সর্বোচ্চ সাফল্য। যদিও পর্তুগাল এবার বিশ্বকাপ খেলতে পারছে শুধুই তার কল্যাণে। বাছাই পর্বের প্লে-অফ ম্যাচে রোনালদোই হ্যাটট্রিকেই তো বশ মানলো ইব্রার সুইডেন, আর চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়ে যায় পর্তুগাল। তবে একটি ব্যাপার 'অপয়া' হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্যালন ডি অর জিতে বিশ্বকাপে গিয়ে ট্রফি জিততে পারেননি একজন কিংবদন্তিও! সেই আলফ্রেড ডি স্টেফানো থেকে ইয়োহান ত্রুক্রয়েফ, রবার্তো ব্যাজিও এমনকি লিওনেল মেসিও ব্যর্থ হয়েছেন। গত দুটি আসরে পারেননি, এবার দলের নেতৃত্ব কাঁধে নিয়ে রোনালদো পারবেন তো '৬৬ বিশ্বকাপের ইউসেবিওর মান রাখতে?





(নিজের পুরোনো লেখা সংগ্রহে রাখার তাগিদে ব্লগে সংরক্ষন করছি। কারও বিরক্ত লাগলে ক্ষমাপ্রার্থী।)




লিংক ঃ http://www.samakal.net/2014/06/05/64152

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭

যমুনার চোরাবালি বলেছেন:
রোনাল্ডো সেরাদের একজন। তবে কথা হলো পর্তুগালের বিশ্বকাপ ভাবনা থেকে আপাতত দুরে থাকাই ভালো। সামনের আরো কয়েক বছরে সেটা মনে হয়না সম্ভব হবে।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩

নাছির84 বলেছেন: সহমত প্রকাশ করছি। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে লিখেছিলাম। সে কারণে এভাবে লিখতে হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ২০১৮ বিশ্বকাপেও পর্তূগালের তেমন কোন আশা নেই। কারণ, ফুটবল একজনের খেলা নয়। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: কোন বিরক্তি লাগে নাই রে ভাইয়া
বরং আরো ভাল লেগেছে --------

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯

নাছির84 বলেছেন: বিরক্তি লাগে নাই ! বলেন কি আপু ! আপনি তো দেখছি ধৈর্য্যর অবতার। অনেকেই পুরোনো লেখা পছন্দ করেন না। তাই নিচে ওটুকু জানিয়ে দেয়ার প্রয়োজন ছিল। নিজের লেখা সংগ্রহে রাখার আর কোন জায়গা নেই। লেখালিখি ছেড়ে দেয়ার পর এগুলোই হবে আমার সময় কাটানোর খোরাক।
ভাল থাকব্নে।

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১

কাল পুরুষ ৭৭ বলেছেন: মেসি আমার প্রিয় খেলোয়ার.......কিন্তু রোনালদো কে ভালো লাগে তার এই খ্যাপাটে স্বভাবের জন্য......ছেলেমানুষের মধ্যে একটু টুইস্ট না থাকলে ভালো লাগে না.......

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নাছির84 বলেছেন:
মেসি যদি শান্ত-স্নিগ্ধ বৈচিত্রময় কোন নদী হয় তবে রোনালদো হলেন খরস্রোতা জলপ্রপাত। একে অপরের পরিপূরক। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আসলে ফুটবলে মেসি-রোনালদোর মতো তারকারা হলেন দুর আকাশের কালপুরুষের মতো। সময়ের করাঘাতে এই পৃথীবি যতই পাল্টে যাক না কেন, আকাশের কালপুরুষ মন্ডলি কিন্তু প্রথম যেভাবে জন্ম নিয়েছিল সেরকমই থাকবে। একইরকমভাবে হালফিলের ফুটবল পেশাদারিত্বের কশাঘাতে যতই আবেগশুন্য হয়ে পড়ুক না কেন, নষ্টালজিয়ার ক্ষুধা মেটাতে মানুষ কিন্তু তারপরও সেই ডি স্টেফানো, গারিঞ্চা, ম্যারাডোনা কিংবা মেসি-রোনালদোকে বেছে নেবে।
আর, এভাবেই ইতিহাসের পাতায় তারা বেঁচে থাকেন চিরকালের মতো !

৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

ফেরারী আউট-ল বলেছেন: আমার প্রিয় ফুটবলার!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

নাছির84 বলেছেন: হুঁম, মিলছে ভাল। মাঠে আপনার প্রিয় ফুটবলারকেও মাঝে-মধ্যে আউট ল'-এর মতো মনে হয়। কিছুটা দুর্বিনীত কিন্তু পরিশীলিত !

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: ++++++++++++++

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

নাছির84 বলেছেন: ও ভাইজান, কতদিন পর ! :(

৬| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২

খাটাস বলেছেন: বাহ চমৎকার তথ্যবুটিকা। ধন্যবাদ গ্রহন করুন নাসির ভাই।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

নাছির84 বলেছেন: ‌'তথ্যবুটিকা' শব্দটির পাশাপাশি ধন্যবাদও গৃহীত হইল সাদরে। :P

৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
পোষ্ট চমৎকার ! ++

আপনার সাহিত্য পোস্ট চাই !!

ভালো থাকুন নাছির ভাই ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৫

নাছির84 বলেছেন:
গ্রানমা------------এই বেলা, মাফ করা যায় না ? একখানা গপ্পো লিখতে চেয়েছিলুম। কিন্তুু চাকুরী+পরীক্ষা এবং অষ্টপ্রহরের হতাশা আমার গপ্পের অকাল মৃত্যূ ঘটিয়েছে। এখন লিখতে বসলে শুধু মনে হয়----লাভ কি ? দুইদিন পর তো সব ছেড়েছুড়ে পালাবি !

ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.