নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেলতেপড়তেদেখতেশুনতেগুনতে ভালোবাসি

নাছির84

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র

নাছির84 › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ৫০ হাজার পাউন্ড ঋণে ছেলের স্বপ্নপূরণ

১২ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৫৯

প্রথম ব্রিটিশ সাইক্লিস্ট হিসেবে ২০১২ সালে জিতে নেন ট্যুর ডি ফ্রান্স। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকের ভেলোড্রাম ইভেন্টে একই সঙ্গে স্বর্ণ-রৌপ্য-ব্রোঞ্জ পদক জয়ী। ব্রিটিশ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অলিম্পিকে এমন নজির সর্বশেষ দেখিয়েছিলেন ম্যারি ডেনিস র্যান্ড। এথেন্স অলিম্পিকের ৪০ বছর আগে টোকিওর আসরে। তার পর স্যার ব্রাডলি উইগিন্সই ব্রিটেনের সেই সোনার ছেলে, যার হাত ধরে অলিম্পিকের এক ইভেন্টে তিনটি পদকের দেখা পায় দেশটি। ট্যুর ডি ফ্রান্স জয়ের সুবাদে দুই বছর আগে ‘নাইটহুড’ খেতাবে ভূষিত হন পদক জয় বিচারে ব্রিটেনের অন্যতম সুশোভিত এ অলিম্পিয়ান। কিন্তু ভোরের আলো দেখে যদি সবসময় গোটা দিনটা ঠাহর করা যেত, তাহলে উইগিন্সও সম্ভবত এতদূর আসতে পারতেন না।

ব্রাডলির জন্ম বেলজিয়ামে। মা লিন্ডার শরীরে বইছে ব্রিটিশ রক্ত। বাবা গ্যারি উইগিন্স জাতিতে অস্ট্রেলিয়ান। তিনিও পেশাদার সাইক্লিস্ট ছিলেন। সত্তরের দশকে এ খেলায় ভাগ্যান্বেষণে লন্ডনে পা রাখেন গ্যারি। সেখানে লিন্ডার সঙ্গে পরিচয় থেকে জড়িয়ে পড়েন প্রণয়ে। তারই ফল হিসেবে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ব্রাডলি উইগিন্স। কিন্তু তার বয়স যখন মাত্র ১৮ মাস, তখন গোটা পরিবারকে অকূল পাথারে ভাসিয়ে চলে যান গ্যারি উইগিন্স। প্রচণ্ড সুরাসক্তি ছিল। জড়িয়ে পড়েছিলেন ড্রাগ ব্যবসায়। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হয়, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

ব্রাডলি উইগিন্সের ৩৫ বছরের জীবনে পিতার ছেড়ে চলে যাওয়া ও তার মৃত্যুই গভীরতম কষ্ট। তবে তিনি এটাও স্বীকার করে নেন, ‘তরুণ বয়সে সে আমার পাশে থাকলে আমি কখনই সাইক্লিষ্ট হতে পারতাম না। কারণ সে সম্ভবত আমার প্রতি খুব কঠোর আচরণ করত। আমার স্বপ্ন মাটি হয়ে যেত।’

তাহলে, নবজাত বয়সেই পিতাকে হারানোর পর ব্রাডলি উইগিন্স এত দূর এলেন কীভাবে? বিবিসি রেডিও ফোর-কে দেয়া সাক্ষাত্কারে উইগিন্স এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পৃথিবীর মধুরতম শব্দে— মা! বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেলেও মা আগলে রেখেছিলেন স্নেহের বাঁধনে। সে বাঁধন এতটাই মমতা ও ত্যাগের যে, ছেলের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে ৫০ হাজার পাউন্ড দেনায় পড়েছিলেন লিন্ডা। ‘বিশ্ব মা দিবস’-এ ব্রাডলি উইগিন্সের কণ্ঠে উঠে আসে সেসব দিনের কথা, ‘খুবই শক্ত মানুষ ছিলেন তিনি। আমার মনে হয়, বাবা চলে যাওয়ার পর সে শুধু আমার জন্য বেঁচে ছিল। আমার সাইক্লিস্ট হওয়ার স্বপ্নটার পিছু ধাওয়া করাই ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এজন্য তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। নিজেকে ৫০ হাজার পাউন্ড ঋণের জালে জড়াতেও তিনি কোনো দ্বিধাবোধ করেননি।’

শুধু ট্যুর ডি ফ্রান্স জিতেই ৫ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করেন ব্রাডলি উইগিন্স। এখন তিনি ব্রিটেনের শীর্ষ ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন। নিয়মিত মায়ের দেখাশোনা করলেও তার আক্ষেপ— ‘নিজের কাজের প্রতিদানে অনেক কিছু আশা করার মতো মানুষ তিনি নন। আমাকে নিয়ে তার অনেক গর্ব। এটাই বোধহয় তার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।’

ব্রাডলি উইগিন্সের বয়স যখন মাত্র কয়েক মাস, তখন তার পরিধেয় ন্যাপকিনকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মোড়ক হিসেবে ব্যবহার করতেন তার বাবা গ্যারি উইগিন্স। প্রচণ্ড সুরাসক্তি ও মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ায় লিন্ডার সঙ্গে গ্যারির সংসার বেশি দিন টেকেনি। শৈশবে বাবার স্মৃতির কোনো কিছুই মনে নেই ব্রাডলি উইগিন্সের। মায়ের মুখে শোনা গল্প থেকে তিনি বলেন, ‘তখন চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত মাদকদ্রব্য সাধারণের মাঝে খুব জনপ্রিয় ছিল। আমার বাবাকে সবাই ‘ডক’ (ডাক্তার) নামে চিনত। সে নিজে মাদক গ্রহণ করত ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল। খুব ছোট থাকাকালে আমাদের বাসায় অনেক অপরিচিত মানুষের আনাগোনা ছিল। মজার ব্যাপার, সেই তারাই এখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে— আমি কিছু করিনি। ব্যাপারটা হাস্যকর। কিন্তু এসব কিছুর থেকে আমার কাছে বড় সত্য হলো, কোনো প্রকার প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। এটা এমন এক কষ্ট, যা বাকি জীবনে আমি কখনই ভুলতে পারব না।’

ব্রাডলি উইগিন্স ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে অংশগ্রহণের খরচ জোগাড় করেন সম্পত্তি বন্ধক রেখে। ভেলোড্রাম ইভেন্টে তিনটি পদক জয়ের পর ভেবেছিলেন, আর্থিক টানাটানিটা এবার ঘুচে যাবে। কিন্তু বাস্তব দুনিয়া সম্পর্কে তার ধারণাটা ভুল ছিল, ‘ভেবেছিলাম সবাই আমার দরজায় চেক হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে। কারণ আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু হায়! নিজের রেহাননামাটুকু (মর্টগেজ) পর্যন্ত আমি ছাড়াতে পারিনি। তখন নিজেকে খুব হতাশ মনে হয়েছিল। ভেবেছিলাম, আমি এমন এক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন, যে নিজের ঋণ পর্যন্ত শোধ করতে সক্ষম নয়! কিন্তু সেটা ছিল আগস্টের ঘটনা। পরের বছর মার্চে নিজের সন্তানের মুখ দেখার পর সব ভুলে যাই। সিদ্ধান্ত নিই, ওর জন্যই আমাকে লড়াই করে যেতে হবে। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটা যেন আমার সন্তানের ক্ষেত্রে কখনই না ঘটে।’

সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি প্রায় এক যুগ ধরে সংসারধর্মেও সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন ব্রাডলি উইগিন্স। ২০০২ কমনওয়েলথ গেমসে ক্যাথরিনের সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। এখন দুজনের ঘর আলোকিত করছে দুই সন্তান— বেন ও ইসাবেল। ব্রাডলি উইগিন্স মনে করেন, তার মা গোটা জীবনভর কষ্ট করেছেন শুধু তার সন্তানের সুখী দাম্পত্যজীবন দেখার জন্য, ‘১২ বছর হলো আমরা বিয়ে করেছি। দুটি সন্তান আছে। এটাই জীবনের মৌলিক ভিত্তি, যা খেলাধুলার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ট্যুর ডি ফ্রান্স জেতার জন্য নয়, বরং দাম্পত্যজীবনে ভালো মানুষ হতে পেরেছি বলেই আমার মা আমাকে নিয়ে গর্বিত।’

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট।++

পৃথিবীর সকল মাই তার সন্তানকে নিয়ে গর্ব করতে ভালবাসে।

১৩ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

নাছির84 বলেছেন: কিন্তু সকল সন্তান তার মা'কে নিয়ে গর্ব করতে ভালবাসেনা !

২| ১৩ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।++

১৩ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

৩| ১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++

১৩ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

নাছির84 বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.