নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউরোপের ‘বুড়ো’দের আশ্রয় এখন সুপার লিগ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

২০০৪ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন রবার্ট পিরেস । ক্লাব ফুটবল ছেড়েছেন তিন বছর আগে। এখন তার বয়স ৪১। এই বয়সে মাত্র তিন মাস ফুটবল খেলে সাড়ে ৬ লাখ ডলার আয়ের হাতছানি এড়িয়ে যাওয়া পিরেসের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবসর ভেঙে তাই এফসি গোয়ায় নাম লেখান ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এ মিডফিল্ডার।



আন্তর্জাতিক ফুটবলে আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ছয় বছর আগে। উপমহাদেশে পা রাখার আগে সিডনি এফসির হয়ে বছরে ১৪ লাখ ডলার কামিয়েছেন ইতালির বিশ্বকাপজয়ী এ স্ট্রাইকার। গত আগস্টে দিল্লি ডায়নামোর সঙ্গে ১৭ লাখ ডলার পারিশ্রমিকে চার মাসের চুক্তি করেন ৪০ বছর বয়সী দেল পিয়েরো। এমন বয়সে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা যে কোনো ফুটবলারের জন্যই ‘শেষ পাতে অমৃতসম’। বোনাস হিসেবে থাকছে, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ফুটবলারের সম্মান। দেল পিয়েরোর মতোই বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখানোর চ্যালেঞ্জ এখন নিকোলাস অ্যানলেকার সামনে। পিএসজি, আর্সেনাল, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি কাঁপানো এ স্ট্রাইকার চার বছর আগেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেছেন। ইহুদি বিদ্বেষী আচরণের জন্য ওয়েস্টব্রম অ্যালবিওন তাকে এ বছর মৌসুমের শুরুতে একপ্রকার বিনা নোটিসেই বিতাড়িত করে। ৩৫ বছর বয়সী সেই আনলেকাই এখন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৮,৮৪,৬৫৮ ডলার) পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ফুটবলার। শুধু এরাই নন ডেভিড ত্রেজেগে (৩৭ বছর), এলানো (৩৩) ফ্রেডরিক লুনবার্গ (৩৭), লুই গার্সিয়া (৩৬), হুয়ান কেপডেভিয়ার মতো একসময় ইউরোপ মাতানো খেলোয়াড়রা এখন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ভারতের প্রথম পেশাদার ফুটবল টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) তারকা!



৭০০ কোটি টাকার এ টুর্নামেন্ট এখন ভারতের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি আসর। প্রাইজমানি সব মিলিয়ে ১৫ কোটি টাকা। বিশ্বের ১৯টি দেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে আইএসএলের ম্যাচগুলো। স্পেনের মতো ফুটবলের অভিজাত দেশের গণমাধ্যমগুলোয় ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে আইএসএলের ম্যাচ রিপোর্ট। বলা হচ্ছে, ফুটবলে এশিয়ার ‘ঘুমন্ত দৈত্য’ ভারত জেগে উঠেছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালের সত্য বড়ই বিদঘুটে এবং ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নে আইএসএল ঠিক কতখানি ভূমিকা রাখতে পারবে, তা এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।



আয়োজক প্রতিষ্ঠান আরএমজি-রিলায়েন্স গ্রুপের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার, দেড় বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতের ক্রীড়াপ্রেমিকদের মনের কুঠুরিতে ফুটবলকে চুবিয়ে অর্থের থলিকে আরো ভারী করা। দেশটি ক্রিকেটপাগল হলেও বাজারটা যে উন্মুক্ত ও বিশাল তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ফুটবলের টেকসই উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠানগুলো, সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। আসর শুরুর আগে, ভারতের তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলার তুলে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। প্রকল্পটি এখনো বাস্তবতার মুখ দেখেনি। নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বছরে ন্যূনতম এক লাখ ক্ষুদে ফুটবলারকে অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে হবে। সেজন্য একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিজস্ব মাঠ ও অবকাঠামো সুবিধা থাকতে হবে, যা ইউরোপের ছোট-বড় মিলিয়ে ৯৫ শতাংশ ক্লাবেরই রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ এ ক্লাবগুলোই যে ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্কৃতির আধার, তা না বলে দিলেও চলে। আইএসএল ঠিক এ জায়গাতেই ব্যতিক্রম। ১২ অক্টোবর টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়ানোর পর কলকাতার যুব ভারতী থেকে পুনের ছত্রপতি শিবাজি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকের অভাব হয়নি ঠিকই, কিন্তু ক্ষুদে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখনো হয়নি। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নিজস্ব কোনো মাঠ নেই, বাদবাকি অবকাঠামোগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তাই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মুনাফা লুটছে ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের শত বছরের ক্ষতে দাওয়াই পড়ছে না এক ফোঁটা। এক্ষেত্রে আইপিএলকে উদাহরণ হিসেবে টানা যায়। আইপিএল কতটা ক্রিকেটবান্ধব, তা নিয়ে খোদ ভারতীয়দের মনে সন্দেহ থাকলেও এ টুর্নামেন্টই প্রথম তাদের দেশবাসীকে দেখিয়েছিল কীভাবে গ্ল্যামার ও স্পোর্টসকে এক পাত্রে মিশিয়ে দুর্দান্ত এক ককটেল তৈরি করা যায়, যেখানে মানুষ আর কিছু না হোক নেশাগ্রস্ত হবেই। সেই পথেই চালিত হচ্ছে আইএসএল। বলিউড স্টার ও গ্ল্যামার ফুটবলে মিশেমিশে একাকার, কিন্তু মাত্র তিন মাসব্যাপী মৌসুমে কীভাবে দেড় বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর দেশে ফুটবলের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।



বলা হচ্ছে, ইউরোপের তারকাদের সঙ্গে খেললে ভারতীয় ফুটবলারদের দক্ষতা বাড়বে। বটে! স্থানীয়রা কাদের সঙ্গে খেলছে, সেটাও তো দেখতে হবে? দেল পিয়েরো, ত্রেজেগে, অ্যানলেকারা ইউরোপিয়ান ফুটবলে এখন বাতিল মাল। আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে শুধু একটি দলের ‘মার্কারি’ (তারকা) খেলোয়াড়ের বয়স ৩৬ বছরের নিচে। লোভনীয় চুক্তিতে তাদের দলে ভিড়িয়ে আইএসএল প্রকারান্তরে এই ‘বাতিল খেলোয়াড়’দের পুনর্বাসনের চেষ্টাই করছে। বিনিময়ে তাদের জনপ্রিয়তা বিক্রি করে প্রচুর অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকরা। মাঝখান থেকে টিকিট কেনার দৌড়ে শামিল হয়ে আইএসএলকে ম্যাচপ্রতি গড় দর্শক উপস্থিতি বিচারে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম স্থানে তুলে দিয়েছেন ভারতের সাধারণ ফুটবলমোদীরা।



বিদেশী ফুটবলারদের তুলনায় ভারতের স্থানীয় ফুটবলাররা কম পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, তা ভাবলে ভুল হবে। মুম্বাই এফসিতে ৮০ লাখ রুপি করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন সুব্রত পাল ও সৈয়দ রহিম। অ্যাতলেটিকো ডি কলকাতায় বাংলাদেশের মামুনুর রহমানের পারিশ্রমিক ২০ লাখ রুপির কাছাকাছি। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলারদের রুটি-রুজির মূল চাবিকাঠি তো আইএসএল হতে পারে না। সে জায়গাটি নিঃসন্দেহে আই-লিগ। আইএসএলের দাপটে ভারতের জাতীয় ফুটবল লিগটি এখন স্পন্সরই খুঁজে পাচ্ছে না! এত দিন ইউরোপিয়ান লিগে খেলে হাড় পাকানোর পর পড়ন্ত বয়সে মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের ক্লাব ফুটবলকে পুনবার্সনকেন্দ্র হিসেবে বেছে নিতেন বিশ্বের তারকা ফুটবলাররা। আইএসএলের কল্যাণে এবার থেকে সেই তালিকায় ভারতের নামটিও যুক্ত হলো। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল তৃণমূল পর্যায়কে খোলনলচে পাল্টে দিয়ে বর্তমান ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৫৮তম স্থান থেকে লাফ দেয়া আইএসএলের উদ্দেশ্য নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক যে কোনো প্রতিযোগিতাই যেহেতু ব্যবসা, আর ব্যবসায় অর্থ উপার্জনই প্রধান শর্ত। প্রতি দলে ছয়জন বিদেশীর তুলনায় পাঁচজন স্থানীয় ফুটবলারের উপস্থিতিই তার প্রমাণ। লাভের পাল্লা যে দিকে ভারী, ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসায়ীরা তো সেদিকের সংখ্যাটাই বাড়ানোর চেষ্টা করবেন, তাই না?



(টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার, এনডিটিভি, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: আইএসএল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতাম না। আপনার পোস্টটি উপকারে আসলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.