নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেটের মরু গোলাপ-৩

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:৪৩

(ফরিদের বাবাকে সবাই ডাকে মালিক কাকা। ছেলে ঝাঁপ দেয়ার পরই ক্রিকেটপাড়ে বাবার আর্বিভাব। এখন দুজনেই হাবুডুবু খাচ্ছেন । একজন খেলোয়াড় হিসেবে, আরেকজন মজা লুটছেন তার ভক্ত হয়ে। ফরিদ যে ম্যাচে ৭ উইকেট পায়, মোবাইলে তার ভিডিও সিদ্ধার্থকে দেখান মালিক কাকা। তার দেখার ফাঁকে মালিক কাকা বলে চলেন,সাতটি আউটের মধ্যে পাঁচটি উইকেটের পেছনে। বাকি দুটি এলবি এবং বোল্ড। ব্যাটসম্যানেরা কোন ভুল করেনি।

সিদ্ধার্থ আড়চোখে খেয়াল করে, কথাগুলো বলার সময় মালিক কাকার চোখের ভাষা পাল্টে যায়। সে চাহনির সঙ্গে ‌'প্রশান্তি' শব্দটাই সবচেয়ে ভাল মানায় ) দ্বিতীয় পর্বের পর......






হাজি অামানুল্লাহ। ইজাতুল্লাহ দৌলতজাইয়ের গর্বিত পিতা। ছেলে তার উঠতি প্রতিভা। আমানুল্লাহ সামান্য দোকানদার। পাশের এলাকা আরজান কিমত' ( সস্তা দামের)-এ মুদিখানা চালান। আফগানিস্তার কুখ্যাত কারাগার পুল-এ-চরখি পাশেই জায়গাটা। সাত বছর হলো বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ইজাতের ভাই জানায়, ক্রিকেটে তাদের শৈশবেই হাতেখড়ি ঘটে। ঝাঁটাকে উল্টো করে ধরে ব্যাট বানিয়ে দুই ভাইয়ের খেলা শুরু। ইজাতের মধ্যে স্ফুলিৃঙ্গ দেখতে পেয়েছিলেন আমানুল্লাহ। কিন্তু তাকে প্রদীপ বানাতে চাই পরিচর্যা। এজন্য প্রয়োজন অর্থের ? ইজাতের চাচা ওয়েম্বলির পাশে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করেন। সিদ্ধার্থ জানতে পারে, এই যে ইজাত চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার- এ পর্যন্ত উঠে আসার নেপথ্যে রয়েছে পাউন্ড। আমানুল্লার বাড়িটা পাল্টে গেছে । এখন গোটা পরিবার একসঙ্গে বসে ইজাতের খেলা দেখে টিভিতে।



উইকেটকিপার আফসার জাজাই উঠে এসেছেন আরও গরীব জনপদ থেকে। চিলিশতুন সড়ক থেকে জলকাদায় ভর্তি একটা ঘুপচি গলি। আফসারের বাবার সঙ্গে দেখা করতে এ পর্যন্তও এসেছিল সিদ্ধার্থ। এসাজান পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার। কিন্তু আফসারের গর্বিত পিতা। সিদ্ধার্থ তাকে্ বলেনি, আফগানিস্তানে আসার আগে তাকে ট্যাক্সিতে ওঠার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। নিরাপত্তাই তার প্রধান অজুহাত। আফসারদের পরিবার যে ঘরে বসবাস করে তার ছাদ একেবারেই ঠুনকো। বছরের শেষ নাগাদ সম্ভাব্য তুষারপাতের সঙ্গে লড়াইয়ে ছাদটা যে হেরে যাবে, তা আন্দাজ করে নিতে অসুবিধে হয়না সিদ্ধার্থের। কিন্তু তার আন্দাজে ছিলনা, অমন কাকডাকা ভোরে আফগানরা কিভাবে আতিথ্যসেবার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারে ! কেটলিভর্তি দুধচা, নান এবং হরেকরকম পিঠা !



কাবুল স্টেডিয়ামের বিকেলগুলো অসাধারণ !



ডাক্তারি বিদ্যায় ট্রেনিং নিয়েছেন আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নুর মোহাম্মদ। স্টেডিয়াম স্টাফদের চোখে-ডক্টর সাহিব। খেলোয়াড়দের মাথা থেকে পা পর্যন্ত, সবকিছুর দেখভালের দায়িত্ব তার কাঁধে। নুর মোহাম্মদই কাবুল স্টেডিয়ামের সর্বেসর্বা। ধোপধুরস্ত স্যূট পড়ে অফিসে আসেন। বের হন ট্রাকস্যূট পড়ে। ইনডোরে গিয়ে ফুটবল খেলেন। কোচ, স্টাফ, ইলেকট্রিশিয়ান, পিওন-কোন ভেদাভেদ নেই। খেলাটার জন্য শুধু ইচ্ছের প্রয়োজন। শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে নিয়মটা আলাদা। অনুশীলনের ক্লান্তি চেপে না ধরলেই কেবল, তারা খেলতে পারেন। কোন বাঁধাধরা সময় নেই। শরীর যতক্ষন সায় দেবে ততক্ষন খেলা চলে। এরপর কুলডাউন এবং চা-বিস্কিট। সিদ্ধার্থের কাছে মনে হয়, স্কুলে গ্রীষ্মকালিন ছুটির সময় বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলার পর মায়ের ডাকে ঘরে ফেরার আগে শরীরে প্রচন্ড অবসাদ স্বত্তেও বাতাসে ঘুসি মেরে চলা চঞ্চল ছেলেটির মতোই-এরা সবাই।



হঠাৎ একজনের ডাকে সিদ্ধার্থের ভাবনা টুটে যায়। বদলি হয়ে মাঠে নামতে হবে। টাচলাইনের ভেতরে পা রাখার পরই খেলা নিয়ে আফগানদের খোলতাই আবেগের গোপন কুঠুরীর দরজাগুলো এক এক করে খুলে যায় তার সামনে। কাবুল স্টেডিয়ামে ঢোকার পর থেকে প্রায় পাঁচ মিনিট পর পর ''তার কোন অসুবিধে হচ্ছে কি-না' -এমন প্রশ্ন করে বিরক্ত করেছে যে লোকটি, সে তার বিপক্ষ গোলকিপার। শুধুমাত্র এজন্যই ডিফেন্সের নামে সিদ্ধার্থকে কষে লাথি মারতে লোকটি দ্বিতীয়বার ভাবেনি ! তার সতীর্থদের কাছে পর্যন্ত ভুলের কোন ক্ষমা নেই। অথচ, খেলাটা নাকি প্রীতি ম্যাচ ! মোলসের কথাগুলো মনে পড়ে যায় সিদ্ধার্থের,‌‌'আফগানদের আবেগ নির্ভেজাল। ওদের মুখ দেখেই সব বলে দেয়া যায়। কিন্তু ওরা যেন নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।'



খেলোয়াড় থেকে সমর্থক-সবাই জানে ক্রিকেটের পথে আরও এক কদম এগিয়ে যেতে আবেগই তাদের প্রধান অস্ত্র। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে গজেন্দ্রগামিতার সুযোগ নেই। কি বস্তি, কি রিফুজি ক্যাম্প, যেখান থেকেই উঠে আসুন না কেন-এখানে সবাই ফলাফল চায়। গত এশিয়া কাপে তারা বাংলাদেশকে হারায়। মোহাম্মদ নবীর বিশ্বাস, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রত্যেক ম্যাচেই তারা জেতার মতো দল, 'আমাদের সিমাররা ওদের থেকে ভাল। ব্যাটসম্যানেরাও তুলনামুলক বেশি আক্রমণাত্নক। ওদের স্পিন এবং ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট ভাল। কিন্তু আমরা শারীরিক দিক থেকে বেশি শক্তিশালি।' মজার ব্যাপার জয়ের ১৫ দিন পরই টি২০ ম্যাচে সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আফগানরা মাত্র ৭২ রানে অলআউট হয় !



***********





-'অামার কাছে মারাঠি সিনেমা খুব পছন্দের' রাতে খাবারে সিদ্ধার্থের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে আলাপ জমানোর চেস্টা করে সেই গোলরক্ষক-দৌলত আহমেদজাই। অবসর নেয়ার পর এখন একাডেমির কোচ।

সিদ্ধার্থ ভীষন অবাক হয়। মারাঠি মনে তো মহারাষ্ট্র ? সিদ্ধার্থ আরেকটু খোলাসা করে জানতে গিয়ে বুঝতে পারে দক্ষিণের ছবির কথা বলছেন দৌলত আহমেদজাই। আফগান ছবি সম্পর্কে তার কাছ থেকে সিদ্ধার্থ একটা ধারণা পায়,' আমাদের নায়ক সামান্য একটা কোদাল দিয়ে কালাকাশিনভের অজস্র গুলি ঠেকাতে পারে' !

বর্ষীয়ান আফগানই দিলীপ কুমার এবং কাদের খান বেশি জনপ্রিয়। বলিউডের এ দুই তারকার শেকড় প্রোথিত আফগানিস্তানে। এখানকার সেলুনের দেয়ালে রাজত্ব করেন শাহরুখ খান। ফুটবল খেলায় খেলায় ফাউল করলে নুর তাকে ডাকেন-অমরেশ পুরী ! সিদ্ধার্থ জানে, এ চিত্র সীমান্তের দুই পাড়ের মিথস্ক্রিয়ারই অংশ। সঙ্গে আকাশ সংস্কৃতির জোয়ার তো থাকছেই। প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য দিল্লি ছুটে যায় অসংখ্য আফগান নর-নারী। ভারতকে তারা সত্যিকার অর্থেই ভালবাসে। কিন্তু ভারতীর্য় ক্রিকেট কি তাদের পাত্তা দেয় ? নাকি নাক সিঁটকাতে পারলে বাঁচে ? সিদ্ধার্থ নুরের কাছ থেকে জেনেছে, গত বছর এক মিটিংয়ে বিসিসিঅাই সভাপতি শ্রীনিবাসন তাকে সরাসরি বলেন, দশ মিনিট সময় পাবে। এরমধ্যে যা বলার বলো।

আফগান জাতীয় দল কখনো ভারতের বয়সভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গেও খেলার সুযোগ পায়নি। ভারতের অত্যধূনিক ট্রেনিং একাডেমিগুলোতে সময় কাটানো তো অনেক দুরের ব্যাপার !....(চলবে)













তথ্যসুত্র : দ্য ক্রিকেট মান্থলি অবলম্বনে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:২৬

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: এই পর্ব পড়ে আমার বিশ্বাস করতে হচ্ছে যে, আফগান ক্রিকেট একদিন বহুদূর যাবে। এতো আবেগ, দরদ আর আন্তরিকতা দিয়ে সচরাচর কাউকে খেলতে দেখা যায় না। গৃহযুদ্ধ বন্ধ হলে যদি আফগানরা অরথনিতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তখন এক দিন যদি তারা ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভারতকে এতো পছন্দ করে, তারপরও আফগানদের প্রতি তাদের বিমাতাসুলভ আচরণ বেশ দৃষ্টিকটু ঠেকল। এটা তারা বাংলাদেশের সাথেও করে আসছে।
বেশ কিছু দিন পর তৃতীয় পর্ব দিলেন। আমি অবশ্য অপেক্ষায় ছিলাম। ভালো লাগলো এই পর্বও। বিশেষ করে আফগান ক্রিকেটারদের উৎসস্থলগুলো আমাকে বেশ স্পর্শ করে গেলো। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো নাছির।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি শেষ পর্বটা দ্রুত পেয়ে যাবেন। ভাল থাকুন..

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

ভালোই লাগছে আফগানদের সংগ্রামের কাহিনী।

সিরিজ চলুক। সাথে আছি।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

নাছির84 বলেছেন: সংগ্রামের গল্প কার না ভাল লাগে ! সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
নাছির,
সামনে বিশ্বকাপ নিয়মিত লেখা হবে কী ?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৩

নাছির84 বলেছেন: কেন ভাই ? প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল এবং সঙ্গে আরও গোটা পঞ্চাশেক অনলাইন থাকতে, বিশ্বকাপের ক্ষিদে মেটাতে আমাকে টানছেন কেন ?
যদিও টানছেন জেনে প্রীত হইলাম। মাগার সোচ নে কি বাত ইয়ে হ্যায়, আগার ম্যায় কাবিল হুঁ অর নেহি ?
মন-মেজাজ-ফিগার ভাল থাকলে, লেখা হবে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.